ঢাকা ০৩:৫৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইরানের পরমাণুকেন্দ্রে ইসরায়েলের রোমহর্ষক অভিযান

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ

ইসরায়েল কীভাবে ইরানের ওপর অভিযান পরিচালনা করে তার রোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সদ্য বিদায়ী প্রধান ইয়োশি কোহেন।

ইসরায়েলি চ্যানেল ১২-এর সাংবাদিক ইলানা ডায়ানকে তিনি এই সাক্ষাৎকারটি দেন, যা ইসরায়েলে বৃহস্পতিবার রাতে প্রচারিত হয়। মোসাদ প্রধানের দায়িত্ব থেকে গত সপ্তাহে অবসরে যান ইয়োশি কোহেন। খবর বিবিসির।

ইরানের পরমাণু আর্কাইভ থেকে কীভাবে নথিপত্র চুরি করা হয়েছিল, সাক্ষাৎকারে তারও বিস্তারিত জানিয়েছেন তিনি।

তিনি বলেন, ২০১৮ সালে আর্কাইভে ওই অভিযান চালিয়ে হাজার হাজার নথিপত্র চুরি করে ইসরায়েলে নিয়ে আসা হয়। তিনি আরও ইঙ্গিত দিয়েছেন, ইরানের পরমাণু স্থাপনা নাতাঞ্জে যে ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছিল এবং ইরানের একজন পরমাণু বিজ্ঞানীর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গেও ইসরায়েলি সম্পৃক্ততা রয়েছে।

বিবিসি নিউজের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক সম্পাদক রাফি বের্গ বলছেন, মোসাদের সাবেক প্রধানদের সাক্ষাৎকার দেয়া বা নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে গণমাধ্যমের কাছে বক্তব্য দেয়া নতুন নয়। কিন্তু ইয়োশি কোহেন এমন কিছু মন্তব্য করেছেন যা বিস্ময়কর।

এই প্রথমবারের মতো তিনি স্বীকার করার কাছাকাছি গেছেন যে, ইরানের ভূগর্ভস্থ পরমাণু কেন্দ্রে নাশকতার সঙ্গে ইসরায়েল জড়িত। তবে অনেক হিসাবনিকাশ করে সাক্ষাৎকারটি দেয়া হয়েছে এবং সেটি ইসরায়েলের সামরিক সেন্সর পার হয়ে এসেছে।

২০১৫ সালে মোসাদের প্রধান হিসাবে ইয়োশি কোহেনকে নিয়োগ দেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনে পড়াশোনা শেষে ১৯৮২ সালে তিনি এই গোয়েন্দা সংস্থায় যোগ দিয়েছিলেন।

ইয়োশি কোহেন সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, এই পেশায় থাকার সময় তার শত শত পাসপোর্ট ছিল। তার সাক্ষাৎকারের সবচেয়ে রোমহর্ষক অংশ ছিল, যখন তিনি ইরানের পরমাণু আর্কাইভ থেকে চুরির বিস্তারিত জানাতে শুরু করেন।

২০১৮ সালে একটি সংবাদ সম্মেলনে চুরি যাওয়া এসব নথির উল্লেখ করে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেছিলেন যে, ইরান একবার গোপনে পরমাণু অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করেছে এবং অস্ত্র তৈরির প্রযুক্তি তাদের আছে। কিন্তু ইরান বরাবরই সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। মোসাদ থেকে সদ্য অবসরে যাওয়া কোহেন বলেন, ইরানে ওই অপারেশনের জন্য প্রস্তুতি নিতে তাদের দুই বছর লেগেছে। সেখানে ২০ জন মোসাদ এজেন্ট অংশ নিয়েছিলেন, যাদের একজনও ইসরায়েলি নাগরিক নন।

তেল আবিবের একটি কমান্ড সেন্টার থেকে ওই অপারেশন নজরদারি করেন মোসাদ প্রধান। এজেন্টরা ওয়্যারহাউজের ভেতরে প্রবেশ করে ৩০টির বেশি সিন্দুক ভাঙে।

ইসরায়েলি পত্রিকা দ্য টাইমস অব ইসরায়েলের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সাবেক এই মোসাদ প্রধান বলেছেন, যখন সেসব নথিপত্রের ছবি স্ক্রিনে দেখানো হয়, তা ছিল আমাদের জন্য দারুণ রোমাঞ্চকর।

ওই অভিযানে অংশ নেয়া সবাই বেঁচে ফিরে এসেছেন এবং ভালো আছেন। যদিও তাদের কয়েকজনকে ইরান থেকে বের করে আনা হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন। এই হাজার হাজার নথিপত্র পাওয়ার কথা ইসরায়েল প্রকাশ্যেই বলে আসছে। কিন্তু কোহেন আরও কিছু অপারেশনে মোসাদের সম্পৃক্ততার ইঙ্গিত দিয়েছেন, যা দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েলি এজেন্টরা করেছে বলে গুঞ্জন ছিল।

সাক্ষাৎকারের শুরুর দিকে ইরানের নাতাঞ্জ পরমাণু কেন্দ্রের বিষয়ে বলেন কোহেন। ইরান জানিয়েছিল, ২০২০ সালের জুলাই মাসের ওই নাশকতার ঘটনায় নাতাঞ্জ পরমাণু কেন্দ্রের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ অংশে আগুন লাগে। এই বছরের এপ্রিল মাসে নতুন সরঞ্জাম সংযোজনের পরদিনই কর্মকর্তারা জানান, সেখানে আবার নাশকতার ঘটনা ঘটেছে এবং বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সেসব ঘটনায় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ‘পরমাণু সন্ত্রাসের’ অভিযোগ আনে ইরান।

ডায়ানকে দেয়া সাক্ষাৎকারে কোহেন বলেন, তিনি ওই পরমাণু স্থাপনা সম্পর্কে এতো ভালোভাবে জানেন যে, যেখানে ঘূর্ণায়মান যে সেন্ট্রিফিউজ রয়েছে, সেখানেও তাকে তিনি নিয়ে যেতে পারবেন।

সাক্ষাৎকারে তিনি ইরানের শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানী মহসেন ফাখরিজাদেহকে নিয়েও কথা বলেন। ইরানের এই পরমাণু বিজ্ঞানী গত নভেম্বরে তেহরানের উপকণ্ঠে একটি সড়কে আততায়ীর হামলায় নিহত হন। ওই হামলার জন্য প্রকাশ্যেই ইসরায়েলকে দায়ী করে আসছে ইরান। ওই মৃত্যুর সঙ্গে মোসাদের সম্পৃক্ত থাকার কথা স্বীকার বা অস্বীকার করেননি সাবেক প্রধান। কিন্তু তিনি বলেছেন, ওই বিজ্ঞানীকে বহু বছর ধরে ‘টার্গেট’ করা হয়েছিল, কারণ তার বৈজ্ঞানিক জ্ঞান মোসাদের উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছিল।

তাকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, ‘যদি কোনো ব্যক্তি ইসরায়েলি নাগরিকদের জন্য বিপদের কারণ হয়ে ওঠেন, তাহলে তাকে অবশ্যই থামতে হবে। তবে কেউ যদি পেশা পরিবর্তন করে বা আর ক্ষতি না করে, তাহলে তিনি বেঁচে যেতে পারেন।’

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

ইরানের পরমাণুকেন্দ্রে ইসরায়েলের রোমহর্ষক অভিযান

আপডেট সময় ০৭:২৭:৩৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১২ জুন ২০২১

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ

ইসরায়েল কীভাবে ইরানের ওপর অভিযান পরিচালনা করে তার রোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সদ্য বিদায়ী প্রধান ইয়োশি কোহেন।

ইসরায়েলি চ্যানেল ১২-এর সাংবাদিক ইলানা ডায়ানকে তিনি এই সাক্ষাৎকারটি দেন, যা ইসরায়েলে বৃহস্পতিবার রাতে প্রচারিত হয়। মোসাদ প্রধানের দায়িত্ব থেকে গত সপ্তাহে অবসরে যান ইয়োশি কোহেন। খবর বিবিসির।

ইরানের পরমাণু আর্কাইভ থেকে কীভাবে নথিপত্র চুরি করা হয়েছিল, সাক্ষাৎকারে তারও বিস্তারিত জানিয়েছেন তিনি।

তিনি বলেন, ২০১৮ সালে আর্কাইভে ওই অভিযান চালিয়ে হাজার হাজার নথিপত্র চুরি করে ইসরায়েলে নিয়ে আসা হয়। তিনি আরও ইঙ্গিত দিয়েছেন, ইরানের পরমাণু স্থাপনা নাতাঞ্জে যে ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছিল এবং ইরানের একজন পরমাণু বিজ্ঞানীর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গেও ইসরায়েলি সম্পৃক্ততা রয়েছে।

বিবিসি নিউজের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক সম্পাদক রাফি বের্গ বলছেন, মোসাদের সাবেক প্রধানদের সাক্ষাৎকার দেয়া বা নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে গণমাধ্যমের কাছে বক্তব্য দেয়া নতুন নয়। কিন্তু ইয়োশি কোহেন এমন কিছু মন্তব্য করেছেন যা বিস্ময়কর।

এই প্রথমবারের মতো তিনি স্বীকার করার কাছাকাছি গেছেন যে, ইরানের ভূগর্ভস্থ পরমাণু কেন্দ্রে নাশকতার সঙ্গে ইসরায়েল জড়িত। তবে অনেক হিসাবনিকাশ করে সাক্ষাৎকারটি দেয়া হয়েছে এবং সেটি ইসরায়েলের সামরিক সেন্সর পার হয়ে এসেছে।

২০১৫ সালে মোসাদের প্রধান হিসাবে ইয়োশি কোহেনকে নিয়োগ দেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনে পড়াশোনা শেষে ১৯৮২ সালে তিনি এই গোয়েন্দা সংস্থায় যোগ দিয়েছিলেন।

ইয়োশি কোহেন সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, এই পেশায় থাকার সময় তার শত শত পাসপোর্ট ছিল। তার সাক্ষাৎকারের সবচেয়ে রোমহর্ষক অংশ ছিল, যখন তিনি ইরানের পরমাণু আর্কাইভ থেকে চুরির বিস্তারিত জানাতে শুরু করেন।

২০১৮ সালে একটি সংবাদ সম্মেলনে চুরি যাওয়া এসব নথির উল্লেখ করে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেছিলেন যে, ইরান একবার গোপনে পরমাণু অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করেছে এবং অস্ত্র তৈরির প্রযুক্তি তাদের আছে। কিন্তু ইরান বরাবরই সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। মোসাদ থেকে সদ্য অবসরে যাওয়া কোহেন বলেন, ইরানে ওই অপারেশনের জন্য প্রস্তুতি নিতে তাদের দুই বছর লেগেছে। সেখানে ২০ জন মোসাদ এজেন্ট অংশ নিয়েছিলেন, যাদের একজনও ইসরায়েলি নাগরিক নন।

তেল আবিবের একটি কমান্ড সেন্টার থেকে ওই অপারেশন নজরদারি করেন মোসাদ প্রধান। এজেন্টরা ওয়্যারহাউজের ভেতরে প্রবেশ করে ৩০টির বেশি সিন্দুক ভাঙে।

ইসরায়েলি পত্রিকা দ্য টাইমস অব ইসরায়েলের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সাবেক এই মোসাদ প্রধান বলেছেন, যখন সেসব নথিপত্রের ছবি স্ক্রিনে দেখানো হয়, তা ছিল আমাদের জন্য দারুণ রোমাঞ্চকর।

ওই অভিযানে অংশ নেয়া সবাই বেঁচে ফিরে এসেছেন এবং ভালো আছেন। যদিও তাদের কয়েকজনকে ইরান থেকে বের করে আনা হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন। এই হাজার হাজার নথিপত্র পাওয়ার কথা ইসরায়েল প্রকাশ্যেই বলে আসছে। কিন্তু কোহেন আরও কিছু অপারেশনে মোসাদের সম্পৃক্ততার ইঙ্গিত দিয়েছেন, যা দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েলি এজেন্টরা করেছে বলে গুঞ্জন ছিল।

সাক্ষাৎকারের শুরুর দিকে ইরানের নাতাঞ্জ পরমাণু কেন্দ্রের বিষয়ে বলেন কোহেন। ইরান জানিয়েছিল, ২০২০ সালের জুলাই মাসের ওই নাশকতার ঘটনায় নাতাঞ্জ পরমাণু কেন্দ্রের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ অংশে আগুন লাগে। এই বছরের এপ্রিল মাসে নতুন সরঞ্জাম সংযোজনের পরদিনই কর্মকর্তারা জানান, সেখানে আবার নাশকতার ঘটনা ঘটেছে এবং বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সেসব ঘটনায় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ‘পরমাণু সন্ত্রাসের’ অভিযোগ আনে ইরান।

ডায়ানকে দেয়া সাক্ষাৎকারে কোহেন বলেন, তিনি ওই পরমাণু স্থাপনা সম্পর্কে এতো ভালোভাবে জানেন যে, যেখানে ঘূর্ণায়মান যে সেন্ট্রিফিউজ রয়েছে, সেখানেও তাকে তিনি নিয়ে যেতে পারবেন।

সাক্ষাৎকারে তিনি ইরানের শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানী মহসেন ফাখরিজাদেহকে নিয়েও কথা বলেন। ইরানের এই পরমাণু বিজ্ঞানী গত নভেম্বরে তেহরানের উপকণ্ঠে একটি সড়কে আততায়ীর হামলায় নিহত হন। ওই হামলার জন্য প্রকাশ্যেই ইসরায়েলকে দায়ী করে আসছে ইরান। ওই মৃত্যুর সঙ্গে মোসাদের সম্পৃক্ত থাকার কথা স্বীকার বা অস্বীকার করেননি সাবেক প্রধান। কিন্তু তিনি বলেছেন, ওই বিজ্ঞানীকে বহু বছর ধরে ‘টার্গেট’ করা হয়েছিল, কারণ তার বৈজ্ঞানিক জ্ঞান মোসাদের উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছিল।

তাকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, ‘যদি কোনো ব্যক্তি ইসরায়েলি নাগরিকদের জন্য বিপদের কারণ হয়ে ওঠেন, তাহলে তাকে অবশ্যই থামতে হবে। তবে কেউ যদি পেশা পরিবর্তন করে বা আর ক্ষতি না করে, তাহলে তিনি বেঁচে যেতে পারেন।’