ঢাকা ০১:২১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কুমিল্লায় প্রেমের ফাঁদে ফেলে ধর্ষণের পর হত্যাই ছিল মুন্নার নেশা

কুমিল্লা জেলা প্রতিনিধিঃ

কখনো গাড়ির হেলপার, কখনো বেকারির কারিগর। প্রেমিক সেজে টাকা হাতিয়ে নেয়ার কৌশলটাও ছিল অন্যের কাছ থেকে পাওয়া। কিন্তু খুন করার পরিকল্পনা নিজের। খুনের ধরণও ছিল একই। প্রেমের ফাঁদে ফেলে টাকা হাতিয়ে নিয়ে খুন করা ছিল তার নেশা।  তার পরবর্তী টার্গেট ছিল আরও ৩ নারী। বলছিলাম কুমিল্লা পিবিআই এর হাতে গ্রেফতার হওয়া সিরিয়াল কিলার আবদুল্লাহ আনসারী ওরফে মুন্নার (২৩) কথা।

মঙ্গলবার (২ নভেম্বর) বিকালে পিবিআই কুমিল্লা কার্যালয়ে এক প্রেসব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের জানান, মুন্নার নেশা নারীদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে ধর্ষণের পর হত্যা করা। এভাবে মুন্না একজন সিরিয়াল কিলারে পরিণত হয়। এক মাসের ব্যবধানে দুই নারীকে খুন করে আরও হত্যার পরিকল্পনা ছিল তার।

প্রেসব্রিফিংয়ে পিবিআই জানায়, কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি উপজেলার বারকোটা গ্রামের শহীদুল্লাহ ভূঁইয়ার ছেলে আবদুল্লাহ আনসারী ওরফে মুন্না (২৩)। তিনি কুমিল্লা নগরীর পুলিশ লাইন এলাকার একটি ফাস্টফুড দোকানের কর্মচারী। তার সহযোগী জেলার আদর্শ সদর উপজেলার দূর্গাপুর এলাকার মো. মোস্তফা মিয়ার ছেলে দীন ইসলাম দীনু (১৯)। তাদের গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তারা জেলার সদর দক্ষিণ থানার বহুল আলোচিত পান্না আক্তার (২৮) ও লাইলী বেগম রিমা (২৬) হত্যার দায় স্বীকার করে একের পর এক লোমহর্ষক ঘটনার বর্ণনা দেন। ক্লু-লেস এসব হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। 

পিবিআই জানায়, মুন্নার হাতে হত্যার শিকার নারীরা হলেন, কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দির বানিয়াপাড়া গ্রামের আমির হোসেনের মেয়ে পান্না আক্তার ও কুমিল্লা সদর উপজেলার আমতলী গ্রামের সফিকুল ইসলামের মেয়ে লাইলী বেগম রিমা। দুই সন্তানের জননী পান্না আক্তারকে হত্যা করা হয়েছে গত ২৪ অক্টোবর। এর আগে গত ২ সেপ্টেম্বর এক সন্তানের জননী লাইলীকে হত্যা করা হয়।

পিবিআই কুমিল্লার পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান জানান, পান্না আক্তার হত্যার ঘটনায় গত ২৫ অক্টোবর সদর দক্ষিণ থানায় অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়। একপর্যায়ে পিবিআই মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব নেয়। এরপর তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় গত ৩১ অক্টোবর নগরীর রেইসকোর্স এলাকা থেকে মুন্নাকে গ্রেফতার করে। এরপর মুন্নার মোবাইল নম্বরের সঙ্গে লাইলী বেগম রিমা নামে এক নারীর মোবাইল নম্বরের যোগসূত্র খুঁজে পায় পিবিআই। লাইলীর পরিবার তার নিখোঁজের ঘটনায় আদালতে একটি অপহরণ মামলা করেছিল, ওই মামলাটিও তদন্ত করছে পিবিআই। পরে মুন্নার দেওয়া তথ্যের উপর ভিত্তি করে একই দিন তার সহযোগী মাইক্রোবাস চালক দীনুকে গ্রেফতার করা হয়।  প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা দুইজনই হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে। 

পুলিশ সুপার আরও জানান, জিজ্ঞাসাবাদে মুন্না জানিয়েছে, ওই নারীদের প্রথমে ধর্ষণ এবং পরে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যার পর বস্তায় ভরে লাশ ফেলে দিতেন মহাসড়কের পাশে। দীনুর মাইক্রোবাসে করে পান্নার লাশ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার গোপিনাথপুর এলাকায় এবং লাইলীর লাশ ফেনী সদরের শর্শদী এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে জঙ্গলে ফেলে দেওয়া হয়।

তিনি আরও বলেন, হত্যার নেশায় মেতে ওঠে মুন্না। সে একজন সিরিয়াল কিলার। এ দুইজন ছাড়া আর কাউকে এভাবে হত্যা করেছে কি-না তা যাচাই করে দেখা হচ্ছে। তার লাগাম টেনে ধরতে না পারলে কিছুদিনের মধ্যে হয়তো আরও কয়েকটি হত্যাকাণ্ড ঘটাতো সে। বিবাহিত নারীরা ছিল তার টার্গেট। তার সঙ্গে আরও অন্তত তিনজন নারীর একইভাবে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠার প্রমাণ পাওয়া গেছে, যারা ছিলো মুন্নার পরবর্তী টার্গেট।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

কুমিল্লায় প্রেমের ফাঁদে ফেলে ধর্ষণের পর হত্যাই ছিল মুন্নার নেশা

আপডেট সময় ০১:৫৬:১৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩ নভেম্বর ২০২১

কুমিল্লা জেলা প্রতিনিধিঃ

কখনো গাড়ির হেলপার, কখনো বেকারির কারিগর। প্রেমিক সেজে টাকা হাতিয়ে নেয়ার কৌশলটাও ছিল অন্যের কাছ থেকে পাওয়া। কিন্তু খুন করার পরিকল্পনা নিজের। খুনের ধরণও ছিল একই। প্রেমের ফাঁদে ফেলে টাকা হাতিয়ে নিয়ে খুন করা ছিল তার নেশা।  তার পরবর্তী টার্গেট ছিল আরও ৩ নারী। বলছিলাম কুমিল্লা পিবিআই এর হাতে গ্রেফতার হওয়া সিরিয়াল কিলার আবদুল্লাহ আনসারী ওরফে মুন্নার (২৩) কথা।

মঙ্গলবার (২ নভেম্বর) বিকালে পিবিআই কুমিল্লা কার্যালয়ে এক প্রেসব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের জানান, মুন্নার নেশা নারীদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে ধর্ষণের পর হত্যা করা। এভাবে মুন্না একজন সিরিয়াল কিলারে পরিণত হয়। এক মাসের ব্যবধানে দুই নারীকে খুন করে আরও হত্যার পরিকল্পনা ছিল তার।

প্রেসব্রিফিংয়ে পিবিআই জানায়, কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি উপজেলার বারকোটা গ্রামের শহীদুল্লাহ ভূঁইয়ার ছেলে আবদুল্লাহ আনসারী ওরফে মুন্না (২৩)। তিনি কুমিল্লা নগরীর পুলিশ লাইন এলাকার একটি ফাস্টফুড দোকানের কর্মচারী। তার সহযোগী জেলার আদর্শ সদর উপজেলার দূর্গাপুর এলাকার মো. মোস্তফা মিয়ার ছেলে দীন ইসলাম দীনু (১৯)। তাদের গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তারা জেলার সদর দক্ষিণ থানার বহুল আলোচিত পান্না আক্তার (২৮) ও লাইলী বেগম রিমা (২৬) হত্যার দায় স্বীকার করে একের পর এক লোমহর্ষক ঘটনার বর্ণনা দেন। ক্লু-লেস এসব হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। 

পিবিআই জানায়, মুন্নার হাতে হত্যার শিকার নারীরা হলেন, কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দির বানিয়াপাড়া গ্রামের আমির হোসেনের মেয়ে পান্না আক্তার ও কুমিল্লা সদর উপজেলার আমতলী গ্রামের সফিকুল ইসলামের মেয়ে লাইলী বেগম রিমা। দুই সন্তানের জননী পান্না আক্তারকে হত্যা করা হয়েছে গত ২৪ অক্টোবর। এর আগে গত ২ সেপ্টেম্বর এক সন্তানের জননী লাইলীকে হত্যা করা হয়।

পিবিআই কুমিল্লার পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান জানান, পান্না আক্তার হত্যার ঘটনায় গত ২৫ অক্টোবর সদর দক্ষিণ থানায় অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়। একপর্যায়ে পিবিআই মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব নেয়। এরপর তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় গত ৩১ অক্টোবর নগরীর রেইসকোর্স এলাকা থেকে মুন্নাকে গ্রেফতার করে। এরপর মুন্নার মোবাইল নম্বরের সঙ্গে লাইলী বেগম রিমা নামে এক নারীর মোবাইল নম্বরের যোগসূত্র খুঁজে পায় পিবিআই। লাইলীর পরিবার তার নিখোঁজের ঘটনায় আদালতে একটি অপহরণ মামলা করেছিল, ওই মামলাটিও তদন্ত করছে পিবিআই। পরে মুন্নার দেওয়া তথ্যের উপর ভিত্তি করে একই দিন তার সহযোগী মাইক্রোবাস চালক দীনুকে গ্রেফতার করা হয়।  প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা দুইজনই হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে। 

পুলিশ সুপার আরও জানান, জিজ্ঞাসাবাদে মুন্না জানিয়েছে, ওই নারীদের প্রথমে ধর্ষণ এবং পরে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যার পর বস্তায় ভরে লাশ ফেলে দিতেন মহাসড়কের পাশে। দীনুর মাইক্রোবাসে করে পান্নার লাশ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার গোপিনাথপুর এলাকায় এবং লাইলীর লাশ ফেনী সদরের শর্শদী এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে জঙ্গলে ফেলে দেওয়া হয়।

তিনি আরও বলেন, হত্যার নেশায় মেতে ওঠে মুন্না। সে একজন সিরিয়াল কিলার। এ দুইজন ছাড়া আর কাউকে এভাবে হত্যা করেছে কি-না তা যাচাই করে দেখা হচ্ছে। তার লাগাম টেনে ধরতে না পারলে কিছুদিনের মধ্যে হয়তো আরও কয়েকটি হত্যাকাণ্ড ঘটাতো সে। বিবাহিত নারীরা ছিল তার টার্গেট। তার সঙ্গে আরও অন্তত তিনজন নারীর একইভাবে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠার প্রমাণ পাওয়া গেছে, যারা ছিলো মুন্নার পরবর্তী টার্গেট।