ঢাকা ০৪:১২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

দেবিদ্বারে দালালদের খপ্পরে পড়ে সর্বস্ব হারাচ্ছে রোগীরা

hospital debeddur

শাহীন আলম, দেবিদ্বার প্রতিনিধিঃ

রোজ মঙ্গলবার, ১০ নভেম্বর ২০১৫ ইং(মুরাদনগর বার্তা ডটকম):

কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চলে স্থানীয় দালাল চক্র ও কিছু অসাধু ডাক্তারদের কর্তৃত্বে। সরে জমিনে গিয়ে দেখা গেছে, চেম্বারে ডাক্তারদের ডিউটি চলাকালীন অবস্থায় দালাল চক্র উপস্থিত থেকে রোগীদের কি কি ঔষধ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রেসক্রিপসনে লিখে তা দৃষ্টি রাখে। রোগী বা তার স্বজনরা চেম্বার থেকে বের হওয়ার সাথে সাথে দালাল  চক্রের ব্যবস্থাপত্র জোর করে দেখে নেয়ার প্রবনতা এবং রোগী ও স্বজনদের ফুসলিয়ে চুক্তিকৃত প্রাইভেট ক্লিনিকে নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেয়ার উদ্গ্রীব তৎপরতা। কিছু কিছু ডাক্তারদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, সংশ্লিষ্ট ডাক্তারই দালালের হাতে প্রেসক্রিপসন দিয়ে বলে ‘ওর সাথে যান, বাহির থেকে পরীক্ষাগুলোর রির্পোট নিয়ে আসেন’। চুক্তিবদ্ধ প্রাইভেট হসপিটালে যত পরীক্ষা-নিরীক্ষা হবে তার মোটা অংকের ভাগ চলে আসে কতিপয় দালাল ও ডাক্তারদের পকেটে।
ভোক্তভোগীরা অভিযোগ করে বলেন, দূর দূরান্ত থেকে সেবা নিতে এসে ডাক্তার ও দালালদের খপ্পরে পড়ে হয়রানির শিকার হতে হয় সাধারণ মানুষদের। এছাড়াও কিছু কিছু আবাসিক নার্সদের অমার্জিত আচরণেও ক্ষুদ্ধ ভোক্তভোগীরা। দেবিদ্বার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ঘুরে দেখা গেছে এমনই চিত্র। তিন টাকার টিকেট কাটার পরও চেম্বারে গিয়ে বাড়তি ভিজিট ফি দিতে হয় এমন অভিযোগ করে একজন ভোক্তভোগী জানায়, কিছু ডাক্তার সরাসরি ভিজিট না নিলেও ব্যক্তিগত নিয়োগকৃত সহকারীরা ভিজিট আদায় করে নেয়। পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ ও প্রশাসনিক হস্তক্ষেপে দালালদের উৎপাত বন্ধ হলেও কিছুদিন না যেতেই আবারও ফিরে আসে পুরানো রুপ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নার্স জানায়, দালাল চক্রের দল ক্রমে ক্রমে বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাদের খপ্পরে পড়ে সর্বস্ব হারাচ্ছে সাধারণ মানুষ । কিছু ডাক্তার হসপিটালে দালালদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দিয়ে থাকে ফলে এসব দালাল চক্র ডাক্তারের পক্ষে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন অপকর্ম করে। কিছু কিছু সময় ডাক্তারও জিম্মি থাকে এসব দালালদের কাছে।
হসপিটাল চলাকালীন সময়ে চেম্বারে ব্যক্তিগত লোক নিয়োগ ও ভিজিট নেয়া প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: সাইফুল ইসলাম জানান, এ দুটোই অবৈধ, হসপিটালের ডিউটির নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত চেম্বারে ডাক্তার আর রোগী ছাড়া ব্যক্তিগত সহকারী চেম্বারে থাকা এবং ভিজিট নেয়া এ দুটোই অবৈধ এ ব্যাপারে অভিযোগ আসলে সংশ্লিষ্ট ডাক্তারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি আরও জানান, দালাল ও অপরাধ চক্রে জড়িত সংশ্লিষ্ট ডাক্তারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য উপজেলা প্রশাসন থেকে  উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স (ইউএইচ পি) কে চিঠি দেয়া হয়েছে যার অনুলিপি জেলা প্রশাসক মহোদয়ের কাছেও প্রেরণ করা হয়েছে।
পরবর্তীতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স (ইউএইচপি) ফিরতি চিঠির মাধ্যমে জানিয়েছে, অপরাধে জড়িত ডাক্তার ও দালালদের সর্তক করে দিয়েছে। যার অনুলিটি উপজেলা প্রশাসন ও অফিসার ইনচার্জ (ওসি)  কাছে জমা দিয়েছে। পরবর্তীতে আবারও দালালদের উৎপাত বৃদ্ধির বিষয়টি নজরে এসেছে, স্থায়ীভাবে দালাল উৎখাতের জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হবে। আর যদি কোন ডাক্তার দালালদের সাথে যোগসাজশ থাকে এমন কোন তথ্য পাই তা সরাসরি সিভিল সার্জন অফিসারকে জানানো হবে।
দালালদের উৎপাত ও ডাক্তারদের অনিয়ম প্রসঙ্গে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো: রুহুল আমীন জানায়, সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মানুষ আসে সেবা নিতে, এখন সেবা নিতে এসে যদি দালাল ও কিছু অসাধু ডাক্তারদের হাতে রোগীদের হয়রানি হতে হয় এটা দু:খজনক। তিনি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন,   সরকার স্বাস্থ্য খাতে কোটি কোটি টাকা ইনভেস্ট করছে জন সাধারণকে সেবা দেয়ার জন্য, আর  এ সেবার  বদলে জনগণ কে যদি দালাল বা  অসাধু ডাক্তারদের হাতে হয়রানির শিকার হতে হয় তার জন্য প্রশাসনিক ভাবে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ট্যাগস

দেবিদ্বারে দালালদের খপ্পরে পড়ে সর্বস্ব হারাচ্ছে রোগীরা

আপডেট সময় ০৪:২৫:২৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ নভেম্বর ২০১৫

hospital debeddur

শাহীন আলম, দেবিদ্বার প্রতিনিধিঃ

রোজ মঙ্গলবার, ১০ নভেম্বর ২০১৫ ইং(মুরাদনগর বার্তা ডটকম):

কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চলে স্থানীয় দালাল চক্র ও কিছু অসাধু ডাক্তারদের কর্তৃত্বে। সরে জমিনে গিয়ে দেখা গেছে, চেম্বারে ডাক্তারদের ডিউটি চলাকালীন অবস্থায় দালাল চক্র উপস্থিত থেকে রোগীদের কি কি ঔষধ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রেসক্রিপসনে লিখে তা দৃষ্টি রাখে। রোগী বা তার স্বজনরা চেম্বার থেকে বের হওয়ার সাথে সাথে দালাল  চক্রের ব্যবস্থাপত্র জোর করে দেখে নেয়ার প্রবনতা এবং রোগী ও স্বজনদের ফুসলিয়ে চুক্তিকৃত প্রাইভেট ক্লিনিকে নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেয়ার উদ্গ্রীব তৎপরতা। কিছু কিছু ডাক্তারদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, সংশ্লিষ্ট ডাক্তারই দালালের হাতে প্রেসক্রিপসন দিয়ে বলে ‘ওর সাথে যান, বাহির থেকে পরীক্ষাগুলোর রির্পোট নিয়ে আসেন’। চুক্তিবদ্ধ প্রাইভেট হসপিটালে যত পরীক্ষা-নিরীক্ষা হবে তার মোটা অংকের ভাগ চলে আসে কতিপয় দালাল ও ডাক্তারদের পকেটে।
ভোক্তভোগীরা অভিযোগ করে বলেন, দূর দূরান্ত থেকে সেবা নিতে এসে ডাক্তার ও দালালদের খপ্পরে পড়ে হয়রানির শিকার হতে হয় সাধারণ মানুষদের। এছাড়াও কিছু কিছু আবাসিক নার্সদের অমার্জিত আচরণেও ক্ষুদ্ধ ভোক্তভোগীরা। দেবিদ্বার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ঘুরে দেখা গেছে এমনই চিত্র। তিন টাকার টিকেট কাটার পরও চেম্বারে গিয়ে বাড়তি ভিজিট ফি দিতে হয় এমন অভিযোগ করে একজন ভোক্তভোগী জানায়, কিছু ডাক্তার সরাসরি ভিজিট না নিলেও ব্যক্তিগত নিয়োগকৃত সহকারীরা ভিজিট আদায় করে নেয়। পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ ও প্রশাসনিক হস্তক্ষেপে দালালদের উৎপাত বন্ধ হলেও কিছুদিন না যেতেই আবারও ফিরে আসে পুরানো রুপ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নার্স জানায়, দালাল চক্রের দল ক্রমে ক্রমে বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাদের খপ্পরে পড়ে সর্বস্ব হারাচ্ছে সাধারণ মানুষ । কিছু ডাক্তার হসপিটালে দালালদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দিয়ে থাকে ফলে এসব দালাল চক্র ডাক্তারের পক্ষে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন অপকর্ম করে। কিছু কিছু সময় ডাক্তারও জিম্মি থাকে এসব দালালদের কাছে।
হসপিটাল চলাকালীন সময়ে চেম্বারে ব্যক্তিগত লোক নিয়োগ ও ভিজিট নেয়া প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: সাইফুল ইসলাম জানান, এ দুটোই অবৈধ, হসপিটালের ডিউটির নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত চেম্বারে ডাক্তার আর রোগী ছাড়া ব্যক্তিগত সহকারী চেম্বারে থাকা এবং ভিজিট নেয়া এ দুটোই অবৈধ এ ব্যাপারে অভিযোগ আসলে সংশ্লিষ্ট ডাক্তারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি আরও জানান, দালাল ও অপরাধ চক্রে জড়িত সংশ্লিষ্ট ডাক্তারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য উপজেলা প্রশাসন থেকে  উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স (ইউএইচ পি) কে চিঠি দেয়া হয়েছে যার অনুলিপি জেলা প্রশাসক মহোদয়ের কাছেও প্রেরণ করা হয়েছে।
পরবর্তীতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স (ইউএইচপি) ফিরতি চিঠির মাধ্যমে জানিয়েছে, অপরাধে জড়িত ডাক্তার ও দালালদের সর্তক করে দিয়েছে। যার অনুলিটি উপজেলা প্রশাসন ও অফিসার ইনচার্জ (ওসি)  কাছে জমা দিয়েছে। পরবর্তীতে আবারও দালালদের উৎপাত বৃদ্ধির বিষয়টি নজরে এসেছে, স্থায়ীভাবে দালাল উৎখাতের জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হবে। আর যদি কোন ডাক্তার দালালদের সাথে যোগসাজশ থাকে এমন কোন তথ্য পাই তা সরাসরি সিভিল সার্জন অফিসারকে জানানো হবে।
দালালদের উৎপাত ও ডাক্তারদের অনিয়ম প্রসঙ্গে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো: রুহুল আমীন জানায়, সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মানুষ আসে সেবা নিতে, এখন সেবা নিতে এসে যদি দালাল ও কিছু অসাধু ডাক্তারদের হাতে রোগীদের হয়রানি হতে হয় এটা দু:খজনক। তিনি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন,   সরকার স্বাস্থ্য খাতে কোটি কোটি টাকা ইনভেস্ট করছে জন সাধারণকে সেবা দেয়ার জন্য, আর  এ সেবার  বদলে জনগণ কে যদি দালাল বা  অসাধু ডাক্তারদের হাতে হয়রানির শিকার হতে হয় তার জন্য প্রশাসনিক ভাবে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।