ঢাকা ০২:৫৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

মরাদগরে মুক্তিযোদ্ধা সনদ বানিয়ে রাজাকারের ছেলের চাকুরি

হাবিবুর রহমানঃ

রোজ বুধবার, ২৫ নভেম্বর ২০১৫ ইং(মুরাদনগর বাতা ডটকম):

কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার দারোরা ইউনিয়নের পদুয়া গ্রামের জব্বার আলী ওরফে রুক্কু মিয়া চিহ্নিত রাজাকার হয়েও তার পুত্র জামাল হোসেন মিথ্যা মুক্তিযোদ্ধা সনদ বানিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় পুলিশ সার্জেন্ট পদে চাকরি করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যে তার আরেক ছেলে মহসীন মিয়াও মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৩৪তম বিসিএস প্রশাসনে চাকরি নেওয়ার তৎপরতা চালাচ্ছেন বলে জানা যায়। বিষয়টি জানাজানি হলে সর্বমহলে চলছে তোলপাড়।

জানা গেছে, উপজেলার পদুয়া গ্রামের মৃত আলীম উদ্দিনের ছেলে জব্বার আলী ওরফে রুক্কু মিয়া ১৯৭১ সালে যুদ্ধ চলাকালীন পাকিস্তানি বাহিনীকে বিভিন্নভাবে সহায়তা করেন। ওই সময় তিনি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে খুন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুটতরাজ ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের ওপর নির্যাতন চালিয়েছিলেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালের ১৪ এপ্রিল যুদ্ধাপরাধী জব্বার আলী ওরফে রুক্কু মিয়ার বিরুদ্ধে দ-বিধি ১৪৮/৩৭৯/৩৮০/৩০৭ ধারায় মুরাদনগর থানায় মামলা হয় (যার নং-১২/জিআর ২৭৪/১২)। পুলিশ দীর্ঘ তদন্ত শেষে ঘটনার সত্যতা পেয়ে অভিযোগপত্র প্রদান করলে আদালত তা গ্রহণ করেন। পরে বিচারের জন্য মামলাটিকে কোলাবরেটরস স্পেশাল ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয় (যার নং ১২৭/৭২)। ওই মামলায় দীর্ঘ ১৮ মাস জেলখানায় থাকার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাধারণ ক্ষমায় যুদ্ধাপরাধী জব্বার আলী ওরফে রুক্কু মিয়া ছাড়া পায়। একজন চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী হিসেবে দীর্ঘদিন চুপচাপ থাকার পর কতিপয় নামধারী মুক্তিযোদ্ধার সহায়তায় মুক্তিযোদ্ধা বনে যান জব্বার আলী। ১৯৯৮-৯৯ সালে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় তার পুত্র জামাল হোসেন পুলিশ সার্জেন্ট পদে চাকরি লাভ করে। এটি জানাজানি হলে তৎকালীন উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার অ্যাডভোকেট শামসুল হক ফিরোজ ২০১২ সালের ১৯ জানুয়ারি রুক্কু মিয়ার সম্মানী ভাতা বন্ধ করে দেন। একই সঙ্গে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ ও রাষ্টীয় অর্থ উদ্ধারের জন্য বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের মহাসচিবের (প্রশাসন) কাছে অভিযোগ করেন। জব্বার আলী সেই সম্মানী ভাতা নতুন করে পেতে তৎপরতা চালাচ্ছেন। সম্প্রতি বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল কর্তৃক চাওয়া রাজাকারের তালিকায়ও যুদ্ধাপরাধী জব্বার আলী ওরফে রুক্কু মিয়ার নাম রয়েছে বলে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সূত্রে জানা গেছে।

যুদ্ধকালীন ও বর্তমান দারোরা ইউনিয়ন কমান্ডার রোশন আলী, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সদস্য মোহাম্মদ আলী ও মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল করিম মোল্লা গত মঙ্গলবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করে যুদ্ধাপরাধী জব্বার আলী কী করে মুক্তিযোদ্ধা সনদ লাভ করেন তা জানতে চান। তারা এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগও দেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মনসুর উদ্দিন বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলে তাদের আশ্বস্ত করেন।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী জব্বার আলী ওরফে রুক্কু মিয়ার সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।
তবে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার হারুনুর রশীদ জানান, জব্বার আলী যুদ্ধাপরাধী একথা প্রকাশ হওয়ার পর পূর্ববর্তী কমান্ডার তার সম্মানী ভাতা বাতিল করে দেন। তার পুনরায় ভাতা পাওয়ার সুযোগ নেই। ইতোমধ্যে তার নাম রাজাকারের তালিকায়ও দেওয়া হয়েছে।

ট্যাগস

মরাদগরে মুক্তিযোদ্ধা সনদ বানিয়ে রাজাকারের ছেলের চাকুরি

আপডেট সময় ০৫:৩৫:০০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ নভেম্বর ২০১৫

হাবিবুর রহমানঃ

রোজ বুধবার, ২৫ নভেম্বর ২০১৫ ইং(মুরাদনগর বাতা ডটকম):

কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার দারোরা ইউনিয়নের পদুয়া গ্রামের জব্বার আলী ওরফে রুক্কু মিয়া চিহ্নিত রাজাকার হয়েও তার পুত্র জামাল হোসেন মিথ্যা মুক্তিযোদ্ধা সনদ বানিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় পুলিশ সার্জেন্ট পদে চাকরি করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যে তার আরেক ছেলে মহসীন মিয়াও মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৩৪তম বিসিএস প্রশাসনে চাকরি নেওয়ার তৎপরতা চালাচ্ছেন বলে জানা যায়। বিষয়টি জানাজানি হলে সর্বমহলে চলছে তোলপাড়।

জানা গেছে, উপজেলার পদুয়া গ্রামের মৃত আলীম উদ্দিনের ছেলে জব্বার আলী ওরফে রুক্কু মিয়া ১৯৭১ সালে যুদ্ধ চলাকালীন পাকিস্তানি বাহিনীকে বিভিন্নভাবে সহায়তা করেন। ওই সময় তিনি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে খুন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুটতরাজ ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের ওপর নির্যাতন চালিয়েছিলেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালের ১৪ এপ্রিল যুদ্ধাপরাধী জব্বার আলী ওরফে রুক্কু মিয়ার বিরুদ্ধে দ-বিধি ১৪৮/৩৭৯/৩৮০/৩০৭ ধারায় মুরাদনগর থানায় মামলা হয় (যার নং-১২/জিআর ২৭৪/১২)। পুলিশ দীর্ঘ তদন্ত শেষে ঘটনার সত্যতা পেয়ে অভিযোগপত্র প্রদান করলে আদালত তা গ্রহণ করেন। পরে বিচারের জন্য মামলাটিকে কোলাবরেটরস স্পেশাল ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয় (যার নং ১২৭/৭২)। ওই মামলায় দীর্ঘ ১৮ মাস জেলখানায় থাকার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাধারণ ক্ষমায় যুদ্ধাপরাধী জব্বার আলী ওরফে রুক্কু মিয়া ছাড়া পায়। একজন চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী হিসেবে দীর্ঘদিন চুপচাপ থাকার পর কতিপয় নামধারী মুক্তিযোদ্ধার সহায়তায় মুক্তিযোদ্ধা বনে যান জব্বার আলী। ১৯৯৮-৯৯ সালে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় তার পুত্র জামাল হোসেন পুলিশ সার্জেন্ট পদে চাকরি লাভ করে। এটি জানাজানি হলে তৎকালীন উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার অ্যাডভোকেট শামসুল হক ফিরোজ ২০১২ সালের ১৯ জানুয়ারি রুক্কু মিয়ার সম্মানী ভাতা বন্ধ করে দেন। একই সঙ্গে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ ও রাষ্টীয় অর্থ উদ্ধারের জন্য বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের মহাসচিবের (প্রশাসন) কাছে অভিযোগ করেন। জব্বার আলী সেই সম্মানী ভাতা নতুন করে পেতে তৎপরতা চালাচ্ছেন। সম্প্রতি বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল কর্তৃক চাওয়া রাজাকারের তালিকায়ও যুদ্ধাপরাধী জব্বার আলী ওরফে রুক্কু মিয়ার নাম রয়েছে বলে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সূত্রে জানা গেছে।

যুদ্ধকালীন ও বর্তমান দারোরা ইউনিয়ন কমান্ডার রোশন আলী, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সদস্য মোহাম্মদ আলী ও মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল করিম মোল্লা গত মঙ্গলবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করে যুদ্ধাপরাধী জব্বার আলী কী করে মুক্তিযোদ্ধা সনদ লাভ করেন তা জানতে চান। তারা এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগও দেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মনসুর উদ্দিন বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলে তাদের আশ্বস্ত করেন।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী জব্বার আলী ওরফে রুক্কু মিয়ার সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।
তবে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার হারুনুর রশীদ জানান, জব্বার আলী যুদ্ধাপরাধী একথা প্রকাশ হওয়ার পর পূর্ববর্তী কমান্ডার তার সম্মানী ভাতা বাতিল করে দেন। তার পুনরায় ভাতা পাওয়ার সুযোগ নেই। ইতোমধ্যে তার নাম রাজাকারের তালিকায়ও দেওয়া হয়েছে।