ঢাকা ০৭:৩৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

মামলায় আটকে আছে দেবিদ্বার পৌর নির্বাচন

pc muradnagarbarta 11-12-15

মো: শাহীন আলম, দেবিদ্বার প্রতিনিধিঃ

রোজ শুক্রবার, ১১ ডিসেম্বর ২০১৫ ইং(মুরাদনগর বার্তা ডটকম):

সারা দেশে চলতি মাসে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে পৌর নির্বাচন। তেমনি কুমিল্লার দেবিদ্বারেও পৌর নির্বাচন হবে এ আশায় বুক বেঁধে ছিলো একদিক সম্ভাব্য পৌর মেয়র ,ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। দেবিদ্বার পৌর নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনায় প্রচার প্রচরণায় উৎসবমুখর নির্বাচনী আমেজ সৃষ্টি হয়েছিলো প্রার্থী ও ভোটারদের মধ্যে। কিন্তু দীর্ঘ একযুগের পরও পৌর সীমানা সংক্রান্ত জটিলতার দুটি মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ায় এবং নির্বাচন অনিশ্চতায় হতাশ হয়ে পড়েছেন ভোটার ও সম্ভাব্য প্রার্থীরা। আদৌ দেবিদ্বার পৌর নির্বাচন হবে কি না প্রশ্ন ভোটার ও প্রার্থীদের? সংশ্লিষ্ট পৌর কর্তৃপক্ষ কিংবা উপজেলা নির্বাচন অফিসও এ ব্যাপারে নিশ্চিত কিছু বলতে পারছে না।

জানা যায়, দেবিদ্বারের বিএনপি জোটের সাংসদ ইঞ্জিনিয়ার মঞ্জুরুল আহসান মুন্সীর উদ্যোগে ২০০২ সালে ১ কোটি পাঁচ লক্ষ টাকা ব্যয়ে উপজেলার গুনাইঘরে দেবিদ্বার পৌর ভবন নির্মাণ করা হয়। একই বছরের ৪ সেপ্টেম্বর দেবিদ্বার পৌরসভার গেজেট প্রকাশের পর উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন নিয়ে একই মাসের ১৩ সেপ্টেম্বর দেবিদ্বার পৌর সভার আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়।
কিন্তু কার্যক্রমের শুরুর দিকেই সীমানা জটিলতায় জনমনে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বিগত আ’লীগ সরকারে আমলে গৃহীত পৌরসভার প্রাথমিক নকশায় সীমানা বৃদ্ধি করতে গিয়ে  গোমতী নদী অতিক্রমসহ কৃষিনির্ভর ও অনুন্নত অনেক এলাকা অন্তর্ভুক্ত করা হয়। পরে ওই নকশার আংশিক পরিবর্তন করে ২০০৫ সালে ১৮ই জানুয়ারী ওয়ার্ড বিভক্তিকরণ চূড়ান্ত করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু সীমানা সংক্রান্ত জটিলতার আপত্তি থেকেই যায়। ২০০৭ সালে স্থানীয় আবদুল মতিন নামে একজন বড়আলমপুর, ভিংলাবাড়ী, ফতেহাবাদ ও মরিচাকান্দা এ চার গ্রাম যাতে পৌরসভার অন্তর্ভুক্ত না করা হয়, সে জন্য সুপ্রিম কোর্টে একটি মামলা দায়ের করেন এবং ২০০৯ সালে ১ মে স্থানীয় আরেকজন আসাদুজ্জামান পাঠান পৌরসভা বাতিলের দাবীতে হাইকোর্টে আরেকটি মামলা করেন, এক যুগ অতিক্রম হলেও এ দুটি মামলার নিষ্পত্তির কেউ উদ্যোগ নেয়নি । ফলে অনিশ্চিত হয়ে পড়ে দেবিদ্বার পৌর নির্বাচন।
এদিকে , তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে গুনাইঘর পৌর ভবনে যাওয়ার যাতায়ত সমস্যার অজুহাতে ওই পৌরভবন তালাবদ্ধ রেখে পৌরসভার কার্যক্রম চালানো হচ্ছে পৌর গণ পাঠাগারের অস্থায়ী কার্যালয়ে । এতে সরকারি অর্থে নির্মিত পৌর ভবনটি ৭বছর ধরে অকার্যকর হয়ে পড়ে আছে এবং ভবনের চারপশে গবাদিপুশুর বিচরণ, বখাটে ও মাদকসেবীদের অভায়ারন্য যাতায়তসহ নষ্ট হচ্ছে দরজা-জানালা ও মূল্যবান আসবাবপত্র।

অন্যদিকে, পৌরগণ পাঠাগারে পৌরসভার কার্যক্রম কাগজে কলমে চালু থাকলেও বাস্তবে তা বন্ধ রয়েছে। উচ্চ আদলতে দুটি মামলা থাকায় র্দীঘদিন ঝুলে আছে এ পৌরসভার নির্বাচন। ফলে জনপ্রতিনিধির বদলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা  ও পৌর প্রশাসকই হচ্ছেন এই সেবাবঞ্চিত পৌরবাসীর সেবা লাভের একমাত্র ভরসা।

কুমিল্লা-৪ (দেবিদ্বার) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য রাজী মোহাম্মদ ফখরুল বলেন, দেবিদ্বার পৌরসভার উন্নয়নের জন্য পৌর নির্বাচন অতিব জরুরী নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ছাড়া উন্নয়ন সম্ভব নয়। নির্বাচনের লক্ষ্যে ও পৌরবাসীর পূর্ণাঙ্গ নাগরিক সুবিধা ভোগ করার স্বার্থে মামলাগুলো প্রত্যাহারের আহবান জানাচ্ছি। সম্ভাব্য পৌর মেয়র প্রার্থী ও সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আবুল কাশেম বলেন, দেবিদ্বার পৌর নির্বাচন না হওয়ায় র্দীঘদিন ধরে পৌরসভার অধিবাসীরা নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, এবং বিভিন্ন ওয়ার্ডের সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না, আমি সরকারের কাছে অনুরোধ করছি , দ্রুত এ মামলাগুলো প্রত্যাহার পূর্বক একটি সুষ্ঠু ও গ্রহনযোগ্য নির্বাচন দেয়া হোক।

পৌর প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: সাইফুল ইসলাম বলেন, পৌর ভবনটি উপজেলা সদর থেকে দূরে হওয়ায় স্থানীয়দের যাতায়তের সুবিধাসহ নানাবিধ কারণে  অস্থায়ী ভাবে পৌর গণ পাঠাগারে পৌরসভার কার্যক্রম চলে আসছে । উর্ধ্বতন  কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে  অচিরেই পৌরসভার স্থায়ী ভবনে প্রশাসনিক কার্যক্রম চালানোর ব্যবস্থা করা হবে এছাড়াও চলমান মামলা দুটি নিষ্পত্তি হলে পৌর নির্বাচন হতে আর কোন বাধা থাকবে না।

ট্যাগস

মামলায় আটকে আছে দেবিদ্বার পৌর নির্বাচন

আপডেট সময় ০৮:২০:৫৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১১ ডিসেম্বর ২০১৫

pc muradnagarbarta 11-12-15

মো: শাহীন আলম, দেবিদ্বার প্রতিনিধিঃ

রোজ শুক্রবার, ১১ ডিসেম্বর ২০১৫ ইং(মুরাদনগর বার্তা ডটকম):

সারা দেশে চলতি মাসে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে পৌর নির্বাচন। তেমনি কুমিল্লার দেবিদ্বারেও পৌর নির্বাচন হবে এ আশায় বুক বেঁধে ছিলো একদিক সম্ভাব্য পৌর মেয়র ,ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। দেবিদ্বার পৌর নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনায় প্রচার প্রচরণায় উৎসবমুখর নির্বাচনী আমেজ সৃষ্টি হয়েছিলো প্রার্থী ও ভোটারদের মধ্যে। কিন্তু দীর্ঘ একযুগের পরও পৌর সীমানা সংক্রান্ত জটিলতার দুটি মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ায় এবং নির্বাচন অনিশ্চতায় হতাশ হয়ে পড়েছেন ভোটার ও সম্ভাব্য প্রার্থীরা। আদৌ দেবিদ্বার পৌর নির্বাচন হবে কি না প্রশ্ন ভোটার ও প্রার্থীদের? সংশ্লিষ্ট পৌর কর্তৃপক্ষ কিংবা উপজেলা নির্বাচন অফিসও এ ব্যাপারে নিশ্চিত কিছু বলতে পারছে না।

জানা যায়, দেবিদ্বারের বিএনপি জোটের সাংসদ ইঞ্জিনিয়ার মঞ্জুরুল আহসান মুন্সীর উদ্যোগে ২০০২ সালে ১ কোটি পাঁচ লক্ষ টাকা ব্যয়ে উপজেলার গুনাইঘরে দেবিদ্বার পৌর ভবন নির্মাণ করা হয়। একই বছরের ৪ সেপ্টেম্বর দেবিদ্বার পৌরসভার গেজেট প্রকাশের পর উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন নিয়ে একই মাসের ১৩ সেপ্টেম্বর দেবিদ্বার পৌর সভার আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়।
কিন্তু কার্যক্রমের শুরুর দিকেই সীমানা জটিলতায় জনমনে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বিগত আ’লীগ সরকারে আমলে গৃহীত পৌরসভার প্রাথমিক নকশায় সীমানা বৃদ্ধি করতে গিয়ে  গোমতী নদী অতিক্রমসহ কৃষিনির্ভর ও অনুন্নত অনেক এলাকা অন্তর্ভুক্ত করা হয়। পরে ওই নকশার আংশিক পরিবর্তন করে ২০০৫ সালে ১৮ই জানুয়ারী ওয়ার্ড বিভক্তিকরণ চূড়ান্ত করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু সীমানা সংক্রান্ত জটিলতার আপত্তি থেকেই যায়। ২০০৭ সালে স্থানীয় আবদুল মতিন নামে একজন বড়আলমপুর, ভিংলাবাড়ী, ফতেহাবাদ ও মরিচাকান্দা এ চার গ্রাম যাতে পৌরসভার অন্তর্ভুক্ত না করা হয়, সে জন্য সুপ্রিম কোর্টে একটি মামলা দায়ের করেন এবং ২০০৯ সালে ১ মে স্থানীয় আরেকজন আসাদুজ্জামান পাঠান পৌরসভা বাতিলের দাবীতে হাইকোর্টে আরেকটি মামলা করেন, এক যুগ অতিক্রম হলেও এ দুটি মামলার নিষ্পত্তির কেউ উদ্যোগ নেয়নি । ফলে অনিশ্চিত হয়ে পড়ে দেবিদ্বার পৌর নির্বাচন।
এদিকে , তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে গুনাইঘর পৌর ভবনে যাওয়ার যাতায়ত সমস্যার অজুহাতে ওই পৌরভবন তালাবদ্ধ রেখে পৌরসভার কার্যক্রম চালানো হচ্ছে পৌর গণ পাঠাগারের অস্থায়ী কার্যালয়ে । এতে সরকারি অর্থে নির্মিত পৌর ভবনটি ৭বছর ধরে অকার্যকর হয়ে পড়ে আছে এবং ভবনের চারপশে গবাদিপুশুর বিচরণ, বখাটে ও মাদকসেবীদের অভায়ারন্য যাতায়তসহ নষ্ট হচ্ছে দরজা-জানালা ও মূল্যবান আসবাবপত্র।

অন্যদিকে, পৌরগণ পাঠাগারে পৌরসভার কার্যক্রম কাগজে কলমে চালু থাকলেও বাস্তবে তা বন্ধ রয়েছে। উচ্চ আদলতে দুটি মামলা থাকায় র্দীঘদিন ঝুলে আছে এ পৌরসভার নির্বাচন। ফলে জনপ্রতিনিধির বদলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা  ও পৌর প্রশাসকই হচ্ছেন এই সেবাবঞ্চিত পৌরবাসীর সেবা লাভের একমাত্র ভরসা।

কুমিল্লা-৪ (দেবিদ্বার) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য রাজী মোহাম্মদ ফখরুল বলেন, দেবিদ্বার পৌরসভার উন্নয়নের জন্য পৌর নির্বাচন অতিব জরুরী নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ছাড়া উন্নয়ন সম্ভব নয়। নির্বাচনের লক্ষ্যে ও পৌরবাসীর পূর্ণাঙ্গ নাগরিক সুবিধা ভোগ করার স্বার্থে মামলাগুলো প্রত্যাহারের আহবান জানাচ্ছি। সম্ভাব্য পৌর মেয়র প্রার্থী ও সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আবুল কাশেম বলেন, দেবিদ্বার পৌর নির্বাচন না হওয়ায় র্দীঘদিন ধরে পৌরসভার অধিবাসীরা নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, এবং বিভিন্ন ওয়ার্ডের সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না, আমি সরকারের কাছে অনুরোধ করছি , দ্রুত এ মামলাগুলো প্রত্যাহার পূর্বক একটি সুষ্ঠু ও গ্রহনযোগ্য নির্বাচন দেয়া হোক।

পৌর প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: সাইফুল ইসলাম বলেন, পৌর ভবনটি উপজেলা সদর থেকে দূরে হওয়ায় স্থানীয়দের যাতায়তের সুবিধাসহ নানাবিধ কারণে  অস্থায়ী ভাবে পৌর গণ পাঠাগারে পৌরসভার কার্যক্রম চলে আসছে । উর্ধ্বতন  কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে  অচিরেই পৌরসভার স্থায়ী ভবনে প্রশাসনিক কার্যক্রম চালানোর ব্যবস্থা করা হবে এছাড়াও চলমান মামলা দুটি নিষ্পত্তি হলে পৌর নির্বাচন হতে আর কোন বাধা থাকবে না।