ঢাকা ০২:২২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

মুরাদনগরে বর্ষাকালে বেড়েছে নৌকা তৈরির হিড়িক, ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা

মোঃ মোশাররফ হোসেন মনিরঃ

এখন বর্ষাকাল। নদী, খাল ও বিলে পনি আর পানি। তাই কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলায় চলছে নৌকা তৈরির হিড়িক। পাশাপাশি চলছে পুরনো নৌকা মেরামতের কাজও। শুরু হয় নৌকা তৈরির কাজ। এরই অংশ হিসেবে বর্তমানে নৌকা তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন নৌকা তৈরির কারিগররা। গত বছরের তুলনায় কাঠের দাম বেশি হওয়ায় এবার নৌকার মূল্য একটু বেশি হলেও। জমে উঠেছে নৌকা বিক্রির পালা। মুরাদনগরসহ পাশ্ববর্তী ৬টি উপজেলার দরিদ্র জনগোষ্ঠী অধ্যষিত অঞ্চলের প্রায় লক্ষাধিক মানুষ জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে মাছ শিকার করে জীবনধারন ও যাতায়তের জন্য এ কোষা নৌকার উপর নির্ভরশীল থাকেন।

আগের মত এখন নৌকার তেমন চাহিদা না থাকলেও আষাঢ় মাসের আগমন ঘিরে বেড়ে যায় নৌকার চাহিদা। প্রতিবছরের নেয় এবারও বর্ষা আসার আগে থেকে এ উপজেলার অধিকাংশ জনপদ পানিতে থৈ থৈ করে। ডুবে যায় অনেক রাস্তাঘাট, নদী-নালা, খাল-বিল। যাতায়াত করতে হয় নৌকায়। মৎস্যজীবীরা মাছ ধরার কাজে ব্যবহার করে ছোট-বড় নৌকা। তাই বর্ষা মৌসুম আসলে এই অঞ্চলে বেড়ে যায় নৌকার কদর। তাই ওইসব অঞ্চলে নৌকার চাহিদা মিটাতে এখন দিন রাত পরিশ্রম করে একের পর এক নৌকা তৈর করছেন নৌকা তৈরির কারিগররা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার বালুছনা, কৈজুরী, কাঠালিয়াকান্দা ও পাচঁকিত্তাসহ বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে দেখা যায় চলছে নৌকা তৈরি ও মেরামতের ধুম। কেউ কাঠ কাটছেন, আবার কেউ নৌকায় আলকাতরা লাগাচ্ছেন। হাতুড়ি কাঠের খুটখাটে শৈল্পিক ছন্দে যে কারও মন ভওে যায় সেখানে গেলে। প্রখল রোদ ও বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে বর্ষার আগমনের শুরু থেকে ব্যস্ত সময় পার করছেন। পরিবারের পুরুষদের পাশাপাশি নৌকা তৈরিতেও কাজ করছেন নারীরা। ক্ষিতিশ চন্দ্র সরকার, বুলু সরকার, খোকন সরকার, বিদুল সরকার সহ অন্তত ১০টি পরিবার নৌকা তৈরির পেশায় যুক্ত। অন্যান্য মৌসুমে তারা কাঠমিস্ত্রির পেশায় যুক্ত থাকলেও বর্ষার মৌসুমে তৈরি করেন কাঠের নৌকা। এখানে তৈরি নৌকা এ উপজেলার শত বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী বৃহত্তম বাজার রামচন্দ্রপুর, ডুমুরিয়া ও ইলিয়টগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে নিয়ে যাওয়া হয় বিক্রির জন্য। প্রতিটি নৌকা ৬-৮ হাজার টাকা বিক্রি করেন তারা। তা থেকে কোন কোন নৌকায় ১২-১৫শ টাকা লাভ হয়।

নৌকার কারিগর লোহাগাড়া গ্রামের মৃত. কালাচাঁন চন্দ্র সরকারের ছেলে ক্ষিতিশ চন্দ্র সরকার বলেন, ৫০বছর যাবত নৌকা তৈরির কাজ করছি। সামনে বর্ষা মৌসুম ইতিমধ্যে তৈরি করেছি ৫টি নৌকা। আগের মত নৌকার চাহিদা তেমন নেই, কিন্তুবর্ষার শুরুতে নৌকার চাহিদা থাকে তাই বসে না থেকে পরিবারের ভরনপোষনের জন্য নৌকা তৈরির কাজ চালিয়ে চালিয়ে যাচ্ছি। নৌকা তৈরির অন্য এক কারিগর একই গ্রামের মৃত. সনাতন সরকারের ছেলে রাসু সরকার বলেন, আমি ছোটবেলা থেকেই নৌকা তৈরির কাজে জড়িত। বর্ষার মৌসুম তাই এখন ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে জেলেদের মাছ ধরার নৌকা বানানোর কাজে। চাহিদা মোতাবেক ছোট, বড় বিভিন্ন রকম নৌকা বানানো হয়। আর নৌকার আকারবেধে দাম নির্ধারণ করা হয়। এ মৌসুমে ৪০-৫০টি নৌকা বানানোর পরিকল্পনা রয়েছে। তবে নৌকা তৈরির মৌসুমে আমাদের একসাথে অনেক টাকার কাঠ কিনতে হয় নৌকা তৈরির জন্য। আর এ টাকা আমরা ঋণ করে এনে নৌকা বিক্রি শেষে লাভের একটা অংশ ওই ঋণদাতাকে দিয়ে দিতে হয়। সরকার যদি এ ব্যাপারে আমাদের সহযোগীতা করত তাহলে আমাদের কষ্ট অকেটাই লাগব হত।

কোম্পানীগঞ্জ বদিউল আলম ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ নুরুল হক বলেন, বর্ষার শুরুতে এ উপজেলার নিচু গ্রামে নৌকার চাহিদা বেড়ে যায়। ওইসব এলাকায় যাতায়াত ও জেলেরা মাছ ধরার জন্য নতুন নৌকা কিনে থাকেন। ছোটবেলায় আমরা অনেক নৌকা দেখেছি কিন্তু সেই নৌকার দৃশ্য এখন আর দেখা যায় না। এ নৌকা তৈরির শিল্পটাকে টিকিয়ে রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যথাযত নজরদারির দরাকার।

মুরাদনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ড. আহসানুল আলম সরকার কিশোর বলেন, যারা নৌকা তৈরিতে জড়িত তারা খুবই দরিদ্র। এ উপজেলায় যারা দীর্ঘদিন নৌকা তৈরির পেশায় জড়িত তাদের ব্যপারে খোঁজখবর নিব। সরকারিভাবে উন্নত প্রশিক্ষণ ও ঋণের ব্যবস্থা করার যদি কোন প্রকার সুযোগ থাকে তাহলে অবশ্যই সহযোগীতা করা হবে।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

মুরাদনগরে বর্ষাকালে বেড়েছে নৌকা তৈরির হিড়িক, ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা

আপডেট সময় ০৪:০৭:২৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ জুন ২০২২

মোঃ মোশাররফ হোসেন মনিরঃ

এখন বর্ষাকাল। নদী, খাল ও বিলে পনি আর পানি। তাই কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলায় চলছে নৌকা তৈরির হিড়িক। পাশাপাশি চলছে পুরনো নৌকা মেরামতের কাজও। শুরু হয় নৌকা তৈরির কাজ। এরই অংশ হিসেবে বর্তমানে নৌকা তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন নৌকা তৈরির কারিগররা। গত বছরের তুলনায় কাঠের দাম বেশি হওয়ায় এবার নৌকার মূল্য একটু বেশি হলেও। জমে উঠেছে নৌকা বিক্রির পালা। মুরাদনগরসহ পাশ্ববর্তী ৬টি উপজেলার দরিদ্র জনগোষ্ঠী অধ্যষিত অঞ্চলের প্রায় লক্ষাধিক মানুষ জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে মাছ শিকার করে জীবনধারন ও যাতায়তের জন্য এ কোষা নৌকার উপর নির্ভরশীল থাকেন।

আগের মত এখন নৌকার তেমন চাহিদা না থাকলেও আষাঢ় মাসের আগমন ঘিরে বেড়ে যায় নৌকার চাহিদা। প্রতিবছরের নেয় এবারও বর্ষা আসার আগে থেকে এ উপজেলার অধিকাংশ জনপদ পানিতে থৈ থৈ করে। ডুবে যায় অনেক রাস্তাঘাট, নদী-নালা, খাল-বিল। যাতায়াত করতে হয় নৌকায়। মৎস্যজীবীরা মাছ ধরার কাজে ব্যবহার করে ছোট-বড় নৌকা। তাই বর্ষা মৌসুম আসলে এই অঞ্চলে বেড়ে যায় নৌকার কদর। তাই ওইসব অঞ্চলে নৌকার চাহিদা মিটাতে এখন দিন রাত পরিশ্রম করে একের পর এক নৌকা তৈর করছেন নৌকা তৈরির কারিগররা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার বালুছনা, কৈজুরী, কাঠালিয়াকান্দা ও পাচঁকিত্তাসহ বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে দেখা যায় চলছে নৌকা তৈরি ও মেরামতের ধুম। কেউ কাঠ কাটছেন, আবার কেউ নৌকায় আলকাতরা লাগাচ্ছেন। হাতুড়ি কাঠের খুটখাটে শৈল্পিক ছন্দে যে কারও মন ভওে যায় সেখানে গেলে। প্রখল রোদ ও বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে বর্ষার আগমনের শুরু থেকে ব্যস্ত সময় পার করছেন। পরিবারের পুরুষদের পাশাপাশি নৌকা তৈরিতেও কাজ করছেন নারীরা। ক্ষিতিশ চন্দ্র সরকার, বুলু সরকার, খোকন সরকার, বিদুল সরকার সহ অন্তত ১০টি পরিবার নৌকা তৈরির পেশায় যুক্ত। অন্যান্য মৌসুমে তারা কাঠমিস্ত্রির পেশায় যুক্ত থাকলেও বর্ষার মৌসুমে তৈরি করেন কাঠের নৌকা। এখানে তৈরি নৌকা এ উপজেলার শত বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী বৃহত্তম বাজার রামচন্দ্রপুর, ডুমুরিয়া ও ইলিয়টগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে নিয়ে যাওয়া হয় বিক্রির জন্য। প্রতিটি নৌকা ৬-৮ হাজার টাকা বিক্রি করেন তারা। তা থেকে কোন কোন নৌকায় ১২-১৫শ টাকা লাভ হয়।

নৌকার কারিগর লোহাগাড়া গ্রামের মৃত. কালাচাঁন চন্দ্র সরকারের ছেলে ক্ষিতিশ চন্দ্র সরকার বলেন, ৫০বছর যাবত নৌকা তৈরির কাজ করছি। সামনে বর্ষা মৌসুম ইতিমধ্যে তৈরি করেছি ৫টি নৌকা। আগের মত নৌকার চাহিদা তেমন নেই, কিন্তুবর্ষার শুরুতে নৌকার চাহিদা থাকে তাই বসে না থেকে পরিবারের ভরনপোষনের জন্য নৌকা তৈরির কাজ চালিয়ে চালিয়ে যাচ্ছি। নৌকা তৈরির অন্য এক কারিগর একই গ্রামের মৃত. সনাতন সরকারের ছেলে রাসু সরকার বলেন, আমি ছোটবেলা থেকেই নৌকা তৈরির কাজে জড়িত। বর্ষার মৌসুম তাই এখন ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে জেলেদের মাছ ধরার নৌকা বানানোর কাজে। চাহিদা মোতাবেক ছোট, বড় বিভিন্ন রকম নৌকা বানানো হয়। আর নৌকার আকারবেধে দাম নির্ধারণ করা হয়। এ মৌসুমে ৪০-৫০টি নৌকা বানানোর পরিকল্পনা রয়েছে। তবে নৌকা তৈরির মৌসুমে আমাদের একসাথে অনেক টাকার কাঠ কিনতে হয় নৌকা তৈরির জন্য। আর এ টাকা আমরা ঋণ করে এনে নৌকা বিক্রি শেষে লাভের একটা অংশ ওই ঋণদাতাকে দিয়ে দিতে হয়। সরকার যদি এ ব্যাপারে আমাদের সহযোগীতা করত তাহলে আমাদের কষ্ট অকেটাই লাগব হত।

কোম্পানীগঞ্জ বদিউল আলম ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ নুরুল হক বলেন, বর্ষার শুরুতে এ উপজেলার নিচু গ্রামে নৌকার চাহিদা বেড়ে যায়। ওইসব এলাকায় যাতায়াত ও জেলেরা মাছ ধরার জন্য নতুন নৌকা কিনে থাকেন। ছোটবেলায় আমরা অনেক নৌকা দেখেছি কিন্তু সেই নৌকার দৃশ্য এখন আর দেখা যায় না। এ নৌকা তৈরির শিল্পটাকে টিকিয়ে রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যথাযত নজরদারির দরাকার।

মুরাদনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ড. আহসানুল আলম সরকার কিশোর বলেন, যারা নৌকা তৈরিতে জড়িত তারা খুবই দরিদ্র। এ উপজেলায় যারা দীর্ঘদিন নৌকা তৈরির পেশায় জড়িত তাদের ব্যপারে খোঁজখবর নিব। সরকারিভাবে উন্নত প্রশিক্ষণ ও ঋণের ব্যবস্থা করার যদি কোন প্রকার সুযোগ থাকে তাহলে অবশ্যই সহযোগীতা করা হবে।