ঢাকা ১০:৩৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

মুরাদনগরে বাম্পার ফলনে হলুদে সেজেসে সরিষার মাঠ, আগ্রহ বাড়ছে চাষিদের

মোঃ মোশাররফ হোসেন মনিরঃ

কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় প্রায় ৫ হাজার ৬১৭ হেক্টর জমিতে রেকর্ড পরিমাণ উন্নত জাতের বীজ চাষ হওয়ায় বাম্পার ফলনের আশাবাদ সরিষার। স্বল্প সময়ে উৎপাদনশীল একটি লাভজনক রবিশষ্য হওয়ায় এ উপজেলায় সরিষা চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের। দিন দিন সরিষা চাষে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে কৃষকদের মাঝে। বৃদ্ধি পাচ্ছে কৃষকদের সংখ্যাও। আমন ফসল ঘরে তোলার পর স্বল্প সময়ে সরিষা একটি লাভজনক ফসল হওয়ায় এখন বাণিজ্যিকভাবে সারিষা চাষ অতিরিক্ত ফসল হিসেবে সরিষা চাষে ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষকরা।

এরই মধ্যে বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে হলুদ রঙয়ে সমারোহ। চারিদিকে সরিষা ফুলে ভরে উঠেছে ফসলের মাঠ। ঋতুর পালাবদলের সঙ্গে বদলে গেছে প্রকৃতির রূপ বৈচিত্র। ফুলের তেমন গন্ধ না ছড়ালেও এর দৃশ্য যেন আকৃষ্ট করছে প্রকৃতিপ্রেমীদের। হলুদ ফুলে মৌমাছিরা মনের আনন্দে যেমন মধু সংগ্রহের নেশায় ছুটে আসে সরিষা ক্ষেতে তেমনি সরিষা চাষ লাভজনক হওয়ায় চাষীরাও মনের আনন্দে ঝুঁকে পড়ছে সরিষা চাষে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চলতি মৌসুমে সরিষার আবাদ দ্বীগুণে আশায় কিষাণ-কিষাণীদের মূখে ফুঠেছে হাসির ঝিলিক। শেষ প্রর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বাম্পার ফলনের আশাও করছে চাষিরা।

উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ২৪ হাজার হেক্টর চাষাবাদী জমির মধ্যে গত বছর সরিষা চাষ হয়েছিল ৩ হাজার ৫শত হেক্টর জমিতে। এ বছর উপজেলা কৃষি অফিসের ৪ হাজার ৭’শ হেক্টর জমিতে চাষাবাধের টার্গেট থাকলেও চাষের পরিমান বৃদ্ধি পেয়ে ৫ হাজার ৬১৭ হেক্টরে দাড়িয়েছে। চলতি বছর কৃষকরা উপজেলা সদর, করিমপুর, ইউছুফনগর, দিলালপুর, নেয়ামুতপুর, নোয়াগাও, কামাল্লা, রামচন্দ্রপুর, শ্রীকাইল, রোয়াচালা, কুড়াখাল, কুড়–িন্ড, বড়িয়াচরা, মোহাম্মদপুর, দিঘিরপাড়, রগুরামপুর, পুষ্কনিরপাড়, চৈনপুর, মোচাগড়া, দেওরাসহ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে টরি ৭, বারি ৯, ১৪, ১৫, ১৭, ১৮ ও বিনা ৪, ৯, ১০, ১৪, ১৫, ১৭, জাতের সরিষা চাষ করেছে। হেক্টর প্রতি সরিষা উৎপাদন হবে প্রায় ৭/৮ টন। প্রাকৃতিক পরিবেশ অনুকূলে থাকায় চলতি মৌসুমে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার সরিষা চাষে বাম্পার ফলন হয়েছে। এতে করে প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে ফুটেছে হাসির ঝিলিক।

করিমপুর মাঠের কৃষক লতু মিয়া বলেন, কয়েক বছর আগে তাদের জমি পরিত্যক্ত থকতো, কিন্তু বর্তমানে উপজেলা কৃষি বিভাগের পরামর্শে তারা এখন বোরো ধানের আগে জমিতে সরিষা চাষ করছেন। সরিষার ফুল মাটিতে পড়ে জমির উর্বরতা শক্তি বাড়ায়। তিনি আরো বলেন, আমি ১০ বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছি। এত বিঘা প্রতি ৪/৫ হাজার টাকা খরচ করেছি। আশা করি তা থেকে প্রায় বিঘা প্রতি ৮ মন সরিষা পাওয়া যাবে, যার বাজার মূল্য হবে ৯ থেকে ১০ হাজার টাকা। কম খরচ ও অল্প দিনের পরিচর্যার মাধ্যমে অধিক লাভবান হওয়া যায় সরিষা চাষে। তাই অন্যান্য সবজি চাষের পাশাপাশি কৃষকরা জমিতে সরিষা চাষ করছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মাইন উদ্দিন আহমেদ জানান, কৃষকদের যথার্থ পরামর্শ ও পরিচর্যার বিষয়ে দিক নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। অন্যান্য বছর ‘বারি ১৪’, ‘বিনা-৯ ও ‘বিনা-৪ জাতের সরিষা বেশি চাষ হতো। এ বছর চাষিরা যেন অধিক লাভবান হতে পারে সেজন্য ‘বারি ১৭’ এর পাশাপাশি প্রায় ৩শ জন চাষিকে সুপার কোয়ালিটি ‘বারি ১৮’ জাতের সরিষার বীজ দেয়া হয়েছে।সারা দেশের ন্যায় কৃষকের মাঝে তেল ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের আওতায় ৫৯টি ও ডাল, তেল, মসলা বীজ উৎপাদন প্রকল্পের আওতায় ৯টি প্রদর্শনী দেয়া হয়েছে।

অপর দিকে কৃষি কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের প্রয়োজনীয় প্রযোক্তির পরামর্শ ও প্রশিক্ষন সেবা দিয়েছেন। সরিষা কৃষকের স্বপ্ন পূরণের পাশাপাশি ভোজ্য তেলের ঘাটতি পূরণেও বিশেষ ভূমিকা রাখবে। কৃষকদের পরিশ্রম আর সরকারি কৃষি অফিসের সম¤œয়ে এ বছর সরিষার বাম্পার ফলন হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

মুরাদনগরে বাম্পার ফলনে হলুদে সেজেসে সরিষার মাঠ, আগ্রহ বাড়ছে চাষিদের

আপডেট সময় ০১:৩১:৩১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২২

মোঃ মোশাররফ হোসেন মনিরঃ

কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় প্রায় ৫ হাজার ৬১৭ হেক্টর জমিতে রেকর্ড পরিমাণ উন্নত জাতের বীজ চাষ হওয়ায় বাম্পার ফলনের আশাবাদ সরিষার। স্বল্প সময়ে উৎপাদনশীল একটি লাভজনক রবিশষ্য হওয়ায় এ উপজেলায় সরিষা চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের। দিন দিন সরিষা চাষে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে কৃষকদের মাঝে। বৃদ্ধি পাচ্ছে কৃষকদের সংখ্যাও। আমন ফসল ঘরে তোলার পর স্বল্প সময়ে সরিষা একটি লাভজনক ফসল হওয়ায় এখন বাণিজ্যিকভাবে সারিষা চাষ অতিরিক্ত ফসল হিসেবে সরিষা চাষে ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষকরা।

এরই মধ্যে বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে হলুদ রঙয়ে সমারোহ। চারিদিকে সরিষা ফুলে ভরে উঠেছে ফসলের মাঠ। ঋতুর পালাবদলের সঙ্গে বদলে গেছে প্রকৃতির রূপ বৈচিত্র। ফুলের তেমন গন্ধ না ছড়ালেও এর দৃশ্য যেন আকৃষ্ট করছে প্রকৃতিপ্রেমীদের। হলুদ ফুলে মৌমাছিরা মনের আনন্দে যেমন মধু সংগ্রহের নেশায় ছুটে আসে সরিষা ক্ষেতে তেমনি সরিষা চাষ লাভজনক হওয়ায় চাষীরাও মনের আনন্দে ঝুঁকে পড়ছে সরিষা চাষে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চলতি মৌসুমে সরিষার আবাদ দ্বীগুণে আশায় কিষাণ-কিষাণীদের মূখে ফুঠেছে হাসির ঝিলিক। শেষ প্রর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বাম্পার ফলনের আশাও করছে চাষিরা।

উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ২৪ হাজার হেক্টর চাষাবাদী জমির মধ্যে গত বছর সরিষা চাষ হয়েছিল ৩ হাজার ৫শত হেক্টর জমিতে। এ বছর উপজেলা কৃষি অফিসের ৪ হাজার ৭’শ হেক্টর জমিতে চাষাবাধের টার্গেট থাকলেও চাষের পরিমান বৃদ্ধি পেয়ে ৫ হাজার ৬১৭ হেক্টরে দাড়িয়েছে। চলতি বছর কৃষকরা উপজেলা সদর, করিমপুর, ইউছুফনগর, দিলালপুর, নেয়ামুতপুর, নোয়াগাও, কামাল্লা, রামচন্দ্রপুর, শ্রীকাইল, রোয়াচালা, কুড়াখাল, কুড়–িন্ড, বড়িয়াচরা, মোহাম্মদপুর, দিঘিরপাড়, রগুরামপুর, পুষ্কনিরপাড়, চৈনপুর, মোচাগড়া, দেওরাসহ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে টরি ৭, বারি ৯, ১৪, ১৫, ১৭, ১৮ ও বিনা ৪, ৯, ১০, ১৪, ১৫, ১৭, জাতের সরিষা চাষ করেছে। হেক্টর প্রতি সরিষা উৎপাদন হবে প্রায় ৭/৮ টন। প্রাকৃতিক পরিবেশ অনুকূলে থাকায় চলতি মৌসুমে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার সরিষা চাষে বাম্পার ফলন হয়েছে। এতে করে প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে ফুটেছে হাসির ঝিলিক।

করিমপুর মাঠের কৃষক লতু মিয়া বলেন, কয়েক বছর আগে তাদের জমি পরিত্যক্ত থকতো, কিন্তু বর্তমানে উপজেলা কৃষি বিভাগের পরামর্শে তারা এখন বোরো ধানের আগে জমিতে সরিষা চাষ করছেন। সরিষার ফুল মাটিতে পড়ে জমির উর্বরতা শক্তি বাড়ায়। তিনি আরো বলেন, আমি ১০ বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছি। এত বিঘা প্রতি ৪/৫ হাজার টাকা খরচ করেছি। আশা করি তা থেকে প্রায় বিঘা প্রতি ৮ মন সরিষা পাওয়া যাবে, যার বাজার মূল্য হবে ৯ থেকে ১০ হাজার টাকা। কম খরচ ও অল্প দিনের পরিচর্যার মাধ্যমে অধিক লাভবান হওয়া যায় সরিষা চাষে। তাই অন্যান্য সবজি চাষের পাশাপাশি কৃষকরা জমিতে সরিষা চাষ করছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মাইন উদ্দিন আহমেদ জানান, কৃষকদের যথার্থ পরামর্শ ও পরিচর্যার বিষয়ে দিক নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। অন্যান্য বছর ‘বারি ১৪’, ‘বিনা-৯ ও ‘বিনা-৪ জাতের সরিষা বেশি চাষ হতো। এ বছর চাষিরা যেন অধিক লাভবান হতে পারে সেজন্য ‘বারি ১৭’ এর পাশাপাশি প্রায় ৩শ জন চাষিকে সুপার কোয়ালিটি ‘বারি ১৮’ জাতের সরিষার বীজ দেয়া হয়েছে।সারা দেশের ন্যায় কৃষকের মাঝে তেল ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের আওতায় ৫৯টি ও ডাল, তেল, মসলা বীজ উৎপাদন প্রকল্পের আওতায় ৯টি প্রদর্শনী দেয়া হয়েছে।

অপর দিকে কৃষি কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের প্রয়োজনীয় প্রযোক্তির পরামর্শ ও প্রশিক্ষন সেবা দিয়েছেন। সরিষা কৃষকের স্বপ্ন পূরণের পাশাপাশি ভোজ্য তেলের ঘাটতি পূরণেও বিশেষ ভূমিকা রাখবে। কৃষকদের পরিশ্রম আর সরকারি কৃষি অফিসের সম¤œয়ে এ বছর সরিষার বাম্পার ফলন হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।