ঢাকা ০৪:১৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

মুরাদনগরে ব্রীজের অভাবে বাঁশ ও ড্রামের তৈরী ভেলাই ১০ গ্রামের লক্ষাধিক লোকের ভরসা

মো: মোশাররফ হোসেন মনিরঃ

কুমিল্লা মুরাদনগর উপজেলার পূর্বধৈইর পূর্ব ইউনিয়নের ইষ্ট্র গ্রাম-নবীয়াবাদ সড়কের খোষঘর পশ্চিম পাড়া শেষ সীমান্তে জিয়ার খালে ব্রীজ না থাকায় চরম দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছে পূর্বধইর পূর্ব ও পূর্বধইর পশ্চিম এই দুই ইউনিয়নের দশ গ্রামের প্রায় লক্ষাধিক মানুষ। খাল পারাপারের জন্য বাঁশ ও ড্রাম দিয়ে তৈরী ভেলাই একমাত্র ভরসা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভেলায় পারাপারের সময় পানিতে পড়ে আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটছে অহরহ। যার ফলে যে কোন সময় ঘটতে পারে প্রাণহাণির মতো ঘটনা।

এ স্থানে একটি ব্রীজের জন্য এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে বহু আবেদন নিবেদন করা হলে বিভিন্ন সময় আশ্বাসও পাওয়া গেছে। কিন্তু আজো তা বাস্তবায়িত না হওয়ায় চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এ পথে প্রতিদিন যাতায়তকারী প্রায় তিন সহ¯্রাধিক লোক। ব্রীজটি নির্মান করা হলে যানবাহন যোগে অসুস্থ ব্যক্তিসহ লোকজন খুব সহজেই যাতায়াত করতে পারতেন। এ এলাকার লোকজনের যাতায়াতে নতুন দিগন্ত তৈরি হবে বলে স্থানীয়দের আশা।

সরেজমিনে দেখা যায়, যুগ যুগ ধরে কখনো নৌকা, কখনো বাঁশের সাঁকু দিয়ে খালটি পার হচ্ছেন উপজেলার খোশঘর, হিরাপুর, কোরবানপুর, জানঘর, নবীয়াবাদ, হাঁটাশ, মালিপাড়া, খৈয়াখালী, দৌলতপুর, চাপুড় গ্রামের মানুষ। দুই ইউনিয়নের মধ্যে স্থলপথে যোগাযোগ করতে হলে প্রায় পাচঁ কিলোমিটার সড়ক ঘুরে আসতে হয়। জিয়ার খালটি দুই ইউনিয়নের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়ায় খালের দুই পাশের ১০টি গ্রামের প্রায় লক্ষাদিক মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছে এবং বাঙ্গরা বাজার থানা সদরে আসতে হচ্ছে। এলাকার কোরবানপুর জিএম উচ্চ বিদ্যালয়, কোরবানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নবীয়াবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নবীয়াবাদ ফাজিল মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, কামার-কুমার, জেলে-তাঁতি, কৃষকসহ বিভিন্ন শ্রেনীর-পেশার মানুষসহ ব্যবসায়ীদের মালামাল আনা-নেওয়া, প্রায় ১০ একর কৃষি জমিতে কৃষকের উৎপাদিত কৃষিপন্য বাজারজাতকরণ, গবাদি পশু পারাপার, মুমূর্ষু রোগীর জরুরি চিকিৎসা সেবাসহ সবকিছুর জন্য এলাকাবাসীকে ভেলার উপর নির্ভর হওয়া জীবনের ঝূঁকি নিয়ে যাতায়ত কছে। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পোহাতে হচ্ছে স্থানীয় কয়েক হাজার শিক্ষার্থীদের। এমন ঝুঁকি নিয়েই প্রতিদিন কোমলমতি শিশু-কিশোর, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা পড়ুয়া শিক্ষার্থী বাধ্য হয়ে ভেলায় করে দিনের পর দিন চলাচল করতে হচ্ছে। এ এলাকায় কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় খালের এপাড়ের ছেলে-মেয়েরা ওপাড়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে লেখা-পড়া করতে হয়। যার ফলে অভিবাবকদের থাকতে হয় আতঙ্কের মধ্যে। কখনো পা ফসকে বই-খাতা পড়ে যায় খালে, আবার অনেকে আহত হয়ে ভয়ে লেখা-পড়া বন্ধ করে দিয়েছে। এলাকাবাসীর দাবি অচিরেই সংশি¬ষ্ট কর্তৃপক্ষ এ দিকে নজর দিবে। এ অবস্থায় খালের উপর ব্রীজ নির্মাণ না হওয়া পর্যন্ত জনসাধারণের নিরাপদ পারাপারের জন্য প্রশাসনের কাছে একটি নৌকার দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।

খোষঘর গ্রামের কলেজ পড়–য়া ছাত্র ইমন মিয়া জানান, খালের জন্য আমাদের কয়েকটি গ্রামের মানুষদের দুর্ভোগের শেষ নেই। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে ভয়ে ভয়ে পার হতে হয়। ৫/৬ জনের বেশি লোক ভেলায় উঠলে টলমল করতে করতে প্রায় সময় লোকজনসহ ভেলাটি উল্টে যায়।

পূর্বধইর পশ্চিম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম বলেন, এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি জিয়ার খালের উপর একটি সেতু নির্মাণের। আমি অনেক বার এমপি-মন্ত্রীর কাছে গিয়েও বরাদ্দ পাইনি। সেতুটি নির্মিত হলে দশ গ্রামের মানুষের দুর্ভোগ কমবে। আরও উন্নত হবে জীবনমান।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

মুরাদনগরে ব্রীজের অভাবে বাঁশ ও ড্রামের তৈরী ভেলাই ১০ গ্রামের লক্ষাধিক লোকের ভরসা

আপডেট সময় ০৯:২৫:০৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩ অক্টোবর ২০১৮
মো: মোশাররফ হোসেন মনিরঃ

কুমিল্লা মুরাদনগর উপজেলার পূর্বধৈইর পূর্ব ইউনিয়নের ইষ্ট্র গ্রাম-নবীয়াবাদ সড়কের খোষঘর পশ্চিম পাড়া শেষ সীমান্তে জিয়ার খালে ব্রীজ না থাকায় চরম দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছে পূর্বধইর পূর্ব ও পূর্বধইর পশ্চিম এই দুই ইউনিয়নের দশ গ্রামের প্রায় লক্ষাধিক মানুষ। খাল পারাপারের জন্য বাঁশ ও ড্রাম দিয়ে তৈরী ভেলাই একমাত্র ভরসা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভেলায় পারাপারের সময় পানিতে পড়ে আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটছে অহরহ। যার ফলে যে কোন সময় ঘটতে পারে প্রাণহাণির মতো ঘটনা।

এ স্থানে একটি ব্রীজের জন্য এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে বহু আবেদন নিবেদন করা হলে বিভিন্ন সময় আশ্বাসও পাওয়া গেছে। কিন্তু আজো তা বাস্তবায়িত না হওয়ায় চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এ পথে প্রতিদিন যাতায়তকারী প্রায় তিন সহ¯্রাধিক লোক। ব্রীজটি নির্মান করা হলে যানবাহন যোগে অসুস্থ ব্যক্তিসহ লোকজন খুব সহজেই যাতায়াত করতে পারতেন। এ এলাকার লোকজনের যাতায়াতে নতুন দিগন্ত তৈরি হবে বলে স্থানীয়দের আশা।

সরেজমিনে দেখা যায়, যুগ যুগ ধরে কখনো নৌকা, কখনো বাঁশের সাঁকু দিয়ে খালটি পার হচ্ছেন উপজেলার খোশঘর, হিরাপুর, কোরবানপুর, জানঘর, নবীয়াবাদ, হাঁটাশ, মালিপাড়া, খৈয়াখালী, দৌলতপুর, চাপুড় গ্রামের মানুষ। দুই ইউনিয়নের মধ্যে স্থলপথে যোগাযোগ করতে হলে প্রায় পাচঁ কিলোমিটার সড়ক ঘুরে আসতে হয়। জিয়ার খালটি দুই ইউনিয়নের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়ায় খালের দুই পাশের ১০টি গ্রামের প্রায় লক্ষাদিক মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছে এবং বাঙ্গরা বাজার থানা সদরে আসতে হচ্ছে। এলাকার কোরবানপুর জিএম উচ্চ বিদ্যালয়, কোরবানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নবীয়াবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নবীয়াবাদ ফাজিল মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, কামার-কুমার, জেলে-তাঁতি, কৃষকসহ বিভিন্ন শ্রেনীর-পেশার মানুষসহ ব্যবসায়ীদের মালামাল আনা-নেওয়া, প্রায় ১০ একর কৃষি জমিতে কৃষকের উৎপাদিত কৃষিপন্য বাজারজাতকরণ, গবাদি পশু পারাপার, মুমূর্ষু রোগীর জরুরি চিকিৎসা সেবাসহ সবকিছুর জন্য এলাকাবাসীকে ভেলার উপর নির্ভর হওয়া জীবনের ঝূঁকি নিয়ে যাতায়ত কছে। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পোহাতে হচ্ছে স্থানীয় কয়েক হাজার শিক্ষার্থীদের। এমন ঝুঁকি নিয়েই প্রতিদিন কোমলমতি শিশু-কিশোর, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা পড়ুয়া শিক্ষার্থী বাধ্য হয়ে ভেলায় করে দিনের পর দিন চলাচল করতে হচ্ছে। এ এলাকায় কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় খালের এপাড়ের ছেলে-মেয়েরা ওপাড়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে লেখা-পড়া করতে হয়। যার ফলে অভিবাবকদের থাকতে হয় আতঙ্কের মধ্যে। কখনো পা ফসকে বই-খাতা পড়ে যায় খালে, আবার অনেকে আহত হয়ে ভয়ে লেখা-পড়া বন্ধ করে দিয়েছে। এলাকাবাসীর দাবি অচিরেই সংশি¬ষ্ট কর্তৃপক্ষ এ দিকে নজর দিবে। এ অবস্থায় খালের উপর ব্রীজ নির্মাণ না হওয়া পর্যন্ত জনসাধারণের নিরাপদ পারাপারের জন্য প্রশাসনের কাছে একটি নৌকার দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।

খোষঘর গ্রামের কলেজ পড়–য়া ছাত্র ইমন মিয়া জানান, খালের জন্য আমাদের কয়েকটি গ্রামের মানুষদের দুর্ভোগের শেষ নেই। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে ভয়ে ভয়ে পার হতে হয়। ৫/৬ জনের বেশি লোক ভেলায় উঠলে টলমল করতে করতে প্রায় সময় লোকজনসহ ভেলাটি উল্টে যায়।

পূর্বধইর পশ্চিম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম বলেন, এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি জিয়ার খালের উপর একটি সেতু নির্মাণের। আমি অনেক বার এমপি-মন্ত্রীর কাছে গিয়েও বরাদ্দ পাইনি। সেতুটি নির্মিত হলে দশ গ্রামের মানুষের দুর্ভোগ কমবে। আরও উন্নত হবে জীবনমান।