ঢাকা ০৬:০৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

মুরাদনগরে ৭৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিদ্যুৎ না থাকায় ২০ হাজার শিক্ষার্থীর দুর্ভোগ

মাহবুব আলম আরিফঃ

“স্যার একবার মনে হয় স্কুলে যাওয়াই বন্ধ কইরা দেই। এ ছারা আর কি করমু বলেন গরমের সময় রৈদের (রোদের) তাপে শরীর এত ঘামে যে বই, খাতা যা ধরি সব ভিজে যায়। আর শীত কালে একটু বেশি কুয়াশা পরলে ক্লাস রুম এত অন্ধকার হয়, যে বইয়ের পড়া বুঝা খুব দায়”। এ ভাবেই মনের ভিতর লোকিয়ে থাকা কষ্টের কথা জানালেন। কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার কামাল্লা পশ্চিম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণীর ছাত্রী সাদিয়া।

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের ৫০ ফুট দুরে বৈদ্যুতিক খুটি থাকলেও বিদ্যুৎ সেবা থেকে বঞ্চিত কামাল্লা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। শুধু এই প্রতিষ্ঠানটিই নয় উপজেলার আরো ৭৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় ২০ হাজার শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস ও  তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয় শিক্ষা থেকে। অধিকাংশ বিদ্যালয়ের পাশে বৈদ্যুতিক লাইন থাকলেও কোন এক অজানা কারণে বিদ্যুৎ পাচ্ছেনা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো। সরকার সবকয়টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (প্রজেক্টরভিক্তিক) মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে সকল বিষয়ে ক্লাস নেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহন করে। কিন্তু নতুন এ তথ্য প্রযুক্তির আওতায় ক্লাশ গ্রহণে শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা থাকলেও পাচ্ছেনা এই শিক্ষা। ৭টি বিদ্যালয়ে ল্যাপটপ ও প্রজেক্টর থাকলেও কতৃপক্ষের উদাসিনতার করনেই বিদ্যু না থাকায় মাল্টিমিডিয়া ক্লাস ও আইসিটি শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হওয়ার মূল কারন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়। উপজেলায় ২০৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও বিদ্যুৎ থাকা বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীদের থেকে বিদ্যুৎ না থাকা ৭৫টি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা তুলনামূলক ভাবে পিছিয়ে রয়েছে।

বিদ্যুৎ না থাকা বিদ্যালয় গুলো হলো, ইউসুফনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আলীরচর, কামাল্লা পশ্চিম, গাংগাটিয়া, খুরুইল, সিদ্ধেশরী, পরমতলা উত্তর, ধামঘর পূর্ব, ধনীরামপুর, রামপুর দক্ষিন, নেয়ামতকান্দি, মেলামচর, কাজিয়াতল দক্ষিন, উড়িশ্বর, পূর্ব ঘোড়াশাল, বাবুটিপাড়া, উৎরাইন, কাশিমপুর দক্ষিন, তেমুরিয়া, ভুতাইল, পেন্নই, পান্ডুঘর, পিপড়িয়া, সোনাকান্দা, শাহগদা, পিপড়িয়াকান্দা, কাশিমপুর উত্তর, বলীঘর, হায়দরাবাদ, বারেশ্বর, নোয়াগাও, আলগী, নোয়াগাও উত্তর, গাজীপুর দক্ষিন, বিষ্ণপুর, উত্তর হাটাশ, সোনারামপুর, খাপুরা, গাংগেরকোট, মকলিশপুর, জোগেরখীল, শুশুন্ডা, নোয়াপুষ্কুরীনি পাড়, কুড়ারপাড়া, মাধবপুর, রাজনগর, নোয়াকান্দি, মুরাদনগর উত্তর, কাজিয়াতল উত্তর, নরসিংহপুর, সাহেবনগর, সলফা, কমলপুর, সোনারামপুর, কালারাইয়া, কচুয়ার পাড়, রোয়াচালা, বল্লভদী, গাইটুলি, দুইড়া রাজ বিহারী, গাজিপুর দক্ষিন, হোসনাবাদ, কালীপুরা, কৃষ্ণপুর, পশ্চিম সোনাউল্লা, চুলুরিয়া, উত্তর ঘোড়াশাল, পুর্ব জাংগাল, কোরবানপুর উত্তর, জাংগাল আদর্শ, নবীপুর উত্তর, আকবপুর উত্তর, দক্ষিন জানঘর, ভাঙ্গানগর ও নহল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

ইউছুফনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহজাহান মির বলেন, এ বিদ্যালয়ে ৪৩০ জন ছাত্র-ছাত্রী আছে। গত ডিসেম্বরে উপজেলা থেকে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর পাঠানো হয়েছে। বিদ্যুৎ না থাকায় এটি ব্যবহার করা যাচ্ছে না।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল্লা-আল মামুন বলেন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বিদ্যুৎবিহীন বিদ্যালয়ের তালিকা চাওয়া হয়েছে। আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জেলা শিক্ষা কার্যালয়ের মাধ্যমে এসব বিদ্যালয়ের তথ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিতু মরিয়ম বলেন, যে সব বিদ্যালয়ের পাশে বৈদ্যুতিক লাইন আছে, সেখান থেকে কিভাবে দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া যায় এবং যেখানে বৈদ্যুতিক লাইন নেই সেখানে কিভাবে সৌর বিদ্যুৎ এর ব্যবস্থা করা যায় সে বিষয়ে আমি দেখছি।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

মুরাদনগরে ৭৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিদ্যুৎ না থাকায় ২০ হাজার শিক্ষার্থীর দুর্ভোগ

আপডেট সময় ১১:৩৯:৫৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২২ অক্টোবর ২০১৮
মাহবুব আলম আরিফঃ

“স্যার একবার মনে হয় স্কুলে যাওয়াই বন্ধ কইরা দেই। এ ছারা আর কি করমু বলেন গরমের সময় রৈদের (রোদের) তাপে শরীর এত ঘামে যে বই, খাতা যা ধরি সব ভিজে যায়। আর শীত কালে একটু বেশি কুয়াশা পরলে ক্লাস রুম এত অন্ধকার হয়, যে বইয়ের পড়া বুঝা খুব দায়”। এ ভাবেই মনের ভিতর লোকিয়ে থাকা কষ্টের কথা জানালেন। কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার কামাল্লা পশ্চিম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণীর ছাত্রী সাদিয়া।

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের ৫০ ফুট দুরে বৈদ্যুতিক খুটি থাকলেও বিদ্যুৎ সেবা থেকে বঞ্চিত কামাল্লা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। শুধু এই প্রতিষ্ঠানটিই নয় উপজেলার আরো ৭৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় ২০ হাজার শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস ও  তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয় শিক্ষা থেকে। অধিকাংশ বিদ্যালয়ের পাশে বৈদ্যুতিক লাইন থাকলেও কোন এক অজানা কারণে বিদ্যুৎ পাচ্ছেনা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো। সরকার সবকয়টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (প্রজেক্টরভিক্তিক) মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে সকল বিষয়ে ক্লাস নেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহন করে। কিন্তু নতুন এ তথ্য প্রযুক্তির আওতায় ক্লাশ গ্রহণে শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা থাকলেও পাচ্ছেনা এই শিক্ষা। ৭টি বিদ্যালয়ে ল্যাপটপ ও প্রজেক্টর থাকলেও কতৃপক্ষের উদাসিনতার করনেই বিদ্যু না থাকায় মাল্টিমিডিয়া ক্লাস ও আইসিটি শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হওয়ার মূল কারন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়। উপজেলায় ২০৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও বিদ্যুৎ থাকা বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীদের থেকে বিদ্যুৎ না থাকা ৭৫টি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা তুলনামূলক ভাবে পিছিয়ে রয়েছে।

বিদ্যুৎ না থাকা বিদ্যালয় গুলো হলো, ইউসুফনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আলীরচর, কামাল্লা পশ্চিম, গাংগাটিয়া, খুরুইল, সিদ্ধেশরী, পরমতলা উত্তর, ধামঘর পূর্ব, ধনীরামপুর, রামপুর দক্ষিন, নেয়ামতকান্দি, মেলামচর, কাজিয়াতল দক্ষিন, উড়িশ্বর, পূর্ব ঘোড়াশাল, বাবুটিপাড়া, উৎরাইন, কাশিমপুর দক্ষিন, তেমুরিয়া, ভুতাইল, পেন্নই, পান্ডুঘর, পিপড়িয়া, সোনাকান্দা, শাহগদা, পিপড়িয়াকান্দা, কাশিমপুর উত্তর, বলীঘর, হায়দরাবাদ, বারেশ্বর, নোয়াগাও, আলগী, নোয়াগাও উত্তর, গাজীপুর দক্ষিন, বিষ্ণপুর, উত্তর হাটাশ, সোনারামপুর, খাপুরা, গাংগেরকোট, মকলিশপুর, জোগেরখীল, শুশুন্ডা, নোয়াপুষ্কুরীনি পাড়, কুড়ারপাড়া, মাধবপুর, রাজনগর, নোয়াকান্দি, মুরাদনগর উত্তর, কাজিয়াতল উত্তর, নরসিংহপুর, সাহেবনগর, সলফা, কমলপুর, সোনারামপুর, কালারাইয়া, কচুয়ার পাড়, রোয়াচালা, বল্লভদী, গাইটুলি, দুইড়া রাজ বিহারী, গাজিপুর দক্ষিন, হোসনাবাদ, কালীপুরা, কৃষ্ণপুর, পশ্চিম সোনাউল্লা, চুলুরিয়া, উত্তর ঘোড়াশাল, পুর্ব জাংগাল, কোরবানপুর উত্তর, জাংগাল আদর্শ, নবীপুর উত্তর, আকবপুর উত্তর, দক্ষিন জানঘর, ভাঙ্গানগর ও নহল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

ইউছুফনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহজাহান মির বলেন, এ বিদ্যালয়ে ৪৩০ জন ছাত্র-ছাত্রী আছে। গত ডিসেম্বরে উপজেলা থেকে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর পাঠানো হয়েছে। বিদ্যুৎ না থাকায় এটি ব্যবহার করা যাচ্ছে না।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল্লা-আল মামুন বলেন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বিদ্যুৎবিহীন বিদ্যালয়ের তালিকা চাওয়া হয়েছে। আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জেলা শিক্ষা কার্যালয়ের মাধ্যমে এসব বিদ্যালয়ের তথ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিতু মরিয়ম বলেন, যে সব বিদ্যালয়ের পাশে বৈদ্যুতিক লাইন আছে, সেখান থেকে কিভাবে দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া যায় এবং যেখানে বৈদ্যুতিক লাইন নেই সেখানে কিভাবে সৌর বিদ্যুৎ এর ব্যবস্থা করা যায় সে বিষয়ে আমি দেখছি।