ঢাকা ০৪:৫৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

যুক্তরাষ্ট্রে তুষারঝড়ে মৃত ২০, জরুরি অবস্থা ১১ অঙ্গরাজ্যে

স্টাফ রিপোর্টার: একটানা ১৮ থেকে ২০ ঘণ্টা তুষারপাতের পর নিউইয়র্ক ও আশপাশের শহর এখন শান্ত। এই সময়ের মধ্যে যে তুষারপাত হয়েছে, বিশেষজ্ঞেরা বলছেন তা রেকর্ড পরিমাণ। তুষারঝড়ে এ পর্যন্ত ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে, জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে ১১টি অঙ্গরাজ্যে।

নিউইয়র্ক শহরের সেন্ট্রাল পার্কে জমা বরফের পরিমাণ ২৮ দশমিক ৮ ইঞ্চি। গত দেড় শ বছরে মাত্র একবার; ২০০৬ সালে এর চেয়ে সামান্য কিছু বেশি বরফ পড়েছিল। শহরের কোনো কোনো অঞ্চলে অবশ্য বরফের পরিমাণ সে রেকর্ডও ছাড়িয়ে যায়। সারা শহর টহল দিয়ে শনিবার সন্ধ্যায় নিউইয়র্কের মেয়র বিল ডি ব্লাজিও সাংবাদিকদের যা বললেন, তার মোদ্দা অর্থ হলো, বাপের জন্মেও এত বরফ তিনি দেখেননি।

শুধু নিউইয়র্ক নয়, যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বাঞ্চলের মোট ১৮টি অঙ্গরাজ্য ভয়াবহ এই তুষারপাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কোনো কোনো অঙ্গরাজ্যে তুষারপাত হয়েছে প্রায় ৩০ ঘণ্টা। সবচেয়ে বেশি তুষারপাত হয়েছে পশ্চিম ভার্জিনিয়ায়, সেখানে গ্লেনগারিতেজমানো বরফের পরিমাণ ৪০ ইঞ্চি ছাড়িয়ে গেছে। বিপদ এড়ানোর জন্য ১১টি অঙ্গরাজ্যে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয় এবং জরুরি যানবাহন ছাড়া সব বেসরকারি গাড়ির চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়। নিউইয়র্ক শহরে এই নির্দেশ অমান্য করলে কড়া জরিমানার ঘোষণা দিয়েছেন মেয়র ডি ব্লাজিও।

এই তুষারপাতে পূর্বাঞ্চলের অধিকাংশ রাজ্যে জীবনযাত্রা সম্পূর্ণ অচল হয়ে পড়ে। নিউইয়র্ক শহরে শনিবার বেলা একটার পর বাস ও রেল সার্ভিস বন্ধ করে দেওয়া হয়। বিমানের হাজার হাজার ফ্লাইট বাতিল ঘোষিত হয়, ফলে আটকা পড়ে হাজার হাজার বিমানযাত্রী। নিউ জার্সির কোথাও কোথাও বন্যা দেখা দিয়েছে। বিদ্যুতের তার পড়ে যাওয়ায় প্রায় দেড় লাখ মানুষ এই ঠান্ডার রাতে বিদ্যুৎ ও ঘর গরম করার ‘হিটিং’ ব্যবস্থা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। অধিকাংশ শহরেই অবশ্য সে বিপদের কথা মাথায় রেখে বিভিন্ন স্কুলঘর, কমিউনিটি কেন্দ্র ও হাসপাতালে আপৎকালীন ব্যবস্থা হিসেবে অস্থায়ী থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। নিউইয়র্ক শহরে গৃহহীন এমন মানুষদের জোর করে জরুরি আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠানোর ব্যবস্থাও করা হয়েছে।

এখন পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী তুষারপাতের ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কারণে মৃত্যু হয়েছে ২০ জনের। কর্তৃপক্ষ এই সংখ্যা আর বাড়বে বলে আশঙ্কা করছে। শুধু নিউইয়র্কেই বরফ সরানোর কাজ করার সময় হৃদরোগে মারা গেছে কমপক্ষে সাতজন। লং আইল্যান্ডে এক বৃদ্ধ তার প্রতিবেশীকে সাহায্য করতে গিয়ে মারা গেছেন। নর্থ ক্যারোলাইনায় এক ব্যক্তি মহাসড়কে বরফে আটকে পড়া এক গাড়ির চালককে সাহায্য করতে গিয়ে সেই চালকের হাতে খুন হয়েছেন।

শনিবার মধ্যরাতের পর নিউইয়র্কসহ অধিকাংশ শহরে তুষারপাত মন্থর হয়ে আসে। তুষারপাত বন্ধ হলেও বিপদ এখনো কমেনি। প্রতিটি নগর প্রশাসনের জন্য এই মুহূর্তের সবচেয়ে বড় মাথাব্যথা, অবিলম্বে জমানো বরফ সরিয়ে শহর সচল করার উদ্যোগ নেওয়া। নিউইয়র্ক শহরে অবশ্য শনিবার রাতভর প্রধান সড়কগুলো থেকে বরফ সরানোর কাজ হয়েছে। রোববার সকাল থেকে বাস ও সাবওয়ে ব্যবস্থাও চালু হয়েছে। কিন্তু বাড়ির সামনে যে বরফ জমেছে, তা সরানো দায়িত্ব সে ঘরে বসবাসরত ব্যক্তিদের। এই প্রতিবেদকসহ অনেকেই মধ্যরাতের পর থেকেই সে কাজ শুরু করেছে। শুধু বাঁচোয়া এই যে আজ রোববার, ছুটির দিন।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

যুক্তরাষ্ট্রে তুষারঝড়ে মৃত ২০, জরুরি অবস্থা ১১ অঙ্গরাজ্যে

আপডেট সময় ১১:১৬:৩৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৫ জানুয়ারী ২০১৬

স্টাফ রিপোর্টার: একটানা ১৮ থেকে ২০ ঘণ্টা তুষারপাতের পর নিউইয়র্ক ও আশপাশের শহর এখন শান্ত। এই সময়ের মধ্যে যে তুষারপাত হয়েছে, বিশেষজ্ঞেরা বলছেন তা রেকর্ড পরিমাণ। তুষারঝড়ে এ পর্যন্ত ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে, জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে ১১টি অঙ্গরাজ্যে।

নিউইয়র্ক শহরের সেন্ট্রাল পার্কে জমা বরফের পরিমাণ ২৮ দশমিক ৮ ইঞ্চি। গত দেড় শ বছরে মাত্র একবার; ২০০৬ সালে এর চেয়ে সামান্য কিছু বেশি বরফ পড়েছিল। শহরের কোনো কোনো অঞ্চলে অবশ্য বরফের পরিমাণ সে রেকর্ডও ছাড়িয়ে যায়। সারা শহর টহল দিয়ে শনিবার সন্ধ্যায় নিউইয়র্কের মেয়র বিল ডি ব্লাজিও সাংবাদিকদের যা বললেন, তার মোদ্দা অর্থ হলো, বাপের জন্মেও এত বরফ তিনি দেখেননি।

শুধু নিউইয়র্ক নয়, যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বাঞ্চলের মোট ১৮টি অঙ্গরাজ্য ভয়াবহ এই তুষারপাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কোনো কোনো অঙ্গরাজ্যে তুষারপাত হয়েছে প্রায় ৩০ ঘণ্টা। সবচেয়ে বেশি তুষারপাত হয়েছে পশ্চিম ভার্জিনিয়ায়, সেখানে গ্লেনগারিতেজমানো বরফের পরিমাণ ৪০ ইঞ্চি ছাড়িয়ে গেছে। বিপদ এড়ানোর জন্য ১১টি অঙ্গরাজ্যে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয় এবং জরুরি যানবাহন ছাড়া সব বেসরকারি গাড়ির চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়। নিউইয়র্ক শহরে এই নির্দেশ অমান্য করলে কড়া জরিমানার ঘোষণা দিয়েছেন মেয়র ডি ব্লাজিও।

এই তুষারপাতে পূর্বাঞ্চলের অধিকাংশ রাজ্যে জীবনযাত্রা সম্পূর্ণ অচল হয়ে পড়ে। নিউইয়র্ক শহরে শনিবার বেলা একটার পর বাস ও রেল সার্ভিস বন্ধ করে দেওয়া হয়। বিমানের হাজার হাজার ফ্লাইট বাতিল ঘোষিত হয়, ফলে আটকা পড়ে হাজার হাজার বিমানযাত্রী। নিউ জার্সির কোথাও কোথাও বন্যা দেখা দিয়েছে। বিদ্যুতের তার পড়ে যাওয়ায় প্রায় দেড় লাখ মানুষ এই ঠান্ডার রাতে বিদ্যুৎ ও ঘর গরম করার ‘হিটিং’ ব্যবস্থা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। অধিকাংশ শহরেই অবশ্য সে বিপদের কথা মাথায় রেখে বিভিন্ন স্কুলঘর, কমিউনিটি কেন্দ্র ও হাসপাতালে আপৎকালীন ব্যবস্থা হিসেবে অস্থায়ী থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। নিউইয়র্ক শহরে গৃহহীন এমন মানুষদের জোর করে জরুরি আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠানোর ব্যবস্থাও করা হয়েছে।

এখন পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী তুষারপাতের ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কারণে মৃত্যু হয়েছে ২০ জনের। কর্তৃপক্ষ এই সংখ্যা আর বাড়বে বলে আশঙ্কা করছে। শুধু নিউইয়র্কেই বরফ সরানোর কাজ করার সময় হৃদরোগে মারা গেছে কমপক্ষে সাতজন। লং আইল্যান্ডে এক বৃদ্ধ তার প্রতিবেশীকে সাহায্য করতে গিয়ে মারা গেছেন। নর্থ ক্যারোলাইনায় এক ব্যক্তি মহাসড়কে বরফে আটকে পড়া এক গাড়ির চালককে সাহায্য করতে গিয়ে সেই চালকের হাতে খুন হয়েছেন।

শনিবার মধ্যরাতের পর নিউইয়র্কসহ অধিকাংশ শহরে তুষারপাত মন্থর হয়ে আসে। তুষারপাত বন্ধ হলেও বিপদ এখনো কমেনি। প্রতিটি নগর প্রশাসনের জন্য এই মুহূর্তের সবচেয়ে বড় মাথাব্যথা, অবিলম্বে জমানো বরফ সরিয়ে শহর সচল করার উদ্যোগ নেওয়া। নিউইয়র্ক শহরে অবশ্য শনিবার রাতভর প্রধান সড়কগুলো থেকে বরফ সরানোর কাজ হয়েছে। রোববার সকাল থেকে বাস ও সাবওয়ে ব্যবস্থাও চালু হয়েছে। কিন্তু বাড়ির সামনে যে বরফ জমেছে, তা সরানো দায়িত্ব সে ঘরে বসবাসরত ব্যক্তিদের। এই প্রতিবেদকসহ অনেকেই মধ্যরাতের পর থেকেই সে কাজ শুরু করেছে। শুধু বাঁচোয়া এই যে আজ রোববার, ছুটির দিন।