ঢাকা ০৫:০০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

রাজধানীতে নামবে তিন হাজার বাস: আনিসুল হক

স্টাফ রিপোর্টার : ঢাকায় মানুষের যাতায়াতের সুবিধার জন্য আগামী দুই বছরে পর্যায়ক্রমে তিন হাজার বাস নামানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। এ ছাড়া ঢাকা শহরে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার জন্য পাঁচ হাজার ডাস্টবিন, নিরাপত্তার জন্য আরও সিসি ক্যামেরা স্থাপন, শহরের পরিবেশ ঠিক রাখার জন্য পরিবেশ পুলিশ গঠনের কথাও ভাবছে ডিএনসিসি।

আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর একটি হোটেলে মেয়রের দায়িত্ব নেওয়ার আট মাস উপলক্ষে টেলিভিশন মালিক-প্রধানদের সঙ্গে মতবিনিময়ে ডিএনসিসির মেয়র আনিসুল হক এসব কথা বলেন। তিনি প্রতিদিন প্রতিটি টেলিভিশনে রাজধানীর নানা বিষয়ে নিয়ে সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান প্রচারের জন্য টেলিভিশন কর্তৃপক্ষের কাছে আধা মিনিট থেকে এক মিনিট সময় বরাদ্দ চান।

আনিসুল হক বলেন, রাজধানীর মানুষের যাতায়াত সমস্যা সমাধানের জন্য ২০১৭ সালের মার্চের মধ্যে তিন হাজার পাবলিক বাস চালু করা হবে। এ অনুয়ায়ী কাজও চলছে। ইতিমধ্যে বাস মালিক সমিতির সঙ্গে কথা হয়েছে। বর্তমানে থাকা ১৯০ টি বাস কোম্পানিকে পাঁচটি কোম্পানিতে নামিয়ে আনার বিষয়ে ডিএনসিসির সঙ্গে মালিকেরা একমত হয়েছেন। এতে রাস্তায় বাসের চলাচলের ক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলা কমে যাবে। পুরোনো বাস তুলে নেওয়া হবে। এ ছাড়া এলাকাভিত্তিক যানজট কমানোর বিষয়েও কাজ করছে করপোরেশন। মেয়র বলেন, পরিচ্ছন্ন ঢাকার অংশ হিসেবে ঢাকা থেকে ২০ হাজার বিলবোর্ড অপসারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া বিলবোর্ড স্থাপনের বিষয়ে তিন মাসের মধ্যে নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে।

আনিসুল হক বলেন, পরিচ্ছন্ন ঢাকার আওতায় ঠিকমতো বাতি জ্বালানো ও রাস্তা পরিচ্ছন্ন রাখার কাজ করা হচ্ছে। রাস্তার ওপর যেন ময়লার কনটেইনার পড়ে না থাকে, সে জন্য ৭২টি স্টেশন তৈরি করা হচ্ছে। এ ছাড়া পাঁচ হাজার ডাস্টবিন তৈরি করার কাজ চলছে। যার মধ্যে দুই হাজার ডাস্টবিন আগামী দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে তৈরি করা হবে। রাতের বেলা যাতে ডাস্টবিন চুরি না হয়, সে জন্য বিশেষ ডাস্টবিন তৈরি হচ্ছে। এ ছাড়া এক শ গণ শৌচাগার তৈরির পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এরই মধ্যে ১৪টি তৈরি হয়ে গেছে। সেই শৌচাগারগুলো পাঁচ তারকা হোটেল মানের মতো হচ্ছে। এ ছাড়া মোবাইল এগুলো বিভিন্ন স্থানে বসানো হচ্ছে বলে জানান মেয়র।

কারওয়ান বাজার, আমিন বাজার, মহাখালী, তেজগাঁওসহ দশটি জায়গা দখল মুক্ত করার কথা জানিয়ে মেয়র বলেন, এই জায়গাগুলো মুক্ত করা সহজ ছিল না। এখানে হাজার কোটি টাকার সিন্ডিকেট আছে। এই এলাকাগুলো যেন আবার দখল না হয় সে জন্য গণমাধ্যমের সহযোগিতা চান মেয়র। এ ছাড়া কারওয়ান বাজার স্থানান্তরের কাজও এগিয়ে চলছে বলে জানান তিনি।

নগরের নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার গুরুত্ব তুলে ধরে আনিসুল হক বলেন, যেসব এলাকায় ইতিমধ্যে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে, সেখানে ৩০ থেকে ৪০ ভাগ অপরাধ কমে গেছে। আড়াই হাজার সিসি ক্যামেরা বসানোর পরিকল্পনা হিসেবে আগামী মে মাসের মধ্যে এর এক হাজার ক্যামেরা বসানোর কাজ শেষ হবে বলে জানান তিনি। একটি নির্দিষ্ট কন্ট্রোল রুম থেকে এগুলো পর্যবেক্ষণ করা হলে নগরে অপরাধ আরও কমে যাবে বলে মনে করেন তিনি।

রাজধানীকে সবুজ ঢাকায় রূপান্তর করতে ইতিমধ্যে নানা কাজ শুরু হয়ে গেছে জানিয়ে আনিসুল হক বলেন, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শ স্বেচ্ছাসেবক এ বিষয়ে কাজ করছে। তিনটি ইকো বাস থাকবে যে বাসে মানুষের বাড়ি বাড়ি গাছ, সার, মাটি পৌঁছে দেওয়া হবে। স্কুলে স্কুলে গিয়ে এ ধরনের কাজ শুরু হয়ে গেছে। পরিবেশ ঠিক রাখার বিষয়টি জোর দিতে গিয়ে মেয়র বলেন, সরকারের কাছে এক শ পরিবেশ পুলিশ দেওয়ার জন্য আবেদন করা হবে। পরিবেশ পুলিশের সহযোগিতা পেলে ঢাকা শহরের চেহারাই বদলে যাবে।

রাজধানীর দেওয়ালে পোস্টার ও লেখা লেখার বিষয়ে মেয়র বলেন, আগামী দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে যদি দেয়ালে লেখা ও পোস্টার লাগানো নিয়ন্ত্রণ না হয়, তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জলাবদ্ধতা দূর করার বিষয়ে মেয়র বলেন, ওয়াসার পুরো কাজ করতে করপোরেশন চায় না তবে জলাবদ্ধতা দূর করার জন্য তাদের কিছু কাজের সঙ্গে সমন্বয় করা জরুরি।

প্রশ্ন-উত্তর পর্বে চ্যানেল আইয়ের বার্তা পরিচালক শাইখ সিরাজ দাবি তোলেন, রাতে যাতে মানুষ নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারে সে জন্য আলাদা যানবাহনের ব্যবস্থা করতে হবে। তিনি বলেন, ঢাকা শহরের অনেক বাড়িতে গ্যাস নেই। এ বিষয়ে মেয়রের সাহায্য চান তিনি। জবাবে আনিসুল হক সমস্যা সমাধানের জন্য কাজ করবেন বলে জানান।

বৈঠকে মাছরাঙা টেলিভিশনের সিইও ফাহিম মুনয়েম, সময় টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ জুবায়ের, ইটিভির প্রধান সম্পাদক মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

রাজধানীতে নামবে তিন হাজার বাস: আনিসুল হক

আপডেট সময় ০২:০৩:৩৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ জানুয়ারী ২০১৬

স্টাফ রিপোর্টার : ঢাকায় মানুষের যাতায়াতের সুবিধার জন্য আগামী দুই বছরে পর্যায়ক্রমে তিন হাজার বাস নামানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। এ ছাড়া ঢাকা শহরে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার জন্য পাঁচ হাজার ডাস্টবিন, নিরাপত্তার জন্য আরও সিসি ক্যামেরা স্থাপন, শহরের পরিবেশ ঠিক রাখার জন্য পরিবেশ পুলিশ গঠনের কথাও ভাবছে ডিএনসিসি।

আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর একটি হোটেলে মেয়রের দায়িত্ব নেওয়ার আট মাস উপলক্ষে টেলিভিশন মালিক-প্রধানদের সঙ্গে মতবিনিময়ে ডিএনসিসির মেয়র আনিসুল হক এসব কথা বলেন। তিনি প্রতিদিন প্রতিটি টেলিভিশনে রাজধানীর নানা বিষয়ে নিয়ে সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান প্রচারের জন্য টেলিভিশন কর্তৃপক্ষের কাছে আধা মিনিট থেকে এক মিনিট সময় বরাদ্দ চান।

আনিসুল হক বলেন, রাজধানীর মানুষের যাতায়াত সমস্যা সমাধানের জন্য ২০১৭ সালের মার্চের মধ্যে তিন হাজার পাবলিক বাস চালু করা হবে। এ অনুয়ায়ী কাজও চলছে। ইতিমধ্যে বাস মালিক সমিতির সঙ্গে কথা হয়েছে। বর্তমানে থাকা ১৯০ টি বাস কোম্পানিকে পাঁচটি কোম্পানিতে নামিয়ে আনার বিষয়ে ডিএনসিসির সঙ্গে মালিকেরা একমত হয়েছেন। এতে রাস্তায় বাসের চলাচলের ক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলা কমে যাবে। পুরোনো বাস তুলে নেওয়া হবে। এ ছাড়া এলাকাভিত্তিক যানজট কমানোর বিষয়েও কাজ করছে করপোরেশন। মেয়র বলেন, পরিচ্ছন্ন ঢাকার অংশ হিসেবে ঢাকা থেকে ২০ হাজার বিলবোর্ড অপসারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া বিলবোর্ড স্থাপনের বিষয়ে তিন মাসের মধ্যে নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে।

আনিসুল হক বলেন, পরিচ্ছন্ন ঢাকার আওতায় ঠিকমতো বাতি জ্বালানো ও রাস্তা পরিচ্ছন্ন রাখার কাজ করা হচ্ছে। রাস্তার ওপর যেন ময়লার কনটেইনার পড়ে না থাকে, সে জন্য ৭২টি স্টেশন তৈরি করা হচ্ছে। এ ছাড়া পাঁচ হাজার ডাস্টবিন তৈরি করার কাজ চলছে। যার মধ্যে দুই হাজার ডাস্টবিন আগামী দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে তৈরি করা হবে। রাতের বেলা যাতে ডাস্টবিন চুরি না হয়, সে জন্য বিশেষ ডাস্টবিন তৈরি হচ্ছে। এ ছাড়া এক শ গণ শৌচাগার তৈরির পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এরই মধ্যে ১৪টি তৈরি হয়ে গেছে। সেই শৌচাগারগুলো পাঁচ তারকা হোটেল মানের মতো হচ্ছে। এ ছাড়া মোবাইল এগুলো বিভিন্ন স্থানে বসানো হচ্ছে বলে জানান মেয়র।

কারওয়ান বাজার, আমিন বাজার, মহাখালী, তেজগাঁওসহ দশটি জায়গা দখল মুক্ত করার কথা জানিয়ে মেয়র বলেন, এই জায়গাগুলো মুক্ত করা সহজ ছিল না। এখানে হাজার কোটি টাকার সিন্ডিকেট আছে। এই এলাকাগুলো যেন আবার দখল না হয় সে জন্য গণমাধ্যমের সহযোগিতা চান মেয়র। এ ছাড়া কারওয়ান বাজার স্থানান্তরের কাজও এগিয়ে চলছে বলে জানান তিনি।

নগরের নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার গুরুত্ব তুলে ধরে আনিসুল হক বলেন, যেসব এলাকায় ইতিমধ্যে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে, সেখানে ৩০ থেকে ৪০ ভাগ অপরাধ কমে গেছে। আড়াই হাজার সিসি ক্যামেরা বসানোর পরিকল্পনা হিসেবে আগামী মে মাসের মধ্যে এর এক হাজার ক্যামেরা বসানোর কাজ শেষ হবে বলে জানান তিনি। একটি নির্দিষ্ট কন্ট্রোল রুম থেকে এগুলো পর্যবেক্ষণ করা হলে নগরে অপরাধ আরও কমে যাবে বলে মনে করেন তিনি।

রাজধানীকে সবুজ ঢাকায় রূপান্তর করতে ইতিমধ্যে নানা কাজ শুরু হয়ে গেছে জানিয়ে আনিসুল হক বলেন, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শ স্বেচ্ছাসেবক এ বিষয়ে কাজ করছে। তিনটি ইকো বাস থাকবে যে বাসে মানুষের বাড়ি বাড়ি গাছ, সার, মাটি পৌঁছে দেওয়া হবে। স্কুলে স্কুলে গিয়ে এ ধরনের কাজ শুরু হয়ে গেছে। পরিবেশ ঠিক রাখার বিষয়টি জোর দিতে গিয়ে মেয়র বলেন, সরকারের কাছে এক শ পরিবেশ পুলিশ দেওয়ার জন্য আবেদন করা হবে। পরিবেশ পুলিশের সহযোগিতা পেলে ঢাকা শহরের চেহারাই বদলে যাবে।

রাজধানীর দেওয়ালে পোস্টার ও লেখা লেখার বিষয়ে মেয়র বলেন, আগামী দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে যদি দেয়ালে লেখা ও পোস্টার লাগানো নিয়ন্ত্রণ না হয়, তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জলাবদ্ধতা দূর করার বিষয়ে মেয়র বলেন, ওয়াসার পুরো কাজ করতে করপোরেশন চায় না তবে জলাবদ্ধতা দূর করার জন্য তাদের কিছু কাজের সঙ্গে সমন্বয় করা জরুরি।

প্রশ্ন-উত্তর পর্বে চ্যানেল আইয়ের বার্তা পরিচালক শাইখ সিরাজ দাবি তোলেন, রাতে যাতে মানুষ নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারে সে জন্য আলাদা যানবাহনের ব্যবস্থা করতে হবে। তিনি বলেন, ঢাকা শহরের অনেক বাড়িতে গ্যাস নেই। এ বিষয়ে মেয়রের সাহায্য চান তিনি। জবাবে আনিসুল হক সমস্যা সমাধানের জন্য কাজ করবেন বলে জানান।

বৈঠকে মাছরাঙা টেলিভিশনের সিইও ফাহিম মুনয়েম, সময় টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ জুবায়ের, ইটিভির প্রধান সম্পাদক মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।