ঢাকা ১০:৪২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

শত বছর ধরে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে রামচন্দ্রপুর রামকান্ত উচ্চ বিদ্যালয়

মো: মোশাররফ হোসেন মনিরঃ

কথায় বলে, ‘ধ্যানের চর্চা হয় গুহায়, ধর্মের চর্চা হয় মসজিদ-মন্দিরে, নীতির চর্চা হয় পরিবারে, বিদ্যার চর্চা হয় বিদ্যালয়ে’। বিদ্যা চর্চার এমনি একটি শতবর্ষী বিদ্যাপিঠ। ১০০ বছর ধরে যে বিদ্যালয়টি আজও আলো ছড়াচ্ছে সেটি হলো কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলার উত্তর সিমান্তবর্তী এলাকার রামচন্দ্রপুর রামকান্ত উচ্চ বিদ্যালয়। বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে ৬ষ্ঠ শ্রেনী থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় দুই হাজার জন শিার্থী পড়াশুনা করছে এবং মাধ্যমিকে শিক সংখ্যা এমপিও ভুক্ত ১৮ জন, খন্ডকালীন ১৮ জন ও কর্মচারী ৫ জন। বিদ্যালয়টিতে রয়েছে একটি সমৃদ্ধ পাঠাগার। বইয়ের সংখ্যা এক হাজার ৮৩৯টি। রয়েছে একটি বিজ্ঞানাগার। বিদ্যালয়টির জমির পরিমাণ ৫ দশমিক ৭৩ একর। বিদ্যালয়ের স্কুল মূল ক্যাম্পাসে রয়েছে ১টি নিজস্ব খেলার মাঠ, বিদ্যালয়ে দ্বি-তল বিশিষ্ট তিনটি ও এক তলা একটি ভবন ও একটি পুকুর।

১৮৯৫ খ্রিষ্টাব্দে কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার রামচন্দ্রপুর পোষ্ট অফিসের স্থানে স্থানীয় প্রভাবশালী জমিদার স্বর্গীয় মথুরা মোহন রায় ১ম শ্রেনী থেকে ৬ষ্ঠ শ্রেনী পর্যন্ত মিডেল ইংলিশ স্কুল নামে একটি স্কুল স্থাপন করেন যা ১৯১৩ সালে জুনিয়র ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল হিসেবে চালু হয়। পরবর্তীতে ১৯১৮ সালে আমীন নগর গ্রামে মনোরম পরিবেশে তৎকালিন জমিদার স্বর্গীয় মথুরা মোহন রায় তার বাবা রামকান্ত সাহার নামে রামকান্ত উচ্চ বিদ্যালয় নামে নামকরন করে মাধ্যমিক বিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।

পরে ১৯২০ সালে কলিকাতা বিশ^বিদ্যালয় মাধ্যামিক বিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে। বর্তমানে চতুর্থ শ্রেনী থেকে দশম শ্রেনী প্রর্যন্ত শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। বৃহত্তর কুমিল্লা জেলার উত্তর পশ্চিমঞ্চলের (মুরাদনগর, নবীনগর, হোমনা ও বাঞ্ছারামপুর) খেঁটে খাওয়া মানুষের ছেলে-মেয়েদের মাঝে শিক্ষার আলো প্রজ্জলিত করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে এ স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে ১৯৪৭ সালে মথুরা মোহন রায়ের ব্যাক্তিগত তহবিল থেকে দু’চালা ঘরের স্থলে ১০০ফুট দৈঘ্য একটি এক তলা ভবন নির্মাণ করেন। সেটি আবার ১৯৮৫ সালে দ্বি-তল ভবনে রূপান্তর করা হয়। অপর দিকে প্রাথমিক শিক্ষার জন্য ক্যাম্পাসের দক্ষিণ পূর্ব পাশে ১৯৬৫ সালে ৪ কক্ষ বিশিষ্ট একতলা ভবন নির্মাণ করা হয়। প্রর্যায়ক্রমে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে ১৯৮৮ সালে একটি অনুদানের টাকা থেকে ৪০ফুট দৈঘ্য ও ২০ফুট প্রস্ত একটি পাকা রোম তৈরী করা হয়। সেটির উপরে পরে আরো একটি টিন সীট কক্ষ নিমার্ন করা হয়। ১৯৭৩ সালে প্রাথমিক শিক্ষার স্কুলটিকে জাতীয়করন করা হলে মাধ্যমিক ও প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দুইটি পৃথক প্রতিষ্ঠান হিসেবে রূপান্ত হয়ে যায়। ১৯৮৪ সালে মাধ্যমিক শাখাকে এমপিওভুক্ত করার পর ১৯৯৫ সালে তিন রোম বিশিষ্ট এক তলা আরো একটি ভবন তৈরী করে ফ্যাসিলিটিস বিভাগ। ২০০১ সালে কতৃপক্ষ পুরাতন ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করলে ফ্যাসিলিটিস ও অনুদানের অর্থে নির্মাণ করা মোট পাচঁটি কক্ষে কোন রকম ভাবে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম। বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে শতকরা ৮০ ভাগ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় পাশ হয়ে আসছে। ১৯৬২ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মধ্যে ফুটবল খেলায় প্রথম স্থান অর্জন করে।

এ বিদ্যালয়ের বহু শিার্থী বর্তমানে দেশে-বিদেশে যেমন সুনাম অর্জন করেছেন, তেমনি সরকারের উচ্চ পর্যায়েও দায়িত্ব পালন করেছে এবং এখনো করছেন। বিদ্যালয়ের স্বনামধন্য কয়েকজন শিার্থী হলেন, শিল্প মন্ত্রানালয়ের সাবেক সচিব দেওয়ান জাকির হোসেন, অতিরিক্ত সচিব বাবু নারায়ন চন্দ্র দেবনাথ ও সাবেক যুগ্ম সচিব আবু নাছির, ঢাকা জেলার কর কমিশনার আব্দুল লতিফ, কুমিল্লা উত্তর জেলা আ’লীগের সাধারন সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম সরকার, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের সহযোগি অধ্যাপক ড. হাফিজুল ইসলাম, ম্যানেজম্যান্ট বিভাগের অধ্যাপক দ্বীন ইসলাম, ইবাইস বিশ^বিদ্যালয়ের ব্যাণিজ্য ও অর্থ নীতি বিভাগের ডিন ড. সূজিত সাহা, ময়মনসিংহ কৃষি বিশ^বিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো: ইদ্দ্রিস ও ড. আকত্তারুজ্জামান, চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. কিবরিয়া ভূইয়া, নারায়নগঞ্জ জেলার নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট রহিমা আক্তার, জজ বাদল চন্দ্র দত্ত, মেরিন ইঞ্জিনিয়ার কামরুল হাছান, দেশ পাবলিকেশনের ব্যাবস্থাপনা পরিচালক আলামিন সরকার, শিল্পতি গোলাম মহিউদ্দিন মোল্লা, শিল্পপতি গোলাম তৌহিদ মোবারক, শাহজাহান মোল্লা, ব্যবসায়ী আবুল হাশেম প্রমুখ।

রামচন্দ্রপুর রামকান্ত উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাজুল ইসলাম জানান, আজ এ বিদ্যালয়েরই প্রধান শিক্ষক হতে পেরে নিজে গর্ববোধ করি। এই বিদ্যালয়ের কোনো শিার্থী একদিন দেশ গড়ার কাজে নেতৃত্ব দিবে বলে মনে করি। এই বিদ্যালয়টি মানুষ গড়ার কারখানায় পরিণত হয়েছে। শিার্থীদের দেশপ্রেমিক আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার ল্েয কাজ করে যাব। আমি আশাকরি বিদ্যালয়টি সকল দিক বিবেচনা করে বিদ্যালয়টি জাতীয়করন করা হলে বিস্তীর্ন এলাকার গরীব জনগনের উপকার হবে।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

শত বছর ধরে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে রামচন্দ্রপুর রামকান্ত উচ্চ বিদ্যালয়

আপডেট সময় ১১:৫৮:৩০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮
মো: মোশাররফ হোসেন মনিরঃ

কথায় বলে, ‘ধ্যানের চর্চা হয় গুহায়, ধর্মের চর্চা হয় মসজিদ-মন্দিরে, নীতির চর্চা হয় পরিবারে, বিদ্যার চর্চা হয় বিদ্যালয়ে’। বিদ্যা চর্চার এমনি একটি শতবর্ষী বিদ্যাপিঠ। ১০০ বছর ধরে যে বিদ্যালয়টি আজও আলো ছড়াচ্ছে সেটি হলো কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলার উত্তর সিমান্তবর্তী এলাকার রামচন্দ্রপুর রামকান্ত উচ্চ বিদ্যালয়। বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে ৬ষ্ঠ শ্রেনী থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় দুই হাজার জন শিার্থী পড়াশুনা করছে এবং মাধ্যমিকে শিক সংখ্যা এমপিও ভুক্ত ১৮ জন, খন্ডকালীন ১৮ জন ও কর্মচারী ৫ জন। বিদ্যালয়টিতে রয়েছে একটি সমৃদ্ধ পাঠাগার। বইয়ের সংখ্যা এক হাজার ৮৩৯টি। রয়েছে একটি বিজ্ঞানাগার। বিদ্যালয়টির জমির পরিমাণ ৫ দশমিক ৭৩ একর। বিদ্যালয়ের স্কুল মূল ক্যাম্পাসে রয়েছে ১টি নিজস্ব খেলার মাঠ, বিদ্যালয়ে দ্বি-তল বিশিষ্ট তিনটি ও এক তলা একটি ভবন ও একটি পুকুর।

১৮৯৫ খ্রিষ্টাব্দে কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার রামচন্দ্রপুর পোষ্ট অফিসের স্থানে স্থানীয় প্রভাবশালী জমিদার স্বর্গীয় মথুরা মোহন রায় ১ম শ্রেনী থেকে ৬ষ্ঠ শ্রেনী পর্যন্ত মিডেল ইংলিশ স্কুল নামে একটি স্কুল স্থাপন করেন যা ১৯১৩ সালে জুনিয়র ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল হিসেবে চালু হয়। পরবর্তীতে ১৯১৮ সালে আমীন নগর গ্রামে মনোরম পরিবেশে তৎকালিন জমিদার স্বর্গীয় মথুরা মোহন রায় তার বাবা রামকান্ত সাহার নামে রামকান্ত উচ্চ বিদ্যালয় নামে নামকরন করে মাধ্যমিক বিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।

পরে ১৯২০ সালে কলিকাতা বিশ^বিদ্যালয় মাধ্যামিক বিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে। বর্তমানে চতুর্থ শ্রেনী থেকে দশম শ্রেনী প্রর্যন্ত শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। বৃহত্তর কুমিল্লা জেলার উত্তর পশ্চিমঞ্চলের (মুরাদনগর, নবীনগর, হোমনা ও বাঞ্ছারামপুর) খেঁটে খাওয়া মানুষের ছেলে-মেয়েদের মাঝে শিক্ষার আলো প্রজ্জলিত করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে এ স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে ১৯৪৭ সালে মথুরা মোহন রায়ের ব্যাক্তিগত তহবিল থেকে দু’চালা ঘরের স্থলে ১০০ফুট দৈঘ্য একটি এক তলা ভবন নির্মাণ করেন। সেটি আবার ১৯৮৫ সালে দ্বি-তল ভবনে রূপান্তর করা হয়। অপর দিকে প্রাথমিক শিক্ষার জন্য ক্যাম্পাসের দক্ষিণ পূর্ব পাশে ১৯৬৫ সালে ৪ কক্ষ বিশিষ্ট একতলা ভবন নির্মাণ করা হয়। প্রর্যায়ক্রমে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে ১৯৮৮ সালে একটি অনুদানের টাকা থেকে ৪০ফুট দৈঘ্য ও ২০ফুট প্রস্ত একটি পাকা রোম তৈরী করা হয়। সেটির উপরে পরে আরো একটি টিন সীট কক্ষ নিমার্ন করা হয়। ১৯৭৩ সালে প্রাথমিক শিক্ষার স্কুলটিকে জাতীয়করন করা হলে মাধ্যমিক ও প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দুইটি পৃথক প্রতিষ্ঠান হিসেবে রূপান্ত হয়ে যায়। ১৯৮৪ সালে মাধ্যমিক শাখাকে এমপিওভুক্ত করার পর ১৯৯৫ সালে তিন রোম বিশিষ্ট এক তলা আরো একটি ভবন তৈরী করে ফ্যাসিলিটিস বিভাগ। ২০০১ সালে কতৃপক্ষ পুরাতন ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করলে ফ্যাসিলিটিস ও অনুদানের অর্থে নির্মাণ করা মোট পাচঁটি কক্ষে কোন রকম ভাবে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম। বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে শতকরা ৮০ ভাগ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় পাশ হয়ে আসছে। ১৯৬২ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মধ্যে ফুটবল খেলায় প্রথম স্থান অর্জন করে।

এ বিদ্যালয়ের বহু শিার্থী বর্তমানে দেশে-বিদেশে যেমন সুনাম অর্জন করেছেন, তেমনি সরকারের উচ্চ পর্যায়েও দায়িত্ব পালন করেছে এবং এখনো করছেন। বিদ্যালয়ের স্বনামধন্য কয়েকজন শিার্থী হলেন, শিল্প মন্ত্রানালয়ের সাবেক সচিব দেওয়ান জাকির হোসেন, অতিরিক্ত সচিব বাবু নারায়ন চন্দ্র দেবনাথ ও সাবেক যুগ্ম সচিব আবু নাছির, ঢাকা জেলার কর কমিশনার আব্দুল লতিফ, কুমিল্লা উত্তর জেলা আ’লীগের সাধারন সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম সরকার, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের সহযোগি অধ্যাপক ড. হাফিজুল ইসলাম, ম্যানেজম্যান্ট বিভাগের অধ্যাপক দ্বীন ইসলাম, ইবাইস বিশ^বিদ্যালয়ের ব্যাণিজ্য ও অর্থ নীতি বিভাগের ডিন ড. সূজিত সাহা, ময়মনসিংহ কৃষি বিশ^বিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো: ইদ্দ্রিস ও ড. আকত্তারুজ্জামান, চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. কিবরিয়া ভূইয়া, নারায়নগঞ্জ জেলার নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট রহিমা আক্তার, জজ বাদল চন্দ্র দত্ত, মেরিন ইঞ্জিনিয়ার কামরুল হাছান, দেশ পাবলিকেশনের ব্যাবস্থাপনা পরিচালক আলামিন সরকার, শিল্পতি গোলাম মহিউদ্দিন মোল্লা, শিল্পপতি গোলাম তৌহিদ মোবারক, শাহজাহান মোল্লা, ব্যবসায়ী আবুল হাশেম প্রমুখ।

রামচন্দ্রপুর রামকান্ত উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাজুল ইসলাম জানান, আজ এ বিদ্যালয়েরই প্রধান শিক্ষক হতে পেরে নিজে গর্ববোধ করি। এই বিদ্যালয়ের কোনো শিার্থী একদিন দেশ গড়ার কাজে নেতৃত্ব দিবে বলে মনে করি। এই বিদ্যালয়টি মানুষ গড়ার কারখানায় পরিণত হয়েছে। শিার্থীদের দেশপ্রেমিক আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার ল্েয কাজ করে যাব। আমি আশাকরি বিদ্যালয়টি সকল দিক বিবেচনা করে বিদ্যালয়টি জাতীয়করন করা হলে বিস্তীর্ন এলাকার গরীব জনগনের উপকার হবে।