ঢাকা ০১:৫৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শেকলে বাঁধা ক্ষুধার্ত সিরীয় শিশুর মৃত্যুতে তোলপাড়

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ

গৃহযুদ্ধকবলিত সিরিয়া থেকে তুরস্ক হয়ে গ্রিসে যাওয়ার সময় নৌকাডুবিতে মারা যাওয়া শিশু আইলান কুর্দির কথা মনে আছে অনেকের। সৈকতে ভেসে আসা আইলানের নিথর মরদেহের ছবিতে বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তৈরি হয়েছিল। ওই ছবিটি জানান দিয়েছিল যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার ভেতরের নানা সংকট। পাঁচ বছর বয়সী আইলান কাঁদিয়েছিল বিশ্ব মানবতাকে।

আইলান কুর্দির মতো আবারও সিরীয় একটি শিশুর ছবি বিশ্ব মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। এবার আলোড়ন তুলেছে সিরিয়ার বাস্তুচ্যুত নাগরিকদের একটি ক্যাম্পে ছয় বছর বয়সী নাহলা আল ওথম্যানের একটি ছবি। উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ার বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকার ফারজাল্লাহ ক্যাম্পে নাহলার জীবনের শেষ দিনগুলো কেটেছে বাবা এবং ভাইবোনের সঙ্গে।

নেট দুনিয়ায় ঘুরপাক খাওয়া ওই ছবিতে দেখা যাচ্ছে, বাদামী চুলের নাহলা ময়লা পোশাকে দাঁড়িয়ে আছে। তার ছোট্ট হাত দুটো বাঁধা শেকলে। আর এই অবস্থায় মারা গেছে শিশুটি। আলোড়ন তোলা নাহলার ছবিটি তার মৃত্যুর কয়েক মাস আগে তোলা বলে নিশ্চিত করেছে নিউইয়র্ক টাইমস।

বাস্তুচ্যুতদের ওই ক্যাম্পের চারপাশে ঘুরে খেলে বেড়াত নাহলা। চঞ্চল শিশুটিকে নাগালে রাখতে তার বাবা প্রায়ই তাকে শেকলে বেঁধে রাখতেন। শেকলে হাত বাঁধা তার একটি ছবি নেট দুনিয়ায় তোলপাড় ফেলেছে। আইলান কুর্দির মতো নাহলার ছবি ঘিরেও কাঁদছে মানবতা।

ওই ক্যাম্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসাম আলি ওমর বলেছেন, সারা ক্যাম্পে ঘুরে বেড়াতো নাহলা। হারিয়ে যাওয়ার ভয়ে বাবা তার হাত কিংবা পা শেকলে বেঁধে রাখতেন। আমরা অনেকবার শেকল খুলে দিতে তার বাবাকে অনুরোধ করলেও তিনি বারবার তা অস্বীকার করতেন।

নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, মে মাসে ক্যাম্পে ক্ষুধার্ত অবস্থায় দ্রæত খাওয়ার সময় নাহলা মারা যায়। তার মৃত্যুর পর শেকলে বাঁধা ছবিটি দ্রæত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর চাপের মুখে নাহলার বাবাকে আটক করতে বাধ্য হয় স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।

দাতব্য গোষ্ঠীগুলো বলছে, ছোট্ট নাহলা সিরিয়ার লাখ লাখ শিশুর দুর্ভোগের প্রতিচ্ছবি। গৃহযুদ্ধ আর সহিংসতার কবলে পড়ে বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হওয়া এই ধরনের লাখ লাখ সিরীয় শিশু দেশটির উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন ক্যাম্পে পরিবারের সঙ্গে মানবেতর জীবনযাপন করছে। ক্ষুধা আর শিক্ষার অধিকার বঞ্চিত এসব শিশু চিকিৎসাসেবাও পাচ্ছে না। বেঁচে থাকতে এইটুকু বয়সে প্রতিদিনই তাদের লড়াই করতে হচ্ছে। অনাহারে মৃত্যু হচ্ছে অনেক শিশুর।

উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ার ৪২ লাখ বাসিন্দার বেশিরভাগই যুদ্ধের সময় ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে। তাদের আশ্রয জুটেছে অস্থায়ী বিভিন্ন ক্যাম্পে। ক্যাম্পগুলোর অবস্থা ক্রমেই খারাপ হয়ে উঠছে। বিশেষ করে শিশুদের জন্য সেখানে বাস করা দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। পরিবারকে সহায়তা দিতে এই বয়সে শ্রম দিতে বাধ্য হচ্ছে। এখানকার শিশু এবং অল্প বয়সীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতাও বেড়েছে বলেও সেভ দ্য চিলড্রেন।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

শেকলে বাঁধা ক্ষুধার্ত সিরীয় শিশুর মৃত্যুতে তোলপাড়

আপডেট সময় ১১:৪১:৩৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ জুন ২০২১

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ

গৃহযুদ্ধকবলিত সিরিয়া থেকে তুরস্ক হয়ে গ্রিসে যাওয়ার সময় নৌকাডুবিতে মারা যাওয়া শিশু আইলান কুর্দির কথা মনে আছে অনেকের। সৈকতে ভেসে আসা আইলানের নিথর মরদেহের ছবিতে বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তৈরি হয়েছিল। ওই ছবিটি জানান দিয়েছিল যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার ভেতরের নানা সংকট। পাঁচ বছর বয়সী আইলান কাঁদিয়েছিল বিশ্ব মানবতাকে।

আইলান কুর্দির মতো আবারও সিরীয় একটি শিশুর ছবি বিশ্ব মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। এবার আলোড়ন তুলেছে সিরিয়ার বাস্তুচ্যুত নাগরিকদের একটি ক্যাম্পে ছয় বছর বয়সী নাহলা আল ওথম্যানের একটি ছবি। উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ার বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকার ফারজাল্লাহ ক্যাম্পে নাহলার জীবনের শেষ দিনগুলো কেটেছে বাবা এবং ভাইবোনের সঙ্গে।

নেট দুনিয়ায় ঘুরপাক খাওয়া ওই ছবিতে দেখা যাচ্ছে, বাদামী চুলের নাহলা ময়লা পোশাকে দাঁড়িয়ে আছে। তার ছোট্ট হাত দুটো বাঁধা শেকলে। আর এই অবস্থায় মারা গেছে শিশুটি। আলোড়ন তোলা নাহলার ছবিটি তার মৃত্যুর কয়েক মাস আগে তোলা বলে নিশ্চিত করেছে নিউইয়র্ক টাইমস।

বাস্তুচ্যুতদের ওই ক্যাম্পের চারপাশে ঘুরে খেলে বেড়াত নাহলা। চঞ্চল শিশুটিকে নাগালে রাখতে তার বাবা প্রায়ই তাকে শেকলে বেঁধে রাখতেন। শেকলে হাত বাঁধা তার একটি ছবি নেট দুনিয়ায় তোলপাড় ফেলেছে। আইলান কুর্দির মতো নাহলার ছবি ঘিরেও কাঁদছে মানবতা।

ওই ক্যাম্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসাম আলি ওমর বলেছেন, সারা ক্যাম্পে ঘুরে বেড়াতো নাহলা। হারিয়ে যাওয়ার ভয়ে বাবা তার হাত কিংবা পা শেকলে বেঁধে রাখতেন। আমরা অনেকবার শেকল খুলে দিতে তার বাবাকে অনুরোধ করলেও তিনি বারবার তা অস্বীকার করতেন।

নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, মে মাসে ক্যাম্পে ক্ষুধার্ত অবস্থায় দ্রæত খাওয়ার সময় নাহলা মারা যায়। তার মৃত্যুর পর শেকলে বাঁধা ছবিটি দ্রæত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর চাপের মুখে নাহলার বাবাকে আটক করতে বাধ্য হয় স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।

দাতব্য গোষ্ঠীগুলো বলছে, ছোট্ট নাহলা সিরিয়ার লাখ লাখ শিশুর দুর্ভোগের প্রতিচ্ছবি। গৃহযুদ্ধ আর সহিংসতার কবলে পড়ে বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হওয়া এই ধরনের লাখ লাখ সিরীয় শিশু দেশটির উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন ক্যাম্পে পরিবারের সঙ্গে মানবেতর জীবনযাপন করছে। ক্ষুধা আর শিক্ষার অধিকার বঞ্চিত এসব শিশু চিকিৎসাসেবাও পাচ্ছে না। বেঁচে থাকতে এইটুকু বয়সে প্রতিদিনই তাদের লড়াই করতে হচ্ছে। অনাহারে মৃত্যু হচ্ছে অনেক শিশুর।

উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ার ৪২ লাখ বাসিন্দার বেশিরভাগই যুদ্ধের সময় ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে। তাদের আশ্রয জুটেছে অস্থায়ী বিভিন্ন ক্যাম্পে। ক্যাম্পগুলোর অবস্থা ক্রমেই খারাপ হয়ে উঠছে। বিশেষ করে শিশুদের জন্য সেখানে বাস করা দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। পরিবারকে সহায়তা দিতে এই বয়সে শ্রম দিতে বাধ্য হচ্ছে। এখানকার শিশু এবং অল্প বয়সীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতাও বেড়েছে বলেও সেভ দ্য চিলড্রেন।