ঢাকা ০৯:২৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

সেই হাটহাজারী মাদ্রাসাতে চিরঘুমে আল্লামা শফী

ধর্ম ও জীবন ডেস্কঃ

চট্টগ্রামের ঐতিহ্যিবাহী কওমি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হাটহাজারীর ‘আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসা’র প্রাঙ্গনেই শেষ ঠিকানা হলো প্রতিষ্ঠানটির সদ্য সাবেক মহাপরিচালক ও হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীর। যে প্রতিষ্ঠানে ১৯৮৬ সাল থেকে জীবনের শেষ দিনটি পর্যন্ত প্রায় ৩৪ বছর ধরে নেতৃত্ব দিয়েছেন সেই প্রতিষ্ঠান প্রঙ্গণেই চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন তিনি।

শনিবার দুপুরে জানাজা শেষে তাকে মাদ্রাসার কবরস্থান ‘মাক্ববেরায়ে জামিয়া’তে তাকে দাফন করা হয়।

এদিকে, আজ সকালেই হাটহাজারী মাদ্রাসা প্রঙ্গণে শাহ আহমদ শফীর মরদেহ রাখা হয়। সেখানে শেষবারের মতো তাকে দেখেছেন মাদ্রাসার বর্তমান ও সাবেক ছাত্ররা এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ভক্ত এবং আলেমরা। এরপর জোহরের নামাজ শেষে আহমদ শফির বড় ছেলে ও রাঙ্গুনিয়া পাখিয়ারটিলা কওমি মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা মোহাম্মদ ইউসুফ মাদানি তার পিতার জানাজা পড়ান। এরপরেই তার দাফন সম্পন্ন করা হয়।

ছাত্রবিক্ষোভের জেরে গত বৃহস্পতিবার ছাত্রদের আন্দোলনের মুখে মজলিসে শূরার বৈঠকে মাদ্রাসার মহাপরিচালকের পদ থেকে পদত্যাগ করেন শাহ আহমদ শফী। এরপরই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে ওই দিন রাত ১২টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের একটি অ্যাম্বুলেন্সে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। তার অবস্থা অবনতি হলে শুক্রবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বিকালে তাকে ঢাকার আসগর আলী হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তার। ঢাকা থেকে শেষবারের মতো গোসল ও কাফনের কাপড়ে ঢেকে নিজ জন্মভূমিতে যান প্রখ্যাত এই আলেম।

এক নজরে আল্লামা শফীর কর্মজীবন:

আল্লামা শফীর শিক্ষাজীবন শুরু হয় রাঙ্গুনিয়ার সরফভাটা মাদ্রাসায়। এরপর পটিয়ায়র আল জামিয়াতুল আরাবিয়া মাদ্রাসায় (জিরি মাদ্রাসা) লেখাপড়া করেন। ১৯৪০ সালে তিনি হাটহাজারীর দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসায় ভর্তি হন। ১৯৫০ সালে তিনি ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসায় যান, সেখানে চার বছর লেখাপড়ার সময় উপমহাদেশের বিখ্যাত আলেম শায়খুল হাদিস হুসাইন আহমদ মাদানির ছাত্রত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৮৬ সালে হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক পদে যোগ দেন আহমদ শফী। এরপর থেকে টানা ৩৪ বছর ধরে তিনি ওই পদে ছিলেন। ছাত্র বিক্ষোভের এক পর্যায়ে বৃহস্পতিবার তিনি অসুস্থতার কারণে মহাপরিচালক পদ থেক নিজেই অব্যাহতি নেন। তবে তাকে আমৃত্যু সদরুল মুহতামিম বা উপদেষ্টা হিসেবে রাখার সিদ্ধান্ত হয়। দেশের আলেমদের কাছে শ্রদ্ধার পাত্র আহমদ শফী বাংলায় ১৩টি এবং উদুর্তে নয়টি বইয়ের রচয়িতা।

মূলত ২০১৩ সালে গণজাগরণ আন্দোলন শুরুর পর তার বিরোধিতায় হেফাজতে ইসলামকে নিয়ে মাঠে নেমে আলোচনায় উঠে আসেন আহমদ শফী। জীবদ্দশায় হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালকের পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা বোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশেরও (বেফাক) সভাপতি পদে ছিলেন। এছাড়া কওমি মাদ্রাসাগুলোর সমন্বিত বোর্ড আল হাইয়াতুল উলয়ার তিনি চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছিলেন। তার নেতৃত্বেই ২০১৭ সালে সরকার কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ স্তর দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্স সমমান দেয়।

সম্প্রতি করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে কিছু দিন বন্ধ থেকে মাদ্রাসা খোলার পর গত বুধবার আকস্মিকভাবে কয়েক শ শিক্ষার্থী বিক্ষোভ শুরু করেন। তারা আহমদ শফীর অব্যাহতি এবং তার ছেলে আনাস মাদানির বহিষ্কার দাবিতে বিভিন্ন কক্ষে ভাঙচুরও চালান। পরে বুধবার মাদ্রাসার শূরা কমিটি বৈঠক করে আনাস মাদানিকে অব্যাহতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এরপরও বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ হলে সরকার কওমি মাদ্রাসাটি বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ওই চিঠি পাওয়ার পর সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে রাতে আহমদ শফীর নেতৃত্বে বৈঠকে বসে মাদ্রাসার শূরা কমিটি। সেখানে অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে মহাপরিচালকের পদ থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন আল্লামা শফী। এসময় তিনি মাদ্রাসা পরিচালনা ও নতুন মুহতামিম মনোনয়নের দায়িত্ব শূরা কমিটিকে দিয়ে দেন।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

সেই হাটহাজারী মাদ্রাসাতে চিরঘুমে আল্লামা শফী

আপডেট সময় ০৪:২৫:০০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০

ধর্ম ও জীবন ডেস্কঃ

চট্টগ্রামের ঐতিহ্যিবাহী কওমি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হাটহাজারীর ‘আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসা’র প্রাঙ্গনেই শেষ ঠিকানা হলো প্রতিষ্ঠানটির সদ্য সাবেক মহাপরিচালক ও হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীর। যে প্রতিষ্ঠানে ১৯৮৬ সাল থেকে জীবনের শেষ দিনটি পর্যন্ত প্রায় ৩৪ বছর ধরে নেতৃত্ব দিয়েছেন সেই প্রতিষ্ঠান প্রঙ্গণেই চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন তিনি।

শনিবার দুপুরে জানাজা শেষে তাকে মাদ্রাসার কবরস্থান ‘মাক্ববেরায়ে জামিয়া’তে তাকে দাফন করা হয়।

এদিকে, আজ সকালেই হাটহাজারী মাদ্রাসা প্রঙ্গণে শাহ আহমদ শফীর মরদেহ রাখা হয়। সেখানে শেষবারের মতো তাকে দেখেছেন মাদ্রাসার বর্তমান ও সাবেক ছাত্ররা এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ভক্ত এবং আলেমরা। এরপর জোহরের নামাজ শেষে আহমদ শফির বড় ছেলে ও রাঙ্গুনিয়া পাখিয়ারটিলা কওমি মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা মোহাম্মদ ইউসুফ মাদানি তার পিতার জানাজা পড়ান। এরপরেই তার দাফন সম্পন্ন করা হয়।

ছাত্রবিক্ষোভের জেরে গত বৃহস্পতিবার ছাত্রদের আন্দোলনের মুখে মজলিসে শূরার বৈঠকে মাদ্রাসার মহাপরিচালকের পদ থেকে পদত্যাগ করেন শাহ আহমদ শফী। এরপরই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে ওই দিন রাত ১২টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের একটি অ্যাম্বুলেন্সে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। তার অবস্থা অবনতি হলে শুক্রবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বিকালে তাকে ঢাকার আসগর আলী হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তার। ঢাকা থেকে শেষবারের মতো গোসল ও কাফনের কাপড়ে ঢেকে নিজ জন্মভূমিতে যান প্রখ্যাত এই আলেম।

এক নজরে আল্লামা শফীর কর্মজীবন:

আল্লামা শফীর শিক্ষাজীবন শুরু হয় রাঙ্গুনিয়ার সরফভাটা মাদ্রাসায়। এরপর পটিয়ায়র আল জামিয়াতুল আরাবিয়া মাদ্রাসায় (জিরি মাদ্রাসা) লেখাপড়া করেন। ১৯৪০ সালে তিনি হাটহাজারীর দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসায় ভর্তি হন। ১৯৫০ সালে তিনি ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসায় যান, সেখানে চার বছর লেখাপড়ার সময় উপমহাদেশের বিখ্যাত আলেম শায়খুল হাদিস হুসাইন আহমদ মাদানির ছাত্রত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৮৬ সালে হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক পদে যোগ দেন আহমদ শফী। এরপর থেকে টানা ৩৪ বছর ধরে তিনি ওই পদে ছিলেন। ছাত্র বিক্ষোভের এক পর্যায়ে বৃহস্পতিবার তিনি অসুস্থতার কারণে মহাপরিচালক পদ থেক নিজেই অব্যাহতি নেন। তবে তাকে আমৃত্যু সদরুল মুহতামিম বা উপদেষ্টা হিসেবে রাখার সিদ্ধান্ত হয়। দেশের আলেমদের কাছে শ্রদ্ধার পাত্র আহমদ শফী বাংলায় ১৩টি এবং উদুর্তে নয়টি বইয়ের রচয়িতা।

মূলত ২০১৩ সালে গণজাগরণ আন্দোলন শুরুর পর তার বিরোধিতায় হেফাজতে ইসলামকে নিয়ে মাঠে নেমে আলোচনায় উঠে আসেন আহমদ শফী। জীবদ্দশায় হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালকের পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা বোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশেরও (বেফাক) সভাপতি পদে ছিলেন। এছাড়া কওমি মাদ্রাসাগুলোর সমন্বিত বোর্ড আল হাইয়াতুল উলয়ার তিনি চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছিলেন। তার নেতৃত্বেই ২০১৭ সালে সরকার কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ স্তর দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্স সমমান দেয়।

সম্প্রতি করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে কিছু দিন বন্ধ থেকে মাদ্রাসা খোলার পর গত বুধবার আকস্মিকভাবে কয়েক শ শিক্ষার্থী বিক্ষোভ শুরু করেন। তারা আহমদ শফীর অব্যাহতি এবং তার ছেলে আনাস মাদানির বহিষ্কার দাবিতে বিভিন্ন কক্ষে ভাঙচুরও চালান। পরে বুধবার মাদ্রাসার শূরা কমিটি বৈঠক করে আনাস মাদানিকে অব্যাহতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এরপরও বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ হলে সরকার কওমি মাদ্রাসাটি বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ওই চিঠি পাওয়ার পর সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে রাতে আহমদ শফীর নেতৃত্বে বৈঠকে বসে মাদ্রাসার শূরা কমিটি। সেখানে অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে মহাপরিচালকের পদ থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন আল্লামা শফী। এসময় তিনি মাদ্রাসা পরিচালনা ও নতুন মুহতামিম মনোনয়নের দায়িত্ব শূরা কমিটিকে দিয়ে দেন।