ঢাকা ০২:৩৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

দেবিদ্বারে ক্লাস বন্ধ রেখে শিক্ষার্থীদের নিয়ে ‘ভোটার দিবস’ পালন

দেবিদ্বার (কুমিল্লা) প্রতিনিধিঃ

কুমিল্লার দেবিদ্বারে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠদান বন্ধ করে জাতীয় ভোটার দিবসের আলোচনা সভায় থাকতে বাধ্য করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সভাপতিত্বে আজ বৃহস্পতিবার এ ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।

জানা যায়, জাতীয় ভোটার দিবস উপলক্ষে আজ দেবিদ্বার নির্বাচন অফিসের উদ্যোগে র‌্যালি ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ডেজী চক্রবর্তী। উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আলতাফ হোসেনের পরিচালনায় সভায় উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান হাজী আবুল কাশেম ওমানী, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নাজমা বেগম, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কাজী আব্দুল ওয়াহিদ মো. সালেহ, থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কমল কৃষ্ণ দাস ছাড়াও দুই ইউপি চেয়ারম্যান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধান ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

দেবিদ্বার মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম ও দশম শ্রেণির ছাত্রীদের পাঠদান বন্ধ করে ইউএনওসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে র‌্যালি ও আলোচনা সভায় উপস্থিত রাখার বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন মহলে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এছাড়াও জাতীয় ভোটার দিবসের মতো একটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ দিবসে জনপ্রতিনিধি ও সাংবাদিকদের দাওয়াত না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে খোদ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে।

কুমিল্লা জেলা পরিষদের সদস্য ও কুমিল্লা উত্তর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শিরিন সুলতানা বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আমি নারীদের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। দেশের জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশী নারী। জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে নারীদের ভূমিকা বিশ্বব্যাপী আলোচিত। অথচ নারী নেত্রীদের ভোটার দিবসে দাওয়াত করা হয় না। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে দাওয়াত না পাওয়াটা খুবই দুঃখজনক, কর্মকর্তাদের খাম-খেয়ালির কারণে এমন হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ছাত্রী বলেন, প্রতিটি দিবসের অনুষ্ঠানেই আমাদের স্কুলের ছাত্রীদের নিয়ে যাওয়া হয়। আমাদের ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও স্যারদের কারণে বাধ্য হয়ে যেতে হয়। ভোটার দিবসের আলোচনা সভায় উপস্থিত থাকার কারণে আমরা দুটি ক্লাস করতে পারিনি।

দেবিদ্বার মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মজিবুর রহমান বলেন, উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আমাকে ফোন দিয়ে বলেন- ছাত্রীদের র‌্যালিতে রাখতে, ইউএনও সাহেব বলেছেন। আমি সকাল ১০টায় ছাত্রীদের নিয়ে র‌্যালিতে যাই, কিন্তু র‌্যালি শেষে সভায়ও শিক্ষার্থীদের রেখে দেওয়া হয়।

এ ব্যাপারে দেবিদ্বার উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আলতাফ হোসেন বলেন, ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক আমাদের কমিটির সদস্য। শিক্ষার্থীদের র‌্যালির জন্য নিয়ে আসা হয়েছিল। কিন্তু মিটিংয়ে লোকজনের উপস্থিতি কম থাকায় শিক্ষার্থীদের মিটিংয়ে রেখে দেওয়া হয়েছে।

পাঠদান বন্ধ করে শিক্ষার্থীদের মিটিংয়ে রাখার বিষয়ে দেবিদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ডেজী চক্রবর্তীর নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও প্রধান শিক্ষকের নিকট থেকে বিষয়টি জেনে নেন।

কুমিল্লা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মঞ্জুরুল আলম বলেন, শিক্ষার্থীরা সরকারী যে কোনো অনুষ্ঠানে থাকতে পারে। কিন্তু পাঠদান বন্ধ করে অনুষ্ঠানে রাখার কোনো নিয়ম নাই।

এ ব্যাপারে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম বলেন, বিষয়টি আমি দেখব।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

দেবিদ্বারে ক্লাস বন্ধ রেখে শিক্ষার্থীদের নিয়ে ‘ভোটার দিবস’ পালন

আপডেট সময় ০৩:১২:৪৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ মার্চ ২০২৩

দেবিদ্বার (কুমিল্লা) প্রতিনিধিঃ

কুমিল্লার দেবিদ্বারে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠদান বন্ধ করে জাতীয় ভোটার দিবসের আলোচনা সভায় থাকতে বাধ্য করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সভাপতিত্বে আজ বৃহস্পতিবার এ ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।

জানা যায়, জাতীয় ভোটার দিবস উপলক্ষে আজ দেবিদ্বার নির্বাচন অফিসের উদ্যোগে র‌্যালি ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ডেজী চক্রবর্তী। উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আলতাফ হোসেনের পরিচালনায় সভায় উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান হাজী আবুল কাশেম ওমানী, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নাজমা বেগম, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কাজী আব্দুল ওয়াহিদ মো. সালেহ, থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কমল কৃষ্ণ দাস ছাড়াও দুই ইউপি চেয়ারম্যান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধান ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

দেবিদ্বার মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম ও দশম শ্রেণির ছাত্রীদের পাঠদান বন্ধ করে ইউএনওসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে র‌্যালি ও আলোচনা সভায় উপস্থিত রাখার বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন মহলে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এছাড়াও জাতীয় ভোটার দিবসের মতো একটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ দিবসে জনপ্রতিনিধি ও সাংবাদিকদের দাওয়াত না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে খোদ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে।

কুমিল্লা জেলা পরিষদের সদস্য ও কুমিল্লা উত্তর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শিরিন সুলতানা বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আমি নারীদের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। দেশের জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশী নারী। জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে নারীদের ভূমিকা বিশ্বব্যাপী আলোচিত। অথচ নারী নেত্রীদের ভোটার দিবসে দাওয়াত করা হয় না। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে দাওয়াত না পাওয়াটা খুবই দুঃখজনক, কর্মকর্তাদের খাম-খেয়ালির কারণে এমন হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ছাত্রী বলেন, প্রতিটি দিবসের অনুষ্ঠানেই আমাদের স্কুলের ছাত্রীদের নিয়ে যাওয়া হয়। আমাদের ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও স্যারদের কারণে বাধ্য হয়ে যেতে হয়। ভোটার দিবসের আলোচনা সভায় উপস্থিত থাকার কারণে আমরা দুটি ক্লাস করতে পারিনি।

দেবিদ্বার মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মজিবুর রহমান বলেন, উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আমাকে ফোন দিয়ে বলেন- ছাত্রীদের র‌্যালিতে রাখতে, ইউএনও সাহেব বলেছেন। আমি সকাল ১০টায় ছাত্রীদের নিয়ে র‌্যালিতে যাই, কিন্তু র‌্যালি শেষে সভায়ও শিক্ষার্থীদের রেখে দেওয়া হয়।

এ ব্যাপারে দেবিদ্বার উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আলতাফ হোসেন বলেন, ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক আমাদের কমিটির সদস্য। শিক্ষার্থীদের র‌্যালির জন্য নিয়ে আসা হয়েছিল। কিন্তু মিটিংয়ে লোকজনের উপস্থিতি কম থাকায় শিক্ষার্থীদের মিটিংয়ে রেখে দেওয়া হয়েছে।

পাঠদান বন্ধ করে শিক্ষার্থীদের মিটিংয়ে রাখার বিষয়ে দেবিদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ডেজী চক্রবর্তীর নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও প্রধান শিক্ষকের নিকট থেকে বিষয়টি জেনে নেন।

কুমিল্লা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মঞ্জুরুল আলম বলেন, শিক্ষার্থীরা সরকারী যে কোনো অনুষ্ঠানে থাকতে পারে। কিন্তু পাঠদান বন্ধ করে অনুষ্ঠানে রাখার কোনো নিয়ম নাই।

এ ব্যাপারে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম বলেন, বিষয়টি আমি দেখব।