ঢাকা ০৭:৫৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মুরাদনগরে ১৫০ পরিবারে অবৈধ গ্যাস লাইনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন

মো. হাবিবুর রহমান, বিশেষ প্রতিনিধিঃ

কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার ধামঘর ইউনিয়নের পরমতলা গ্রামের বাসা-বাড়িতে অবৈধভাবে দেয়া প্রায় ১৫০টি পরিবারের গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে বাখরাবাদ গ্যাস ডিষ্ট্রিবিউশন কোম্পানী লিমিটেড। রোববার দুপুরে ওই অভিযানে নেতৃত্ব দেন, উপজেলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অভিষেক দাশ।

এ অভিযানকে স্থানীয় জনগণ স্বাগত জানিয়ে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে সংযোগ দেওয়া অবৈধ গ্যাস বিচ্ছিন্ন করার জন্য ভ্রাম্যমান আদালতের নিকট দাবি করেন। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত রহস্যজনক কারণে উক্ত অবৈধ গ্যাস লাইন নির্মানে জড়িত মেসার্স মতি এন্টার প্রাইজসহ জড়িত অন্যান্যদের বিরুদ্ধে কোন প্রকার আইনানুগ ব্যবস্থা না নেয়ায় এলাকায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

ভুক্তভোগী গ্রাহকরা অভিযোগ করে বলেন, ঠিকাদাররা সংযোগ জনপ্রতি ১ লক্ষ টাকা করে নিয়েছে। সংযোগ পাওয়ার পর থেকে বইয়ের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত বিল পরিশোধ করে আসছে। অনলাইনে আমাদের নামও আছে, তাহলে কেন গ্যাস সংযোগ বন্ধ হবে? এখন আমাদের ব্যাক্তিগত টাকা দিয়ে ক্রয় করা পাইপ পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তাহলে অফিস কিভাবে অনলাইনে আমাদের নাম তুললো, আমাদেরকে বিল বই দিলো? তারা অবিলম্বে অবৈধ গ্যাস সংযোগকারীদের গ্রেফতারপূর্বক আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্কুল শিক্ষকসহ একাধিক ব্যাক্তি অভিযোগ করে বলেন, ২০১৫ ও ২০১৬ সালে মেসার্স মতি এন্টার প্রাইজসহ কয়েকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও দালাল চক্র বাখরাবাদ গ্যাস ডিসট্রিবিউশন দেবিদ্বার জোনাল অফিস ও জেলা অফিসের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজোসে একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট চক্র উপজেলার ভূবনঘর, দড়িকান্দি, দুলারামপুর ১১ হাজার ফুট, বোরারচর জাহাপুর ৩০ হাজার ফুট, দড়িকান্দি এক কিলোমিটার, করকটিয়া, সোনাপুর দুই কিলোমিটার, সুবিলারচর দুই কিলোমিটার, কোম্পানীগঞ্জ তিন কিলোমিটার, রানীমুহুরী, বড়ইয়াকুড়ি, বোরারচর ছয় কিলোমিটার, নোয়াকান্দি ৯’শ ফুট, ধামঘর সাড়ে তিন হাজার ফুট, পালাসুতা ছয় হাজার ফুট, পায়ব দুই কিলোমিটার, শুশুন্ডা তিন কিলোমিটার, কুলুবাড়ি, বাখরনগর পাঁচ কিলোমিটার, মধ্যনগর, করিমপুর তিন কিলোমিটার, নবীপুর তিন কিলোমিটার, নগরপাড় দেড় কিলোমিটার, গুঞ্জর তিন কিলোমিটার, পৈয়াপাথর দেড় কিলোমিটার ও নহল, রামনগর, ধামঘর তিন হাজার ৬’শ ফুট গ্যাস লাইনের মাধ্যমে অবৈধভাবে গ্যাসের আবাসিক সংযোগ দিয়ে সাধারন নিরীহ গ্রাহকদের কাছ থেকে মেসার্স মতি এন্টার প্রাইজসহ অন্যান্য দালাল চক্র কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এ বিষয়ে অবৈধ গ্যাস সংযোগের একটি তালিকাসহ বাখরাবাদ গ্যাস ডিসট্রিবিউশন, পেট্্েরাবাংলাসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ দেওয়া হয়। যার পরিপেক্ষিতে বাখরাবাদ গ্যাস ডিসট্রিবিউশন ও পেট্্েরাবাংলার প্রধান কার্যালয় থেকে পৃথক দু’টি তদন্ত দল সরেজমিনে তদন্ত করে সত্যতা পায় এবং সংশ্লিষ্ট দফতরে রির্পোট প্রধান করা হলেও অভিযুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স মতি এন্টার প্রাইজসহ ও দালাল চক্রের বিরুদ্ধে কোন প্রকার প্রদক্ষেপ না নেওয়ায় ভূক্তভোগিদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরী হয়েছে।

বাখরাবাদ গ্যাস ডিষ্ট্রিবিউশন কোম্পানীর লিমিটেডের কুমিল্লা দপ্তরের ভিজিলেন্স শাখা জানায়, অভিযোগের ভিত্তিতে অবৈধ গ্যাস সংযোগের একটি তালিকা করা হয়েছে। সেখানে মুরাদনগর উপজেলার প্রায় ৪০টি গ্রামের নাম রয়েছে। রোববার পরমতলা গ্রামের অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে, নিয়মিত এ অভিযান অব্যাহত থাকবে। অপর দিকে অবৈধ সংযোগের সাথে জড়িত মেসার্স মতি এন্টার প্রাইজসহ অন্যান্য চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে বাখরাবাদ গ্যাস ডিষ্ট্রিবিউশন কোম্পানী লিমিটেডের কুমিল্লা অফিসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শঙ্কর মজুমদার বলেন, অবৈধ গ্যাস সংযোগে জড়িত ঠিকাদার, দালাল ও সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কুমিল্লা জোনে ১১৮টি মামলা হয়েছে। আরো কয়েকটি মামলা প্রক্রিয়াধীন। অনেক সরকারি কর্মকর্তাকে চাকুরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভূক্ত করে লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

মুরাদনগরে ১৫০ পরিবারে অবৈধ গ্যাস লাইনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন

আপডেট সময় ০৩:৫৮:০২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ জুন ২০২২

মো. হাবিবুর রহমান, বিশেষ প্রতিনিধিঃ

কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার ধামঘর ইউনিয়নের পরমতলা গ্রামের বাসা-বাড়িতে অবৈধভাবে দেয়া প্রায় ১৫০টি পরিবারের গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে বাখরাবাদ গ্যাস ডিষ্ট্রিবিউশন কোম্পানী লিমিটেড। রোববার দুপুরে ওই অভিযানে নেতৃত্ব দেন, উপজেলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অভিষেক দাশ।

এ অভিযানকে স্থানীয় জনগণ স্বাগত জানিয়ে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে সংযোগ দেওয়া অবৈধ গ্যাস বিচ্ছিন্ন করার জন্য ভ্রাম্যমান আদালতের নিকট দাবি করেন। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত রহস্যজনক কারণে উক্ত অবৈধ গ্যাস লাইন নির্মানে জড়িত মেসার্স মতি এন্টার প্রাইজসহ জড়িত অন্যান্যদের বিরুদ্ধে কোন প্রকার আইনানুগ ব্যবস্থা না নেয়ায় এলাকায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

ভুক্তভোগী গ্রাহকরা অভিযোগ করে বলেন, ঠিকাদাররা সংযোগ জনপ্রতি ১ লক্ষ টাকা করে নিয়েছে। সংযোগ পাওয়ার পর থেকে বইয়ের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত বিল পরিশোধ করে আসছে। অনলাইনে আমাদের নামও আছে, তাহলে কেন গ্যাস সংযোগ বন্ধ হবে? এখন আমাদের ব্যাক্তিগত টাকা দিয়ে ক্রয় করা পাইপ পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তাহলে অফিস কিভাবে অনলাইনে আমাদের নাম তুললো, আমাদেরকে বিল বই দিলো? তারা অবিলম্বে অবৈধ গ্যাস সংযোগকারীদের গ্রেফতারপূর্বক আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্কুল শিক্ষকসহ একাধিক ব্যাক্তি অভিযোগ করে বলেন, ২০১৫ ও ২০১৬ সালে মেসার্স মতি এন্টার প্রাইজসহ কয়েকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও দালাল চক্র বাখরাবাদ গ্যাস ডিসট্রিবিউশন দেবিদ্বার জোনাল অফিস ও জেলা অফিসের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজোসে একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট চক্র উপজেলার ভূবনঘর, দড়িকান্দি, দুলারামপুর ১১ হাজার ফুট, বোরারচর জাহাপুর ৩০ হাজার ফুট, দড়িকান্দি এক কিলোমিটার, করকটিয়া, সোনাপুর দুই কিলোমিটার, সুবিলারচর দুই কিলোমিটার, কোম্পানীগঞ্জ তিন কিলোমিটার, রানীমুহুরী, বড়ইয়াকুড়ি, বোরারচর ছয় কিলোমিটার, নোয়াকান্দি ৯’শ ফুট, ধামঘর সাড়ে তিন হাজার ফুট, পালাসুতা ছয় হাজার ফুট, পায়ব দুই কিলোমিটার, শুশুন্ডা তিন কিলোমিটার, কুলুবাড়ি, বাখরনগর পাঁচ কিলোমিটার, মধ্যনগর, করিমপুর তিন কিলোমিটার, নবীপুর তিন কিলোমিটার, নগরপাড় দেড় কিলোমিটার, গুঞ্জর তিন কিলোমিটার, পৈয়াপাথর দেড় কিলোমিটার ও নহল, রামনগর, ধামঘর তিন হাজার ৬’শ ফুট গ্যাস লাইনের মাধ্যমে অবৈধভাবে গ্যাসের আবাসিক সংযোগ দিয়ে সাধারন নিরীহ গ্রাহকদের কাছ থেকে মেসার্স মতি এন্টার প্রাইজসহ অন্যান্য দালাল চক্র কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এ বিষয়ে অবৈধ গ্যাস সংযোগের একটি তালিকাসহ বাখরাবাদ গ্যাস ডিসট্রিবিউশন, পেট্্েরাবাংলাসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ দেওয়া হয়। যার পরিপেক্ষিতে বাখরাবাদ গ্যাস ডিসট্রিবিউশন ও পেট্্েরাবাংলার প্রধান কার্যালয় থেকে পৃথক দু’টি তদন্ত দল সরেজমিনে তদন্ত করে সত্যতা পায় এবং সংশ্লিষ্ট দফতরে রির্পোট প্রধান করা হলেও অভিযুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স মতি এন্টার প্রাইজসহ ও দালাল চক্রের বিরুদ্ধে কোন প্রকার প্রদক্ষেপ না নেওয়ায় ভূক্তভোগিদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরী হয়েছে।

বাখরাবাদ গ্যাস ডিষ্ট্রিবিউশন কোম্পানীর লিমিটেডের কুমিল্লা দপ্তরের ভিজিলেন্স শাখা জানায়, অভিযোগের ভিত্তিতে অবৈধ গ্যাস সংযোগের একটি তালিকা করা হয়েছে। সেখানে মুরাদনগর উপজেলার প্রায় ৪০টি গ্রামের নাম রয়েছে। রোববার পরমতলা গ্রামের অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে, নিয়মিত এ অভিযান অব্যাহত থাকবে। অপর দিকে অবৈধ সংযোগের সাথে জড়িত মেসার্স মতি এন্টার প্রাইজসহ অন্যান্য চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে বাখরাবাদ গ্যাস ডিষ্ট্রিবিউশন কোম্পানী লিমিটেডের কুমিল্লা অফিসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শঙ্কর মজুমদার বলেন, অবৈধ গ্যাস সংযোগে জড়িত ঠিকাদার, দালাল ও সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কুমিল্লা জোনে ১১৮টি মামলা হয়েছে। আরো কয়েকটি মামলা প্রক্রিয়াধীন। অনেক সরকারি কর্মকর্তাকে চাকুরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভূক্ত করে লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে।