মোঃ মোশারফ হোসেন মনিরঃ
মানবতা, সাম্য, দ্রোহ ও প্রেমের কবি কাজী নজরুল ইসলাম ১৯২১ সালে কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা পূর্ব ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামে এসেছিলেন। বন্ধু আলী আকবর খানের সঙ্গে তাঁর বাড়িতে। এখানকার সবুজ-শ্যামল পরিবেশ কবিকে দারুণভাবে আচ্ছন্ন করে কবিকে। এখানে কবি রচনা করেছেন বহু কবিতা, গান আর ছড়া। সেই দৌলতপুর আজও অবহেলিত। এখানে রাষ্ট্রীয়ভাবে কবির নামে হয়নি কোনো প্রতিষ্ঠান। এ অবস্থার মধ্য দিয়ে কবির ১১৭তম জন্মবার্ষিকী পালিত হচ্ছে।
মুরাদনগরের কোম্পানীগঞ্জ-নবীনগর সড়ক ধরে সামনে এগোলেই দৌলতপুর গ্রাম। এ গ্রামে ঢুকতেই চোখে পড়বে নজরুল তোরণ। ওই পথ ধরে আধা কিলোমিটার এগোলেই খানবাড়ি। যে বাড়িকে কেন্দ্র করে নজরুলময় হয়ে ওঠেন ভক্তরা। ওই বাড়ি আর গ্রাম দীর্ঘদিন থেকে পরিচিত হয়ে ওঠে নজরুল-নার্গিসের গ্রাম হিসেবে। এখানে রয়েছে আলী আকবর খানের সুনিপুণ কারুকাজে শোভিত দ্বিতল বাড়ি। এ বাড়িতেই কবি ছিলেন। এ বাড়ির পলেস্টারা খসে গেছে। দীর্ঘদিন ধরে হচ্ছে না সংস্কার। এ ভবনের পেছনে বাঁশঝাড় পার হলেই কবির বাসরঘর।
জানা যায়, ১৯৬২ সাল পর্যন্ত কবির বাসরঘরটি আটচালা ছিল। পরে চৌচালা হলেও আয়তন ও ভিটির কোনো পরিবর্তন করা হয়নি। ওই ঘরে রয়েছে নার্গিসের ব্যবহার করা কাঠের সিন্দুক। একসময় ওই ঘরে বাসরখাটটি ছিল। এখন সেটি পাশের একটি আধা পাকা ঘরে রাখা হয়েছে।
কবিপত্নী নার্গিস বংশের উত্তরসূরিরা জানা, এ বাড়ির পুকুরঘাটে কবি দুপুরে শীতলপাটিতে বসে গান ও কবিতা লিখতেন। খানবাড়ির ছেলেমেয়েদের নাচ, গান ও বাদ্যযন্ত্র শেখাতেন। পুকুরের পানিতে সাঁতার কাটতেন। শখ করে পপুকুরে জাল আর পলো দিয়ে মাছ শিকার করতেন। কবির ওই স্মৃতিচিহ্ন ধরে রাখার জন্য দৌলতপুরে বানানো হয়েছে ‘নজরুল মঞ্চ’। প্রতিবছর কবির জন্মদিনে সেখানে জেলা প্রশাসন ও মুরাদনগর উপজেলা প্রশাসন অযোজন করে বিভিন্ন অনুষ্ঠান। এর বাইরে আর কিছুই এখানে হয়নি।
এলাকাবাসী জানান, ওই মঞ্চে বছরের অধিকাংশ সময় গরু চরে। শিশুরা হামাগুড়ি দেয়। ময়মনসিংহের ত্রিশালে কবির নামে অনেক কিছু হয়েছে। অথচ দৌলতপুরে কিছুই হলো না। অনেক কবিতা ও গান রচনা করেছেন। দৌলতপুরে কবির নামে বড় ধরনের কোনো স্থাপনা ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র করা দাবি জানান এলাকাবাসি।