ঢাকা ০৯:১৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আমার ছেলের লাশটা এনে দেন শেষবারের মতো তার মুখখানা দেখতে চাই

নাজমুল করিম ফারুক, তিতাস (কুমিল্লা) প্রতিনিধিঃ

আমাকে নিঃসন্তান করার জন্যই পরিকল্পিতভাবে হৃদয়কে অপহরণ করে হত্যা করে গুম করা হয়েছে। আমি এর বিচার চাই আমার ছেলের মৃতদেহ আমাকে এনে দেন, শেষবারের মতো তার মুখখানা দেখতে চাই’।

তিতাস উপজেলার বাতাকান্দি উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র আবু তাহের ওরফে হৃদয়কে শ্বাসরোধে হত্যার ঘটনায় বৃহস্পতিবার উপজেলার বাতাকান্দি বাজারে লাশ উদ্ধার ও জড়িত অন্যান্য আসামীদের গ্রেফতারের দাবীতে সহপাঠী, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবক, ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসীর উদ্যোগে আয়োজিত মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ কথা বলতে গিয়ে হৃদয়ের বাবা বশির আহম্মেদ কান্নাজড়িত কন্ঠে একথা বলেন।

বিক্ষোভ সমাবেশ চলাকালীন সময় গৌরীপুর-হোমনা সড়কের প্রায় ১ঘন্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে। ২১ ডিসেম্বর হৃদয় নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় ২৩ ডিসেম্বর উপজেলার মধ্য আকালিয়া গ্রামের মোহাম্মদ আলী (৩০), রিয়াদ হোসেন (২৫), মহিন আহমেদ (২৪) ও কালাই গোবিন্দপুর গ্রামের সাকিব (২৩) গেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতার চার তরুণ ২৭ ডিসেম্বর কুমিল্লার আমলি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন। স্বীকারোক্তি মতে হোমনার তিতাস নদীতে গত ২৫ ও ২৬ ডিসেম্বর স্থানীয় ও ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল চেষ্টা চালালেও লাশ উদ্ধার করতে পারেনি।

এদিকে আবু তাহেরের লাশ উদ্ধার ও খুনিদের বিচারের দাবিতে বৃহস্পতিবার ১১টায় বাতাকান্দি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, বাজারের ব্যবসায়ী, এলাকাবাসী মানববন্ধন ও পরে বিক্ষোভ সমাবেশ করে। এসময় গৌরীপুর-হোমনা সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। বাতাকান্দি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আলাউদ্দিন ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে উক্ত সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও কমিউনিটি পুলিশিং সমন্বয় কমিটির সভাপতি পারভেজ হোসেন সরকার। বিশেষ অতিথি ছিলেন, তিতাস থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম, বলরামপুর ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ নূর নবী, সাতানী ইউপি চেয়ারম্যান সামছুল হক সরকার, জগতপুর ইউপি চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান, ম্যানেজিং কমিটির সদস্য রুবেল হোসেন, আবু হানিফ স্বপন, আবুল কালাম বেপারী, আজিজুন নেছাসহ এলাকার রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

সমাবেশে অভিযোগ উঠে, গ্রেফতার চার তরুণের স্বীকারোক্তিমূলে অন্যান্য আসামীদের গ্রেফতারে পুলিশ গরিমসি করছে, লাশ বহনকারী সিএনজিটি উদ্ধারসহ সিএনজির পেছনে থাকা দু’টি মোটর সাইকেলে কারা ছিল, যে মোটর সাইকেলের সহযোগিতায় আসামীরা বাড়ি ফিরেছে তাদের কেন গ্রেফতার করা হচ্ছে না, বস্তা সরবরাহকারী ব্যক্তিও ধরা ছোয়ার বাইরে কেন?

পুলিশ ও আবু তাহেরের পারিবারিক সূত্র জানায়, ২১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ব্যাডমিন্টন খেলার জন্য প্রতিবেশী মোহাম্মদ আলীদের বাড়ির পাশের মাঠে যায় আবু তাহের। এরপর আর সে ফেরেনি। পরদিন বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি ও মাইকিং করেও তাকে পাওয়া যায়নি। ওই দিন সন্ধ্যায় আবু তাহেরের বাবা বশির আহমেদের মুঠোফোনে ফোন করে বলা হয়, তাঁর ছেলেকে অপহরণ করা হয়েছে। ২০ লাখ টাকা দিলে ছাড়া হবে। এরপর রাতে আবারও ফোন করে বলা হয়, টাকা জোগাড় হয়েছে কি না। পরবর্তী সময়ে বশির আহমেদ জানতে চান, কোথায় টাকা পাঠাতে হবে। এরপরই ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। ওই রাতেই তিনি তিতাস থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ছেলেকে অপহরণের অভিযোগে মামলা করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২৩ ডিসেম্বর মোহাম্মদ আলী, রিয়াদ, মহিন ও সাকিবকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর ওই চার তরুণ পুলিশকে হত্যাকাণ্ডের বিবরণ দেয়। তাঁরা পুলিশকে বলেন, ২০ লাখ টাকার জন্য আবু তাহেরকে অপহরণ করেন মোহাম্মদ আলী ও তাঁর সহযোগীরা। অপহরণের সময়ই মোহাম্মদ আলী শ্বাসরোধে আবু তাহেরকে হত্যা করেন। অন্যরা আবু তাহেরকে চেপে ধরেন। পরে বস্তায় ভরে লাশ হোমনা-বাঞ্ছারামপুর সড়কের সংযোগ সেতুর ওপর থেকে তিতাস নদীতে ফেলে দেওয়া হয়।

নিহতের বাবা বশির আহমেদ সমাবেশে বলেন, ‘আমাকে নিঃসন্তান করার জন্যই পরিকল্পিতভাবে হৃদয়কে অপহরণ করে হত্যা করে গুম করা হয়েছে। আমি এর বিচার চাই আমার ছেলের মৃতদেহ আমাকে এনে দেন, শেষবারের মতো তার মুখখানা দেখতে চাই’।

তিতাস থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম বলেন, চার তরুণের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী তিতাস নদী থেকে আবু তাহেরের লাশ উদ্ধারে স্থানীয় ও ডুবুরিদের মাধ্যমে অভিযান চালানো হয়েছে। লাশ উদ্ধারে প্রয়োজনে নৌবাহিনীর সদস্যদের সহযোগিতা নেয়া হবে। তিনি আরো বলেন, শীঘ্রই অন্যান্য আসামাদের গ্রেফতার করা হবে।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

শিক্ষার্থীদের উপর হামলার প্রতিবাদে মুরাদনগরে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ

আমার ছেলের লাশটা এনে দেন শেষবারের মতো তার মুখখানা দেখতে চাই

আপডেট সময় ১২:৪৮:১৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৬
নাজমুল করিম ফারুক, তিতাস (কুমিল্লা) প্রতিনিধিঃ

আমাকে নিঃসন্তান করার জন্যই পরিকল্পিতভাবে হৃদয়কে অপহরণ করে হত্যা করে গুম করা হয়েছে। আমি এর বিচার চাই আমার ছেলের মৃতদেহ আমাকে এনে দেন, শেষবারের মতো তার মুখখানা দেখতে চাই’।

তিতাস উপজেলার বাতাকান্দি উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র আবু তাহের ওরফে হৃদয়কে শ্বাসরোধে হত্যার ঘটনায় বৃহস্পতিবার উপজেলার বাতাকান্দি বাজারে লাশ উদ্ধার ও জড়িত অন্যান্য আসামীদের গ্রেফতারের দাবীতে সহপাঠী, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবক, ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসীর উদ্যোগে আয়োজিত মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ কথা বলতে গিয়ে হৃদয়ের বাবা বশির আহম্মেদ কান্নাজড়িত কন্ঠে একথা বলেন।

বিক্ষোভ সমাবেশ চলাকালীন সময় গৌরীপুর-হোমনা সড়কের প্রায় ১ঘন্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে। ২১ ডিসেম্বর হৃদয় নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় ২৩ ডিসেম্বর উপজেলার মধ্য আকালিয়া গ্রামের মোহাম্মদ আলী (৩০), রিয়াদ হোসেন (২৫), মহিন আহমেদ (২৪) ও কালাই গোবিন্দপুর গ্রামের সাকিব (২৩) গেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতার চার তরুণ ২৭ ডিসেম্বর কুমিল্লার আমলি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন। স্বীকারোক্তি মতে হোমনার তিতাস নদীতে গত ২৫ ও ২৬ ডিসেম্বর স্থানীয় ও ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল চেষ্টা চালালেও লাশ উদ্ধার করতে পারেনি।

এদিকে আবু তাহেরের লাশ উদ্ধার ও খুনিদের বিচারের দাবিতে বৃহস্পতিবার ১১টায় বাতাকান্দি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, বাজারের ব্যবসায়ী, এলাকাবাসী মানববন্ধন ও পরে বিক্ষোভ সমাবেশ করে। এসময় গৌরীপুর-হোমনা সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। বাতাকান্দি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আলাউদ্দিন ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে উক্ত সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও কমিউনিটি পুলিশিং সমন্বয় কমিটির সভাপতি পারভেজ হোসেন সরকার। বিশেষ অতিথি ছিলেন, তিতাস থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম, বলরামপুর ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ নূর নবী, সাতানী ইউপি চেয়ারম্যান সামছুল হক সরকার, জগতপুর ইউপি চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান, ম্যানেজিং কমিটির সদস্য রুবেল হোসেন, আবু হানিফ স্বপন, আবুল কালাম বেপারী, আজিজুন নেছাসহ এলাকার রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

সমাবেশে অভিযোগ উঠে, গ্রেফতার চার তরুণের স্বীকারোক্তিমূলে অন্যান্য আসামীদের গ্রেফতারে পুলিশ গরিমসি করছে, লাশ বহনকারী সিএনজিটি উদ্ধারসহ সিএনজির পেছনে থাকা দু’টি মোটর সাইকেলে কারা ছিল, যে মোটর সাইকেলের সহযোগিতায় আসামীরা বাড়ি ফিরেছে তাদের কেন গ্রেফতার করা হচ্ছে না, বস্তা সরবরাহকারী ব্যক্তিও ধরা ছোয়ার বাইরে কেন?

পুলিশ ও আবু তাহেরের পারিবারিক সূত্র জানায়, ২১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ব্যাডমিন্টন খেলার জন্য প্রতিবেশী মোহাম্মদ আলীদের বাড়ির পাশের মাঠে যায় আবু তাহের। এরপর আর সে ফেরেনি। পরদিন বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি ও মাইকিং করেও তাকে পাওয়া যায়নি। ওই দিন সন্ধ্যায় আবু তাহেরের বাবা বশির আহমেদের মুঠোফোনে ফোন করে বলা হয়, তাঁর ছেলেকে অপহরণ করা হয়েছে। ২০ লাখ টাকা দিলে ছাড়া হবে। এরপর রাতে আবারও ফোন করে বলা হয়, টাকা জোগাড় হয়েছে কি না। পরবর্তী সময়ে বশির আহমেদ জানতে চান, কোথায় টাকা পাঠাতে হবে। এরপরই ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। ওই রাতেই তিনি তিতাস থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ছেলেকে অপহরণের অভিযোগে মামলা করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২৩ ডিসেম্বর মোহাম্মদ আলী, রিয়াদ, মহিন ও সাকিবকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর ওই চার তরুণ পুলিশকে হত্যাকাণ্ডের বিবরণ দেয়। তাঁরা পুলিশকে বলেন, ২০ লাখ টাকার জন্য আবু তাহেরকে অপহরণ করেন মোহাম্মদ আলী ও তাঁর সহযোগীরা। অপহরণের সময়ই মোহাম্মদ আলী শ্বাসরোধে আবু তাহেরকে হত্যা করেন। অন্যরা আবু তাহেরকে চেপে ধরেন। পরে বস্তায় ভরে লাশ হোমনা-বাঞ্ছারামপুর সড়কের সংযোগ সেতুর ওপর থেকে তিতাস নদীতে ফেলে দেওয়া হয়।

নিহতের বাবা বশির আহমেদ সমাবেশে বলেন, ‘আমাকে নিঃসন্তান করার জন্যই পরিকল্পিতভাবে হৃদয়কে অপহরণ করে হত্যা করে গুম করা হয়েছে। আমি এর বিচার চাই আমার ছেলের মৃতদেহ আমাকে এনে দেন, শেষবারের মতো তার মুখখানা দেখতে চাই’।

তিতাস থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম বলেন, চার তরুণের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী তিতাস নদী থেকে আবু তাহেরের লাশ উদ্ধারে স্থানীয় ও ডুবুরিদের মাধ্যমে অভিযান চালানো হয়েছে। লাশ উদ্ধারে প্রয়োজনে নৌবাহিনীর সদস্যদের সহযোগিতা নেয়া হবে। তিনি আরো বলেন, শীঘ্রই অন্যান্য আসামাদের গ্রেফতার করা হবে।