জাতীয় ডেস্কঃ
উচ্চ আদালতের নির্দেশের পর আইন মন্ত্রী আনিসুল হক ও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান জানিয়েছেন ১৫ হাজার পুল শিক্ষকের স্থায়ী নিয়োগে আর কোনও বাধা নেই। তারপরও মাসের পর তাদের নিয়োগ আটকে আছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তারদের মধ্যে টানাপোড়নের কারণে এই অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা দাবি করেছেন।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২০১১ সালের ৪ আগস্ট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষকের শূন্য পদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি দেয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তর। এরপর লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় ২৭ হাজার ৭২০ জন উত্তীর্ণ হন। তাদের মধ্য থেকে ১২ হাজার ৭০১ জনকে শূন্য পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। বাকি ১৫ হাজার ১৯ জনকে রাখা হয় পুলভুক্ত হিসেবে। এরপর শিক্ষক পুল গঠনের জন্য ২০১২ সালে প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রথমে পরিপত্র জারি করে এবং দুই বছর পর ‘শিক্ষক পুল’ নীতিমালা প্রণয়ন করে। ওই নীতিমালায় ছয় মাসের অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়ার কথা বলে জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে প্রার্থীদের সইও নেওয়া হয়। কিন্তু’ উত্তীর্ণ প্রার্থীদের স্থায়ী নিয়োগ না দিয়ে ২০১৪ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগের জন্য আবারো বিজ্ঞপ্তি দেয় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
সূত্র আরো জানায়, অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে নিয়োগের অপেক্ষায় থাকা ৫২ জন আবেদনকারী ওই বছর রিট আবেদন করেন। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০১৪ সালের ১৯ অক্টোবর হাইকোর্ট রুল দেয়। রুলে নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির কার্যকারিতা ¯’গিত করে পুল শিক্ষককদের ¯’ায়ী নিয়োগের নির্দেশ দেন। এ পর্যন্ত ৭১টি একই ধরণের মামলার রায় দিয়েছে আদালত। উক্ত রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তর। গত ১১ জুলাই ওই আপীল খারিজ করে রায় দেয় আদালত। এই রায়ের পর পুল শিক্ষকদের স্থায়ী নিয়োগে কোন বাধা নেই বলে জানান রিটকারীদের আইনজীবী ব্যারিষ্টার আমিরুল ইসলাম। তিনি আরো জানান, পুল শিক্ষকদের নিয়োগের আগে অন্য কোন নিয়োগ দেওয়া যাবে না। এমনকি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশেও নিষেধাজ্ঞা প্রকাশ করেছে আদালত।
একই কথা জানান, আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক। গত ৬ সেপ্টেম্বর পুল শিক্ষকদের একটি প্রতিনিধি দল তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি একথা জানান। প্রতিনিধি দল গত ২১ সেপ্টেম্বর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। মন্ত্রী তাদেরকে জানান, রায়ের পর পুল শিক্ষকদের নিয়োগ দেওয়ার বিষয়ে তিনি লিখিত নোট দিয়েছেন। এবিষয়ে অধিদপ্তর দ্রুত পদক্ষেপ নিবে বলে মন্ত্রী তাদেরকে আশ্বস্ত করেন।
প্রতিনিধি দলের সদস্য পুল শিক্ষক রাকিব হোসেন সাংবাদিকদের জানান, মন্ত্রীদের নির্দেশনা সত্ত্বেও এবিষয়ে এখনো কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এরআগে সংসদীয় কমিটির পক্ষ থেকেও একই নির্দেশনা দেওয়া হয়। কিন্তু’ অধিদপ্তর তা আমলে নিচ্ছে না। যে কারণে পুল শিক্ষকদের নিয়োগ আটকে আছে। তিনি আরো জানান, স্থায়ী নিয়োগ তো দূরের কথা, পুল শিক্ষকরা নিয়মিত কাজও পাচ্ছেন না। আবার তারা অন্যান্য সহকারী শিক্ষকদের মত সমান দায়িত্ব পালন করলেও তাদেরকে দপ্তরীর থেকেও কম বেতন দেওয়া হচ্ছে। এরপর পুল শিক্ষকদের অনেকের চাকরির বয়সও শেষ হয়ে যাচ্ছে। ফলে তারা ভবিষ্যতের কথা ভেবে শংকিত হয়ে পড়েছে।
সরকারী নীতিমালা অনুযায়ী, পুল শিক্ষকদের মাসিক সম্মানী হবে সর্বসাকুল্যে ৬ হাজার টাকা, সরকারি ছুটি ব্যতিত অন্য কোনো প্রকার ছুটি দাবি করতে পারবেন না পুল শিক্ষকগণ, কর্তব্য স্থলে অনুপস্থিত থাকিলে প্রতিদিনের জন্য ২০০ টাকা হারে কর্তন হবে, অসুস্থতা বা দুর্ঘটনাজনিত কারণে সর্বোচ্চ ৭ দিনের বিনা বেতনে ছুটি নিতে পারবেন এবং প্রতিবার নিয়োগের সময় ১৫০ টাকার নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে প্রণীত মুচলেকায় স্বাক্ষর দিয়ে যোগদান করতে হবে।