ঢাকা ১১:১৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কব্জি দিয়ে লিখছে এইচএসসি পরীক্ষায় শাহ আলম

জাতীয় ডেস্কঃ
দু’হাতের সবগুলো আগুল হারিয়েছে শাহ আলম। তবুও থেমে থাকেনি সে। অবশিষ্ট কিব্জর সাহায্যে লিখে এবছর এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন শাহ আলম। তার বাড়ি লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার পূর্ব বিছনদই গ্রামে।
রবিবার হাতীবান্ধা মহিলা ডিগ্রী কলেজে কেন্দ্র গিয়ে দেখা গেছে, দু‘হাতের কব্জি দিয়ে পরীক্ষার খাতায় লিখে যাচ্ছেন তিনি। তুলনামূলক ভাবে অন্যান্য পরীক্ষার্থীদের চেয়ে তার আঙ্গুল বিহীন হাতের লেখাও অনেক সুন্দর। আর তার সুন্দর লেখা দেখে শুধু পরীক্ষার্থীই নন, শিক্ষকরাও অভিভূত।
পরীক্ষা শেষে কথা হয় শাহ আলমের সাথে। তিনি জানান, হাতীবান্ধা আলিমুদ্দিন কলেজের বাণিজ্য বিভাগের ছাত্র হিসেবে এবছর এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। পূর্ব বিছনদই গ্রামের বাসিন্দা। তার বাবা একরামুল একজন বর্গা চাষি। মা মরিয়ম বেগম গৃহিনী। ৫ ভাই-বোনের মধ্যে সে চতুর্থ।
মাত্র এক বছর বয়সে আগুনে পুড়ে তার দু’হাতের কবজি পর্যন্ত পুড়ে যায়। চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করার মতো বাবা-মায়ের সামর্থ না থাকায় অবশেষে দুই হাতের সবগুলো আঙ্গুলই হারাতে হয় তাকে। কিন্তু ছোট বেলা থেকে পড়াশোনার অদম্য ইচ্ছা ছিল তার।
স্থানীয় একটি ব্রাক স্কুল থেকে লেখাপড়া শুরু। এরপর সমাপনি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করায় সেই ইচ্ছে শক্তি আরও বেড়ে যায় বলে জানান তিনি। তবে পরিবারের অভাব-অনটন প্রায় সময় বাধ সাধলেও থেমে যাননি শাহ আলম। খেয়ে না খেয়ে পড়াশোনা চালিয়ে জেএসসি ও এসএসসিতে ভালো ফলাফল করে এবার এইচএসসি জয়ের স্বপ্ন আঁকছেন তিনি। এতে পড়াশোনা করেই ভবিষ্যতে শিক্ষক হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন তিনি।
হাতীবান্ধা আলিমুদ্দিন কলেজের অধ্যক্ষ সরওয়ার হায়াত খান বলেন, ‘শাহ আলমের পড়াশোনায় বেশ আগ্রহ। সে একজন মেধাবী ছাত্র। সে ভবিষ্যতে আরও ভাল করবে বলে জানান তিনি।’
বাবা একরামুল বলেন, তার ছেলে আগুনে দুটো হাত হারালেও মনোবল হারায়নি কখনও।  আর তাই সে এখন লেখাপড়া করে শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। কিন্তু সাত সদস্যের অভাবী পরিবারের চাহিদা মেটাতে গিয়ে ছেলের সেই স্বপ্ন শেষ পর্যন্ত পূরণ হবে কি না? এমন শংকা বাবা একরামুলের।
হাতীবান্ধা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বদিউজ্জামান ভেলু বলেন, শাহ আলম প্রতিভাবান ছাত্র। তার দরিদ্র বাবা-মায়ের পক্ষে লেখা পড়ার খরচ চালিয়ে যাওয়া খুবেই কষ্টকর বলে শুনেছি। তাই সমাজের বিত্তবান কেউ শাহ আলমের পাশে দাঁড়ালে তার ভবিষ্যত স্বপ্ন পূরণে আর কেউ বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারবেনা বলে মনে করেন তিনি।
ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

বাঞ্ছারামপুর হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী কুস্তি খেলা

কব্জি দিয়ে লিখছে এইচএসসি পরীক্ষায় শাহ আলম

আপডেট সময় ০৩:১৩:২০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ এপ্রিল ২০১৭
জাতীয় ডেস্কঃ
দু’হাতের সবগুলো আগুল হারিয়েছে শাহ আলম। তবুও থেমে থাকেনি সে। অবশিষ্ট কিব্জর সাহায্যে লিখে এবছর এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন শাহ আলম। তার বাড়ি লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার পূর্ব বিছনদই গ্রামে।
রবিবার হাতীবান্ধা মহিলা ডিগ্রী কলেজে কেন্দ্র গিয়ে দেখা গেছে, দু‘হাতের কব্জি দিয়ে পরীক্ষার খাতায় লিখে যাচ্ছেন তিনি। তুলনামূলক ভাবে অন্যান্য পরীক্ষার্থীদের চেয়ে তার আঙ্গুল বিহীন হাতের লেখাও অনেক সুন্দর। আর তার সুন্দর লেখা দেখে শুধু পরীক্ষার্থীই নন, শিক্ষকরাও অভিভূত।
পরীক্ষা শেষে কথা হয় শাহ আলমের সাথে। তিনি জানান, হাতীবান্ধা আলিমুদ্দিন কলেজের বাণিজ্য বিভাগের ছাত্র হিসেবে এবছর এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। পূর্ব বিছনদই গ্রামের বাসিন্দা। তার বাবা একরামুল একজন বর্গা চাষি। মা মরিয়ম বেগম গৃহিনী। ৫ ভাই-বোনের মধ্যে সে চতুর্থ।
মাত্র এক বছর বয়সে আগুনে পুড়ে তার দু’হাতের কবজি পর্যন্ত পুড়ে যায়। চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করার মতো বাবা-মায়ের সামর্থ না থাকায় অবশেষে দুই হাতের সবগুলো আঙ্গুলই হারাতে হয় তাকে। কিন্তু ছোট বেলা থেকে পড়াশোনার অদম্য ইচ্ছা ছিল তার।
স্থানীয় একটি ব্রাক স্কুল থেকে লেখাপড়া শুরু। এরপর সমাপনি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করায় সেই ইচ্ছে শক্তি আরও বেড়ে যায় বলে জানান তিনি। তবে পরিবারের অভাব-অনটন প্রায় সময় বাধ সাধলেও থেমে যাননি শাহ আলম। খেয়ে না খেয়ে পড়াশোনা চালিয়ে জেএসসি ও এসএসসিতে ভালো ফলাফল করে এবার এইচএসসি জয়ের স্বপ্ন আঁকছেন তিনি। এতে পড়াশোনা করেই ভবিষ্যতে শিক্ষক হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন তিনি।
হাতীবান্ধা আলিমুদ্দিন কলেজের অধ্যক্ষ সরওয়ার হায়াত খান বলেন, ‘শাহ আলমের পড়াশোনায় বেশ আগ্রহ। সে একজন মেধাবী ছাত্র। সে ভবিষ্যতে আরও ভাল করবে বলে জানান তিনি।’
বাবা একরামুল বলেন, তার ছেলে আগুনে দুটো হাত হারালেও মনোবল হারায়নি কখনও।  আর তাই সে এখন লেখাপড়া করে শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। কিন্তু সাত সদস্যের অভাবী পরিবারের চাহিদা মেটাতে গিয়ে ছেলের সেই স্বপ্ন শেষ পর্যন্ত পূরণ হবে কি না? এমন শংকা বাবা একরামুলের।
হাতীবান্ধা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বদিউজ্জামান ভেলু বলেন, শাহ আলম প্রতিভাবান ছাত্র। তার দরিদ্র বাবা-মায়ের পক্ষে লেখা পড়ার খরচ চালিয়ে যাওয়া খুবেই কষ্টকর বলে শুনেছি। তাই সমাজের বিত্তবান কেউ শাহ আলমের পাশে দাঁড়ালে তার ভবিষ্যত স্বপ্ন পূরণে আর কেউ বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারবেনা বলে মনে করেন তিনি।