ঢাকা ০৫:৪২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কোণঠাসা বিএনপি : লুটপাটে ব্যস্ত আলীগ

আবুল খায়ের, কুমিল্লা (উত্তর) থেকে

 20 ডিসেম্বর, 2014

সাতটি উপজেলার ৫টি সংসদীয় আসন নিয়ে গঠিত কুমিল্লা (উত্তর) রাজনৈতিক জেলা। এক সময় বিএনপির দুর্গ হিসেবে খ্যাত এ জেলায় বর্তমানে বিএনপি-জামায়াতসহ এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা রাজনৈতিক মামলায় কোণঠাসা-ঘরছাড়া। অনেক আগেই মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে অধিকাংশ উপজেলা ও ইউনিয়ন বিএনপি কমিটি। গ্রেফতার আতংকে কেন্দ্রীয় অনেক কর্মসূচি পালিত হয় না। তবে সাম্প্রতিক সময়ে কেন্দ্র থেকে সরকার পতনের চূড়ান্ত আন্দোলনের ইঙ্গিত পেয়ে আন্দোলন ও দলকে সংগঠিত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন নেতাকর্মীরা।
অপর দিকে আওয়ামী লীগেরও অধিকাংশ উপজেলা ও ইউনিয়ন কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে। জেলা আওয়ামী লীগের কমিটির সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছে ১৯৯৭ সালে। তবে সাংগঠনিকভাবে আওয়ামী লীগ পিছিয়ে থাকলেও প্রতিটি উপজেলায় এমপিদের পছন্দের লোক ও নেতাকর্মীরা দলকে সংগঠিত করা বাদ দিয়ে এখন টেন্ডারবাজি, বালু মহাল দখল, টিআর-কাবিখা বাণিজ্য থেকে শুরু করে হাট-বাজার, বাসস্ট্যান্ড ইজারা এবং সরকারি খাস জমি দখলে নেয়ায় ব্যস্ত। তাই ২০ দলীয় জোটের নেতাদের অভিমত, বিরোধী জোটের নেতাকর্মীদের আন্দোলন প্রতিরোধে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করার ক্ষমতা যা-ই থাকুক না কেন ওয়ান-ইলেভেনের পর থেকে জোটের কেন্দ্রীয়, জেলা ও উপজেলা নেতাদের মামলার বেড়াজালে আটকে রাখায় অনেকটা পারদর্শিতার পরিচয় দিতে সক্ষম হয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।বিএনপির দুর্গ হিসেবে খ্যাত এ জেলায় একসময় সভা-সেমিনার ও অঙ্গ সংগঠনের কমিটি গঠন করার জন্য আওয়ামী লীগ তেমন একটা জনবল খুঁজে না পেলেও ৩ বারের ক্ষমতার মসনদ ও সাংগঠনিক তৎপরতার কারণে এখন দলের অবস্থান অনেকটা ভালো। দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকার কারণে দলের নেতাকর্মীরা যেমন অর্থনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত তেমনি জনবলের দিক দিয়েও এ জেলায় আগের চেয়ে দলটি ভালো অবস্থানে। অপরদিকে এ জেলায় প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপির ছিল সোনালি অতীত। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে ৫টি আসনেই বিএনপি জয় লাভ করে। এরপর থেকে এ জেলায় বিএনপির প্রার্থীরা জয়ের ধারা অব্যাহত রাখলেও ওয়ান ইলেভেনের পর থেকেই দলটিকে কাবু করা শুরু করে আওয়ামী লীগ। রাজনৈতিক মামলায় কোণঠাসা হয়ে দলটির নেতাকর্মীদের এখন সময় কাটে আদালতে হাজিরা দিয়ে আর আত্মগোপনে থেকে। কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচিগুলো কোনো রকম পালন করলেও দলের বৃহৎ একটি অংশ মামলা-হামলার কারণে রাজনীতি থেকে অনেকটাই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে।
তবে গত ২৯ নভেম্বর বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার কুমিল্লা সফরের পর দলে অনেকটাই চাঙ্গাভাব বিরাজ করছে।এদিকে জেলা আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতারা বিএনপির সরকারবিরোধী আন্দোলন নিয়ে তেমন একটা চিন্তিত নন। জনমতের দিক দিয়ে বিএনপি সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে স্বীকার করে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের সিনিয়র নেতারা বলেন, ছন্দহারা ও আন্দোলনে অক্ষমদের দিয়ে গঠন করা হয়েছে কুমিল্লা উত্তর জেলা ছাত্রদল ও যুবদলের কমিটি। জেলা বিএনপির কমিটিতে যারা রয়েছে বেশিরভাগই থাকে আÍগোপনে।এছাড়াও বিএনপির যে বেশ কয়েকটি অঙ্গ সংগঠন রয়েছে এর বেশির ভাগেরই কুমিল্লা উত্তর জেলায় কোনো কার্যক্রম নেই। তাই বিএনপি সরকার বিরোধী আন্দোলনে নেমে কুমিল্লায় কোনো সুবিধা করতে পারবে না বলে সরকার দলীয়দের ধারণা।
এ ব্যাপারে কুমিল্লা উত্তর জেলা ছাত্রদলের সমাজ কল্যান বিষয়ক সম্পাদক রকিববিন হাছান বলেন, জনগণের ভোটাধিকার হরণ, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, খুন, গুম ও গণতান্ত্রিক শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে বাঁধা প্রদান করাই আওয়ামী লীগের ধর্ম, আমরা তাদের বাঁধা ও ষড়যন্ত্র নিয়ে চিন্তিত নই। তিনি বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া দেশ বাঁচাও নামে যে আন্দোলনের ডাক দিয়েছে তা হচ্ছে জনগণের আন্দোলন, দেশ রক্ষার আন্দোলন। এ আন্দোলন কিভাবে সফল হবে তা আলীগ জানে না। তিনি বলেন, দেশনেত্রী চূড়ান্ত আন্দোলনের ডাক দিলে তা সফল করার সব প্রস্তুতি ও ক্ষমতা উত্তর জেলা ছাত্রদলের রয়েছে। তবে খালেদা জিয়া ঘোষিত চূড়ান্ত আন্দোলনের ডাকে কতটা প্রভাব পড়বে এ জেলায় তা দেখার জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া আর কিছুই বলতে পারছে না রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সচেতন মহল।
ট্যাগস
জনপ্রিয় সংবাদ

শিক্ষার্থীদের উপর হামলার প্রতিবাদে মুরাদনগরে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ

কোণঠাসা বিএনপি : লুটপাটে ব্যস্ত আলীগ

আপডেট সময় ০৬:৫৮:১৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০১৪

আবুল খায়ের, কুমিল্লা (উত্তর) থেকে

 20 ডিসেম্বর, 2014

সাতটি উপজেলার ৫টি সংসদীয় আসন নিয়ে গঠিত কুমিল্লা (উত্তর) রাজনৈতিক জেলা। এক সময় বিএনপির দুর্গ হিসেবে খ্যাত এ জেলায় বর্তমানে বিএনপি-জামায়াতসহ এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা রাজনৈতিক মামলায় কোণঠাসা-ঘরছাড়া। অনেক আগেই মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে অধিকাংশ উপজেলা ও ইউনিয়ন বিএনপি কমিটি। গ্রেফতার আতংকে কেন্দ্রীয় অনেক কর্মসূচি পালিত হয় না। তবে সাম্প্রতিক সময়ে কেন্দ্র থেকে সরকার পতনের চূড়ান্ত আন্দোলনের ইঙ্গিত পেয়ে আন্দোলন ও দলকে সংগঠিত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন নেতাকর্মীরা।
অপর দিকে আওয়ামী লীগেরও অধিকাংশ উপজেলা ও ইউনিয়ন কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে। জেলা আওয়ামী লীগের কমিটির সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছে ১৯৯৭ সালে। তবে সাংগঠনিকভাবে আওয়ামী লীগ পিছিয়ে থাকলেও প্রতিটি উপজেলায় এমপিদের পছন্দের লোক ও নেতাকর্মীরা দলকে সংগঠিত করা বাদ দিয়ে এখন টেন্ডারবাজি, বালু মহাল দখল, টিআর-কাবিখা বাণিজ্য থেকে শুরু করে হাট-বাজার, বাসস্ট্যান্ড ইজারা এবং সরকারি খাস জমি দখলে নেয়ায় ব্যস্ত। তাই ২০ দলীয় জোটের নেতাদের অভিমত, বিরোধী জোটের নেতাকর্মীদের আন্দোলন প্রতিরোধে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করার ক্ষমতা যা-ই থাকুক না কেন ওয়ান-ইলেভেনের পর থেকে জোটের কেন্দ্রীয়, জেলা ও উপজেলা নেতাদের মামলার বেড়াজালে আটকে রাখায় অনেকটা পারদর্শিতার পরিচয় দিতে সক্ষম হয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।বিএনপির দুর্গ হিসেবে খ্যাত এ জেলায় একসময় সভা-সেমিনার ও অঙ্গ সংগঠনের কমিটি গঠন করার জন্য আওয়ামী লীগ তেমন একটা জনবল খুঁজে না পেলেও ৩ বারের ক্ষমতার মসনদ ও সাংগঠনিক তৎপরতার কারণে এখন দলের অবস্থান অনেকটা ভালো। দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকার কারণে দলের নেতাকর্মীরা যেমন অর্থনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত তেমনি জনবলের দিক দিয়েও এ জেলায় আগের চেয়ে দলটি ভালো অবস্থানে। অপরদিকে এ জেলায় প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপির ছিল সোনালি অতীত। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে ৫টি আসনেই বিএনপি জয় লাভ করে। এরপর থেকে এ জেলায় বিএনপির প্রার্থীরা জয়ের ধারা অব্যাহত রাখলেও ওয়ান ইলেভেনের পর থেকেই দলটিকে কাবু করা শুরু করে আওয়ামী লীগ। রাজনৈতিক মামলায় কোণঠাসা হয়ে দলটির নেতাকর্মীদের এখন সময় কাটে আদালতে হাজিরা দিয়ে আর আত্মগোপনে থেকে। কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচিগুলো কোনো রকম পালন করলেও দলের বৃহৎ একটি অংশ মামলা-হামলার কারণে রাজনীতি থেকে অনেকটাই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে।
তবে গত ২৯ নভেম্বর বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার কুমিল্লা সফরের পর দলে অনেকটাই চাঙ্গাভাব বিরাজ করছে।এদিকে জেলা আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতারা বিএনপির সরকারবিরোধী আন্দোলন নিয়ে তেমন একটা চিন্তিত নন। জনমতের দিক দিয়ে বিএনপি সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে স্বীকার করে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের সিনিয়র নেতারা বলেন, ছন্দহারা ও আন্দোলনে অক্ষমদের দিয়ে গঠন করা হয়েছে কুমিল্লা উত্তর জেলা ছাত্রদল ও যুবদলের কমিটি। জেলা বিএনপির কমিটিতে যারা রয়েছে বেশিরভাগই থাকে আÍগোপনে।এছাড়াও বিএনপির যে বেশ কয়েকটি অঙ্গ সংগঠন রয়েছে এর বেশির ভাগেরই কুমিল্লা উত্তর জেলায় কোনো কার্যক্রম নেই। তাই বিএনপি সরকার বিরোধী আন্দোলনে নেমে কুমিল্লায় কোনো সুবিধা করতে পারবে না বলে সরকার দলীয়দের ধারণা।
এ ব্যাপারে কুমিল্লা উত্তর জেলা ছাত্রদলের সমাজ কল্যান বিষয়ক সম্পাদক রকিববিন হাছান বলেন, জনগণের ভোটাধিকার হরণ, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, খুন, গুম ও গণতান্ত্রিক শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে বাঁধা প্রদান করাই আওয়ামী লীগের ধর্ম, আমরা তাদের বাঁধা ও ষড়যন্ত্র নিয়ে চিন্তিত নই। তিনি বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া দেশ বাঁচাও নামে যে আন্দোলনের ডাক দিয়েছে তা হচ্ছে জনগণের আন্দোলন, দেশ রক্ষার আন্দোলন। এ আন্দোলন কিভাবে সফল হবে তা আলীগ জানে না। তিনি বলেন, দেশনেত্রী চূড়ান্ত আন্দোলনের ডাক দিলে তা সফল করার সব প্রস্তুতি ও ক্ষমতা উত্তর জেলা ছাত্রদলের রয়েছে। তবে খালেদা জিয়া ঘোষিত চূড়ান্ত আন্দোলনের ডাকে কতটা প্রভাব পড়বে এ জেলায় তা দেখার জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া আর কিছুই বলতে পারছে না রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সচেতন মহল।