মো: মোশাররফ হোসেন মনিরঃ
কুমিল্লার চান্দিনায় এইচএসসি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের মানসিকভাবে হেনাস্থ করাকে কেন্দ্র করে পরীক্ষা শেষে কেন্দ্রে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা। এসময় বহিরাগতরা তাদের উপর হামলা চালায়। এতে অন্তত ৭ পরীক্ষার্থী আহত হয়। আহত পরীক্ষার্থীরা হলেন- বায়োজিদ, মিজান, সুমন, দিদার, বাবু, মাহাবুব ও সোহাগ। তারা সবাই চান্দিনার মাধাইয়া মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি কলেজের মানবিক শাখার শিক্ষার্থী। রোববার (১০ এপ্রিল) বিকাল ৫টা থেকে ৬টা পর্যন্ত চান্দিনা রেদোয়ান আহমেদ বিশ্ববিদ্যালয়ে ওই ঘটনা ঘটে। আহত পরীক্ষার্থীদের চান্দিনার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এলডিপি মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ প্রতিষ্ঠিত চান্দিনা রেদোয়ান আহমেদ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ও সাবেক ডেপুটি স্পিকার অধ্যাপক মো. আলী আশরাফ এমপি প্রতিষ্ঠিত চান্দিনা মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ এর সকল পরীক্ষা এক কলেজ এর শিক্ষার্থীরা অপর কলেজ কেন্দ্রে পরীক্ষা দিয়ে আসছিল। প্রায়ই তারা একে অপর কলেজ শিক্ষকদের উপর অভিযোগ দিয়ে আসছে। চলতি বছর রেদোয়ান আহমেদ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ কর্তৃপক্ষ উচ্চ আদালতে রিট করে বুড়িচং উপজেলার নিমসার জুনাব আলী ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রে তাদের শিক্ষার্থীদের স্থানান্তর করে। এদিকে মহিলা কলেজ এর শিক্ষার্থীরা যথারীতি রেদোয়ান আহমেদ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশ নেয়।
পরীক্ষা শুরু থেকে রেদোয়ান আহমেদ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ কেন্দ্রের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে মহিলা কলেজসহ বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষার্থীরা মানসিক হেনস্থা, খাতা আটকে রাখা সহ নানা অভিযোগ করছে।
রোববার ওই কেন্দ্রের ৩৩নং কক্ষে টাকার উপর লেখার দায়ে চান্দিনা মহিলা কলেজ এর এক পরীক্ষার্থী এবং মোহনপুর পাবলিক কলেজ এর আরও এক পরীক্ষার্থীর উত্তরপত্র আটক করে দায়িত্বরত হল পর্যবেক্ষক।
এ ঘটনার সূত্র ধরে পরীক্ষা শেষে মাধাইয়া মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি কলেজ, মোহনপুর পাবলিক কলেজ এবং চান্দিনা মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের পরীক্ষার্থীসহ আরও অনেক পরীক্ষার্থী কলেজ প্রাঙ্গণ এবং অধ্যক্ষ কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ শুরু করে। এক পর্যায়ে বহিরাগতরা এসে বিক্ষোভকারীদের উপর হামলা চালায়। পরে উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, পৌর মেয়র, চান্দিনা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
চান্দিনা মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক গৌতম কুমার দেব জানান, আমাদের কলেজের সুনাম ক্ষুন্ন করতে তারা নানাভাবে আমাদের পরীক্ষার্থীদের হয়রানি করে আসছে। মূলত ওই পরীক্ষার্থীরা কোন প্রকার নকল বা অসদুপায় অবলম্বন করেনি। ওই কলেজের সহকারি গ্রন্থাগার মো. শফিকুল ইসলাম নিয়ম বহিঃর্ভূতভাবে পর্যবেক্ষক এর দায়িত্বরত অবস্থায় টাকার মধ্যে কোথাকার কি লেখা পাওয়ায় উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে খাতা আটক করে। অপরদিকে পরীক্ষা শেষে যে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেছে তারা সকলেই ছেলে। যার ফলে তারা আমাদের শিক্ষার্থী হতে পারে না। বরং আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর বহিরাগতদের ডেকে এনে হামলা চালানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে চান্দিনা রেদোয়ান আহমেদ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ এর উপাধ্যক্ষ মনিরুল ইসলাম ভূইয়া জানান, আমরা কোন শিক্ষার্থীকেই নকল এর সুবিধা দেই না। রোববার অসদুপায় অবলম্বনের অভিযোগে তাদের খাতা আটক করা হয়েছে। আর সহকারি গ্রন্থাগার পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব পালন করার বিধানও আছে। পরীক্ষা কেন্দ্রে শুধু আমাদের কলেজ শিক্ষকরাই নয়, এসময় কেন্দ্রে দায়িত্বরত কর্মকর্তা উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার, সহকারি শিক্ষা অফিসারও উপস্থিত ছিলেন।
শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে বহিরাগতদের হামলার বিষয়ে তিনি আরও বলেন, নকলমুক্ত পরীক্ষা গ্রহণ করায় শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করে। তবে যারা হামলা করেছে তারা মাঠে ক্রিকেট খেলছিল। তারা কারা সে বিষয়ে আমি কিছুই বলতে পারব না।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুমন চৌধুরী জানান, বিক্ষোভাকারীদের উপর বহিরাগত হামলাকারীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে শীঘ্রই আইনানুগ ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।