ঢাকা ০৬:৩৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তিতাসে স্বামী আটকরে পর মাদক ব্যবসায় জড়াচ্ছে স্ত্রী

নাজমুল করমি ফারুক, তিতাস (কুমিল্লা) প্রতিনিধিঃ

কুমিল্লার তিতাসে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১২টায় উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে মাদক ব্যবসায় জড়িত স্বামীকে থানা পুলিশ আটকের পর জেল হাজতে প্রেরণ করলেও একই ব্যবসায় জড়াচ্ছে স্ত্রী এ নিয়ে কমিটির সদস্যরা উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

তিতাস প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল করিম ফারুক আলোচনার এক পর্যায়ে বলেন, বেশকিছু দিন উপজেলার বিরাট একটি অংশে মাদক বেচাকেনা ও সেবক শিথিল থাকলেও ইদানিং তা আবার সমাজে ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ছে। যা সমাজ ও ব্যক্তির জন্য মঙ্গলজনক নয়। এর সূত্র ধরে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সালাহ উদ্দিন সরকার বলেন, বেশকিছু দিন আগে মাদক বিক্রি ও সেবনকারীদের অত্যাচারে কথাই বলা যেত না, তবে আগের তুলনায় অনেকাংশে মাদকের বিস্তার কমে এসেছে। তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে মোটরসাইকেলে নজরদারী বাড়ানোর অনুরোধ করেন।

উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সামিয়া সুলতানা শিলা পুলিশকে উদ্দেশ্য করে বলেন, মাদক ব্যবসায়ী ও সেবনকারী যাতে জামিন না পায় এ ব্যাপারে আপনাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। কেননা এর ফলে মাদক ব্যবসায়ী ও সেবীদের অপরাধপ্রবণতা ঠেকানো সম্ভব হচ্ছে না। ইদানিং তার এলাকায় মাদকের প্রবণতা বেড়ে গেছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

সভায় উপস্থিত কলাকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাবিবুল্লাহ বাহার বলেন, আমার এলাকার একজন মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতারের পর তার স্ত্রী এ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের দৌড়াত্ব এতই বেশি যে তাদের বিরুদ্ধে কথা বলা যায় না। তাঁর কথার সাথে একাত্বতা ঘোষণা করে ‘স্বামী গ্রেফতারের পর স্ত্রী এ ব্যবসা চালাচ্ছে’ বলে কমিটির অধিকাংশ সদস্য একপটে স্বীকার করেন।

উপজেলা সদর কড়িকান্দি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ মহসিন ভূঁইয়া বলেন, ওমুক নেতার ভাই, ওমুক চেয়ারম্যানের ভাতিজা, ওমুক নেতার আত্মীয়-স্বজন তাঁদের ব্যক্তি নাম ভাঙ্গিয়ে যারা মাদক ব্যবসা চালাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অনুরোধ করেন। জগতপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান ও নারান্দিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার সালাহ উদ্দিন মাদক ব্যবসা ও সেবনকারী আটকের পর কারো সুপারিশে কর্ণপাত না করতে প্রশাসনকে অনুরোধ করেন। মাদক ব্যবসায়ী ও সেবনকারী একবার জেল থেকে জামিনে বের হয়ে যদি পুনরায় মাদক ব্যবসায় জড়িত হয় দ্রুত তাদের আবার গ্রেফতার করে জেল হাজতের ব্যবস্থা করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি অনুরোধ জানান।

সভায় উপস্থিত তিতাস থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আ.স.ম আব্দুন নূর বলেন, থানা পুলিশ মাদকের ব্যাপারে জিরো ট্রলারেস। মাদকদের সাথে কোন আপোষ নয়। তিনি বলেন, কী পরিমাণ মাদকদ্রব্যসহ কেন ব্যক্তি গ্রেফতার হন, তার উপর ভিত্তি করে আসামিরা জামিন পেয়ে যায়। এছাড়া এ জাতীয় মামলার এজাহারে ত্র“টি, সাক্ষীদের সাক্ষ্যদানে অনীহা এবং অভিযোগপত্র প্রদানে দীর্ঘসূত্রতার কারণে আসামিদের জামিন আইনগতভাবেই হয়ে যায়। তারপরও তিনি নতুনভাবে যারা মাদক ব্যবসায় জড়িত হচ্ছে তাদের তালিকা থানায় প্রেরণ করতে সকল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের প্রতি আহ্বান জানায়।

এদিকে গত ডিসেম্বর মাসে তিতসে ১টি খুন ও ২টি চুরির ঘটনাসহ ২১টি অপরাধ সংঘটিত হয়। যার মধ্যে ১টি খুন ও নারী নির্যাতনসহ মোট ১১টি মামলা রুজু হয়। অপরদিকে উপজেলা প্রশাসন ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে ১২টি মামলার অনুকূলে ৩জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডসহ ২০জনকে অর্থদণ্ড প্রদান করেন।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মকিমা বেগমের সভাপতিত্বে সভায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোঃ নজরুল ইসলাম, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা শারমিন আরা, উপজেলা সহকারী মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুল গণি প্রমূখ।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

শিক্ষার্থীদের উপর হামলার প্রতিবাদে মুরাদনগরে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ

তিতাসে স্বামী আটকরে পর মাদক ব্যবসায় জড়াচ্ছে স্ত্রী

আপডেট সময় ০৩:১২:০১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ জানুয়ারী ২০১৭
নাজমুল করমি ফারুক, তিতাস (কুমিল্লা) প্রতিনিধিঃ

কুমিল্লার তিতাসে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১২টায় উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে মাদক ব্যবসায় জড়িত স্বামীকে থানা পুলিশ আটকের পর জেল হাজতে প্রেরণ করলেও একই ব্যবসায় জড়াচ্ছে স্ত্রী এ নিয়ে কমিটির সদস্যরা উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

তিতাস প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল করিম ফারুক আলোচনার এক পর্যায়ে বলেন, বেশকিছু দিন উপজেলার বিরাট একটি অংশে মাদক বেচাকেনা ও সেবক শিথিল থাকলেও ইদানিং তা আবার সমাজে ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ছে। যা সমাজ ও ব্যক্তির জন্য মঙ্গলজনক নয়। এর সূত্র ধরে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সালাহ উদ্দিন সরকার বলেন, বেশকিছু দিন আগে মাদক বিক্রি ও সেবনকারীদের অত্যাচারে কথাই বলা যেত না, তবে আগের তুলনায় অনেকাংশে মাদকের বিস্তার কমে এসেছে। তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে মোটরসাইকেলে নজরদারী বাড়ানোর অনুরোধ করেন।

উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সামিয়া সুলতানা শিলা পুলিশকে উদ্দেশ্য করে বলেন, মাদক ব্যবসায়ী ও সেবনকারী যাতে জামিন না পায় এ ব্যাপারে আপনাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। কেননা এর ফলে মাদক ব্যবসায়ী ও সেবীদের অপরাধপ্রবণতা ঠেকানো সম্ভব হচ্ছে না। ইদানিং তার এলাকায় মাদকের প্রবণতা বেড়ে গেছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

সভায় উপস্থিত কলাকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাবিবুল্লাহ বাহার বলেন, আমার এলাকার একজন মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতারের পর তার স্ত্রী এ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের দৌড়াত্ব এতই বেশি যে তাদের বিরুদ্ধে কথা বলা যায় না। তাঁর কথার সাথে একাত্বতা ঘোষণা করে ‘স্বামী গ্রেফতারের পর স্ত্রী এ ব্যবসা চালাচ্ছে’ বলে কমিটির অধিকাংশ সদস্য একপটে স্বীকার করেন।

উপজেলা সদর কড়িকান্দি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ মহসিন ভূঁইয়া বলেন, ওমুক নেতার ভাই, ওমুক চেয়ারম্যানের ভাতিজা, ওমুক নেতার আত্মীয়-স্বজন তাঁদের ব্যক্তি নাম ভাঙ্গিয়ে যারা মাদক ব্যবসা চালাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অনুরোধ করেন। জগতপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান ও নারান্দিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার সালাহ উদ্দিন মাদক ব্যবসা ও সেবনকারী আটকের পর কারো সুপারিশে কর্ণপাত না করতে প্রশাসনকে অনুরোধ করেন। মাদক ব্যবসায়ী ও সেবনকারী একবার জেল থেকে জামিনে বের হয়ে যদি পুনরায় মাদক ব্যবসায় জড়িত হয় দ্রুত তাদের আবার গ্রেফতার করে জেল হাজতের ব্যবস্থা করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি অনুরোধ জানান।

সভায় উপস্থিত তিতাস থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আ.স.ম আব্দুন নূর বলেন, থানা পুলিশ মাদকের ব্যাপারে জিরো ট্রলারেস। মাদকদের সাথে কোন আপোষ নয়। তিনি বলেন, কী পরিমাণ মাদকদ্রব্যসহ কেন ব্যক্তি গ্রেফতার হন, তার উপর ভিত্তি করে আসামিরা জামিন পেয়ে যায়। এছাড়া এ জাতীয় মামলার এজাহারে ত্র“টি, সাক্ষীদের সাক্ষ্যদানে অনীহা এবং অভিযোগপত্র প্রদানে দীর্ঘসূত্রতার কারণে আসামিদের জামিন আইনগতভাবেই হয়ে যায়। তারপরও তিনি নতুনভাবে যারা মাদক ব্যবসায় জড়িত হচ্ছে তাদের তালিকা থানায় প্রেরণ করতে সকল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের প্রতি আহ্বান জানায়।

এদিকে গত ডিসেম্বর মাসে তিতসে ১টি খুন ও ২টি চুরির ঘটনাসহ ২১টি অপরাধ সংঘটিত হয়। যার মধ্যে ১টি খুন ও নারী নির্যাতনসহ মোট ১১টি মামলা রুজু হয়। অপরদিকে উপজেলা প্রশাসন ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে ১২টি মামলার অনুকূলে ৩জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডসহ ২০জনকে অর্থদণ্ড প্রদান করেন।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মকিমা বেগমের সভাপতিত্বে সভায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোঃ নজরুল ইসলাম, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা শারমিন আরা, উপজেলা সহকারী মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুল গণি প্রমূখ।