ঢাকা ০২:০৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৪, ৯ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তাদের শরীর অভিন্ন, গল্প ভিন্ন ভিন্ন

আন্তর্জাতিক :

১৯৯০ সালের ৭ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্মানির মিনেসোটায় জন্ম হয় দুই যমজ বোনের। তবে অন্যসব যমজ থেকে তারা সম্পূর্ণ আলাদা। কারণ তাদের দুজনের শরীর একটাই। শুধু মাথা আলাদা।

তবে অবাক করা বিষয় হলো অ্যাবিগেইল আর ব্রিটনি নামের এই দুই বোনের একই শরীরে চিন্তা-ভাবনা, নেশা, খাদ্যাভ্যাস আলাদা আলাদা। তাদের আচার-আচরণও সম্পূর্ণ দুটো আলাদা মানুষের মতোই।

বিশ্বখ্যাত সেই দুই বোনের ছোট থেকে বড় হওয়া ছিল গল্পের মতো। তাদের মা প্যাটি হেনসেল যখন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন, তিনি জানতেন তার শরীরে একটি ভ্রূণই বেড়ে উঠছে। কিন্তু চিকিৎসকেরা তাকে যমজ সন্তান উপহার দেন।

কিন্তু যমজ সন্তান দেখে খুশি হওয়ার বদলে দুশ্চিন্তায় পড়ে যান প্যাটি। কারণ দুটো শিশুই জোড়া। বাইরে থেকে তাদের শুধু মাথা দুটো আলাদা। সাধারণত এ রকম সন্তান খুব বেশিদিন বাঁচতে পারে না। চিকিৎসকেরা প্যাটিকে জানিয়েছিলেন, অস্ত্রোপচার করে তাদের আলাদা করে দেওয়া হবে।

তবে সেক্ষেত্রে যেকোনো একজনকে বাঁচাতে পারবেন তারা। মায়ের মন তাতে রাজি হয়নি। কোনো সন্তানকেই প্যাটি হারাতে চাননি। স্বামীর সঙ্গে মিনেসোটার প্রত্যন্ত ফার্মে দুই সন্তানকে নিয়ে তারা বসবাস শুরু করেন। সংক্রমণ এড়াতেই প্রত্যন্ত জায়গা বেছে নিয়েছিলেন তারা।

দুই বোন অ্যাবিগেইল লরেন হেনসেল এবং ব্রিটনি লি হেনসেলের বয়স এখন ২৯ বছর। সমাজের সঙ্গে সংগ্রাম করে, নিজেদের সঙ্গে সংগ্রাম করে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন তারা।

বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক ডিগ্রি রয়েছে দুজনের। অ্যাবি অঙ্ক এবং ব্রিটনি ইংরেজিতে স্নাতক। শুধু তাই নয়, দুজনেরই আলাদা ড্রাইভিং লাইসেন্স রয়েছে। এই মুহূর্তে দু’জনেই স্কুলের শিক্ষক।

কীভাবে সেটা সম্ভব হলো? দুজনের শরীর এক হলেও মস্তিষ্ক সম্পূর্ণ আলাদা। তাই তাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছা, চিন্তাভাবনাও আলাদা। এমনকি খাবারের প্রতি ভালোবাসাও আলাদা আলাদা। তাদের হৃৎপিণ্ড, পিত্তাশয় এবং পাকস্থলীও আলাদা। একারণে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে খিদে পায় তাদের।

তবে এগুলো বাদে বাকি বাকি সবকিছুই এক তাদের। যেমন অন্ত্র, লিভার, কিডনি-ডিম্বাশয় এক। তিনটে ফুসফুস রয়েছে তাদের। ফলে বেশিরভাগ জৈবিক ক্রিয়াগুলো তাদের একই সঙ্গে ঘটে।

কিন্তু একটাই শরীর নিয়ে কীভাবে তারা দুটো আলাদা মানুষের পরিচয় বহন করলেন? দুটো আলাদা ব্রেন কীভাবে দুটো হাত এবং পাকে আলাদা আলাদা সিগন্যাল পাঠায়? আর কীভাবেই বা সেই আলাদা সিগন্যালে সাড়া দেয় এই দুই হাত-পা, তা আজও গবেষকদের কাছে বিস্ময়ের।

আরও বিস্ময়ের বিষয় হলো, একজনের জ্বর হলেই যে অন্যজনের জ্বর হবে তা কিন্তু নয়। দুজনের শরীর এক হলেও অসুখ-বিসুখ বেশির ভাগ সময়ই একসঙ্গে হয় না!

তবে অ্যাবি আর ব্রিটনি এই নিয়ে বিন্দুমাত্র ভাবিত নন। নিজেদের মধ্যে তাদের দারুণ বোঝাপড়া। দিনরাত তারা একে অপরের সঙ্গে খুনসুঁটি চালিয়ে যান।

জোড়া বোন হওয়ার অসুবিধা তো অনেক রয়েছে, তবে সে সবের মধ্যে তাদের একটাই আফসোস। যে স্কুলে তারা পড়ান, সেখানে তাদের একজন হিসাবেই গণ্য করা হয়। তাই মাইনেও একজনেরই দেওয়া হয়। অথচ শিক্ষার্থীদের জন্য দ্বিগুণ পরিশ্রম করেন তারা।

সারা বিশ্ব তাদের একনামে চেনে। এমন জোড়া সন্তানরা ছোটবেলায় লাইমলাইটে থাকে ঠিকই, কিন্তু বড় হয়ে ওঠার সঙ্গে বেশির ভাগই নিজেদের হারিয়ে ফেলে। সমাজে কৌতূহলের শিকার হয়ে বেশির ভাগই জীবনের সঙ্গে মানিয়ে চলতে পারেন না। সে সবের বিরুদ্ধে গিয়ে অ্যাবি-ব্রিটনি তাদের আলাদা পরিচয় গড়ে তুলেছেন।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়ায় মুরাদনগরে আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ

তাদের শরীর অভিন্ন, গল্প ভিন্ন ভিন্ন

আপডেট সময় ০৩:৩২:১৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২০

আন্তর্জাতিক :

১৯৯০ সালের ৭ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্মানির মিনেসোটায় জন্ম হয় দুই যমজ বোনের। তবে অন্যসব যমজ থেকে তারা সম্পূর্ণ আলাদা। কারণ তাদের দুজনের শরীর একটাই। শুধু মাথা আলাদা।

তবে অবাক করা বিষয় হলো অ্যাবিগেইল আর ব্রিটনি নামের এই দুই বোনের একই শরীরে চিন্তা-ভাবনা, নেশা, খাদ্যাভ্যাস আলাদা আলাদা। তাদের আচার-আচরণও সম্পূর্ণ দুটো আলাদা মানুষের মতোই।

বিশ্বখ্যাত সেই দুই বোনের ছোট থেকে বড় হওয়া ছিল গল্পের মতো। তাদের মা প্যাটি হেনসেল যখন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন, তিনি জানতেন তার শরীরে একটি ভ্রূণই বেড়ে উঠছে। কিন্তু চিকিৎসকেরা তাকে যমজ সন্তান উপহার দেন।

কিন্তু যমজ সন্তান দেখে খুশি হওয়ার বদলে দুশ্চিন্তায় পড়ে যান প্যাটি। কারণ দুটো শিশুই জোড়া। বাইরে থেকে তাদের শুধু মাথা দুটো আলাদা। সাধারণত এ রকম সন্তান খুব বেশিদিন বাঁচতে পারে না। চিকিৎসকেরা প্যাটিকে জানিয়েছিলেন, অস্ত্রোপচার করে তাদের আলাদা করে দেওয়া হবে।

তবে সেক্ষেত্রে যেকোনো একজনকে বাঁচাতে পারবেন তারা। মায়ের মন তাতে রাজি হয়নি। কোনো সন্তানকেই প্যাটি হারাতে চাননি। স্বামীর সঙ্গে মিনেসোটার প্রত্যন্ত ফার্মে দুই সন্তানকে নিয়ে তারা বসবাস শুরু করেন। সংক্রমণ এড়াতেই প্রত্যন্ত জায়গা বেছে নিয়েছিলেন তারা।

দুই বোন অ্যাবিগেইল লরেন হেনসেল এবং ব্রিটনি লি হেনসেলের বয়স এখন ২৯ বছর। সমাজের সঙ্গে সংগ্রাম করে, নিজেদের সঙ্গে সংগ্রাম করে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন তারা।

বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক ডিগ্রি রয়েছে দুজনের। অ্যাবি অঙ্ক এবং ব্রিটনি ইংরেজিতে স্নাতক। শুধু তাই নয়, দুজনেরই আলাদা ড্রাইভিং লাইসেন্স রয়েছে। এই মুহূর্তে দু’জনেই স্কুলের শিক্ষক।

কীভাবে সেটা সম্ভব হলো? দুজনের শরীর এক হলেও মস্তিষ্ক সম্পূর্ণ আলাদা। তাই তাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছা, চিন্তাভাবনাও আলাদা। এমনকি খাবারের প্রতি ভালোবাসাও আলাদা আলাদা। তাদের হৃৎপিণ্ড, পিত্তাশয় এবং পাকস্থলীও আলাদা। একারণে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে খিদে পায় তাদের।

তবে এগুলো বাদে বাকি বাকি সবকিছুই এক তাদের। যেমন অন্ত্র, লিভার, কিডনি-ডিম্বাশয় এক। তিনটে ফুসফুস রয়েছে তাদের। ফলে বেশিরভাগ জৈবিক ক্রিয়াগুলো তাদের একই সঙ্গে ঘটে।

কিন্তু একটাই শরীর নিয়ে কীভাবে তারা দুটো আলাদা মানুষের পরিচয় বহন করলেন? দুটো আলাদা ব্রেন কীভাবে দুটো হাত এবং পাকে আলাদা আলাদা সিগন্যাল পাঠায়? আর কীভাবেই বা সেই আলাদা সিগন্যালে সাড়া দেয় এই দুই হাত-পা, তা আজও গবেষকদের কাছে বিস্ময়ের।

আরও বিস্ময়ের বিষয় হলো, একজনের জ্বর হলেই যে অন্যজনের জ্বর হবে তা কিন্তু নয়। দুজনের শরীর এক হলেও অসুখ-বিসুখ বেশির ভাগ সময়ই একসঙ্গে হয় না!

তবে অ্যাবি আর ব্রিটনি এই নিয়ে বিন্দুমাত্র ভাবিত নন। নিজেদের মধ্যে তাদের দারুণ বোঝাপড়া। দিনরাত তারা একে অপরের সঙ্গে খুনসুঁটি চালিয়ে যান।

জোড়া বোন হওয়ার অসুবিধা তো অনেক রয়েছে, তবে সে সবের মধ্যে তাদের একটাই আফসোস। যে স্কুলে তারা পড়ান, সেখানে তাদের একজন হিসাবেই গণ্য করা হয়। তাই মাইনেও একজনেরই দেওয়া হয়। অথচ শিক্ষার্থীদের জন্য দ্বিগুণ পরিশ্রম করেন তারা।

সারা বিশ্ব তাদের একনামে চেনে। এমন জোড়া সন্তানরা ছোটবেলায় লাইমলাইটে থাকে ঠিকই, কিন্তু বড় হয়ে ওঠার সঙ্গে বেশির ভাগই নিজেদের হারিয়ে ফেলে। সমাজে কৌতূহলের শিকার হয়ে বেশির ভাগই জীবনের সঙ্গে মানিয়ে চলতে পারেন না। সে সবের বিরুদ্ধে গিয়ে অ্যাবি-ব্রিটনি তাদের আলাদা পরিচয় গড়ে তুলেছেন।