ঢাকা ০৬:৪১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তিতাসে ৭ম শ্রেনীর ছাত্র হত্যার রহস্য উদঘাটন

নাজমুল করিম ফারুক:

কুমিল্লার তিতাসে ৭ম শ্রেণির ছাত্র আবু তাহের হৃদয়কে (১৪) অপহরণের পর কাঙ্খিত মুক্তিপন না পাওয়ায়   হত্যা করে বস্তভর্তি লাশ হোমনার তিতাস নদীতে ভাসিয়ে দেয়ার কথা স্বীকার করেছে আটককৃত আসামীরা। এ ঘটনায় ৪জনকে গ্রেফতার করেছে জেলা সিআইডি ও থানা পুলিশ। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার মধ্য আকালিয়া গ্রামে।

গ্রেফতারকৃতদের বর্ণনানুসারে নিহত হৃদয়ের লাশ উদ্ধারে কুমিল্লা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আশরাফ উদ্দিন ভূইয়া নেতৃত্বে তিতাস থানা পুলিশ হোমনার তিতাস নদীতে লাশ উদ্ধারে গতকাল সোমবার দিনভর অভিযান অব্যাহত রেখেছে। বিকাল ৫টা পর্যন্ত পুলিশ লাশটি উদ্ধার করতে পারেনি।

নিহত হৃদয় উপজেলার মধ্য আকালিয়া গ্রামের মোঃ বশির উদ্দিন ওরফে বচ্চু মিয়ার একমাত্র ছেলে। সে উপজেলার বাতাকান্দি সরকার সাহেব আলী আবুল হোসেন মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির ছাত্র।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ২১ ডিসেম্বর বুধবার সন্ধ্যায় হৃদয় তার নিজ বাড়ির পশ্চিম পাশে ব্যাডমিন্টন খেলতে গেলে আর বাড়ি ফিরে আসেনি। পরদিন বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় হৃদয়ের পিতা বশির মিয়ার নিকট মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ২০লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে একটি ফোন আসে। উক্ত ফোন নম্বরসহ ঘটনার বিস্তারিত তিতাস থানা পুলিশ ও কুমিল্লা জেলা সিআইডিকে অবহিত করলে ওই ফোন নম্বরের সূত্র ধরে পুলিশ ও সিআইডি যৌথ অভিযান চালিয়ে বলরামপুর ইউনিয়নের বর্তমান ইউপি মেম্বার রেনু মিয়ার ছেলে রিয়াদ হোসেন (২০), মধ্য আকালিয়া গ্রামের আবদুল মতিনের ছেলে ও উপজেলা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ আলী (৩০), একই গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে মহিন আহমেদ (২৪) ও কালাইগোবিন্দপুর গ্রামের ভাড়াটিয়া জাকির হোসেনের ছেলে সাকিব (২২) কে আটক করে।

আটককৃতদের বরাদ দিয়ে এসআই কমল মালাকার জানান, গ্রেফতারকৃতদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে বেড়িয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। তারা হৃদয়কে অপহরণের বিষয়টি স্বীকার করে পুলিশকে জানায় যে, হৃদয়কে হত্যা করে ওই রাতেই বস্তাবন্দী করে হোমনা-বাঞ্ছারামপুর সংযোগ সেতুর ওপর থেকে তিতাস নদীতে ফেলে দেয়।

এদিকে, হৃদয় বিদারক এই চাঞ্চল্যকর অপহরণ, হত্যা ও লাশ গুমের ঘটনায় এলাকায় চলছে শোকের মাতম। সাধারন মানুষের মনে আজ প্রশ্ন মানবতা কি সত্যিই বিপন্ন?

নিহতের পিতা বশির উদ্দিন বাচ্চু মিয়া কান্না জড়ানো কণ্ঠে সাংবাদিকদের বলেন, আমার একমাত্র ছেলেটাকে অপহরণের পর মুক্তিপণ চাইলে আমি আমার ছেলের সাথে কথা বলতে চাইলে ফোনটি বন্ধ করে দেয় তারপর ওই নাম্বারে অনেক চেষ্টা করেও কোন যোগাযোগ করতে পারিনি। তারা আমার ছেলেকে পরিকল্পিতভাবে অপহরণ করে হত্যা করে গুম করেছে। আমি আইনের কাছে আমার একমাত্র ছেলের হত্যার চাই এবং আমার ছেলের লাশটাও যেন অন্তত পাই প্রশাসনের কাছে এই একটাই দাবি। বড় দুই মেয়ে জন্মের প্রায় ১২ বছর পর সংসারের আলো উজ্জ্বল করে জন্ম নেয়া পুত্র সন্তানের মুখটা ভুলতে পারছেন না মা। সন্তানহারা শোকে মা বাকরুদ্ধ হয়ে বিছানায় শয্যাশায়ী।

এই বিষয়ে তিতাস থানার ওসি মনিরুল ইসলাম পিপিএম জানান, গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে এবং তাদের সাথে নিয়েই হোমনার তিতাস নদী থেকে লাশ উদ্ধারে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

শিক্ষার্থীদের উপর হামলার প্রতিবাদে মুরাদনগরে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ

তিতাসে ৭ম শ্রেনীর ছাত্র হত্যার রহস্য উদঘাটন

আপডেট সময় ০২:০১:৪৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৬
নাজমুল করিম ফারুক:

কুমিল্লার তিতাসে ৭ম শ্রেণির ছাত্র আবু তাহের হৃদয়কে (১৪) অপহরণের পর কাঙ্খিত মুক্তিপন না পাওয়ায়   হত্যা করে বস্তভর্তি লাশ হোমনার তিতাস নদীতে ভাসিয়ে দেয়ার কথা স্বীকার করেছে আটককৃত আসামীরা। এ ঘটনায় ৪জনকে গ্রেফতার করেছে জেলা সিআইডি ও থানা পুলিশ। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার মধ্য আকালিয়া গ্রামে।

গ্রেফতারকৃতদের বর্ণনানুসারে নিহত হৃদয়ের লাশ উদ্ধারে কুমিল্লা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আশরাফ উদ্দিন ভূইয়া নেতৃত্বে তিতাস থানা পুলিশ হোমনার তিতাস নদীতে লাশ উদ্ধারে গতকাল সোমবার দিনভর অভিযান অব্যাহত রেখেছে। বিকাল ৫টা পর্যন্ত পুলিশ লাশটি উদ্ধার করতে পারেনি।

নিহত হৃদয় উপজেলার মধ্য আকালিয়া গ্রামের মোঃ বশির উদ্দিন ওরফে বচ্চু মিয়ার একমাত্র ছেলে। সে উপজেলার বাতাকান্দি সরকার সাহেব আলী আবুল হোসেন মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির ছাত্র।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ২১ ডিসেম্বর বুধবার সন্ধ্যায় হৃদয় তার নিজ বাড়ির পশ্চিম পাশে ব্যাডমিন্টন খেলতে গেলে আর বাড়ি ফিরে আসেনি। পরদিন বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় হৃদয়ের পিতা বশির মিয়ার নিকট মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ২০লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে একটি ফোন আসে। উক্ত ফোন নম্বরসহ ঘটনার বিস্তারিত তিতাস থানা পুলিশ ও কুমিল্লা জেলা সিআইডিকে অবহিত করলে ওই ফোন নম্বরের সূত্র ধরে পুলিশ ও সিআইডি যৌথ অভিযান চালিয়ে বলরামপুর ইউনিয়নের বর্তমান ইউপি মেম্বার রেনু মিয়ার ছেলে রিয়াদ হোসেন (২০), মধ্য আকালিয়া গ্রামের আবদুল মতিনের ছেলে ও উপজেলা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ আলী (৩০), একই গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে মহিন আহমেদ (২৪) ও কালাইগোবিন্দপুর গ্রামের ভাড়াটিয়া জাকির হোসেনের ছেলে সাকিব (২২) কে আটক করে।

আটককৃতদের বরাদ দিয়ে এসআই কমল মালাকার জানান, গ্রেফতারকৃতদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে বেড়িয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। তারা হৃদয়কে অপহরণের বিষয়টি স্বীকার করে পুলিশকে জানায় যে, হৃদয়কে হত্যা করে ওই রাতেই বস্তাবন্দী করে হোমনা-বাঞ্ছারামপুর সংযোগ সেতুর ওপর থেকে তিতাস নদীতে ফেলে দেয়।

এদিকে, হৃদয় বিদারক এই চাঞ্চল্যকর অপহরণ, হত্যা ও লাশ গুমের ঘটনায় এলাকায় চলছে শোকের মাতম। সাধারন মানুষের মনে আজ প্রশ্ন মানবতা কি সত্যিই বিপন্ন?

নিহতের পিতা বশির উদ্দিন বাচ্চু মিয়া কান্না জড়ানো কণ্ঠে সাংবাদিকদের বলেন, আমার একমাত্র ছেলেটাকে অপহরণের পর মুক্তিপণ চাইলে আমি আমার ছেলের সাথে কথা বলতে চাইলে ফোনটি বন্ধ করে দেয় তারপর ওই নাম্বারে অনেক চেষ্টা করেও কোন যোগাযোগ করতে পারিনি। তারা আমার ছেলেকে পরিকল্পিতভাবে অপহরণ করে হত্যা করে গুম করেছে। আমি আইনের কাছে আমার একমাত্র ছেলের হত্যার চাই এবং আমার ছেলের লাশটাও যেন অন্তত পাই প্রশাসনের কাছে এই একটাই দাবি। বড় দুই মেয়ে জন্মের প্রায় ১২ বছর পর সংসারের আলো উজ্জ্বল করে জন্ম নেয়া পুত্র সন্তানের মুখটা ভুলতে পারছেন না মা। সন্তানহারা শোকে মা বাকরুদ্ধ হয়ে বিছানায় শয্যাশায়ী।

এই বিষয়ে তিতাস থানার ওসি মনিরুল ইসলাম পিপিএম জানান, গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে এবং তাদের সাথে নিয়েই হোমনার তিতাস নদী থেকে লাশ উদ্ধারে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।