১১ই জানুয়ারী (মুরাদনগর বার্তা ডটকম):
রোববার সকালে কুমিল্লার দেবিদ্বারে ছাত্রলীগ-পুলিশ এবং ছাত্রদলের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় উপজেলা সদরের নিউ মার্কেট থেকে ছোট আলমপুর পর্যন্ত রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ সময় দেবিদ্বার এস, এ, সরকারী কলেজ হোষ্টেল, ইউনিক ইন্টার ন্যাশনাল স্কুল, বিভিন্ন বাসা-বাড়ি ও দোকান-পাটসহ অর্ধশতাধিক প্রতিষ্ঠান ভাংচুর হয় এবং সাংবাদিকসহ অন্তত ১০জন আহত হয়েছেন। হামলকারী সন্দেহে পুলিশ ১জনকে আটক করে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, সকাল ৮টায় ২০দলের অবরোধ চলাকালে ছাত্রদলের কর্মী-সমর্থকরা কিরিচ, রামদা, চায়নিজ কুড়াল, রড, লাঠিসহ একটি মিছিল নিয়ে দেবিদ্বার এস, এ, সরকারী কলেজ হোষ্টেল ও কলেজ রোডের কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অতর্কিত হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে।
সংবাদ পেয়ে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে ছাত্রদল সমর্থকরা পুলিশের উপর হামলা চালায়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে অন্ততঃ ৬০ রাউন্ড শর্টগানের গুলি ছুড়ে। এসময় দেবিদ্বার পৌর এলাকার ভূষনা গ্রামের যুবলীগ কর্মী মালু মিয়া(২৮) তার অসুস্থ্য পুত্রকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে ফেরার পথে ছাত্রদল কর্মীরা তাকে চায়নিজ কুড়াল, রাম দা’ দিয়ে কুপিয়ে মারাত্মক আহত করে। সংঘর্ষের ছবি ও সংবাদ সংগ্রহকালে দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার দেবিদ্বার প্রতিনিধি মোঃ আক্তার হোসেন ও দৈনিক নয়াদিগন্ত পত্রিকার দেবিদ্বার প্রতিনিধি মোঃ ফখরুল ইসলাম ইটের আঘাতে আহত হন।
সংবাদ পেয়ে সকাল ১০টায় একদল ছাত্রলীগ কর্মী সংগঠিত হয়ে পিস্তল, কিরিচ, রামদা, চায়নিজ কুড়াল, রড, লাঠি ও ইটপাটকেল নিয়ে এবং গুলি বর্ষণ করতে করতে ছোটআলমপুর চৌরাস্তার মোড়ে অবস্থানরত ছাত্রদল কর্মীদের ধাওয়া করে। ছাত্রদল কর্মীরা পিছু হটলেও রাস্তার দু’পার্শ্বে থাকা বাসা-বাড়ি, দোকান-পাট ও ইউনিক ইন্টার ন্যাশনাল স্কুলের গেইট ও সাটার এবং টিনের বেড়া কুপিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ করে ছাত্রলীগ।
সংঘর্ষ চলা কালে রডের আঘাতে দৈনিক আমাদের কুমিল্লা পত্রিকার দেবিদ্বার প্রতিনিধি মোঃ সাইফুল ইসলামের মাথায় থাকা হেলমেট ভেঙ্গে গেলেও তিনি প্রাণে রক্ষা পান। ছবি তুলতে চাইলে ওই সাংবাদিকের ক্যামেরা ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা চালালে ছাত্রলীগের নেতাদের হস্তক্ষেপে ক্যামেরাটি ফিরে পায়। সংঘর্ষ চলাকালে পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সাধারণ পথচারীরা প্রাণ বাঁচাতে আত্ম রক্ষায় দ্বিগবিদ্বীগ ছুটে যেতে দেখা যায়। মুহুর্তের মধ্যে দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়।
ছাত্রদল নেতারা অভিযোগ করেন, আমাদের পূর্ব ঘোষিত শান্তিপূর্ণ অবরোধ কর্মসূচী পালনকালে পুলিশ অতর্কীত গুলিবর্ষণ করে আমাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরে ছাত্রলীগ কর্মীরা পুলিশের সামনেই পিস্তলসহ বিভিন্ন মারনাস্ত্র নিয়ে আমাদের উপর হামলা চালায়। এসময় সশস্ত্র ছাত্রীগ কর্মীদের হামলায় ছোটআলমপুর চৌরাস্তার মোড় থেকে ইকরানগরী পর্যন্ত রাস্তার দু’পাশের দোকান-পাট, বাসা-বাড়ি এমনকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও ভাংচুর থেকে রক্ষা পায়নি।
অপর দিকে ছাত্রলীগ নেতারা ক্ষোভের সাথে জানান, দেবিদ্বারে দীর্ঘ সময় ধরে রাজনৈতিক সহিংসতা বন্ধ ছিল। ছাত্রদলের কিছু উশৃংখল সশস্ত্র কর্মী অতর্কীতভাবে দেবিদ্বার কলেজ রোড এলাকায় প্রবেশ করে এবং পিস্তল, কিরিচ, রামদা, চায়নিজ কুড়াল, রড, লাঠি ও ইটপাটকেল নিয়ে দেবিদ্বার এস,এ, সরকারী কলেজ হোষ্টেলসহ নিউমার্কেট এলাকার বেশ কিছু দোকানপাটে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে। যুবলীগ কর্মী মালু মিয়া(২৮) তার অসুস্থ্য পুত্রকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে ফেরার পথে ছাত্রদল কর্মীরা তাকে চায়নিজ কুড়াল, রাম দা’ দিয়ে কুপিয়ে মারাত্মক রক্তাক্ত জখম করে মৃতঃ মনে করে রাস্তায় ফেলে যায়।
আটক আলহাজ্ব মোঃ ইব্রাহীম খলিল জানান, ছাত্রদল কর্মীদের নিবৃত করে সরিয়ে নিতে স্থানীয় গন্যমান্য ব্যাক্তি এবং পুলিশের অনুরোধে একদল প্রতিনিধির সাথে আমিও যাই, আমরা ছাত্রদল কর্মীদের সড়িয়ে দেয়ার পরপরই ছাত্রলীগের কর্মীরা ধাওয়া করে, পুলিশ এসময় আমাকে ধরে থানায় নিয়ে আসে।
দেবিদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, অবরোধ সমর্থকরা কলেজ রোডে বিভিন্ন দোকানপাটে হামলা চালিয়ে হুমকীরমুখে বন্ধ করার চেষ্টা চালায়, এসময় ফুটপাতে থাকা ব্যবসায়িদের টেবিল নিয়ে সড়ক অবরোধ করার চেষ্টা চালালে পুলিশ তাদের ধাওয়া করে প্রতিরোধ করে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আছে। তবে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত কোন পক্ষই মামলা দায়ের করেনি।