ঢাকা ০৪:৪৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দেবিদ্বারে ধর্ষিত গৃহকর্মীকে ২ সপ্তাহেও উদ্ধার করা যায়নি

শাহীন আলম, দেবিদ্বার প্রতিনিধিঃ

মুরাদনর বার্তা টোয়েন্টিফোর ডটকমঃ কুমিল্লায় দৃষ্টি প্রতিবন্ধী এক কিশোরী গৃহকর্মীকে (১৩) তারই প্রভাবশালী গৃহকর্তা কর্তৃক একাধিকবার ধর্ষণ করার বিচার  চাওয়ার অপরাধে চিকিৎসার নামে তাকে বাড়ি থেকে উঠিয়ে নিয়ে অন্যত্র আটকে রাখার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

পুলিশকে এ খবর অবহিত করার প্রায় ২ সপ্তাহেও ভিকটিমকে উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। জেলার দেবিদ্বার পৌর এলাকার ভোষণা গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে। এরই মধ্যে গৃহকর্তার নিকট থেকে বিচারের নামে আদায়কৃত ৪ লক্ষাধিক টাকাও ভাগ-ভাটোয়ারা করে নিয়েছে স্থানীয় মাতবররা।

এদিকে একটি মানবাধিকার সংস্থার অভিযোগ পুলিশ সাধারণ ডায়েরী হিসেবে রেকর্ড করে তদন্ত শুরু করেছে বলে থানা সুত্রে জানা গেছে।

জানা যায়, দেবিদ্বার পৌর এলাকার ভোষণা গ্রামের ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিনের বাড়িতে গৃহপরিচারিকার কাজ করতো পাশ্ববর্তী রামপুর গ্রামের মোসলেহ ্উদ্দিনের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী (১ চোখ অন্ধ) মেয়ে (১৩)। ওই কিশোরীর বাবা মোসলেম জানান, গত ৪ মাস  যাবৎ নানা প্রলোভনে আমার মেয়েকে একাধিকবার ধর্ষণ করার ফলে সে অন্তস্বত্বা হয়ে পড়ে। বিষয়টি মেয়ের নিকট থেকে জানার পর জসিমকে জানালে সে ক্ষিপ্ত হয়ে আমাদেরকে গ্রাম ছাড়ার ছাড়ার হুমকী দেয়।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার একাধিক লোক জানান, বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে একাধিকবার গ্রাম্য সালিশীর নামে ওই কিশোরীর ভরনপোষণ, থানা পুলিশ ও সাংবাদিক ম্যানেজের নামে গৃহকর্তা জসিমের নিকট থেকে ৪ লাখ ৭০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করে মাতবররাই ভাগ-ভাটোয়রা করে নেন। কিন্তু মিডিয়ার নিকট বক্তব্য দেয়ার আশংকায় গত ২৫ মার্চ থেকে ওই কিশোরীকে তার মাসহ অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে আটকে রাখে অভিযুক্ত জসিম ও তার সহযোগীরা। স্থানীয় সাংবাদিকদের মাধ্যমে বিষয়টি সহকারী পুলিশ সুপার (মুরাদনগর সার্কেল)কে অবহিত করার পর তাঁরই নির্দেশে  থানার এসআই সোহেল দু’গ্রামে অনুসন্ধান চালিয়ে অভিযোগের সত্যতা পেলেও ভিকটিমকে উদ্ধার ও অভিযুক্ত জসিমকে আটক করতে পারেননি।

এদিকে গত বুধবার রাতে স্থানীয় মাতবর ও ইউপি সদস্য আল আমিনকে আটক করে পুলিশ, কিন্তু গভীর রাতে তাকে থানা থেকে ছেড়ে দেয়া হয়। এ বিষয়ে ওই কিশোরীর বাবা মোসলেম জানান, জরিমানার টাকা দিয়ে কি করবো ? এমননিতেই আমার অন্ধ মেয়ের এতো বড় সর্বনাশ হয়েছে,তার পরও গত ১ মাস বিচারের নামে অনেক নাটক হয়েছে, এখন জীবন নিয়েই হুমকীতে আছি, আমার স্ত্রী জাহানারা ও মেয়েকে তারা কোথায় রেখেছে জানি না,আর বিচার চাই না।’

মানবাধিকার সংস্থা সমাকের দেবিদ্বার অঞ্চলের তদন্ত কর্মকর্তা মো. রাসেল জানান, ‘গত ২৭ মার্চ সরেজমিনে এলাকায় তদন্তে গিয়ে বিভিন্ন জনের সাক্ষ্য-প্রমানে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে, তবে ভিকটিম ও অভিযুক্ত কিংবা সহায়তাকারীদের কাউকে পাওয়া যায়নি, তাই এ বিষয়ে সংস্থার পক্ষ থেকে থানায় অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে।’ দেবিদ্বার থানার ওসি মো. মিজানুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ‘আমি মিশনের ট্রেনিংয়ে ছিলাম ,তাই এ বিষয়টি নিয়ে দেরীতে হলেও পদক্ষেপ নিচ্ছি, ভিকটিম ও প্রধান আসামী জসিমকে খুঁজে পাচ্ছি না, স্থানীয় আল আমিন মেম্বারকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদ করে ভিকটিম ও আসামীকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে থানায় হাজির করার শর্তে ছেড়ে দেয়া হয়েছে, ওই কিশোরী অবশ্যই ন্যায় বিচার পাবে।’

ট্যাগস
জনপ্রিয় সংবাদ

দীর্ঘ ১৩ বছর পর দেশে ফিরছেন কায়কোবাদ: স্বাগত জানাতে মুরাদনগরে ব্যাপক প্রস্ততি

দেবিদ্বারে ধর্ষিত গৃহকর্মীকে ২ সপ্তাহেও উদ্ধার করা যায়নি

আপডেট সময় ০২:৩২:৪৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ এপ্রিল ২০১৬

শাহীন আলম, দেবিদ্বার প্রতিনিধিঃ

মুরাদনর বার্তা টোয়েন্টিফোর ডটকমঃ কুমিল্লায় দৃষ্টি প্রতিবন্ধী এক কিশোরী গৃহকর্মীকে (১৩) তারই প্রভাবশালী গৃহকর্তা কর্তৃক একাধিকবার ধর্ষণ করার বিচার  চাওয়ার অপরাধে চিকিৎসার নামে তাকে বাড়ি থেকে উঠিয়ে নিয়ে অন্যত্র আটকে রাখার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

পুলিশকে এ খবর অবহিত করার প্রায় ২ সপ্তাহেও ভিকটিমকে উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। জেলার দেবিদ্বার পৌর এলাকার ভোষণা গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে। এরই মধ্যে গৃহকর্তার নিকট থেকে বিচারের নামে আদায়কৃত ৪ লক্ষাধিক টাকাও ভাগ-ভাটোয়ারা করে নিয়েছে স্থানীয় মাতবররা।

এদিকে একটি মানবাধিকার সংস্থার অভিযোগ পুলিশ সাধারণ ডায়েরী হিসেবে রেকর্ড করে তদন্ত শুরু করেছে বলে থানা সুত্রে জানা গেছে।

জানা যায়, দেবিদ্বার পৌর এলাকার ভোষণা গ্রামের ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিনের বাড়িতে গৃহপরিচারিকার কাজ করতো পাশ্ববর্তী রামপুর গ্রামের মোসলেহ ্উদ্দিনের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী (১ চোখ অন্ধ) মেয়ে (১৩)। ওই কিশোরীর বাবা মোসলেম জানান, গত ৪ মাস  যাবৎ নানা প্রলোভনে আমার মেয়েকে একাধিকবার ধর্ষণ করার ফলে সে অন্তস্বত্বা হয়ে পড়ে। বিষয়টি মেয়ের নিকট থেকে জানার পর জসিমকে জানালে সে ক্ষিপ্ত হয়ে আমাদেরকে গ্রাম ছাড়ার ছাড়ার হুমকী দেয়।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার একাধিক লোক জানান, বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে একাধিকবার গ্রাম্য সালিশীর নামে ওই কিশোরীর ভরনপোষণ, থানা পুলিশ ও সাংবাদিক ম্যানেজের নামে গৃহকর্তা জসিমের নিকট থেকে ৪ লাখ ৭০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করে মাতবররাই ভাগ-ভাটোয়রা করে নেন। কিন্তু মিডিয়ার নিকট বক্তব্য দেয়ার আশংকায় গত ২৫ মার্চ থেকে ওই কিশোরীকে তার মাসহ অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে আটকে রাখে অভিযুক্ত জসিম ও তার সহযোগীরা। স্থানীয় সাংবাদিকদের মাধ্যমে বিষয়টি সহকারী পুলিশ সুপার (মুরাদনগর সার্কেল)কে অবহিত করার পর তাঁরই নির্দেশে  থানার এসআই সোহেল দু’গ্রামে অনুসন্ধান চালিয়ে অভিযোগের সত্যতা পেলেও ভিকটিমকে উদ্ধার ও অভিযুক্ত জসিমকে আটক করতে পারেননি।

এদিকে গত বুধবার রাতে স্থানীয় মাতবর ও ইউপি সদস্য আল আমিনকে আটক করে পুলিশ, কিন্তু গভীর রাতে তাকে থানা থেকে ছেড়ে দেয়া হয়। এ বিষয়ে ওই কিশোরীর বাবা মোসলেম জানান, জরিমানার টাকা দিয়ে কি করবো ? এমননিতেই আমার অন্ধ মেয়ের এতো বড় সর্বনাশ হয়েছে,তার পরও গত ১ মাস বিচারের নামে অনেক নাটক হয়েছে, এখন জীবন নিয়েই হুমকীতে আছি, আমার স্ত্রী জাহানারা ও মেয়েকে তারা কোথায় রেখেছে জানি না,আর বিচার চাই না।’

মানবাধিকার সংস্থা সমাকের দেবিদ্বার অঞ্চলের তদন্ত কর্মকর্তা মো. রাসেল জানান, ‘গত ২৭ মার্চ সরেজমিনে এলাকায় তদন্তে গিয়ে বিভিন্ন জনের সাক্ষ্য-প্রমানে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে, তবে ভিকটিম ও অভিযুক্ত কিংবা সহায়তাকারীদের কাউকে পাওয়া যায়নি, তাই এ বিষয়ে সংস্থার পক্ষ থেকে থানায় অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে।’ দেবিদ্বার থানার ওসি মো. মিজানুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ‘আমি মিশনের ট্রেনিংয়ে ছিলাম ,তাই এ বিষয়টি নিয়ে দেরীতে হলেও পদক্ষেপ নিচ্ছি, ভিকটিম ও প্রধান আসামী জসিমকে খুঁজে পাচ্ছি না, স্থানীয় আল আমিন মেম্বারকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদ করে ভিকটিম ও আসামীকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে থানায় হাজির করার শর্তে ছেড়ে দেয়া হয়েছে, ওই কিশোরী অবশ্যই ন্যায় বিচার পাবে।’