ঢাকা ০৫:৫১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দেবীদ্বারে শিশুর গলায় রামদা ঠেকিয়ে ডাকাতি

দেবিদ্বার (কুমিল্লা) প্রতিনিধিঃ

কুমিল্লার দেবীদ্বারে এক পরিবারের মা-মেয়ের হাত-পা ও মুখ বেঁধে এবং এক শিশুর গলায় রামদা ঠেকিয়ে অন্তত পাঁচ লাখ টাকার মালামাল লুট করেছে একদল ডাকাত। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ২টার দিকে উপজেলার গৌরসার গ্রামের ফুলমিয়ার বাড়িতে এ ডাকাতির ঘটে।

ডাকাতদল বাড়ির কলাপসিবল গেইট ও ঘরের দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে, আলমারি, শো কেসের তালা ভেঙে আট ভরি স্বর্ণালংকার, দুইটি মোবাইল ফোন সেট, একটি কম্পিউটার ও ২০-২৫ হাজার টাকাসহ প্রায় ৫ লক্ষাধিক টাকার মালামর লুট করে নিয়ে যায়।

প্রত্যক্ষদর্শী ও ডাকাতদলের হামলার শিকার পরিবারের সদস্যরা জানান, রাত ২টার দিকে ৮-১০ জনের একদল ডাকাত বাড়ির বৈদ্যুতিক বাতি নিভিয়ে, কলাপসিবল গেইট ও ঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। ডাকাতদল মৃত নোয়াব আলীর স্ত্রী ফরিদা বেগমের হাত, পা, মুখ বেঁধে  কাঁথা দিয়ে ঢেকে রাখে এবং মেয়ে নুরুন্নাহারকেও একই অবস্থায় বেঁধে রাখে। এ ছাড়া নুরুন্নাহারের ছয় বছরের মেয়ে মেহেরীনের গলায় রামদা ঠেকিয়ে ডাকাতদল ঘরের আসবাবপত্র ভাঙচুর ও তছনছ করে স্বর্ণালংকার, টাকাসহ মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।

গৃহিনী ফরিদা বেগম বলেন, “ঘরে আমি একা থাকি। আমার ছেলে দুলাল ঢাকায় থাকে। আমার মেয়ে নুরুন্নাহারও বৃহস্পতিবার বিকেলে তার শ্বশুর বাড়ি থেকে বেড়াতে এসেছিল। রাত অনুমান ২টায় আমার মেয়ে নুরুন্নাহার ডাকাত বলে চিৎকার দিতেই ২৫-৩০ বছর বয়সী শার্টপ্যান্ট ও মুখোশ পরা চারজন ডাকাত আমাকে ধরে ফেলে। তারা আমার পরনের কাপড় দিয়ে হাত-পা বেঁধে এবং ব্লাউজ দিয়ে মুখ বেঁধে ফেলে।

ওদের দিকে তাকাতেই ওরা আমার চোখে মুখে চড়-থাপ্পড় মারতে থাকে। একপর্যায়ে আমার ডান পায়ে সজোরে আঘাত করে আঙ্গুলগুলো ভেঙে ফেলে। লাঠি দিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে একটি কাঁথা দিয়ে ঢেকে খাটের উপর আমাকে বসিয়ে রাখে। ”

ফরিদা বেগমের মেয়ে নুরুন্নাহার বলেন, “কলাপসিবল গেইট ভাঙা টের পাইনি তবে দরজা ভাঙার আওয়াজ পেয়েই আম্মাকে ডেকে সজাগ করি।  সাথে সাথে ঢাকায় অবস্থানরত আমার ভাই দুলালকে ফোন করে ডাকাতির সংবাদটি জানাই। ডাকাতদল ঘরে ঢুকে আমার হাত থেকে মোবাইল সেটটি নিয়ে নেয় এবং ব্যাংক থেকে টাকা উঠিয়ে কোথায় রেখেছি জানতে চায়। এ সময় আমার মেয়ে মেহেরীন (৬) ঘুম থেকে উঠে চিৎকার দিলে তাকে খাট থেকে নামিয়ে এনে গলায় রামদা ঠেকিয়ে ভয় দেখায়। চিৎকার করলে মেরে ফেলবে বলেও হুমকি দেয়। আমার মেয়েকে জীবনে না মারার জন্য ভিক্ষা চেয়ে নিয়ে আসি। ঘরে যা আছে সব নিয়ে যেতে বলি। তারপরও ওদের দিকে না তাকাতে বলে চোখে-মুখে চড় থাপ্পড় মারতে থাকে। হাতে রাম দা, রড, ছোরা, লাঠি থাকলেও লাঠি দিয়ে আমাকে ও আমার মাকে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকে। এরপর ওরা আমার মায়ের মোবাইল সেট, আলমারি, শোকেস ভেঙে প্রায় আট ভরি স্বর্ণালংকার, হাতের আংটি, গলার চেইন, নগদ প্রায় ২০-২৫ হাজার টাকা নিয়ে নেয়। পরে তারা আমাকে নিয়ে পার্শ্ববর্তী ফুল মিয়ার ঘর খুলে দিতে নিয়ে যাওয়ার সময় এলাকাবাসী চিৎকার করলে ডাকাতদল আমাকে ছেড়ে অন্য মালামালের সঙ্গে একটি কম্পিউটা নিয়ে পালিয়ে যায়। ”

এ ব্যাপারে দেবীদ্বার থানার ওসি মো. মিজানুর রহমান জানান, ওই ঘটনার সংবাদ পেয়ে রাতেই একদল পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। এ ঘটনায় থানায় কোনও লিখিত অভিযোগ কিংবা মামলা দায়ের করেনি। ডাকাতদল  একটি ঘরে ডাকাতি করার সময় স্থানীয়রা টের পেয়ে যাওয়ায় ডাকাতদল  পালিয়ে যায়।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

শিক্ষার্থীদের উপর হামলার প্রতিবাদে মুরাদনগরে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ

দেবীদ্বারে শিশুর গলায় রামদা ঠেকিয়ে ডাকাতি

আপডেট সময় ০২:৪৮:১৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ অগাস্ট ২০১৭
দেবিদ্বার (কুমিল্লা) প্রতিনিধিঃ

কুমিল্লার দেবীদ্বারে এক পরিবারের মা-মেয়ের হাত-পা ও মুখ বেঁধে এবং এক শিশুর গলায় রামদা ঠেকিয়ে অন্তত পাঁচ লাখ টাকার মালামাল লুট করেছে একদল ডাকাত। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ২টার দিকে উপজেলার গৌরসার গ্রামের ফুলমিয়ার বাড়িতে এ ডাকাতির ঘটে।

ডাকাতদল বাড়ির কলাপসিবল গেইট ও ঘরের দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে, আলমারি, শো কেসের তালা ভেঙে আট ভরি স্বর্ণালংকার, দুইটি মোবাইল ফোন সেট, একটি কম্পিউটার ও ২০-২৫ হাজার টাকাসহ প্রায় ৫ লক্ষাধিক টাকার মালামর লুট করে নিয়ে যায়।

প্রত্যক্ষদর্শী ও ডাকাতদলের হামলার শিকার পরিবারের সদস্যরা জানান, রাত ২টার দিকে ৮-১০ জনের একদল ডাকাত বাড়ির বৈদ্যুতিক বাতি নিভিয়ে, কলাপসিবল গেইট ও ঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। ডাকাতদল মৃত নোয়াব আলীর স্ত্রী ফরিদা বেগমের হাত, পা, মুখ বেঁধে  কাঁথা দিয়ে ঢেকে রাখে এবং মেয়ে নুরুন্নাহারকেও একই অবস্থায় বেঁধে রাখে। এ ছাড়া নুরুন্নাহারের ছয় বছরের মেয়ে মেহেরীনের গলায় রামদা ঠেকিয়ে ডাকাতদল ঘরের আসবাবপত্র ভাঙচুর ও তছনছ করে স্বর্ণালংকার, টাকাসহ মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।

গৃহিনী ফরিদা বেগম বলেন, “ঘরে আমি একা থাকি। আমার ছেলে দুলাল ঢাকায় থাকে। আমার মেয়ে নুরুন্নাহারও বৃহস্পতিবার বিকেলে তার শ্বশুর বাড়ি থেকে বেড়াতে এসেছিল। রাত অনুমান ২টায় আমার মেয়ে নুরুন্নাহার ডাকাত বলে চিৎকার দিতেই ২৫-৩০ বছর বয়সী শার্টপ্যান্ট ও মুখোশ পরা চারজন ডাকাত আমাকে ধরে ফেলে। তারা আমার পরনের কাপড় দিয়ে হাত-পা বেঁধে এবং ব্লাউজ দিয়ে মুখ বেঁধে ফেলে।

ওদের দিকে তাকাতেই ওরা আমার চোখে মুখে চড়-থাপ্পড় মারতে থাকে। একপর্যায়ে আমার ডান পায়ে সজোরে আঘাত করে আঙ্গুলগুলো ভেঙে ফেলে। লাঠি দিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে একটি কাঁথা দিয়ে ঢেকে খাটের উপর আমাকে বসিয়ে রাখে। ”

ফরিদা বেগমের মেয়ে নুরুন্নাহার বলেন, “কলাপসিবল গেইট ভাঙা টের পাইনি তবে দরজা ভাঙার আওয়াজ পেয়েই আম্মাকে ডেকে সজাগ করি।  সাথে সাথে ঢাকায় অবস্থানরত আমার ভাই দুলালকে ফোন করে ডাকাতির সংবাদটি জানাই। ডাকাতদল ঘরে ঢুকে আমার হাত থেকে মোবাইল সেটটি নিয়ে নেয় এবং ব্যাংক থেকে টাকা উঠিয়ে কোথায় রেখেছি জানতে চায়। এ সময় আমার মেয়ে মেহেরীন (৬) ঘুম থেকে উঠে চিৎকার দিলে তাকে খাট থেকে নামিয়ে এনে গলায় রামদা ঠেকিয়ে ভয় দেখায়। চিৎকার করলে মেরে ফেলবে বলেও হুমকি দেয়। আমার মেয়েকে জীবনে না মারার জন্য ভিক্ষা চেয়ে নিয়ে আসি। ঘরে যা আছে সব নিয়ে যেতে বলি। তারপরও ওদের দিকে না তাকাতে বলে চোখে-মুখে চড় থাপ্পড় মারতে থাকে। হাতে রাম দা, রড, ছোরা, লাঠি থাকলেও লাঠি দিয়ে আমাকে ও আমার মাকে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকে। এরপর ওরা আমার মায়ের মোবাইল সেট, আলমারি, শোকেস ভেঙে প্রায় আট ভরি স্বর্ণালংকার, হাতের আংটি, গলার চেইন, নগদ প্রায় ২০-২৫ হাজার টাকা নিয়ে নেয়। পরে তারা আমাকে নিয়ে পার্শ্ববর্তী ফুল মিয়ার ঘর খুলে দিতে নিয়ে যাওয়ার সময় এলাকাবাসী চিৎকার করলে ডাকাতদল আমাকে ছেড়ে অন্য মালামালের সঙ্গে একটি কম্পিউটা নিয়ে পালিয়ে যায়। ”

এ ব্যাপারে দেবীদ্বার থানার ওসি মো. মিজানুর রহমান জানান, ওই ঘটনার সংবাদ পেয়ে রাতেই একদল পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। এ ঘটনায় থানায় কোনও লিখিত অভিযোগ কিংবা মামলা দায়ের করেনি। ডাকাতদল  একটি ঘরে ডাকাতি করার সময় স্থানীয়রা টের পেয়ে যাওয়ায় ডাকাতদল  পালিয়ে যায়।