অন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘উত্তর কোরিয়াপ্রীতি’ পর্ব চলছে। শিগগিরই পিয়ংইয়ং সফরের বিষয়ে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন তিনি। বলেছেন, গত মঙ্গলবার ইতিহাস সৃষ্টিকারী বৈঠকটি বিশ্বকে ‘পরমাণু বিপর্যয়’ থেকে রক্ষা করেছে।
যদিও ট্রাম্পের এই অতিউৎসাহী আচরণের সঙ্গে একমত হতে পারছেন না বিশ্লেষকরা। তাঁরা মনে করেন, ওই বৈঠকে ঢং-ঢাং-আদিখ্যেতাই ছিল, বস্তু নয়। বৈঠকের পর একটি যৌথ বিবৃতি দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে পিয়ংইয়ংয়ের পরমাণু অস্ত্রের মতো মূল বিষয় প্রসঙ্গেই বিস্তারিত কোনো বিবরণ যুক্ত করা হয়নি।
বিশ্লেষকদের নিয়ে অবশ্য ট্রাম্পের মাথাব্যথা নেই। স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে দেওয়া এক টুইটে তিনি বলেন, ‘সম্ভাব্য একটি পরমাণু বিপর্যয় থেকে এক কদম সরে দাঁড়াল বিশ্ব। আর কোনো রকেট উৎক্ষেপণ নয়, পরমাণু পরীক্ষা বা গবেষণাও নয়! জিম্মিরা পরিবারসহ দেশে ফিরে আসবে। ধন্যবাদ চেয়ারম্যান কিম। আমদের একসঙ্গে কাটানো দিনটি ঐতিহাসিক!’
মঙ্গলবারের বৈঠকের পর দেওয়া এক যৌথ বিবৃতিতে কিম কোরীয় উপদ্বীপকে পূর্ণাঙ্গভাবে পরমাণু অস্ত্রমুক্ত করার কথা বলেন। যদিও তাঁর বক্তব্যে যুক্তরাষ্ট্রের দাবি অনুসারে ‘নজরদারিযোগ্য’ এবং ‘অপরিবর্তনীয়’ শব্দ দুটি যোগ করা হয়নি। উত্তর কোরিয়ার সরকারি বার্তা সংস্থা কেসিএনএ ট্রাম্প-উনের শীর্ষ বৈঠককে ‘নবযুগ সৃষ্টিকারী’ বলে অভিহিত করে। যা তাদের দৃষ্টিতে ‘উত্তর কোরিয়া-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের বরফ গলাতে সহায়ক হবে। প্রতিবেদনে বলা হয়, দুই নেতা আনন্দচিত্তে একে অন্যের দেওয়া নিজ নিজ দেশ সফরের আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন।
কেসিএনএ আরো জানায়, ট্রাম্প উত্তর কোরিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। তবে বৈঠকের পর আয়োজিত ব্লকবাস্টার সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা যখন বুঝতে পারব, পরমাণু প্রসঙ্গটি আর বড় সংকট হয়ে নেই, তখন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে। এখন নিষেধাজ্ঞা থাকবে।’
উত্তর কোরিয়ার ক্ষমতাসীন দলের পত্রিকা রদং সিনমুন তাদের ছয় পৃষ্ঠার পত্রিকার চার পৃষ্ঠাজুড়ে বৈঠকের ৩৩টি ছবি ছাপে। এর মধ্যে একটি ছবিতে দেখায় ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টনের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছেন উন। মজার বিষয় হচ্ছে, মাত্র কয়েক দিন আগেই উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলেছিলেন বোল্টন।
এই বৈঠকের পর পিয়ংইয়ংয়ের আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠার বহু কারণ রয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী গণতান্ত্রিক দেশের প্রধানের সঙ্গে গত মঙ্গলবার একই মঞ্চে দাঁড়িয়ে করমর্দন করে বংশানুক্রমিক স্বৈরাচারী সরকারের তৃতীয় প্রজন্ম। কার্নেজিয়া-সিংঘুয়া কেন্দ্রের পরিচালক পল হায়েনলে বলেন, ‘কিম জং উন সিঙ্গাপুর সম্মেলন থেকে যা চেয়েছিলেন পেয়েছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক করে আন্তর্জাতিক মর্যাদা ও সম্মান পেয়েছেন তিনি। মঞ্চের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের পতাকার সঙ্গে ছিল উত্তর কোরিয়ার পতাকাও।’
বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প আকস্মিকভাবেই ঘোষণা করেন তিনি দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে যৌথ সামরিক মহড়া বন্ধ করে দেবেন। ট্রাম্পের এমন ঘোষণার বিষয়ে সিউলে থাকা মার্কিন কমান্ডারদেরও কোনো ধারণা ছিল না বলে জানিয়েছেন। জাপানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইত্সুনরি ওনোদেরা বলেন, পূর্ব এশিয়ার নিরাপত্তার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এই যৌথ মহড়া।
সূত্র : এএফপি।
আপনার মন্তব্য লিখুন