আবুল কালাম আজাদ ভুইয়া, বিশেষ প্রতিনিধিঃ
এক সময় শখের বশে বনে বাদড়ে ঘুরে বেড়াতেন জহিরুল ইসলাম। বনে বাদড়ে ঘুরে বেড়ানোরও একটা কারণ ছিল তার। কারণটি হলো পাখি শিকার করা। গাছে গাছে বাগানে বাগানে জোপঝাড়ে ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন পাখি ও পাখির বাচ্ছা ধরে এনে পালন করা ছিল তার নেশা। এই নেশা থেকেই বর্তমানে পাখি পালন করা এখন তার পেশার পরিণত হয়েছে। বলা হচ্ছে ব্রাক্ষণ বাড়িয়া জেলা বাঞ্ছারামপুর উপজেলা পাড়াতুলি গ্রামের জহিরুল ইসলামের কথা।
জহিরুল ইসলামের বাবা মৃতঃ নুরুল ইসলাম মাতা মোসাঃ আমেনা খাতুন স্ত্রী শাহিনুর ইয়াসমিন ছেলে নাইমুর রহমান। লেখাপড়া বেশীদুর এগুতে পারেননি। পাখি পালনের নেশায় মাদ্রাসা দাখিল পরীক্ষা দিতে পারেননি।
১৯৯৫ সালে দাখিল পরীক্ষা অর্থেও অভাবে থমকে যায় তার লেখাপড়া। পরবর্তীত তিনি ঠিক করেন পাখি পালনকেই তিনি পেশা হিসেবে বেছে নেবেন। তারপর দেশি বিদেশি বিভিন্ন জাতের পাখি নিয়ে ছোট আকারে পাখি পালনের জন্য নিজের বাড়ীই একটি খামার গড়ে তোলেন। বর্তমানে সেই খামার বাণিজ্যিক খামারে পরিণত করেছেন জাহিরুল ইসলাম। এখন তার খামারে দেশি বিদেশী নানা জাতের পাখি রয়েছে।
এব্যাপারে জানতে চাইলে জহিরুল ইসলাম বলেন, ”শখের বশে পাখি পালন করা শুরু করি আমি। ২০১২ সাল থেকে শখের পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবে গভাধিপশু ও পাখি পালন করা শুরু করি। প্রথমে একজোড়া –তারকি বার্ড, পকাটেল ও একজোড়া জোড়া বাজরিবা পাখি নিয়ে এ কার্যক্রম শুরু করি। বর্তমানে আমার খামারে বিভিন্ন প্রজাতির দু’শতাধিক পাখি রয়েছে। যার মূল্য প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা।
শিক্ষক ফজলুল করিম, চায়না বেগম, ছাত্রী হীরামনি ও ছাত্র মাহাবুবুর রহমান আরো জানান, মাসে ১৮ থেকে ২০টি ডিম দেয়। তারকি বার্ড পাখির মাংশও খুবই সুস্বাধু। প্রতিটি তারকি বার্ড পাখির মাংশ ৫/৬ কেজি হয়ে থাকে। তারকি বার্ড পাখির দামও হাতের নাগালে রয়েছে। বর্তমানে এই পাখি পালন করে তিনি সংসার চালাচ্ছেন। এখান থেকে তার প্রতি মাসে আনুমানিক ২০/২২হাজার টাকা আয় হয়।
পাখি পালনের নিয়ম কানুন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, ’পাখি পালন একটি সৌখিন কাজ। পাখিকে ভালোবাবে যতœ না করলে লাভবান হওয়া যায় না। পাখিদের দৈনিক ২/৩ ঘন্টা পরিচর্যার দরকার হয়।পাখিদের সকাল দুপুর বিকাল খাবার দিতে হয় এবং প্রতিদিন সকালে পাখিদের খাচার বিস্টা পরিস্কার করতে হয়। এসব পাখির রোগবালাই ঔষুধ ও খাবার সব জাগায়ই পাওয়া যায়। ব্রাক্ষণবাড়িয়ার জেলা, নবীনগর, কসবা, কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর, হোমনা ও নারায়নগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে ক্রেতারা পাখি কিনতে আসেন। আমার খামারে দেশি/বিদেশী বিভিন্ন প্রজাতির পাখি রয়েছে।
জহিরুল ইসলামের স্ত্রী শাহিনুর ইয়াসমিন , প্রথমে পাখি পালনকে আমরা পছন্দ করতাম না। তারপরে আমরা দেখলাম যে পাখি পালন বেশ লাভজনক। তাই আমরা পাখি পালন করছি।
বাঞ্ছারামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শওকত ওসমান ও ছয়ফুল্লাহ কান্দি ইউপি’র চেয়ারম্যান মোঃ আমিনুল ইসলাম তুষার জানান, সমাজে অনেক অনেক বেকার যুবক আছে। যারা বেকারত্বের দোহায় দিয়ে বাড়ি বসে থাকে। কিন্তু জহিরুল ইসলাম বিভিন্ন প্রজাতির পশুপাখি পালন করে আজ স্বাবলম্বী হয়েছে। সে সমাজের একটি বড় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।