ঢাকা ০৬:৩৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বহু মানুষকে গোপন স্থানে আটকে রেখেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী

জাতীয় ডেস্কঃ
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) বলেছে, বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ২০১৩ সাল থেকে শত শত মানুষকে অবৈধভাবে গোপন স্থানে আটকে রেখেছে। যাদের মধ্যে কয়েকজন বিরোধী নেতাও রয়েছেন। গোপনে আটকে রাখা অবস্থায় এসব মানুষের ওপর ব্যাপক নির্যাতন ও অমানবিক আচরণের অভিযোগ রয়েছে। অবিলম্বে এই প্রবণতা বন্ধ করে এসব গুমের অভিযোগের তদন্ত করা, নিখোঁজ ব্যক্তির পরিবারের কাছে ব্যাখ্যা তুলে ধরা আর এসব ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছে সংস্থাটি।

 

সংগঠনটির ওয়েবসাইটে গতকাল বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ৮২ পৃষ্ঠার ওই প্রতিবেদনের শিরোনাম, ‘তিনি আমাদের কাছে নেই:বাংলাদেশে গোপন আটক আর গুম’, যেখানে ২০১৬ সালে গুম হওয়া অন্তত ৯০ জনের তথ্য রয়েছে। এদের মধ্যে বেশিরভাগকে এক সপ্তাহ বা এক মাস গোপন স্থানে আটকে রাখার পর আদালতে হাজির করা হয়েছে। এইচআরডব্লিউ’র কাছে তথ্য রয়েছে যে, এরকম আটক ২১ জনকে পরে হত্যা করা হয়েছে আর নয় জনের কোনো তথ্যই জানা যায়নি। ওই ৯০ জনের তালিকায় মানবতা বিরোধী অপরাধে ফাঁসি কার্যকর হওয়া তিন বিরোধী নেতার তিন সন্তান রয়েছেন, যাদের একজন ছয় মাস পরে ফিরে এসেছেন। বাকি দুই জনের এখনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। ২০১৭ সালের প্রথম পাঁচ মাসে এরকম ৪৮ জনের নিখোঁজ হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে বলেও জানিয়েছে এইচআরডব্লিউ।

 

এইচআরডব্লিউ’র এশীয় পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস বলেছেন, নিখোঁজের বিষয়ে যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ থাকলেও বাংলাদেশের সরকার এই বিষয়ে আইনের খুব একটা তোয়াক্কা করছে না। মানুষজনকে আটক করে দোষী না নির্দোষ নির্ণয় করা, শাস্তি নির্ধারণ করা, এমনকি তারা বেঁচে থাকবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাও যেন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের দেওয়া হয়েছে।

 

ওই প্রতিবেদনে বিরোধী দল বিএনপির ১৯ জন কর্মীর তথ্য রয়েছে, যাদের ২০১৪ সালের জানুয়ারির নির্বাচনের পূর্বে বিভিন্ন এলাকা থেকে তুলে নেয়া হয়। এইচআরডব্লিউ’র দাবি, এসব অভিযোগের বিষয়ে ব্যাখ্যা চাইলেও তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ। এ ধরনের ঘটনায় র?্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) এবং গোয়েন্দা পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিখোঁজদের পরিবারের সদস্যদের, যে সংস্থা দুটির বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের দীর্ঘ অভিযোগ রয়েছে।

 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৩ সালের ৫ জানুয়ারি আদনান চৌধুরীকে তুলে নিয়ে যায় র?্যাবের সদস্যরা। তার বাবা রুহুল আমিন চৌধুরী সংস্থাটিকে বলছেন, তাদের বলা হয়েছিল, পরদিন র?্যাব সদস্যরা তাদের ছেড়ে দেবে। এইচআরডব্লিউ’কে রুহুল আমিন বলেন, তারা বললো, আমরা তাকে নিয়ে যাচ্ছি, আমরাই আবার তাকে ফেরত দিয়ে যাব। কিন্তু তারা আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে।

 

এইচআরডব্লিউ বলছে, এ ধরনের ঘটনায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগও গ্রহণ করে না পুলিশ। ব্র্যাড অ্যাডামস বলেন, সরকার এমনকি এসব অভিযোগ নাকচ না করে নীরব থাকছে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্র্রদায়ও চুপ করে থাকছে। এই নীরবতার অবসান হওয়া উচিত। এইচআরডব্লিউ বলেছে, বাংলাদেশ সরকারের উচিত জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনারকে এসব অভিযোগ তদন্ত করার আহবান জানানো এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা।
ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

শিক্ষার্থীদের উপর হামলার প্রতিবাদে মুরাদনগরে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ

বহু মানুষকে গোপন স্থানে আটকে রেখেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী

আপডেট সময় ০৬:৩৭:০৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৭ জুলাই ২০১৭
জাতীয় ডেস্কঃ
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) বলেছে, বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ২০১৩ সাল থেকে শত শত মানুষকে অবৈধভাবে গোপন স্থানে আটকে রেখেছে। যাদের মধ্যে কয়েকজন বিরোধী নেতাও রয়েছেন। গোপনে আটকে রাখা অবস্থায় এসব মানুষের ওপর ব্যাপক নির্যাতন ও অমানবিক আচরণের অভিযোগ রয়েছে। অবিলম্বে এই প্রবণতা বন্ধ করে এসব গুমের অভিযোগের তদন্ত করা, নিখোঁজ ব্যক্তির পরিবারের কাছে ব্যাখ্যা তুলে ধরা আর এসব ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছে সংস্থাটি।

 

সংগঠনটির ওয়েবসাইটে গতকাল বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ৮২ পৃষ্ঠার ওই প্রতিবেদনের শিরোনাম, ‘তিনি আমাদের কাছে নেই:বাংলাদেশে গোপন আটক আর গুম’, যেখানে ২০১৬ সালে গুম হওয়া অন্তত ৯০ জনের তথ্য রয়েছে। এদের মধ্যে বেশিরভাগকে এক সপ্তাহ বা এক মাস গোপন স্থানে আটকে রাখার পর আদালতে হাজির করা হয়েছে। এইচআরডব্লিউ’র কাছে তথ্য রয়েছে যে, এরকম আটক ২১ জনকে পরে হত্যা করা হয়েছে আর নয় জনের কোনো তথ্যই জানা যায়নি। ওই ৯০ জনের তালিকায় মানবতা বিরোধী অপরাধে ফাঁসি কার্যকর হওয়া তিন বিরোধী নেতার তিন সন্তান রয়েছেন, যাদের একজন ছয় মাস পরে ফিরে এসেছেন। বাকি দুই জনের এখনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। ২০১৭ সালের প্রথম পাঁচ মাসে এরকম ৪৮ জনের নিখোঁজ হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে বলেও জানিয়েছে এইচআরডব্লিউ।

 

এইচআরডব্লিউ’র এশীয় পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস বলেছেন, নিখোঁজের বিষয়ে যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ থাকলেও বাংলাদেশের সরকার এই বিষয়ে আইনের খুব একটা তোয়াক্কা করছে না। মানুষজনকে আটক করে দোষী না নির্দোষ নির্ণয় করা, শাস্তি নির্ধারণ করা, এমনকি তারা বেঁচে থাকবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাও যেন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের দেওয়া হয়েছে।

 

ওই প্রতিবেদনে বিরোধী দল বিএনপির ১৯ জন কর্মীর তথ্য রয়েছে, যাদের ২০১৪ সালের জানুয়ারির নির্বাচনের পূর্বে বিভিন্ন এলাকা থেকে তুলে নেয়া হয়। এইচআরডব্লিউ’র দাবি, এসব অভিযোগের বিষয়ে ব্যাখ্যা চাইলেও তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ। এ ধরনের ঘটনায় র?্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) এবং গোয়েন্দা পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিখোঁজদের পরিবারের সদস্যদের, যে সংস্থা দুটির বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের দীর্ঘ অভিযোগ রয়েছে।

 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৩ সালের ৫ জানুয়ারি আদনান চৌধুরীকে তুলে নিয়ে যায় র?্যাবের সদস্যরা। তার বাবা রুহুল আমিন চৌধুরী সংস্থাটিকে বলছেন, তাদের বলা হয়েছিল, পরদিন র?্যাব সদস্যরা তাদের ছেড়ে দেবে। এইচআরডব্লিউ’কে রুহুল আমিন বলেন, তারা বললো, আমরা তাকে নিয়ে যাচ্ছি, আমরাই আবার তাকে ফেরত দিয়ে যাব। কিন্তু তারা আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে।

 

এইচআরডব্লিউ বলছে, এ ধরনের ঘটনায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগও গ্রহণ করে না পুলিশ। ব্র্যাড অ্যাডামস বলেন, সরকার এমনকি এসব অভিযোগ নাকচ না করে নীরব থাকছে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্র্রদায়ও চুপ করে থাকছে। এই নীরবতার অবসান হওয়া উচিত। এইচআরডব্লিউ বলেছে, বাংলাদেশ সরকারের উচিত জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনারকে এসব অভিযোগ তদন্ত করার আহবান জানানো এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা।