ঢাকা ০৫:৫০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাঞ্ছারামপুরে নৌকা নিয়ে ৪ মাঝির ঠেলাঠেলি,ধানের শীষে কোন্দল!

ফয়সল আহমেদ খান,বাঞ্ছারামপুর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া):

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-০৬ (বাঞ্ছারামপুর) আসনটি জেলায় অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনী এলাকা হিসেবে বিবেচিত।কথিত আছে,স্বাধীনতার পর হতে এই আসনে বিজয়ী প্রার্থীর দল সবসময় সরকার গঠন করে থাকে। ১টি পৌরসভা ও ১৩টি ইউনিয়ন নিয়ে বাঞ্ছারামপুর উপজেলা জাতীয় সংসদের ২৪৭ নম্বর নির্বাচনী এলাকা।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য এই আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেতে বর্তমান সংসদ সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী ক্যা.এবি তাজুল ইসলাম(অব.)সহ চারজন দৌড়ঝাঁপ করছেন। অন্যদিকে,সাবেক সংসদ সদস্য,পুলিশের সাবেক আমলা এমএ খালেকের আয়ত্বে দলীয় নেতা-কর্মীদের অনেকে এখন নিজেই নেতা বনে প্রার্থী হতে চাইছেন।ফলে,গ্রুপিং-এর ঢালপালা এতোটাই বিস্তার ঘটেছে.কে নেতা আর কে কর্মী তা বুঝা মুশকিল-ই বটে।এই আসনে নতুন মুখ আসবে বলে ধারণা করছে দলীয় লোকজন।

২০০১ সালে পুলিশের সাবেক এআইজি এম এ খালেক আ.লীগের ক্যা.তাজকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য হন।আসনটিতে ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ক্যা.এবি তাজুল ইসলাম এমপি সাবেক বিএনপি’র এমপি এমএখালেককে বিপুল ভোটে পরাজিত করে জয়ী হয়েছিলেন।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী করে পুরস্কৃত করেন।

আওয়ামী লীগ : আগামী নির্বাচনে এই আসন থেকে নৌকা প্রতীক প্রত্যাশী চারজন। তাঁরা হলেন আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য ক্যা.এবি তাজুল ইসলাম (অব.)। যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক ও সমবায় ব্যাংকের চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ মহি।কেন্দ্রীয় উপ কমিটির সাবেক দপ্তর বিষয়ক সম্পাদক,উপজেলা আওয়ামীলীগের শিক্ষা সম্পাদক সাঈদ আহমেদ বাবু,উপজেলা আওয়ামীলীগের সহসভাপতি ও সাবেক ঢাকসু নেতা ও কবি জসীমউদ্দিন হলের জিএস গোলাম মোস্তফা কামাল।

নৌকা প্রতীক পাওয়ার ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদ ব্যক্ত করে বর্তমান সংসদ সদস্য ক্যা.এবি তাজুল ইসলাম এমপি  বলেন, ‘আমি নির্বাচিত হয়ে সরকারের সহযোগিতায় ১১শত কোটি টাকার উন্নয়নমূলক কাজ করেছি এই উপজেলায়। সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজমুক্ত বাঞ্ছারামপুর গড়তে সক্ষম হয়েছি। স্বাধীনতার পরে মাত্র ৬ হতে ৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দিয়ে ৪০ বছর চলছিল এ উপজেলা। বিদ্যুৎ ছিল মানুষের কাছে সোনার হরিণ। আমি নির্বাচিত হওয়ার পর জননেত্রী শেখ হাসিনার সহযোগিতায় এ উপজেলায় ১৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আনতে সক্ষম হয়েছি, আরো ০৫ মেগাওয়াট প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে আশা করি এ এলাকা শতভাগ বিদ্যুতায়নের আওতায় আনা যাবে।’

ক্যা.এবি তাজুল ইসলাম আরো বলেন, ‘আমার নিজের এলাকার কলেজ সরকারি না করে উপজেলার প্রাচীনতম বাঞ্ছারামপুর ডিগ্রী কলেজ সরকারীকরণ করেছি।একটি হাই স্কুল সরকারীকরন করা হচ্ছে।২টি অডিটোরিয়াম হয়েছে।কৃষি গবেষনা ইন্সটিটিউট হয়েছে। উপজেলা সদরের প্রাণকেন্দ্রে মুক্তিযুদ্ধ স্থৃতিসৌধ,মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদ স্বরনে‘ ৭১ চত্বর’ নির্মাণ করেছি। ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১২৪টি প্রাইমারি স্কুলের নতুন ভবন ও ২১ কোটি টাকা ব্যয়ে অবকাঠামোগতসহ নানা সংস্কারকাজ সম্পন্ন করেছি। ২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে উপজেলার মাধ্যমিক স্কুল ও কলেজের জন্য ৩৪টি ভবন নির্মাণ করেছি। বিভিন্ন হাট-বাজারে তিন হাজার ১০০টি সৌর বিদ্যুৎ স্থাপন করেছি। তা ছাড়া ঢাকার সাথে সরাসরি যোগাযোগের জন্য করিতোলা হতে গোপালদী সরাসরি সেতুর প্রজেক্ট একনেকে পাশ করিয়ে ইতোমধ্যে ৪০ কোটি টাকা বরাদ্ধ করিয়েছি। এশিয়ার বৃহত্তম ওয়াই সেতু আমার একার চেষ্টায় করা হয়েছে ১ শত ২৭কোটি টাকায়। যদি আমি আর একটিবার নির্বাচিত হতে পারি তা হলে বাঞ্ছারামপুরকে শিক্ষানগরী হিসেবে গড়তে পারব।’

ক্যা. তাজ এমপি বলেন, ‘আমার ব্যক্তিগত কোনো চাহিদা নেই,৩ বার এমপি হয়েছি,মন্ত্রী হয়েছি। এলাকার সামগ্রিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধ বাঞ্ছারামপুর গড়াই আমার স্বপ্ন। দল ও দলের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা আমার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ রয়েছে। জননেত্রী যদি আমাকে নৌকা প্রতীক দেন তাহলে আবারও এই আসনটি শেখ হাসিনাকে উপহার দিবে বাঞ্ছারামপুরের জনগণ।’

যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক ও সমবায় ব্যাংকের ৩ বারের চেয়ারম্যান,বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) নির্বাচিত সহসভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ মহি বলেন, ‘‘আমার মনোনয়নের বিষয়টি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাতে ছেড়ে দিয়েছি।তিনি নিশ্চয়ই বিচার-বিশ্লেষন,ইমেজ,দক্ষতা ও প্রার্থীর সাথে জনসম্পৃক্ততা খুটিয়ে দেখবেন।এলাকায় কার দ্বারা আরো বেশী উন্নয়ন করা যায়,আমার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ-দূর্ণীতি আছে কি নেই তা নিশ্চয়ই খোজ রেখে আমাকে মনোনয়ন দিবেন। এখানে সর্বোচ্চ সিদ্ধান্তটি রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা নিয়ে থাকেন।আমার ধারনা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমার প্রতি আস্থাশীল। আমি সেই আস্থার প্রতিফলন ঘটাবো আগামী ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনে।নির্বাচিত হলে,আমার প্রধান টার্গেট থাকবে বাঞ্ছারামপুরের বেকার সমস্যা দূর করে আধুনিক বাঞ্ছারামপুর গড়ে তোলা।একটি পূর্নাঙ্গ বিশ^বিদ্যালয় গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখি।গ্রামে গ্রামে ষ্টেডিয়াম না হোক,খেলার উপযোগী নির্দিষ্ট খেলার মাঠ থাকবে,আমার আধুনিক বাঞ্ছারামপুরে।

সে সাথে সন্ত্রাস-মাদকমুক্ত,দারিদ্র-ভিক্ষুকমুক্ত বাঞ্ছারামপুর ঘোষনা করতে চাই এলাকাবাসীকে সাথে নিয়ে।এ ছাড়া বাঞ্ছারামপুরের মেয়েরা শিক্ষিত কিন্তু চাকুরী পাচ্ছে না,মেয়েদের চাকুরী দেয়া সহ স্বাবলম্বীতার উপর গুরুত্ব দিবো বেশী।’’
অপর প্রার্থী গোলাম মোস্তফা কামাল বলেন, ‘ছাত্রজীবন থেকেই ছাত্রলীগ শুরু করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি জসীম উদ্দিন হলের জিএস নির্বাচিত হয়েছি এবং বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের ১নং সদস্য পদে নির্বাচিত হয়েছি ১৯৭৯ সালে। এক সাথে বর্তমান আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সাথে রাজপথে মিছিল করেছি।এক সাথে খাওয়া-দাওয়া-ঘুম,আড্ডা বা রাজনীতি করেছি। আওয়ামী লীগের প্রতি ভালোবাসা আমার রক্তের রন্দ্রে রন্দ্রে।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে চিনেন।আমার ক্লীন ইমেজ সম্পর্কে জানেন।তিনি নিশ্চিয়ই আমাকে নিরাশ করবেন না।আমি মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচিত হলে বেকার সমস্যা,ক্ষুধা-দারিদ্রমুক্ত ডিজিটাল বাঞ্ছারামপুর গড়ে তুলবো।’

মনোনয়ন প্রত্যাশী সাঈদ আহমেদ বাবু নিজের সম্পর্কে বলেন, ‘মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারেও আমি যথেষ্ট আশাবাদী। কারণ মনোনয়ন পাওয়া বা ভোটযুদ্ধে জয়ী হওয়ার জন্য যে কাজগুলো করা দরকার প্রাথমিকভাবে তা দীর্ঘদিন ধরে আমি করে আসছি।রাষ্ট্র নায়ক শেখ হাসিনা আমাকে বলেছেন তৃণমূলে যেয়ে কাজ করতে আমি করছি।ডোর টু ডোর যেয়ে এলাকার সমস্যাগুলো অনুধাবন করছি।আমি শিক্ষা ছাড়া কিছুই বুঝি না।আমি মনে করি বাঞ্ছারামপুরের সবাইকে যদি শিক্ষিত করে গড়ে তোলা যায়,তবে সব সমস্যার সমাধান স্বয়ংক্রিয়ভাবে হয়ে যাবে’।

বিএনপি : বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের শীর্ষে দলের নির্বাহী পরিষদের সদস্য এম এ খালেক।একাধিক বিএনপি নেতা-কর্মীর সাথে কথা বলে বাঞ্ছারামপুরে এম এ খালেকের অনুপস্থিতিতে টানাপড়েন রয়েছে দলটিতে এবং এখানে বিএনপির প্রার্থী কে হবেন তা নিয়ে নেতাকর্মীরা দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছে।দলের অভ্যন্তরে রয়েছে তীব্র কোন্দল।এক নেতার মিটিং-এ আরেক নেতা আসেন না।কর্মীদেরও ভাগ করা হয়েছে গ্রুপিং ভিত্তিক।দলীয় সূত্রে জানা গেছে,সাবেক এমপি এমএ খালেক ও তারুন্যের অহংকার হিসেবেখ্যাত কৃষিবিদ পলাশের মধ্যে লড়াই হবে ধানের শীষ নিয়ে।

বাঞ্ছারামপুরে বিগত ৯ বছর ধরে বিএনপিতে চলছে ভাঙ্গনের খেলা।উপজেলার শীর্ষ নেতা লিয়াকত আলী ফরিদ,ছাত্রনেতা ,এডভোকেট ও বিএনপি কেন্দ্রীয় পরিষদের পরিচিত মুখ রফিক শিকদার,এডভোকেট মো.জিয়াউদ্দিন জিয়া,তরুন শিল্পপতি ও বিএনপি বর্তমান কান্ডারী হিসেবেখ্যাত কৃষিবিদ মেহেদী হাসান পলাশ।স্থানীয় বিএনপি নেতা লিয়াকত আলী ফরিদ,ডা.খোকন সহ আরো আছে লন্ডনে অবস্থানরত তারেক জিয়ার ঘনিষ্ঠ সহযোগী ব্যারিষ্টার অপু প্রমূখ।

সাবেক পুলিশের আমলা এম এ খালেক বলেন,-‘আমি বিএনপি নেতাকর্মীদের নিয়ে এলাকায় দলীয় কর্মসূচি পালনসহ গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছি। দলের হাইকমান্ডের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি।দলের চেয়ারপার্সন জেল মুক্তি আন্দোলনে আমার চেয়ে বেশী কে মাঠে নেমেছে? দলের দু:সময় এখন।তারপরও,গাজীপুর সিটি কর্পো: নির্বাচনে প্রতিদিন মাঠে থাকছি কর্মীর মতো।আমি বাঞ্ছারামপুরে কতোটা উন্নয়ন করেছিলাম আমার বিগত ৫ বছরে সেটি এলাকাবাসী ভালো করেই জানেন।আমার বিরুদ্ধবাদ কে করলো না করলো,সেটি আমার যায় আসে না।যারা গ্রুপিং করে,তারা এক সময় নদীতে ভেসে যাবে।দলের জন্য ২৪ ঘন্টা সময় দেই, আশা করি দল আমাকে মূল্যায়ন করবে।’

ছাত্রনেতা ও বর্তমানে দলের নির্বাহী পরিষদের সদস্য রফিক শিকদার বলেন,-‘আমাদের এখন মুখ্য চাওয়া দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জেলমুক্তি।তাকে জেলে রেখে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না।খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনে আমি কতোটা সক্রিয় বা নিকট অতীতে বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে কতটা দলের জন্য করেছি,দল বিষয়টি ভালোভাবেই জানে।বিএনপি নির্বাচনে এলে ইনশাল্লাহ আমার মনোনয়ন কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না।

কৃষিবিদ মেহেদী হাসান পলাশ বলেন,বর্তমান ফ্রী খালেদা জিয়া মুভমেন্ট আন্দোলনে আমি রাজপথের সংগ্রামী সহযোদ্ধা।এলাকাবাসী আমাকে চায়।বেগম জিয়া আমাকে ধানের শীষের পক্ষে কাজ করার জন্য বলেছেন।আমি সেটি নিয়মিত করে যাচ্ছি।আশা করি দল,আমাকে সেভাবেই মূল্যায়ন করবে।

খালেদা জিয়ার আইনজীবি প্যানেলের শীর্ষ সিনিয়র আইনজীবি ও কেন্দ্রীয় বিএনপি নির্বাহী পর্ষদের সদস্য এডভোকেট জিয়াউদ্দিন আহমেদ জিয়া বলেন,আগে নেত্রীকে জেলমুক্ত করি।তারপর কথা।তার মুখ থেকেই ইনশাল্লাহ আমার নাম শুনবেন।

এ ছাড়া বাঞ্ছারামপুরে জাতীয় পার্টি কিংবা অন্যান্য কোন দলের নেতা বা অফিস নেই।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

শিক্ষার্থীদের উপর হামলার প্রতিবাদে মুরাদনগরে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ

বাঞ্ছারামপুরে নৌকা নিয়ে ৪ মাঝির ঠেলাঠেলি,ধানের শীষে কোন্দল!

আপডেট সময় ১০:২৩:৫৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৫ মে ২০১৮

ফয়সল আহমেদ খান,বাঞ্ছারামপুর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া):

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-০৬ (বাঞ্ছারামপুর) আসনটি জেলায় অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনী এলাকা হিসেবে বিবেচিত।কথিত আছে,স্বাধীনতার পর হতে এই আসনে বিজয়ী প্রার্থীর দল সবসময় সরকার গঠন করে থাকে। ১টি পৌরসভা ও ১৩টি ইউনিয়ন নিয়ে বাঞ্ছারামপুর উপজেলা জাতীয় সংসদের ২৪৭ নম্বর নির্বাচনী এলাকা।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য এই আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেতে বর্তমান সংসদ সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী ক্যা.এবি তাজুল ইসলাম(অব.)সহ চারজন দৌড়ঝাঁপ করছেন। অন্যদিকে,সাবেক সংসদ সদস্য,পুলিশের সাবেক আমলা এমএ খালেকের আয়ত্বে দলীয় নেতা-কর্মীদের অনেকে এখন নিজেই নেতা বনে প্রার্থী হতে চাইছেন।ফলে,গ্রুপিং-এর ঢালপালা এতোটাই বিস্তার ঘটেছে.কে নেতা আর কে কর্মী তা বুঝা মুশকিল-ই বটে।এই আসনে নতুন মুখ আসবে বলে ধারণা করছে দলীয় লোকজন।

২০০১ সালে পুলিশের সাবেক এআইজি এম এ খালেক আ.লীগের ক্যা.তাজকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য হন।আসনটিতে ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ক্যা.এবি তাজুল ইসলাম এমপি সাবেক বিএনপি’র এমপি এমএখালেককে বিপুল ভোটে পরাজিত করে জয়ী হয়েছিলেন।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী করে পুরস্কৃত করেন।

আওয়ামী লীগ : আগামী নির্বাচনে এই আসন থেকে নৌকা প্রতীক প্রত্যাশী চারজন। তাঁরা হলেন আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য ক্যা.এবি তাজুল ইসলাম (অব.)। যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক ও সমবায় ব্যাংকের চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ মহি।কেন্দ্রীয় উপ কমিটির সাবেক দপ্তর বিষয়ক সম্পাদক,উপজেলা আওয়ামীলীগের শিক্ষা সম্পাদক সাঈদ আহমেদ বাবু,উপজেলা আওয়ামীলীগের সহসভাপতি ও সাবেক ঢাকসু নেতা ও কবি জসীমউদ্দিন হলের জিএস গোলাম মোস্তফা কামাল।

নৌকা প্রতীক পাওয়ার ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদ ব্যক্ত করে বর্তমান সংসদ সদস্য ক্যা.এবি তাজুল ইসলাম এমপি  বলেন, ‘আমি নির্বাচিত হয়ে সরকারের সহযোগিতায় ১১শত কোটি টাকার উন্নয়নমূলক কাজ করেছি এই উপজেলায়। সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজমুক্ত বাঞ্ছারামপুর গড়তে সক্ষম হয়েছি। স্বাধীনতার পরে মাত্র ৬ হতে ৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দিয়ে ৪০ বছর চলছিল এ উপজেলা। বিদ্যুৎ ছিল মানুষের কাছে সোনার হরিণ। আমি নির্বাচিত হওয়ার পর জননেত্রী শেখ হাসিনার সহযোগিতায় এ উপজেলায় ১৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আনতে সক্ষম হয়েছি, আরো ০৫ মেগাওয়াট প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে আশা করি এ এলাকা শতভাগ বিদ্যুতায়নের আওতায় আনা যাবে।’

ক্যা.এবি তাজুল ইসলাম আরো বলেন, ‘আমার নিজের এলাকার কলেজ সরকারি না করে উপজেলার প্রাচীনতম বাঞ্ছারামপুর ডিগ্রী কলেজ সরকারীকরণ করেছি।একটি হাই স্কুল সরকারীকরন করা হচ্ছে।২টি অডিটোরিয়াম হয়েছে।কৃষি গবেষনা ইন্সটিটিউট হয়েছে। উপজেলা সদরের প্রাণকেন্দ্রে মুক্তিযুদ্ধ স্থৃতিসৌধ,মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদ স্বরনে‘ ৭১ চত্বর’ নির্মাণ করেছি। ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১২৪টি প্রাইমারি স্কুলের নতুন ভবন ও ২১ কোটি টাকা ব্যয়ে অবকাঠামোগতসহ নানা সংস্কারকাজ সম্পন্ন করেছি। ২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে উপজেলার মাধ্যমিক স্কুল ও কলেজের জন্য ৩৪টি ভবন নির্মাণ করেছি। বিভিন্ন হাট-বাজারে তিন হাজার ১০০টি সৌর বিদ্যুৎ স্থাপন করেছি। তা ছাড়া ঢাকার সাথে সরাসরি যোগাযোগের জন্য করিতোলা হতে গোপালদী সরাসরি সেতুর প্রজেক্ট একনেকে পাশ করিয়ে ইতোমধ্যে ৪০ কোটি টাকা বরাদ্ধ করিয়েছি। এশিয়ার বৃহত্তম ওয়াই সেতু আমার একার চেষ্টায় করা হয়েছে ১ শত ২৭কোটি টাকায়। যদি আমি আর একটিবার নির্বাচিত হতে পারি তা হলে বাঞ্ছারামপুরকে শিক্ষানগরী হিসেবে গড়তে পারব।’

ক্যা. তাজ এমপি বলেন, ‘আমার ব্যক্তিগত কোনো চাহিদা নেই,৩ বার এমপি হয়েছি,মন্ত্রী হয়েছি। এলাকার সামগ্রিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধ বাঞ্ছারামপুর গড়াই আমার স্বপ্ন। দল ও দলের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা আমার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ রয়েছে। জননেত্রী যদি আমাকে নৌকা প্রতীক দেন তাহলে আবারও এই আসনটি শেখ হাসিনাকে উপহার দিবে বাঞ্ছারামপুরের জনগণ।’

যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক ও সমবায় ব্যাংকের ৩ বারের চেয়ারম্যান,বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) নির্বাচিত সহসভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ মহি বলেন, ‘‘আমার মনোনয়নের বিষয়টি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাতে ছেড়ে দিয়েছি।তিনি নিশ্চয়ই বিচার-বিশ্লেষন,ইমেজ,দক্ষতা ও প্রার্থীর সাথে জনসম্পৃক্ততা খুটিয়ে দেখবেন।এলাকায় কার দ্বারা আরো বেশী উন্নয়ন করা যায়,আমার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ-দূর্ণীতি আছে কি নেই তা নিশ্চয়ই খোজ রেখে আমাকে মনোনয়ন দিবেন। এখানে সর্বোচ্চ সিদ্ধান্তটি রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা নিয়ে থাকেন।আমার ধারনা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমার প্রতি আস্থাশীল। আমি সেই আস্থার প্রতিফলন ঘটাবো আগামী ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনে।নির্বাচিত হলে,আমার প্রধান টার্গেট থাকবে বাঞ্ছারামপুরের বেকার সমস্যা দূর করে আধুনিক বাঞ্ছারামপুর গড়ে তোলা।একটি পূর্নাঙ্গ বিশ^বিদ্যালয় গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখি।গ্রামে গ্রামে ষ্টেডিয়াম না হোক,খেলার উপযোগী নির্দিষ্ট খেলার মাঠ থাকবে,আমার আধুনিক বাঞ্ছারামপুরে।

সে সাথে সন্ত্রাস-মাদকমুক্ত,দারিদ্র-ভিক্ষুকমুক্ত বাঞ্ছারামপুর ঘোষনা করতে চাই এলাকাবাসীকে সাথে নিয়ে।এ ছাড়া বাঞ্ছারামপুরের মেয়েরা শিক্ষিত কিন্তু চাকুরী পাচ্ছে না,মেয়েদের চাকুরী দেয়া সহ স্বাবলম্বীতার উপর গুরুত্ব দিবো বেশী।’’
অপর প্রার্থী গোলাম মোস্তফা কামাল বলেন, ‘ছাত্রজীবন থেকেই ছাত্রলীগ শুরু করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি জসীম উদ্দিন হলের জিএস নির্বাচিত হয়েছি এবং বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের ১নং সদস্য পদে নির্বাচিত হয়েছি ১৯৭৯ সালে। এক সাথে বর্তমান আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সাথে রাজপথে মিছিল করেছি।এক সাথে খাওয়া-দাওয়া-ঘুম,আড্ডা বা রাজনীতি করেছি। আওয়ামী লীগের প্রতি ভালোবাসা আমার রক্তের রন্দ্রে রন্দ্রে।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে চিনেন।আমার ক্লীন ইমেজ সম্পর্কে জানেন।তিনি নিশ্চিয়ই আমাকে নিরাশ করবেন না।আমি মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচিত হলে বেকার সমস্যা,ক্ষুধা-দারিদ্রমুক্ত ডিজিটাল বাঞ্ছারামপুর গড়ে তুলবো।’

মনোনয়ন প্রত্যাশী সাঈদ আহমেদ বাবু নিজের সম্পর্কে বলেন, ‘মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারেও আমি যথেষ্ট আশাবাদী। কারণ মনোনয়ন পাওয়া বা ভোটযুদ্ধে জয়ী হওয়ার জন্য যে কাজগুলো করা দরকার প্রাথমিকভাবে তা দীর্ঘদিন ধরে আমি করে আসছি।রাষ্ট্র নায়ক শেখ হাসিনা আমাকে বলেছেন তৃণমূলে যেয়ে কাজ করতে আমি করছি।ডোর টু ডোর যেয়ে এলাকার সমস্যাগুলো অনুধাবন করছি।আমি শিক্ষা ছাড়া কিছুই বুঝি না।আমি মনে করি বাঞ্ছারামপুরের সবাইকে যদি শিক্ষিত করে গড়ে তোলা যায়,তবে সব সমস্যার সমাধান স্বয়ংক্রিয়ভাবে হয়ে যাবে’।

বিএনপি : বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের শীর্ষে দলের নির্বাহী পরিষদের সদস্য এম এ খালেক।একাধিক বিএনপি নেতা-কর্মীর সাথে কথা বলে বাঞ্ছারামপুরে এম এ খালেকের অনুপস্থিতিতে টানাপড়েন রয়েছে দলটিতে এবং এখানে বিএনপির প্রার্থী কে হবেন তা নিয়ে নেতাকর্মীরা দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছে।দলের অভ্যন্তরে রয়েছে তীব্র কোন্দল।এক নেতার মিটিং-এ আরেক নেতা আসেন না।কর্মীদেরও ভাগ করা হয়েছে গ্রুপিং ভিত্তিক।দলীয় সূত্রে জানা গেছে,সাবেক এমপি এমএ খালেক ও তারুন্যের অহংকার হিসেবেখ্যাত কৃষিবিদ পলাশের মধ্যে লড়াই হবে ধানের শীষ নিয়ে।

বাঞ্ছারামপুরে বিগত ৯ বছর ধরে বিএনপিতে চলছে ভাঙ্গনের খেলা।উপজেলার শীর্ষ নেতা লিয়াকত আলী ফরিদ,ছাত্রনেতা ,এডভোকেট ও বিএনপি কেন্দ্রীয় পরিষদের পরিচিত মুখ রফিক শিকদার,এডভোকেট মো.জিয়াউদ্দিন জিয়া,তরুন শিল্পপতি ও বিএনপি বর্তমান কান্ডারী হিসেবেখ্যাত কৃষিবিদ মেহেদী হাসান পলাশ।স্থানীয় বিএনপি নেতা লিয়াকত আলী ফরিদ,ডা.খোকন সহ আরো আছে লন্ডনে অবস্থানরত তারেক জিয়ার ঘনিষ্ঠ সহযোগী ব্যারিষ্টার অপু প্রমূখ।

সাবেক পুলিশের আমলা এম এ খালেক বলেন,-‘আমি বিএনপি নেতাকর্মীদের নিয়ে এলাকায় দলীয় কর্মসূচি পালনসহ গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছি। দলের হাইকমান্ডের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি।দলের চেয়ারপার্সন জেল মুক্তি আন্দোলনে আমার চেয়ে বেশী কে মাঠে নেমেছে? দলের দু:সময় এখন।তারপরও,গাজীপুর সিটি কর্পো: নির্বাচনে প্রতিদিন মাঠে থাকছি কর্মীর মতো।আমি বাঞ্ছারামপুরে কতোটা উন্নয়ন করেছিলাম আমার বিগত ৫ বছরে সেটি এলাকাবাসী ভালো করেই জানেন।আমার বিরুদ্ধবাদ কে করলো না করলো,সেটি আমার যায় আসে না।যারা গ্রুপিং করে,তারা এক সময় নদীতে ভেসে যাবে।দলের জন্য ২৪ ঘন্টা সময় দেই, আশা করি দল আমাকে মূল্যায়ন করবে।’

ছাত্রনেতা ও বর্তমানে দলের নির্বাহী পরিষদের সদস্য রফিক শিকদার বলেন,-‘আমাদের এখন মুখ্য চাওয়া দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জেলমুক্তি।তাকে জেলে রেখে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না।খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনে আমি কতোটা সক্রিয় বা নিকট অতীতে বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে কতটা দলের জন্য করেছি,দল বিষয়টি ভালোভাবেই জানে।বিএনপি নির্বাচনে এলে ইনশাল্লাহ আমার মনোনয়ন কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না।

কৃষিবিদ মেহেদী হাসান পলাশ বলেন,বর্তমান ফ্রী খালেদা জিয়া মুভমেন্ট আন্দোলনে আমি রাজপথের সংগ্রামী সহযোদ্ধা।এলাকাবাসী আমাকে চায়।বেগম জিয়া আমাকে ধানের শীষের পক্ষে কাজ করার জন্য বলেছেন।আমি সেটি নিয়মিত করে যাচ্ছি।আশা করি দল,আমাকে সেভাবেই মূল্যায়ন করবে।

খালেদা জিয়ার আইনজীবি প্যানেলের শীর্ষ সিনিয়র আইনজীবি ও কেন্দ্রীয় বিএনপি নির্বাহী পর্ষদের সদস্য এডভোকেট জিয়াউদ্দিন আহমেদ জিয়া বলেন,আগে নেত্রীকে জেলমুক্ত করি।তারপর কথা।তার মুখ থেকেই ইনশাল্লাহ আমার নাম শুনবেন।

এ ছাড়া বাঞ্ছারামপুরে জাতীয় পার্টি কিংবা অন্যান্য কোন দলের নেতা বা অফিস নেই।