বিশেষ প্রতিনিধি, কুমিল্লাঃ
কুমিল্লার মনোহরগঞ্জে দশ বছর বয়সী শিশু সিমু আক্তারকে ধর্ষণের পর নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় বাচ্চু মিয়া (৪৮) নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বুধবার সকালে বাচ্চুকে সিমু হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
এদিকে, গ্রেপ্তারকৃত বাচ্চু মিয়া এলাকার একজন চিহিৃত লম্পট বলে দাবি করেছেন মনোহরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সামছুজ্জামান। তাঁর দাবি, বাচ্চুই ধর্ষণের পর ভয়ংকরভাবে খুনি করেছে শিশু সিমুকে।
গত সোমবার দুপুরে উপজেলার উত্তর হাওলা ইউনিয়নের হাতিমারা গ্রামের কৃষক সাইদুল হকের ঘরের খাটের নিচ থেকে তাঁর মেয়ে সিমু আক্তারের ক্ষতবিক্ষত রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করে মনোহরগঞ্জ থানা পুলিশ। শিশু সিমু স্থানীয় হাতিমারা মাদরাসায় প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। এই ঘটনায় ওইদিন রাতে বাচ্চু মিয়াকে সন্দেহভাজন হিসেবে অভিযুক্ত করে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন সিমুর পিতা সাইদুল হক। বাচ্চু মিয়া একই গ্রামের লাল মিয়ার ছেলে। সে পাশের নাথেরপেটুয়া বাজারে বিকেল বেলায় ফুটপাতে হালিম বিক্রি করতো।
বুধবার দুপুরে মনোহরগঞ্জ থানার ওসি মোহাম্মদ সামছুজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, ঘটনার পর আমরা হত্যাকারীকে গ্রেপ্তারের জন্য ব্যাপক তৎপরতা চালাই। এ ছাড়া ওই শিশুর পিতাও মামলায় বাচ্চুকে সন্দেহভাজন হিসেবে একমাত্র অভিযুক্ত করেছেন। পরে আমরা বাচ্চু মিয়াকে ধরতে তার বাড়িতে অভিযান চালাই এবং তাকে আটক করি।
ওসি সামছুজ্জামান জানান, আমরা বাচ্চুর ঘরে অভিযানকালে একটি শার্ট পেয়েছি যার মধ্যে রক্তের দাগ রয়েছে। এ ছাড়া তাঁর পিঠে ও কানের মধ্যে মেয়েদের নখের আঁচড় রয়েছে। যার কারণে আমাদের পুরোপুরি ধারণা বাচ্চুই ধর্ষণের পর ভয়ংকরভাবে খুন করেছে শিশু সিমুকে। এ ছাড়া আমরা খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি বাচ্চু গত দেড়/দুই বছরের মধ্যে নিজ গ্রামেই দু’টো শিশুকে ধর্ষণ করেছে। পরে সেগুলো একটি ৫০ হাজার এবং আরেকটি এক লক্ষ টাকায় গোপনে মিমাংসা করেছে। আর সে নাথেরপেটুয়া বাজারেও বিভিন্ন অনৈতিক কাজে লিপ্ত থাকার খবর পাওয়া গেছে। বাচ্চুকে আটকের পর বুধবার সিমু হত্যা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তাকে আরো ব্যাপকভাবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে রিমান্ডের আবেদন করা হচ্ছে।
শিশু সিমুর পিতা কৃষক সাইদুল হক ঘটনার পর থেকে এখনো স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি। তিনি বলেন, আমার মেয়েটাকে কতটা কষ্ট দিয়ে হত্যা করা হয়েছে তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। সিমুর জন্য আমার পরিবারের সবাই এখন পাগলের মতো হয়ে গেছে। মেয়েকে হারিয়ে আমিও কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। আপনারা পুলিশের সাথে কথা বলেন। আইনের কাজ এখন আইনে করছে। আমরা আল্লাহর উপর ভরসা করে পড়ে রয়েছি। এ ছাড়া আর কিছু বলতে চাই না।
উল্লেখ্য, উপজেলার হাতিমারা গ্রামের পূর্ব-উত্তর পাশের ফসলের মাঠের মধ্যখানে বাড়ি নির্মাণ করে সেখানেই পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন কৃষক সাইদুল হক। হত্যার ঘটনার এক সপ্তাহ আগে সাইদুলের স্ত্রী রাবেয়া বেগম সিলেটে বেড়াতে যায়। গত সোমবার সকালে সাইদুল মাঠে কৃষি কাজ করতে ঘর থেকে বের হয়। সাইদুলের বড় মেয়ে মাদরাসায় থাকায় বাড়ি থেকে বের হবার সময় সে তার ছোট মেয়ে সিমুকে বলে যায়, ‘পুরো বাড়ি যেহেতু খালি তুই নানার বাড়িতে চলে যা’।
সিমুর নানার বাড়ি একই গ্রামে। ওদের বাড়ির কাছাকাছি। সর্বশেষ ওইদিন দুপুরে মাঠের কৃষি কাজ শেষে বাড়ি ফিরে সাইদুল দেখেন ঘরের দরজা খোলা। এরপর ঘরে প্রবেশ করে সব কিছু এলোমেলো দেখতে পান তিনি। এক পর্যায়ে খাটের নিচে সিমুর ক্ষতবিক্ষত ও রক্তাক্ত লাশ দেখতে পান তিনি। খবর পেয়ে ওইদিন লাশ উদ্ধারের পর সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুতের পর পুলিশের সদস্যরা দেখতে পান শিশু মেয়েটির উপর অমানবিক নির্যাতনের পর তাকে দা ও বটি দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে নৃশংসভাবে খুন করা হয়েছে। হত্যায় ব্যবহৃত দা ও বটিও ঘর থেকেই উদ্ধার করে পুলিশ।
স্থানীয় এলাকাবাসীর ধারণা, ওই শিশুদের বাড়িটি ফসলের মাঠের মধ্যখানে হওয়াতে ধর্ষণ ও হত্যার সময় সিমুর চিৎকারের শব্দ কেউ শুনতে পায়নি। যার কারণে ঘাতক খুব সহজেই চলে যেতে পেরেছে। আর এটাও বুঝা অপরাধী পূর্ব থেকেই পরিকল্পনা করে এই ঘটনা ঘটিয়েছে। কারন সে জানতো ওই সময় মেয়েটি ঘরে একা থাকবে।