ঢাকা ০৩:০৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মুরাদনগরে কলেজ সভাপতির অনিয়মে ২৭জন শিক্ষকের লিখিত অভিযোগ

আজিজুর রহমান রনি, বিশেষ প্রতিনিধি:

কুমিল্লার মুরাদনগরে এক কলেজ প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতির অনিয়ম-দুর্নীতি ও অনৈতিক প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার চাপিতলা ফরিদ উদ্দিন সরকার কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা এসব অভিযোগ করেছেন। বেপরোয়া এ সভাপতি বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগের তদন্ত দাবি করে দুর্নীতি দমন কমিশন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়সহ সংশ্লিষ্ট ৭টি দফতরে লিখিত অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে।

এ দিকে সভাপতি কলেজের নামে ভবন নির্মাণের বরাদ্ধ আনতে মন্ত্রী এমপি ও সচিবালয়ে সচিবদেরকে ঘুষ দেয়ার নামে কলেজ ফান্ডের ৫৪ লাখ হাতিয়ে নিতে নানাভাবে পায়তারা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষকরা। অপরদিকে সভাপতির অনিয়ম-দুর্নীতির প্রতিবাদ করায় গত ২৩ মার্চ রাতে অবৈধভাবে অধ্যক্ষ নারগিস আক্তার চৌধুরীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এতে ওই কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ এলাকায় ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিষ্ঠাতার অনিয়ম-দুর্নীতি ও অনৈতিক কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।

জানা যায়, ১৯৯৫ সালে চাপিতলা গ্রামের হাবিবুর রহমান নিজ এলাকায় তার পিতা ফরিদ উদ্দিনের নামে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। শুরুতে সরকার এবং এলাকাবাসীর সহযোগিতায় কলেজটি পরিচালিত হয়। ২০০৩ সাল থেকে এ কলেজের উন্নয়নের জন্য শিক্ষকদের সরকারি বেতনের এক তৃতীয়াংশ টাকা দিয়ে কলেজ হোস্টেল চালু করে দিবা-রাত্রি শিক্ষার্থীদের পেছনে শ্রম দিয়ে শিক্ষকরা কলেজটিকে একটি সমৃদ্ধ প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেন। অভিযোগ রয়েছে, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও সরকারের একান্ত সহযোগিতায় দিনে দিনে প্রতিষ্ঠানটি গতি লাভ করার পর প্রতিষ্ঠাতা হাবিবুর রহমান মোল্লা প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে অনৈতিক প্রভাব বিস্তার শুরু করেন। শিক্ষকদের একটি অংশ এবং রাজনৈতিক ও এলাকার প্রভাবশারীদেরকে ম্যানেজ করে তিনি গত ১০ বছর যাবত সভাপতির পদটি আকড়ে রেখেছেন। তার বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্য, ভর্তি ফরম ফিলাপসহ কলেজের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকা-ের নামে কলেজের বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ করেছেন সাধারণ শিক্ষকরা। এ কলেজের উপাধ্যক্ষ সফিকুল ইসলামসহ কয়েকজন অভিভাবক প্রতিনিধিকে নিয়ে প্রতিষ্ঠাতা অলিখিত একটি সিন্ডিকেট গঠন করেন। ৩৬জন শিক্ষকের মাঝে প্রায় ৩০ জন শিক্ষক এ অবৈধ সিন্ডিকেটের অনিয়ম-দুর্নীতিসহ নানা কর্মকা-ের বিরোধীতা করে আসছেন।

ভূক্তভোগী শিক্ষকরা জানান, সভাপতি হাবিবুর রহমান ২০১২ থেকে ১৭ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত সকল শিক্ষক-কর্মচারীদের সরকারি বেতনের ১০% বর্তমান স্কেল দেখিয়ে ৬১ মাসের বেতন হিসাব করে প্রায় ৫৪ লাখ টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলনের জন্য স্বাক্ষর করতে শিক্ষকদেরকে চাপ প্রয়োগ করেন। কলেজের নতুন ভবনের বরাদ্ধ আনতে মন্ত্রী এমপি এবং সচিবালয়ে বিভিন্ন সচিবদেরকে সভাপতি ৫৪ লাখ ঘুষ দিয়েছেন বলে দাবি করেন। এ অর্থ কলেজের ফান্ড থেকে তাকে পরিশোধ করার জন্য অধিকাংশ শিক্ষক থেকে তিনি জোরপূর্বক স্বাক্ষর গ্রহণ করেন। প্রায় ১৫জন শিক্ষক ওই কাগজে স্বাক্ষর না করায় তাদেরকে নানাভাবে ভয়ভীতি এবং লাঞ্ছিত করা হয়। পরে এ নিয়ে শিক্ষকরা আন্দোলন করায় সভাপতির ভাই সাইদুর রহমানের নেতৃত্বে শিক্ষকদের উপর সন্ত্রাসী হামলা করা হয়। এ ছাড়াও সভাপতি হাবিবুর রহমান ড্রেজারের মাধ্যমে কলেজের জায়গা ভরাট করার জন্য কলেজের নিজস্ব জমি থেকে মাটি উত্তোলন করে ফা- থেকে ১৮ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। সভাপতি এবং উপাধ্যক্ষ মিলে ১৮ সালের ভর্তির টাকা থেকে সম্মানির নামে ৬৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন বলে অভিযোগ করা হয়। এ নিয়ে বিভিন্ন সময় প্রতিবাদ করায় বেশ কিছু শিক্ষক সভাপতির হাতে লাঞ্ছিত হন। এরপর থেকে তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলার সাহস করেনি। এতে বেপরোয়া হয়ে উঠেন ওই প্রতিষ্ঠাতা।

ভূক্তভোগী শিক্ষকরা আরো জানান, উপাধ্যক্ষ সফিকুল ইসলাম অধ্যক্ষ পদটি বাগিয়ে নিতে সভাপতিকে সকল অনিয়ম দুর্নীতি করতে সহায়তা করে আসছেন। সম্প্রতি এসব অনিয়ম দুর্নীতি নিয়ে প্রতিবাদ করায় কোন প্রকার শোকজ নোটিশ না করেই এবং আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে গত ২৩ মার্চ গভীর রাতে ৩জন শিক্ষক ও দুয়েকজন অভিভাবক নিয়ে বৈঠক দেখিয়ে কলেজের অধ্যক্ষ নারগিস আক্তার চৌধুরীকে বরখাস্ত করেন এবং উপাধ্যক্ষ সফিকুল ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব প্রদান করেন। পরদিন সকালে অধ্যক্ষের কুমিল্লাস্থ বাসায় বরখাস্তের চিঠি পৌঁছে দেন। এ নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ এলাকার সর্বস্তরের লোকজনের মাঝে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। সভাপতি ও উপাধ্যক্ষের এসব অনিয়ম দুর্নীতি ও অনৈতিক প্রভাব বিস্তারের তদন্ত দাবি করে ওই কলেজের ভূক্তভোগী শিক্ষকরা দুর্নীতি দমন কমিশন, জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়, মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাসহ ৭টি দফতরে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন।

অধ্যক্ষ নারগিস আক্তার চৌধুরী বলেন, সভাপতির অনিয়ম-দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাতসহ অনৈতিক প্রভাব বিস্তার ও নানা অবৈধ কর্মকা-ের বিষয়ে প্রতিবাদ করায় আমাকে সম্পূর্ণ বিধি বহির্ভূতভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। তিনি বলেন, উপাধ্যক্ষ সফিকুল ইসলাম অধ্যক্ষের পদটি লুফে নিতে দীর্ঘদিন যাবত সভাপতির সাথে মিলে ষড়যন্ত্র করে আসছে।

উপাধ্যক্ষ সফিকুল ইসলাম বলেন, আমি কোন সিন্ডিকেট কিংবা অনিয়মের সাথে জড়িত না, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বার্থেই সকল কাজ করি। সভাপতিসহ অভিভাবক প্রতিনিধিরা আমাকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব প্রদান করেছে। কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী আমি কাজ করছি।

সভাপতি হাবিবুর রহমান বলেন, আমি কোন অনিয়ম-দুর্নীতির সাথে জড়িত নই। আমার বিরুদ্ধে কতিপয় শিক্ষক মিথ্যা অভিযোগ দাখিল করেছে। আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে অধ্যক্ষ নারগিস আক্তার চৌধুরীকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিতু মরিয়ম বলেন, কারণ দর্শানো ছাড়া একজন অধ্যক্ষকে এভাবে বরখাস্ত করা যায় না। এ বিষয়ে অধ্যক্ষ এবং সাধারণ শিক্ষকরা আমার কাছে পৃথক অভিযোগ দাখিল করেছেন। আমি তদন্ত কমিটি গঠন করবো এবং সভাপতি যদি কোন অনিয়মে জড়িত থাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবো।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

শিক্ষার্থীদের উপর হামলার প্রতিবাদে মুরাদনগরে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ

মুরাদনগরে কলেজ সভাপতির অনিয়মে ২৭জন শিক্ষকের লিখিত অভিযোগ

আপডেট সময় ০৪:৪৬:৪৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৭ এপ্রিল ২০১৮
আজিজুর রহমান রনি, বিশেষ প্রতিনিধি:

কুমিল্লার মুরাদনগরে এক কলেজ প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতির অনিয়ম-দুর্নীতি ও অনৈতিক প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার চাপিতলা ফরিদ উদ্দিন সরকার কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা এসব অভিযোগ করেছেন। বেপরোয়া এ সভাপতি বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগের তদন্ত দাবি করে দুর্নীতি দমন কমিশন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়সহ সংশ্লিষ্ট ৭টি দফতরে লিখিত অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে।

এ দিকে সভাপতি কলেজের নামে ভবন নির্মাণের বরাদ্ধ আনতে মন্ত্রী এমপি ও সচিবালয়ে সচিবদেরকে ঘুষ দেয়ার নামে কলেজ ফান্ডের ৫৪ লাখ হাতিয়ে নিতে নানাভাবে পায়তারা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষকরা। অপরদিকে সভাপতির অনিয়ম-দুর্নীতির প্রতিবাদ করায় গত ২৩ মার্চ রাতে অবৈধভাবে অধ্যক্ষ নারগিস আক্তার চৌধুরীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এতে ওই কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ এলাকায় ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিষ্ঠাতার অনিয়ম-দুর্নীতি ও অনৈতিক কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।

জানা যায়, ১৯৯৫ সালে চাপিতলা গ্রামের হাবিবুর রহমান নিজ এলাকায় তার পিতা ফরিদ উদ্দিনের নামে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। শুরুতে সরকার এবং এলাকাবাসীর সহযোগিতায় কলেজটি পরিচালিত হয়। ২০০৩ সাল থেকে এ কলেজের উন্নয়নের জন্য শিক্ষকদের সরকারি বেতনের এক তৃতীয়াংশ টাকা দিয়ে কলেজ হোস্টেল চালু করে দিবা-রাত্রি শিক্ষার্থীদের পেছনে শ্রম দিয়ে শিক্ষকরা কলেজটিকে একটি সমৃদ্ধ প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেন। অভিযোগ রয়েছে, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও সরকারের একান্ত সহযোগিতায় দিনে দিনে প্রতিষ্ঠানটি গতি লাভ করার পর প্রতিষ্ঠাতা হাবিবুর রহমান মোল্লা প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে অনৈতিক প্রভাব বিস্তার শুরু করেন। শিক্ষকদের একটি অংশ এবং রাজনৈতিক ও এলাকার প্রভাবশারীদেরকে ম্যানেজ করে তিনি গত ১০ বছর যাবত সভাপতির পদটি আকড়ে রেখেছেন। তার বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্য, ভর্তি ফরম ফিলাপসহ কলেজের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকা-ের নামে কলেজের বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ করেছেন সাধারণ শিক্ষকরা। এ কলেজের উপাধ্যক্ষ সফিকুল ইসলামসহ কয়েকজন অভিভাবক প্রতিনিধিকে নিয়ে প্রতিষ্ঠাতা অলিখিত একটি সিন্ডিকেট গঠন করেন। ৩৬জন শিক্ষকের মাঝে প্রায় ৩০ জন শিক্ষক এ অবৈধ সিন্ডিকেটের অনিয়ম-দুর্নীতিসহ নানা কর্মকা-ের বিরোধীতা করে আসছেন।

ভূক্তভোগী শিক্ষকরা জানান, সভাপতি হাবিবুর রহমান ২০১২ থেকে ১৭ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত সকল শিক্ষক-কর্মচারীদের সরকারি বেতনের ১০% বর্তমান স্কেল দেখিয়ে ৬১ মাসের বেতন হিসাব করে প্রায় ৫৪ লাখ টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলনের জন্য স্বাক্ষর করতে শিক্ষকদেরকে চাপ প্রয়োগ করেন। কলেজের নতুন ভবনের বরাদ্ধ আনতে মন্ত্রী এমপি এবং সচিবালয়ে বিভিন্ন সচিবদেরকে সভাপতি ৫৪ লাখ ঘুষ দিয়েছেন বলে দাবি করেন। এ অর্থ কলেজের ফান্ড থেকে তাকে পরিশোধ করার জন্য অধিকাংশ শিক্ষক থেকে তিনি জোরপূর্বক স্বাক্ষর গ্রহণ করেন। প্রায় ১৫জন শিক্ষক ওই কাগজে স্বাক্ষর না করায় তাদেরকে নানাভাবে ভয়ভীতি এবং লাঞ্ছিত করা হয়। পরে এ নিয়ে শিক্ষকরা আন্দোলন করায় সভাপতির ভাই সাইদুর রহমানের নেতৃত্বে শিক্ষকদের উপর সন্ত্রাসী হামলা করা হয়। এ ছাড়াও সভাপতি হাবিবুর রহমান ড্রেজারের মাধ্যমে কলেজের জায়গা ভরাট করার জন্য কলেজের নিজস্ব জমি থেকে মাটি উত্তোলন করে ফা- থেকে ১৮ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। সভাপতি এবং উপাধ্যক্ষ মিলে ১৮ সালের ভর্তির টাকা থেকে সম্মানির নামে ৬৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন বলে অভিযোগ করা হয়। এ নিয়ে বিভিন্ন সময় প্রতিবাদ করায় বেশ কিছু শিক্ষক সভাপতির হাতে লাঞ্ছিত হন। এরপর থেকে তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলার সাহস করেনি। এতে বেপরোয়া হয়ে উঠেন ওই প্রতিষ্ঠাতা।

ভূক্তভোগী শিক্ষকরা আরো জানান, উপাধ্যক্ষ সফিকুল ইসলাম অধ্যক্ষ পদটি বাগিয়ে নিতে সভাপতিকে সকল অনিয়ম দুর্নীতি করতে সহায়তা করে আসছেন। সম্প্রতি এসব অনিয়ম দুর্নীতি নিয়ে প্রতিবাদ করায় কোন প্রকার শোকজ নোটিশ না করেই এবং আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে গত ২৩ মার্চ গভীর রাতে ৩জন শিক্ষক ও দুয়েকজন অভিভাবক নিয়ে বৈঠক দেখিয়ে কলেজের অধ্যক্ষ নারগিস আক্তার চৌধুরীকে বরখাস্ত করেন এবং উপাধ্যক্ষ সফিকুল ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব প্রদান করেন। পরদিন সকালে অধ্যক্ষের কুমিল্লাস্থ বাসায় বরখাস্তের চিঠি পৌঁছে দেন। এ নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ এলাকার সর্বস্তরের লোকজনের মাঝে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। সভাপতি ও উপাধ্যক্ষের এসব অনিয়ম দুর্নীতি ও অনৈতিক প্রভাব বিস্তারের তদন্ত দাবি করে ওই কলেজের ভূক্তভোগী শিক্ষকরা দুর্নীতি দমন কমিশন, জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়, মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাসহ ৭টি দফতরে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন।

অধ্যক্ষ নারগিস আক্তার চৌধুরী বলেন, সভাপতির অনিয়ম-দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাতসহ অনৈতিক প্রভাব বিস্তার ও নানা অবৈধ কর্মকা-ের বিষয়ে প্রতিবাদ করায় আমাকে সম্পূর্ণ বিধি বহির্ভূতভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। তিনি বলেন, উপাধ্যক্ষ সফিকুল ইসলাম অধ্যক্ষের পদটি লুফে নিতে দীর্ঘদিন যাবত সভাপতির সাথে মিলে ষড়যন্ত্র করে আসছে।

উপাধ্যক্ষ সফিকুল ইসলাম বলেন, আমি কোন সিন্ডিকেট কিংবা অনিয়মের সাথে জড়িত না, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বার্থেই সকল কাজ করি। সভাপতিসহ অভিভাবক প্রতিনিধিরা আমাকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব প্রদান করেছে। কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী আমি কাজ করছি।

সভাপতি হাবিবুর রহমান বলেন, আমি কোন অনিয়ম-দুর্নীতির সাথে জড়িত নই। আমার বিরুদ্ধে কতিপয় শিক্ষক মিথ্যা অভিযোগ দাখিল করেছে। আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে অধ্যক্ষ নারগিস আক্তার চৌধুরীকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিতু মরিয়ম বলেন, কারণ দর্শানো ছাড়া একজন অধ্যক্ষকে এভাবে বরখাস্ত করা যায় না। এ বিষয়ে অধ্যক্ষ এবং সাধারণ শিক্ষকরা আমার কাছে পৃথক অভিযোগ দাখিল করেছেন। আমি তদন্ত কমিটি গঠন করবো এবং সভাপতি যদি কোন অনিয়মে জড়িত থাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবো।