ঢাকা ০৮:০০ অপরাহ্ন, সোমবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ২২ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মুরাদনগরে কিছুতেই ঠেকানো যাচ্ছে না নকল:পাসের সংখ্যা বাড়াতে নকলের দিকে ঝুকছেন শিক্ষকরা!

মো: নাজিম উদ্দিনঃ

কথায় আছে সর্ষে দিয়ে ভূত তাড়ানো হয় কিন্তু সেই সর্ষের ভেতরেই যদি ভূত থাকে তাহলে ভূত তাড়াবে কে। তেমনি এক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে কুমিল্লা মুরাদনর উপজেলার চলমান জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষায়। শিক্ষক হলো মানুষ গড়ার কারিগর আর সেই মানুষ গড়ার কারিগররাই যখন শিক্ষার্থীদের হাতে নকল তুলে দিচ্ছেন তখন সাধারন মানুষের নির্বিকার চেয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না। বিদ্যালয়ের পাসের হার বাড়াতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের হাতে নকল তুলে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে কেন্দ্রে দায়িত্ব প্রাপ্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে। আর এ কারনেই কিছুতেই লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছেনা নকলের। নকল রোধে  উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রাসেলুল কাদেরের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা গ্রহন করা হলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা অপ্রতুল।

জানা যায়, মুরাদনগর উপজেলায় ১৭টি পরীক্ষা কেন্দ্রের মধ্যে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ১২টি,  জেডিসি ৪টি ও ভোকেশনাল ১টি কেন্দ্রে পরীক্ষা  অনুষ্ঠিত হচ্ছে। উল্লেখিত পরীক্ষা কেন্দ্র গুলোতে পরীক্ষার প্রথম দিন থেকেই শিক্ষার্থীরা দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকদের একংশ শিক্ষকদের সহযোগিতায় প্রকাশ্যে নকল করলেও শিক্ষকদের অন্য একংশ থাকেন দর্শকের ভূমিকায়।

উপজেলার বেশ কয়েকটি পরীক্ষা কেন্দ্রে সরেজমিন অনুন্ধানে ধরা পড়েছে এমন চিত্র। বিশেষ করে উপজেলা সদরের ডিআর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, নুরুন্নাহার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, কোম্পানীগঞ্জ বদিউল আলম ডিগ্রি কলেজ, দারোরা দ্বিনেশ চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়, নবীয়াবাদ ওয়াদুদ সরকার ফাজিল মাদ্রাসা, রামচন্দ্রপুর আকাব্বরের নেছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, সোনাকান্দা দারুলহুদা ফাজিল মাদ্রাসা, চাপিতলা ফরিদউদ্দিন ডিগ্রি কলেজসহ বেশ কয়েকটি কেন্দ্র ও ভেন্যূতে নকলের প্রবণতা ভয়াবহ। বাইরে থেকে দেখলে মনে হবে খুব শান্তিপূর্ন ভাবে পরীক্ষা চলছে কিন্তু ভেতরে ডুকতেই চোখে পড়ে ভিন্ন চিত্র। শিক্ষকরাই বাহির থেকে নকলের কপি সংগ্রহ করে নিয়ে তুলে দিচ্ছেন শিক্ষার্থীদের হাতে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থীর সাথে পরীক্ষার পূর্বে কথা বললে সে জানায় আজ তার কি পরীক্ষা তার জানা নেই। তাহলে উত্তর পত্রে কি লিখবে জানতে চাইলে সে বলে স্যাররা রয়েছেন তারাই সব ম্যানেজ করে দেবেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেন্দ্র দায়িত্ব প্রাপ্ত শিক্ষকের সাথে আরাপচালিতায় তিনি জানান, বিদ্যালয়ের পাশের হার বৃদ্ধি করার জন্য শিক্ষকরাই নকল তুলে দিচ্ছেন শিক্ষার্থীদের হাতে। তিনি আরো জানান, এক কেন্দ্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকরা অন্য কেন্দ্রে তাদের বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের সহযোগিতা করবে বিনিময়ে তারা ঐবিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের সহযোগিতা করবে এমন মৌখিক চুক্তিও তাদের মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রতন কুমার সাহা বলেন, কোন বিদ্যালয় পর পর তিনবার যদি পাশের হাড় শূর্ণ থাকে তাহলে তার এমপিও বাতিল হওয়ার বিধান রয়েছে। সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের নকলের কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য পত্র দেওয়া হয়েছে। অভিযোগতদের বিরুদ্ধে সাথে সাথেই প্রয়োজনিয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রাসেলুল কাদের বলেন, কয়েকটি পরীক্ষা কেন্দ্রে নকল হয়েছে আমরা সেখানে নকলে অপরাধে শিক্ষার্থীদের বহিস্কার করেছি নকলে সহযোগিতার কারনে শিক্ষকদেরকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতিসহ ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করেছি। নকল প্রতিরোধে আমরা ভিজিল্যান্স টিম গঠন করেছি। এখন নকলে আর কোন সুযোগ নেই। তিনি আরো জানান, পরীক্ষা শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত দায়িত্বে অবহেলায় এক জন কেন্দ্র সচিবসহ ১৩ জন শিক্ষককে  বহিষ্কারসহ দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। আর নকল করা অভিযোগে ৭ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়ছে। এর মধ্যে নকলে সহযোগিতার অভিযোগে ৫ শিক্ষককে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে ৮০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

ট্যাগস

মুরাদনগরে কিছুতেই ঠেকানো যাচ্ছে না নকল:পাসের সংখ্যা বাড়াতে নকলের দিকে ঝুকছেন শিক্ষকরা!

আপডেট সময় ০১:৫৮:৫০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১১ নভেম্বর ২০১৬
মো: নাজিম উদ্দিনঃ

কথায় আছে সর্ষে দিয়ে ভূত তাড়ানো হয় কিন্তু সেই সর্ষের ভেতরেই যদি ভূত থাকে তাহলে ভূত তাড়াবে কে। তেমনি এক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে কুমিল্লা মুরাদনর উপজেলার চলমান জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষায়। শিক্ষক হলো মানুষ গড়ার কারিগর আর সেই মানুষ গড়ার কারিগররাই যখন শিক্ষার্থীদের হাতে নকল তুলে দিচ্ছেন তখন সাধারন মানুষের নির্বিকার চেয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না। বিদ্যালয়ের পাসের হার বাড়াতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের হাতে নকল তুলে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে কেন্দ্রে দায়িত্ব প্রাপ্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে। আর এ কারনেই কিছুতেই লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছেনা নকলের। নকল রোধে  উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রাসেলুল কাদেরের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা গ্রহন করা হলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা অপ্রতুল।

জানা যায়, মুরাদনগর উপজেলায় ১৭টি পরীক্ষা কেন্দ্রের মধ্যে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ১২টি,  জেডিসি ৪টি ও ভোকেশনাল ১টি কেন্দ্রে পরীক্ষা  অনুষ্ঠিত হচ্ছে। উল্লেখিত পরীক্ষা কেন্দ্র গুলোতে পরীক্ষার প্রথম দিন থেকেই শিক্ষার্থীরা দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকদের একংশ শিক্ষকদের সহযোগিতায় প্রকাশ্যে নকল করলেও শিক্ষকদের অন্য একংশ থাকেন দর্শকের ভূমিকায়।

উপজেলার বেশ কয়েকটি পরীক্ষা কেন্দ্রে সরেজমিন অনুন্ধানে ধরা পড়েছে এমন চিত্র। বিশেষ করে উপজেলা সদরের ডিআর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, নুরুন্নাহার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, কোম্পানীগঞ্জ বদিউল আলম ডিগ্রি কলেজ, দারোরা দ্বিনেশ চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়, নবীয়াবাদ ওয়াদুদ সরকার ফাজিল মাদ্রাসা, রামচন্দ্রপুর আকাব্বরের নেছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, সোনাকান্দা দারুলহুদা ফাজিল মাদ্রাসা, চাপিতলা ফরিদউদ্দিন ডিগ্রি কলেজসহ বেশ কয়েকটি কেন্দ্র ও ভেন্যূতে নকলের প্রবণতা ভয়াবহ। বাইরে থেকে দেখলে মনে হবে খুব শান্তিপূর্ন ভাবে পরীক্ষা চলছে কিন্তু ভেতরে ডুকতেই চোখে পড়ে ভিন্ন চিত্র। শিক্ষকরাই বাহির থেকে নকলের কপি সংগ্রহ করে নিয়ে তুলে দিচ্ছেন শিক্ষার্থীদের হাতে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থীর সাথে পরীক্ষার পূর্বে কথা বললে সে জানায় আজ তার কি পরীক্ষা তার জানা নেই। তাহলে উত্তর পত্রে কি লিখবে জানতে চাইলে সে বলে স্যাররা রয়েছেন তারাই সব ম্যানেজ করে দেবেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেন্দ্র দায়িত্ব প্রাপ্ত শিক্ষকের সাথে আরাপচালিতায় তিনি জানান, বিদ্যালয়ের পাশের হার বৃদ্ধি করার জন্য শিক্ষকরাই নকল তুলে দিচ্ছেন শিক্ষার্থীদের হাতে। তিনি আরো জানান, এক কেন্দ্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকরা অন্য কেন্দ্রে তাদের বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের সহযোগিতা করবে বিনিময়ে তারা ঐবিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের সহযোগিতা করবে এমন মৌখিক চুক্তিও তাদের মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রতন কুমার সাহা বলেন, কোন বিদ্যালয় পর পর তিনবার যদি পাশের হাড় শূর্ণ থাকে তাহলে তার এমপিও বাতিল হওয়ার বিধান রয়েছে। সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের নকলের কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য পত্র দেওয়া হয়েছে। অভিযোগতদের বিরুদ্ধে সাথে সাথেই প্রয়োজনিয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রাসেলুল কাদের বলেন, কয়েকটি পরীক্ষা কেন্দ্রে নকল হয়েছে আমরা সেখানে নকলে অপরাধে শিক্ষার্থীদের বহিস্কার করেছি নকলে সহযোগিতার কারনে শিক্ষকদেরকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতিসহ ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করেছি। নকল প্রতিরোধে আমরা ভিজিল্যান্স টিম গঠন করেছি। এখন নকলে আর কোন সুযোগ নেই। তিনি আরো জানান, পরীক্ষা শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত দায়িত্বে অবহেলায় এক জন কেন্দ্র সচিবসহ ১৩ জন শিক্ষককে  বহিষ্কারসহ দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। আর নকল করা অভিযোগে ৭ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়ছে। এর মধ্যে নকলে সহযোগিতার অভিযোগে ৫ শিক্ষককে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে ৮০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।