মো: মোশাররফ হোসেন মনিরঃ
০৯ এপ্রিল ২০১৫ ইং (মুদনগর বার্তা ডটকম)ঃ
প্রাকৃতিক জলাধার আইন লংঙ্গন করে কুমিল্লার মুরাদনগরে গোমতী নদীতে ভরাটের মাধ্যমে মাছ চাষের জন্য বাঁধ তৈরীর কাজ অবিরত চলছে।
গোমতী নদীর উভয় বাঁধ পূর্নবাসন ও শক্তিশালীকরন (সংশোধিত) শীর্ষক প্রকল্পে একনেক থেকে দেয়া অনুমোদনে ৩৪টি নালা ভরাটের জন্য ১ কোটি ৪৮ লাখ ৭০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হলেও ওই অর্থ দিয়ে এখন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সাথে স্থানীয় একটি মহলের যোগসাজশে ওই স্থানে নদীর উভয় পাশে বাধ তৈরী করে মাছ চাষের চেষ্টা চলছে বলে স্থানীয় একাধিক সূত্রে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে ওই স্থানে গোমতী নদী বিলীন হয়ে যাওয়ার আশংকা করছেন এলাকাবাসী।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, একনেকের বৈঠকে গোমতী নদীর উভয় তীরে বাঁধ পূনবাসন ও শক্তিশালীকরন প্রকল্পের আওতায় ৬৭ কোটি ৮০ লক্ষ ৫২ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। ওই নির্দেশনা অনুযায়ী পানি সম্পদ মন্ত্রনালয় থেকে প্রকল্পটি অনুমোদনের পর মুরাদনগর এলাকায় গোমতী নদীর গতিপথ সোজাকরনের নামে উপজেলার রহিমপুর মৌজার ২ হেক্টর ও নোয়াকান্দির ০.৪২ হেক্টর ফসলি জমি অধিগ্রহন করার উদ্যোগ নেয় জেলা প্রশাসন। ভূমি অধিগ্রহনের জন্য ১০ কোটি ৩৮ লাখ এবং ৩৮৭ মিটার লোপ কাটিং কাজের জন্য ১ কোটি ৫৩ লক্ষ ৫৯ হাজার টাকা অনুমোদন দেয়া হয়। এতে উপজেলা সদর, থানা, বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হুমকির মুখে পড়েছে।
স্থানীয়রা জানান, এ প্রকল্পের পাউবোর পূর্বেকার অধিগ্রহনকৃত স্থান দিয়ে লোপকাটিং না করে অপরিকল্পিত প্রস্তাবিত স্থান দিয়ে দ্বিগুন অর্থে ফসলি জমি অধিগ্রহন ও লোপকাটিং নামে সরকারী অর্থের অপচয় করা হচ্ছে। নদীর চলমান পানি প্রবাহের মাঝে দু’পাশ ভরাটের মাধ্যমে বাঁধ তৈরী করে মাছ চাষ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
পার্শ্ববর্তী ভূবনগর মৌজা দিয়ে লোপকাটিং করা হলে সরকারের প্রচুর অর্থ সাশ্রয়ের পাশাপাশি উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান হুমকির মুখে পড়ার আশংকা থেকে রক্ষা পেত। স্থানীয়দের প্রতিবাদের মুখে দীর্ঘদিন লোপকাটিংয়ের কাজ বন্ধ থাকলেও গত প্রায় একমাস যাবত লোপকাটিংয়ের কাজ শুরু হয়।এদিকে পাউবো ৩৪টি নালা ভরাটের জন্য অর্থ বরাদ্দ হলেও, নালা ভরাটের জন্য বরাদ্দ করা অর্থ দিয়ে স্থানীয় একটি মহলের যোগসাজশে বর্তমানে গোমতী নদী ভরাটের কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে করে নদীর পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে নদীটি বিলীন ও নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষন আইন-১৯৯৫ ও ২০১০ (সংশোধিত) জলাধার আইনের ৬ এর ”ঙ” ধারায় উল্লেখ রয়েছে, ”আপাতত: বলবৎ আইন অন্য কোন আইনে যাহা কিছুই থাকুকনা কেন, জলাধার হিসাবে চিহ্নিত জায়গা ভরাট বা অন্য কোনভাবে শ্রেনী পরিবর্তন করা যাবে না।
এ আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র গ্রহন না করে মূল নদীর পথে বাঁধ দিয়ে ভরাটের কাজ দ্রুতগতিতে জালিয়ে যাচ্ছে। অপরিকল্পিতভাবে লোপকাটিং করে নদীর তীরে পাকা ব্লক দেয়ার জন্য নতুন নতুন প্রকল্প দিয়ে সরকারী অর্থের অপচয় ও আত্মসাতের পাঁয়তারাই করছে।
এ ব্যপারে কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিবার্হী প্রকৌশলী সাইফুল্লাহ্ জানান, নিয়ম মেনেই নদীর উভয় তীরের বাঁধ পূনর্বাসন ও শক্তিশালী করনের কাজ চলছে।