এম কে আই জাবেদ / শামীম আহম্মেদ:
কুমিল্লার মুরাদনগরে খাদ্যবান্ধব চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগে দারোরা ইউনিয়নের ডিলার ও ইউনিয়ন ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি নুরুজ্জামান সরকারকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমান আদালত। একই সাথে ওই ডিলারশীপ বাতিলসহ ইউনিয়ন ট্যাগ অফিসার ও উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা কবির আহম্মেদকে ঐ ইউনিয়ন থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার বিকেলে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অভিষেক দাশ ওই জরিমানা করেন।
১০ টাকা কেজি খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল বিতরণে নানান অনিয়ম ও ১২ বস্তা চাল আত্মসাত করার খবর নিয়ে এলাকায় কানাঘোষা চলছে, এমন খবরে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য মুঠোফোনে ইউনিয়ন ট্যাগ অফিসার ও উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্র্তা কবির আহম্মেদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি নিজে উপস্থিত থেকে গত বৃহস্পতিবার বিতরণ শেষ করেছি। বিষয়টি আরো নিশ্চিত হওয়ার জন্য খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলার এবং ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি নুরুজ্জামান সরকারের মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনিও বলেন, চাল বিতরণ শেষ হয়ে গেছে।
মঙ্গলবার বেলা ১১টায় দারোরা ইউনিয়নের কাজিয়াতল হাসান মার্কেট এলাকায় ওই ডিলারের দোকানে গিয়ে ১২ বস্তা চাল পাওয়া যায়। সাংবাদিকের উপস্থিতি টের পেয়ে ডিলার নুরুজ্জামান তরিঘরি করে একজন মহিলা ও ৪ সুবিধা ভোগীর কার্ড নিয়ে এসে গুজামিল দিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করে।
বিষয়টি মুঠোফোনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানালে তিনি সহকারী কমিশনার (ভূমি) কে সাথে নিয়ে ঘটনাস্থলে আসেন। ওই দুই কর্মকর্তা ডিলারের মাস্টাররোল পর্যালোচনা করে বিভিন্ন অনিয়ম পরিলক্ষিত হয়। তখন তালিকা ধরে সুবিধা ভোগি ৯নং ওয়ার্ডের আব্দুল রহিমের স্ত্রী সাহেনা ও আব্দুল বারেকের স্ত্রী আনোয়ারা বেগমের বাড়িতে গিয়ে তাদের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, ৩০ কেজি চালের বস্তা থাকা সত্বেও ৩’শ টাকার বিনিময়ে আমাদেরকে পরিমাপ না করেই খোলা চাল দিয়েছে। পরক্ষণে একই ওয়ার্ডের মোস্তাফার স্ত্রী পারুল বেগমের বাড়িতে গিয়ে চাল পাওয়ার সত্যতা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি চাল দেওয়ার খবর জানি না। আমাকে কেউ বলেনি।
পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অভিষেক দাশ ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইফুল ইসলাম কমল পুনরায় ডিলারের দোকানের সামনে এসে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করেন। তখন চালের ডিলার নুরুজ্জামান সরকার প্রতি কার্ডধারীকে ৩০ কেজির এক বস্তা চাল দেওয়ার কথা থাকলেও সে খোলা চাল বিতরণ করার বিষয়টি স্বীকার করেন। এর পরিপেক্ষিতে কাজিয়াতল গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে ডিলার নুরুজ্জামান সরকারকে নগদ ৪০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ১৫ দিনের সশ্রম কারাদন্ড দেন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অভিষেক দাশ।
বিষয়টির ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অভিষেক দাশ বলেন, খাদ্যবান্ধব চাল বিতরণে অনিয়মের সত্যতা পাওয়ায় নুরুজ্জামান সরকারের ডিলারশীপ বাতিল করা হয়েছে। পাশাপাশি ওই ইউনিয়নের ট্যাগ অফিসার ও উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্র্তা কবির আহম্মেদকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।