ঢাকা ০৬:৩৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মুরাদনগর পরিবার পরিকল্পনা অফিসে ভূয়া প্রতিবেদনের মাধ্যমে লুটপাট

বেলার উদ্দিন আহম্মদ, বিশেষ প্রতিনিধিঃ

কুমিল্লা মুরাদনগর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসে ভুয়া পদ্ধতি গ্রহণকারী দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তা ছাড়া দিনের পর দিন অফিসে না এসেও ওই অফিসের কেউ কেউ হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর দিয়ে বেতন নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।

স্থানীয় সূত্র ও তথ্য অনুসন্ধান করে জানা যায়, মুরাদনগর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগে ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০১৭ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত সাত মাসে ভুয়া পদ্ধতি গ্রহণকারী দেখিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা লুটপাট করা হয়েছে। তিন বছর মেয়াদি জন্মনিয়ন্ত্রণে ইমপ্লান্ট পদ্ধতি গ্রহীতার তথ্যে ব্যাপক গরমিল পাওয়া গেছে। পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের মেডিক্যাল অফিসার ডা. সোহেল হাবিব গত জুলাই থেকে এ বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত তাঁর ইমপ্লান্ট গ্রহীতা এক হাজার সাতজন উল্লেখ করে জেলা অফিসে প্রতিবেদন দিয়েছেন। তবে উপজেলার ২২টি ইউনিয়নের পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শকদের (এফপিআই) প্রতিবেদন অনুযায়ী এর সংখ্যা ৭৯৫ জন। এর মধ্যে তথ্যের গরমিল ২১২ জন। তথ্যমতে, একটি ইমপ্লান্ট গ্রহিতার ক্ষেত্রে সরকারের ব্যয় হয় কমপক্ষে ৫৪০ টাকা। সে হিসাবে এ ক্ষেত্রে এক লাখ ১৪ হাজার ৪৮০ টাকা লুটপাট করা হয়েছে। ইমপ্লেন্ট পদ্ধতি গ্রহিতাদের প্রতিবেদনের ক্ষেত্রেও অনুরুপ অভিযোগ রয়েছে। জুলাই ২০১৬ থেকে ফেব্রুয়ারি ২০১৭ আট মাসের প্রতিবেদনে বিস্তর ফারাক রয়েছে। পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকাদের প্রতিবেদনে ৫৩৫ জনের উল্লেখ থাকলেও বিতরণ দেখানো হয়েছে ৭৯৭টি। এ ক্ষেত্রে বেশির ভাগ অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে সদর ক্লিনিকের পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা হাস্নেয়ারা বেগমের বিরুদ্ধে। এ ক্ষেত্রেও ২৬২টি ইনপ্লান্ট কপার্টির লক্ষাধিক টাকা লুটপাট করা হয়েছে।

উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসের সদর ক্লিনিকে সরকারি বিধি মোতাবেক একজন মেডিক্যাল অফিসার ইমপ্লান্ট পদ্ধতি গ্রহণকারীকে পরিয়ে দেওয়ার কথা। সে অনুযায়ী অর্ধলক্ষাধিক টাকা বেতনে মেডিক্যাল অফিসার হিসেবে ডা. সোহেল হাবিবকে মুরাদনগর পরিবার পরিবার পরিকল্পনা অফিসের সদর ক্লিনিকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ডা. সোহেল হাবিব গত জুলাই থেকে এ বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মাত্র ২১ দিন অফিস করেছেন। তাঁর অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে বিধিবহির্ভূতভাবে গ্রহীতাদের ইমপ্লান্ট বা কপার্টি পরিয়ে দিচ্ছেন মুরাদনগর সদর ক্লিনিকের পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা হাস্নেয়ারা বেগম ও ফারজানা বেগম। হাস্নেয়ারা বেগমের বাসা কুমিল্লায় নগরিতে হওয়ায় তিনি নিয়মিত অফিস করছেনা বলে অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে অফিসের অনেকের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। সরকারের সেবা বিভাগ হিসেবে সদর ক্লিনিক শনিবার খোলা থাকলেও ডা. সোহেল হাবিব ও ভিজিটর হাস্নেয়ারা বেগম আসেন না।

মুরাদনগর সদর ক্লিনিকের পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা হাস্নেয়ারা বেগম বলেন, ‘ডাক্তারের অনুপস্থিতিতে আমি ও ফারজানা কাজ করি। পদ্ধতি গ্রহণকারীরা যদি ভুল তথ্য দেয়, তাহলে আমাদের করার কিছু নেই। ’

মুরাদনগর পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের মেডিক্যাল অফিসার ডা. সোহেল হাবিবের কাছে প্রতিবেদনের গরমিল সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সাংবাদিকদের এ বিষয়ে মাথা ঘামানোর কোনো প্রয়োজন নেই। আমি জেলা অফিসারের কাছে সব প্রতিবেদন দিয়ে দিয়েছি। ’ গত আট মাসে আপনি মাত্র ২১ দিন অফিসে হাজির হয়েছেন, বিষয়টি তুলতেই ডা. সোহেল বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি সাংবাদিকের কাছে বলতে বাধ্য নই। যা বলার ডিডিকে বলুন, তিনি সব কিছু জানেন। ’

এ বিষযে মুরাদনগর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, তিনি গত মাসে এখানে যোগদান করেছেন। বিষয়টি তিনি জানার চেষ্টা করছেন।

জেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপপরিচালক মাহবুবুল করিম বলেন, বিষয়টি তদন্তের জন্য শিগগিরই কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত শেষে অভিযোগ প্রমাণিত হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

শিক্ষার্থীদের উপর হামলার প্রতিবাদে মুরাদনগরে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ

মুরাদনগর পরিবার পরিকল্পনা অফিসে ভূয়া প্রতিবেদনের মাধ্যমে লুটপাট

আপডেট সময় ০৩:৪৫:৪৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ এপ্রিল ২০১৭
বেলার উদ্দিন আহম্মদ, বিশেষ প্রতিনিধিঃ

কুমিল্লা মুরাদনগর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসে ভুয়া পদ্ধতি গ্রহণকারী দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তা ছাড়া দিনের পর দিন অফিসে না এসেও ওই অফিসের কেউ কেউ হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর দিয়ে বেতন নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।

স্থানীয় সূত্র ও তথ্য অনুসন্ধান করে জানা যায়, মুরাদনগর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগে ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০১৭ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত সাত মাসে ভুয়া পদ্ধতি গ্রহণকারী দেখিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা লুটপাট করা হয়েছে। তিন বছর মেয়াদি জন্মনিয়ন্ত্রণে ইমপ্লান্ট পদ্ধতি গ্রহীতার তথ্যে ব্যাপক গরমিল পাওয়া গেছে। পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের মেডিক্যাল অফিসার ডা. সোহেল হাবিব গত জুলাই থেকে এ বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত তাঁর ইমপ্লান্ট গ্রহীতা এক হাজার সাতজন উল্লেখ করে জেলা অফিসে প্রতিবেদন দিয়েছেন। তবে উপজেলার ২২টি ইউনিয়নের পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শকদের (এফপিআই) প্রতিবেদন অনুযায়ী এর সংখ্যা ৭৯৫ জন। এর মধ্যে তথ্যের গরমিল ২১২ জন। তথ্যমতে, একটি ইমপ্লান্ট গ্রহিতার ক্ষেত্রে সরকারের ব্যয় হয় কমপক্ষে ৫৪০ টাকা। সে হিসাবে এ ক্ষেত্রে এক লাখ ১৪ হাজার ৪৮০ টাকা লুটপাট করা হয়েছে। ইমপ্লেন্ট পদ্ধতি গ্রহিতাদের প্রতিবেদনের ক্ষেত্রেও অনুরুপ অভিযোগ রয়েছে। জুলাই ২০১৬ থেকে ফেব্রুয়ারি ২০১৭ আট মাসের প্রতিবেদনে বিস্তর ফারাক রয়েছে। পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকাদের প্রতিবেদনে ৫৩৫ জনের উল্লেখ থাকলেও বিতরণ দেখানো হয়েছে ৭৯৭টি। এ ক্ষেত্রে বেশির ভাগ অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে সদর ক্লিনিকের পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা হাস্নেয়ারা বেগমের বিরুদ্ধে। এ ক্ষেত্রেও ২৬২টি ইনপ্লান্ট কপার্টির লক্ষাধিক টাকা লুটপাট করা হয়েছে।

উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসের সদর ক্লিনিকে সরকারি বিধি মোতাবেক একজন মেডিক্যাল অফিসার ইমপ্লান্ট পদ্ধতি গ্রহণকারীকে পরিয়ে দেওয়ার কথা। সে অনুযায়ী অর্ধলক্ষাধিক টাকা বেতনে মেডিক্যাল অফিসার হিসেবে ডা. সোহেল হাবিবকে মুরাদনগর পরিবার পরিবার পরিকল্পনা অফিসের সদর ক্লিনিকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ডা. সোহেল হাবিব গত জুলাই থেকে এ বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মাত্র ২১ দিন অফিস করেছেন। তাঁর অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে বিধিবহির্ভূতভাবে গ্রহীতাদের ইমপ্লান্ট বা কপার্টি পরিয়ে দিচ্ছেন মুরাদনগর সদর ক্লিনিকের পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা হাস্নেয়ারা বেগম ও ফারজানা বেগম। হাস্নেয়ারা বেগমের বাসা কুমিল্লায় নগরিতে হওয়ায় তিনি নিয়মিত অফিস করছেনা বলে অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে অফিসের অনেকের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। সরকারের সেবা বিভাগ হিসেবে সদর ক্লিনিক শনিবার খোলা থাকলেও ডা. সোহেল হাবিব ও ভিজিটর হাস্নেয়ারা বেগম আসেন না।

মুরাদনগর সদর ক্লিনিকের পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা হাস্নেয়ারা বেগম বলেন, ‘ডাক্তারের অনুপস্থিতিতে আমি ও ফারজানা কাজ করি। পদ্ধতি গ্রহণকারীরা যদি ভুল তথ্য দেয়, তাহলে আমাদের করার কিছু নেই। ’

মুরাদনগর পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের মেডিক্যাল অফিসার ডা. সোহেল হাবিবের কাছে প্রতিবেদনের গরমিল সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সাংবাদিকদের এ বিষয়ে মাথা ঘামানোর কোনো প্রয়োজন নেই। আমি জেলা অফিসারের কাছে সব প্রতিবেদন দিয়ে দিয়েছি। ’ গত আট মাসে আপনি মাত্র ২১ দিন অফিসে হাজির হয়েছেন, বিষয়টি তুলতেই ডা. সোহেল বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি সাংবাদিকের কাছে বলতে বাধ্য নই। যা বলার ডিডিকে বলুন, তিনি সব কিছু জানেন। ’

এ বিষযে মুরাদনগর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, তিনি গত মাসে এখানে যোগদান করেছেন। বিষয়টি তিনি জানার চেষ্টা করছেন।

জেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপপরিচালক মাহবুবুল করিম বলেন, বিষয়টি তদন্তের জন্য শিগগিরই কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত শেষে অভিযোগ প্রমাণিত হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।