ঢাকা ০৫:২৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মোবাইলে কল করলে খুলবে দরজা-জানালা

 

০৯ ডিসেম্বর (মুরাদনগর বার্তা ডটকম ডেস্ক):

পুরো বিশ্ব এখন একটা গ্রামে পরিণত হয়েছে। ডিজিটাল যুগ নিরাপত্তার আরও একধাপ এগিয়ে এবার মোবাইলে কল দিয়েই ঘরের জানালা-দরজা খোলা যাবে। আধুনিক প্রযুক্তির যুগে মোবাইল ফোনের নানামুখী ব্যবহারের সঙ্গে যোগ হলো ঘরের জানালা-দরজা খোলা ও বন্ধ করার বিষয়টিও। যে কোনো স্থান থেকে মোবাইল ফোনে কল করে তা পরিচালনা করা যাবে।

অভাব অনটনের সংসারে কৃষক ঘরে জন্ম মেধাবী কলেজ ছাত্র মো. হুজাইফা খান সম্রাট (১৭)। বগুড়ার ধুনট উপজেলার চৌকিবাড়ী ইউনিয়নের বহালগাছা গ্রামের খয়রুজ্জামান খানের ছেলে। মা রেখা খাতুন। দুই ভাইয়ের মধ্যে সম্রাট ছোট। পার্শ্ববর্তী সিরাজগঞ্জ জেলার কাজিপুর উপজেলার সোনামুখী কওমী মাদ্রাসা থেকে সম্রাটের শিক্ষা জীবন শুরু। এরপর বাড়ির পাশে খান বাহাদুর দাখিল মাদ্রাসা থেকে ২০১২ সালে দাখিল পাশ করেন। বর্তমানে ধুনট উপজেলার নৎরতপুর হাজী কাজেম-জোবেদা টেকনিক্যাল অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট কলেজে একাদশ শ্রেণিতে পড়ছেন তিনি। লেখাপড়ার পাশাপাশি ধুনটে বিশ্ব হরিগাছা বাজারে সরকার মার্কেটে নিজের দোকানে মোবাইল সার্ভিসিং এর কাজ করেন। আর সে আয় থেকে পড়ালেখার খরচ যোগান সম্রাট। ছোট বেলা থেকেই স্বপ্ন ছিলো কিছু আবিষ্কারের। বয়স ১১ বছর না যেতে না যেতেই ইলেকট্রিক মিস্ত্রি হিসেবে মানুষের বাসা-বাড়িতে কাজ শুরু করেন।

তার ওস্তাদ তিনি নিজেই। একই ভাবে অন্যের দেখে আয়ত্ব করে ফেলেন মোবাইল সার্ভিসিংয়ের কাজ। কাজের ধারাবাহিকতায় আবিষ্কারের চিন্তায় দুই বছর আগে স্বপ্ন দেখেন মোবাইল ফোনের নেটওর্য়াকের মাধ্যমে নতুন কিছু করার। ভাবনার জগতে ডুবে যান সম্রাট, মাথায় আসে রিমোট কন্ট্রোলের মতো মোবাইল ফোন ব্যবহার করা যায় কি-না। যেই ভাবনা সেই কাজ। মোবাইল ফোনের ব্যবহার করে ঘরের জানালা-দরজা খোলা ও বন্ধ করার পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন তিনি। নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটারের সাহায্যে নতুন একটি সফটওয়্যার আবিষ্কার করে তা মোবাইলে ইনস্টল করে সফল হন তিনি।

পরীক্ষাম‍ূলক ভাবে সম্রাট দুইফুট দৈর্ঘ্য, একফুট প্রস্থ্য ও এক ফুট উচ্চতা সম্পন্ন একটি কাচের ঘর তৈরি করেন। সেই ঘরের দরজাও কাচের। মোবাইল ফোনে সিম লাগিয়ে ঘরের ভিতর দরজার সঙ্গে আটকানো হয়। সিমকার্ডে রয়েছে গোপন পিন কোড। নিজের মোবাইল থেকে দরজায় লাগানো মোবাইল নম্বরে পিনকোড ব্যবহার করে কল দিলে সহজেই খুলে যায় দরজার পাল্লা। আবার প্রয়োজন অনুযায়ী কল করলে একই পদ্ধতিতে তা বন্ধ হয়ে যায়। দরজা খুলতে বা বন্ধ হতে সময় লাগে মাত্র ৩০ সেকেন্ড। তবে পদ্ধতি সচল রাখতে সার্বক্ষণিক বিদ্যুত সংযোগ থাকা আবশ্যক। এ পদ্ধতি আবিষ্কার করতে তার প্রায় ৬ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। যেকোনো ঘরে কাঠ, স্টিল, কাচ কিংবা অন্যান্য সামগ্রীর তৈরি দরজায় এই পদ্ধতি ব্যবহার করা যাবে। এদিকে সম্রাটের কাজ দেখতে প্রতিদিন তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হাজারো কৌত‍ূহলী মানুষ ভিড় করছেন।

হুজাইফা খান সম্রাট জানান, এই আবিষ্কারের পেছনে অন্য কারো সহযোগিতা নেই। কাউকে অনুকরণ কিংবা অনুসরন করেও নয়, বরং নিজের চেষ্টায় আল্লাহ তাকে এই সফলতা দিয়েছেন। সম্রাট বলেন, ঘরে দরজা ব্যবহারযোগ্য করে তৈরি করতে ব্যয় হবে প্রায় ১ লাখ টাকা। অধিক চিন্তা-ভাবনার মাধ্যমে এই ব্যয় কমানো সম্ভব। তবে আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে তা দেখতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে। ভবিষ্যতে বাণিজ্যিকভাবে এই পদ্ধতি বাজারজাত করার পরিকল্পনা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে সরকারি সহযোগিতা প্রয়োজন।

ট্যাগস
জনপ্রিয় সংবাদ

দীর্ঘ ১৩ বছর পর দেশে ফিরছেন কায়কোবাদ: স্বাগত জানাতে মুরাদনগরে ব্যাপক প্রস্ততি

মোবাইলে কল করলে খুলবে দরজা-জানালা

আপডেট সময় ০২:৫১:১৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ ডিসেম্বর ২০১৪

 

০৯ ডিসেম্বর (মুরাদনগর বার্তা ডটকম ডেস্ক):

পুরো বিশ্ব এখন একটা গ্রামে পরিণত হয়েছে। ডিজিটাল যুগ নিরাপত্তার আরও একধাপ এগিয়ে এবার মোবাইলে কল দিয়েই ঘরের জানালা-দরজা খোলা যাবে। আধুনিক প্রযুক্তির যুগে মোবাইল ফোনের নানামুখী ব্যবহারের সঙ্গে যোগ হলো ঘরের জানালা-দরজা খোলা ও বন্ধ করার বিষয়টিও। যে কোনো স্থান থেকে মোবাইল ফোনে কল করে তা পরিচালনা করা যাবে।

অভাব অনটনের সংসারে কৃষক ঘরে জন্ম মেধাবী কলেজ ছাত্র মো. হুজাইফা খান সম্রাট (১৭)। বগুড়ার ধুনট উপজেলার চৌকিবাড়ী ইউনিয়নের বহালগাছা গ্রামের খয়রুজ্জামান খানের ছেলে। মা রেখা খাতুন। দুই ভাইয়ের মধ্যে সম্রাট ছোট। পার্শ্ববর্তী সিরাজগঞ্জ জেলার কাজিপুর উপজেলার সোনামুখী কওমী মাদ্রাসা থেকে সম্রাটের শিক্ষা জীবন শুরু। এরপর বাড়ির পাশে খান বাহাদুর দাখিল মাদ্রাসা থেকে ২০১২ সালে দাখিল পাশ করেন। বর্তমানে ধুনট উপজেলার নৎরতপুর হাজী কাজেম-জোবেদা টেকনিক্যাল অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট কলেজে একাদশ শ্রেণিতে পড়ছেন তিনি। লেখাপড়ার পাশাপাশি ধুনটে বিশ্ব হরিগাছা বাজারে সরকার মার্কেটে নিজের দোকানে মোবাইল সার্ভিসিং এর কাজ করেন। আর সে আয় থেকে পড়ালেখার খরচ যোগান সম্রাট। ছোট বেলা থেকেই স্বপ্ন ছিলো কিছু আবিষ্কারের। বয়স ১১ বছর না যেতে না যেতেই ইলেকট্রিক মিস্ত্রি হিসেবে মানুষের বাসা-বাড়িতে কাজ শুরু করেন।

তার ওস্তাদ তিনি নিজেই। একই ভাবে অন্যের দেখে আয়ত্ব করে ফেলেন মোবাইল সার্ভিসিংয়ের কাজ। কাজের ধারাবাহিকতায় আবিষ্কারের চিন্তায় দুই বছর আগে স্বপ্ন দেখেন মোবাইল ফোনের নেটওর্য়াকের মাধ্যমে নতুন কিছু করার। ভাবনার জগতে ডুবে যান সম্রাট, মাথায় আসে রিমোট কন্ট্রোলের মতো মোবাইল ফোন ব্যবহার করা যায় কি-না। যেই ভাবনা সেই কাজ। মোবাইল ফোনের ব্যবহার করে ঘরের জানালা-দরজা খোলা ও বন্ধ করার পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন তিনি। নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটারের সাহায্যে নতুন একটি সফটওয়্যার আবিষ্কার করে তা মোবাইলে ইনস্টল করে সফল হন তিনি।

পরীক্ষাম‍ূলক ভাবে সম্রাট দুইফুট দৈর্ঘ্য, একফুট প্রস্থ্য ও এক ফুট উচ্চতা সম্পন্ন একটি কাচের ঘর তৈরি করেন। সেই ঘরের দরজাও কাচের। মোবাইল ফোনে সিম লাগিয়ে ঘরের ভিতর দরজার সঙ্গে আটকানো হয়। সিমকার্ডে রয়েছে গোপন পিন কোড। নিজের মোবাইল থেকে দরজায় লাগানো মোবাইল নম্বরে পিনকোড ব্যবহার করে কল দিলে সহজেই খুলে যায় দরজার পাল্লা। আবার প্রয়োজন অনুযায়ী কল করলে একই পদ্ধতিতে তা বন্ধ হয়ে যায়। দরজা খুলতে বা বন্ধ হতে সময় লাগে মাত্র ৩০ সেকেন্ড। তবে পদ্ধতি সচল রাখতে সার্বক্ষণিক বিদ্যুত সংযোগ থাকা আবশ্যক। এ পদ্ধতি আবিষ্কার করতে তার প্রায় ৬ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। যেকোনো ঘরে কাঠ, স্টিল, কাচ কিংবা অন্যান্য সামগ্রীর তৈরি দরজায় এই পদ্ধতি ব্যবহার করা যাবে। এদিকে সম্রাটের কাজ দেখতে প্রতিদিন তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হাজারো কৌত‍ূহলী মানুষ ভিড় করছেন।

হুজাইফা খান সম্রাট জানান, এই আবিষ্কারের পেছনে অন্য কারো সহযোগিতা নেই। কাউকে অনুকরণ কিংবা অনুসরন করেও নয়, বরং নিজের চেষ্টায় আল্লাহ তাকে এই সফলতা দিয়েছেন। সম্রাট বলেন, ঘরে দরজা ব্যবহারযোগ্য করে তৈরি করতে ব্যয় হবে প্রায় ১ লাখ টাকা। অধিক চিন্তা-ভাবনার মাধ্যমে এই ব্যয় কমানো সম্ভব। তবে আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে তা দেখতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে। ভবিষ্যতে বাণিজ্যিকভাবে এই পদ্ধতি বাজারজাত করার পরিকল্পনা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে সরকারি সহযোগিতা প্রয়োজন।