ঢাকা ০৬:২৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শেষমেশ ইসরায়েলে যাচ্ছেন না মেসিরা

খেলাধূলা ডেস্কঃ

জেরুজালেমের টেডি কোলেন স্টেডিয়াম কুখ্যাত গুপ্তহত্যার জন্য। ইসরায়েলি স্নাইপাররা ফিলিস্তিনিদের হত্যার জন্য এই মাঠটাই ব্যবহার করে থাকে। অথচ সেখানেই ৯ জুন প্রীতি ম্যাচে মুখোমুখি হওয়ার কথা ছিল আর্জেন্টিনা-ইসরায়েলের। ম্যাচটির প্রথম ভেন্যু হাইফা থেকে জেরুজালেমে সরিয়ে নেওয়ার পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য দেখছিল ফিলিস্তিন। তাই প্রতিবাদের ঝড় ওঠে ফিলিস্তিনজুড়ে। দেশটির ফুটবল ফেডারেশনের প্রধান জিবরিল রাজুব চিঠি লিখেন আর্জেন্টাইন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের কাছে। হুমকিও দেন জেরুজালেমে গেলে লিওনেল মেসির জার্সি পোড়ানোর। বার্সেলোনায় মেসিদের অনুশীলন মাঠের বাইরে ইসরায়েলে খেলতে না যাওয়া নিয়ে প্রতিবাদও করেছেন অনেকে। সব দিক বিবেচনা করে শেষ পর্যন্ত আর্জেন্টাইন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন বাতিলই করল ম্যাচটি।

ম্যাচ বাতিলের ঘোষণা দিয়ে ইসরায়েলে আর্জেন্টাইন দূতাবাসের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েলে খেলতে আসছে না আর্জেন্টাইন ফুটবল দল। খেলোয়াড়দের নিরাপত্তা হুমকি ও সহিংসতার আশঙ্কা থেকেই নেওয়া হয়েছে সিদ্ধান্তটা।’ আর্জেন্টাইন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের এই সিদ্ধান্তে খুশি গনসালো হিগুয়াইন। একটি ম্যাচ ঘিরে ফিলিস্তিনে যেভাবে রাজনৈতিক উত্তেজনা ছড়িয়েছিল তাতে সেটা বাতিল হওয়ার পর ইএসপিএনকে দেওয়া সাক্ষাত্কারে হিগুয়াইনের স্বস্তি, ‘দেরিতে হলেও শেষ পর্যন্ত ঠিক কাজটা করেছে তারা। এখন এটা আমাদের কাছে অতীত। অবশ্যই খেলোয়াড়দের নিরাপত্তা সবার আগে নিশ্চিত করতে হবে। আমরা মনে করি, ইসরায়েলে না যাওয়াটা সঠিক সিদ্ধান্ত।’

ম্যাচটি ঘিরে বিতর্ক ছিল শুরু থেকেই। আর্জেন্টাইন কোচ হোর্হে সাম্পাওলি পর্যন্ত প্রশ্ন তুলেছিলেন লিওনেল মেসিদের ইসরায়েলের সঙ্গে খেলা নিয়ে। এবার হিগুয়াইন সবার প্রতিনিধি হয়ে জানিয়ে দিলেন খেলোয়াড়দের সিদ্ধান্তটা। তাই খুশি ফিলিস্তিন ফুটবল ফেডারেশন। সংস্থাটির প্রধান জিবরিল রাজুব সংবাদ সম্মেলনে সাধুবাদ জানিয়েছেন মেসিদের, ‘মানবতা আর ক্রীড়াঙ্গনের জয় হলো আজ। আর্জেন্টিনার এই সিদ্ধান্তটা ইসরায়েলকে লাল কার্ড দেখানোর মতো ব্যাপার।’

জেরুজালেমকে সব সময় ফিলিস্তিনিরা তাদের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রের রাজধানী দাবি করে থাকে। তবে ইসরায়েলের দাবি পুরো জেরুজালেম তাদের। গত ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসাবে স্বীকৃতি দেন আর তাতে প্রতিবাদে ফুঁসে ওঠে ফিলিস্তিন। তবে ইসরায়েলের সঙ্গে আগে থেকেই সুসম্পর্ক আর্জেন্টিনার। ১৯৮৬ বিশ্বকাপের আগেও ইসরায়েলে প্রীতি ম্যাচ খেলেছিল আর্জেন্টিনা। প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছে এরপরের তিনটি বিশ্বকাপের আগে। ২০১৩ সালে মেসিও ইসরায়েলে খেলেছেন বার্সেলোনার হয়ে। তবে রাজনৈতিক দিক দিয়ে এবার তাদের না আসাটা ইসরায়েলের জন্য বড় ধরনের কূটনৈতিক পরাজয়। খেলা বাতিলের খবর শুনেই ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সিদ্ধান্ত পূনর্বিবেচনার জন্য অনুরোধ করেন আর্জেন্টাইন প্রেসিডেন্ট মাউরোসিও মাকরিকে। তবে মাকরি জানিয়ে দেন সিদ্ধান্তটা খেলোয়াড়দের, তাঁর করার কিছু নেই।

ইসরায়েলের বিপক্ষে গণহত্যার অভিযোগ এনে আর্জেন্টিনা-ইসরায়েলের ম্যাচ বাতিল নিয়ে আন্দোলনে নেমেছিল ‘বিডিএস’। সম্প্রতি গাজায় ফিলিস্তিনিদের বিক্ষোভ দমনে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে ৬১ জন নিহত হওয়ায় তাদের সঙ্গে যোগ দেয় কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠনও। ম্যাচ বাতিলের পর বিডিএসের বিবৃতি, ‘মানবতার জয় হলো শেষ পর্যন্ত।’

দুই দেশের রাজনৈতিক এই ডামাডোল নিয়ে অবশ্য মাথা ঘামাচ্ছেন না আর্জেন্টাইন ডিফেন্ডার মার্কাস রোহো। এবারের বিশ্বকাপটা মেসির জন্য জিততে চায় পুরো আর্জেন্টিনা। এ জন্য আবার মেসিকেই নিতে হবে দলের দায়িত্ব! তাঁকে ছাড়া খেলতে নেমে স্পেনের কাছে ১-৬ গোলে হেরেছে দল। আবার ফিরেই হ্যাটট্রিক করে হাইতির বিপক্ষে দলকে জিতিয়েছেন মেসি। বিশ্বকাপেও তাঁর সেরাটার প্রত্যাশায় রোহো, ‘আমাদের গ্রুপটা বেশ কঠিন। ক্রোয়েশিয়া আর আইসল্যান্ড বেশ বেগ দেবে। আর নাইজেরিয়া চমকে দেয় সব সময়ই। আমার তো মনে হয়, তিন থেকে চারবার বিশ্বকাপে খেলতে হলো নাইজেরিয়ার সঙ্গে। আশা করছি মেসি সেরা ছন্দে থাকবে আর কিছু করবে আমাদের জন্য।’

নাইজেরিয়ার বিপক্ষে গত বিশ্বকাপেও খেলেছে আর্জেন্টিনা। সেই ম্যাচে এক গোল করেছিলেন রোহো। শেষ পর্যন্ত ফাইনালে পৌঁছেও হারতে হয়েছিল জার্মানির কাছে। তবে এবার ফাইনালে গেলে শিরোপা জিতেই সমর্থকদের আনন্দে ভাসাতে চান রোহো, ‘আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে দেওয়াটাই সবচেয়ে সম্মানের। সমর্থকদের আনন্দে ভাসাতে নিজেদের উজাড় করে খেলব সবাই।’ বিবিসি

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

শিক্ষার্থীদের উপর হামলার প্রতিবাদে মুরাদনগরে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ

শেষমেশ ইসরায়েলে যাচ্ছেন না মেসিরা

আপডেট সময় ১০:০৩:২৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ৬ জুন ২০১৮
খেলাধূলা ডেস্কঃ

জেরুজালেমের টেডি কোলেন স্টেডিয়াম কুখ্যাত গুপ্তহত্যার জন্য। ইসরায়েলি স্নাইপাররা ফিলিস্তিনিদের হত্যার জন্য এই মাঠটাই ব্যবহার করে থাকে। অথচ সেখানেই ৯ জুন প্রীতি ম্যাচে মুখোমুখি হওয়ার কথা ছিল আর্জেন্টিনা-ইসরায়েলের। ম্যাচটির প্রথম ভেন্যু হাইফা থেকে জেরুজালেমে সরিয়ে নেওয়ার পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য দেখছিল ফিলিস্তিন। তাই প্রতিবাদের ঝড় ওঠে ফিলিস্তিনজুড়ে। দেশটির ফুটবল ফেডারেশনের প্রধান জিবরিল রাজুব চিঠি লিখেন আর্জেন্টাইন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের কাছে। হুমকিও দেন জেরুজালেমে গেলে লিওনেল মেসির জার্সি পোড়ানোর। বার্সেলোনায় মেসিদের অনুশীলন মাঠের বাইরে ইসরায়েলে খেলতে না যাওয়া নিয়ে প্রতিবাদও করেছেন অনেকে। সব দিক বিবেচনা করে শেষ পর্যন্ত আর্জেন্টাইন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন বাতিলই করল ম্যাচটি।

ম্যাচ বাতিলের ঘোষণা দিয়ে ইসরায়েলে আর্জেন্টাইন দূতাবাসের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েলে খেলতে আসছে না আর্জেন্টাইন ফুটবল দল। খেলোয়াড়দের নিরাপত্তা হুমকি ও সহিংসতার আশঙ্কা থেকেই নেওয়া হয়েছে সিদ্ধান্তটা।’ আর্জেন্টাইন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের এই সিদ্ধান্তে খুশি গনসালো হিগুয়াইন। একটি ম্যাচ ঘিরে ফিলিস্তিনে যেভাবে রাজনৈতিক উত্তেজনা ছড়িয়েছিল তাতে সেটা বাতিল হওয়ার পর ইএসপিএনকে দেওয়া সাক্ষাত্কারে হিগুয়াইনের স্বস্তি, ‘দেরিতে হলেও শেষ পর্যন্ত ঠিক কাজটা করেছে তারা। এখন এটা আমাদের কাছে অতীত। অবশ্যই খেলোয়াড়দের নিরাপত্তা সবার আগে নিশ্চিত করতে হবে। আমরা মনে করি, ইসরায়েলে না যাওয়াটা সঠিক সিদ্ধান্ত।’

ম্যাচটি ঘিরে বিতর্ক ছিল শুরু থেকেই। আর্জেন্টাইন কোচ হোর্হে সাম্পাওলি পর্যন্ত প্রশ্ন তুলেছিলেন লিওনেল মেসিদের ইসরায়েলের সঙ্গে খেলা নিয়ে। এবার হিগুয়াইন সবার প্রতিনিধি হয়ে জানিয়ে দিলেন খেলোয়াড়দের সিদ্ধান্তটা। তাই খুশি ফিলিস্তিন ফুটবল ফেডারেশন। সংস্থাটির প্রধান জিবরিল রাজুব সংবাদ সম্মেলনে সাধুবাদ জানিয়েছেন মেসিদের, ‘মানবতা আর ক্রীড়াঙ্গনের জয় হলো আজ। আর্জেন্টিনার এই সিদ্ধান্তটা ইসরায়েলকে লাল কার্ড দেখানোর মতো ব্যাপার।’

জেরুজালেমকে সব সময় ফিলিস্তিনিরা তাদের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রের রাজধানী দাবি করে থাকে। তবে ইসরায়েলের দাবি পুরো জেরুজালেম তাদের। গত ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসাবে স্বীকৃতি দেন আর তাতে প্রতিবাদে ফুঁসে ওঠে ফিলিস্তিন। তবে ইসরায়েলের সঙ্গে আগে থেকেই সুসম্পর্ক আর্জেন্টিনার। ১৯৮৬ বিশ্বকাপের আগেও ইসরায়েলে প্রীতি ম্যাচ খেলেছিল আর্জেন্টিনা। প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছে এরপরের তিনটি বিশ্বকাপের আগে। ২০১৩ সালে মেসিও ইসরায়েলে খেলেছেন বার্সেলোনার হয়ে। তবে রাজনৈতিক দিক দিয়ে এবার তাদের না আসাটা ইসরায়েলের জন্য বড় ধরনের কূটনৈতিক পরাজয়। খেলা বাতিলের খবর শুনেই ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সিদ্ধান্ত পূনর্বিবেচনার জন্য অনুরোধ করেন আর্জেন্টাইন প্রেসিডেন্ট মাউরোসিও মাকরিকে। তবে মাকরি জানিয়ে দেন সিদ্ধান্তটা খেলোয়াড়দের, তাঁর করার কিছু নেই।

ইসরায়েলের বিপক্ষে গণহত্যার অভিযোগ এনে আর্জেন্টিনা-ইসরায়েলের ম্যাচ বাতিল নিয়ে আন্দোলনে নেমেছিল ‘বিডিএস’। সম্প্রতি গাজায় ফিলিস্তিনিদের বিক্ষোভ দমনে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে ৬১ জন নিহত হওয়ায় তাদের সঙ্গে যোগ দেয় কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠনও। ম্যাচ বাতিলের পর বিডিএসের বিবৃতি, ‘মানবতার জয় হলো শেষ পর্যন্ত।’

দুই দেশের রাজনৈতিক এই ডামাডোল নিয়ে অবশ্য মাথা ঘামাচ্ছেন না আর্জেন্টাইন ডিফেন্ডার মার্কাস রোহো। এবারের বিশ্বকাপটা মেসির জন্য জিততে চায় পুরো আর্জেন্টিনা। এ জন্য আবার মেসিকেই নিতে হবে দলের দায়িত্ব! তাঁকে ছাড়া খেলতে নেমে স্পেনের কাছে ১-৬ গোলে হেরেছে দল। আবার ফিরেই হ্যাটট্রিক করে হাইতির বিপক্ষে দলকে জিতিয়েছেন মেসি। বিশ্বকাপেও তাঁর সেরাটার প্রত্যাশায় রোহো, ‘আমাদের গ্রুপটা বেশ কঠিন। ক্রোয়েশিয়া আর আইসল্যান্ড বেশ বেগ দেবে। আর নাইজেরিয়া চমকে দেয় সব সময়ই। আমার তো মনে হয়, তিন থেকে চারবার বিশ্বকাপে খেলতে হলো নাইজেরিয়ার সঙ্গে। আশা করছি মেসি সেরা ছন্দে থাকবে আর কিছু করবে আমাদের জন্য।’

নাইজেরিয়ার বিপক্ষে গত বিশ্বকাপেও খেলেছে আর্জেন্টিনা। সেই ম্যাচে এক গোল করেছিলেন রোহো। শেষ পর্যন্ত ফাইনালে পৌঁছেও হারতে হয়েছিল জার্মানির কাছে। তবে এবার ফাইনালে গেলে শিরোপা জিতেই সমর্থকদের আনন্দে ভাসাতে চান রোহো, ‘আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে দেওয়াটাই সবচেয়ে সম্মানের। সমর্থকদের আনন্দে ভাসাতে নিজেদের উজাড় করে খেলব সবাই।’ বিবিসি