জাতীয় ডেস্কঃ
দলের বিপক্ষে ভোটদানের কারনে সংসদ সদস্যপদ শূন্য ঘোষণা সংক্রান্ত সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ বহাল রেখেছে হাইকোর্ট। রায়ে বলা হয়েছে, সংবিধানের এই অনুচ্ছেদ সংবিধানের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ নয়। এই অনুচ্ছেদ গণতন্ত্রের রক্ষাকবচ। সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়েরকৃত রিট আবেদন খারিজের রায়ে এ কথা বলা হয়েছে। বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমানের একক হাইকোর্ট বেঞ্চের দেয়া এই রায়ের অনুলিপি বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।
রিট পিটিশন খারিজের রায়ে বলা হয়, ৭০ অনুচ্ছেদ ১৯৭২ সালে প্রণীত আদি সংবিধানেরই অংশ। পঞ্চদশ সংশোধনীতেও এই অনুচ্ছেদে কোন ধরনের পরিবর্তন আনা হয়নি। যেহেতু এটা আদি সংবিধানের অংশ সেহেতু তা চ্যালেঞ্জ করার এখতিয়ার নেই। দেশের কোনো আদালতও এই অনুচ্ছেদ অবৈধ বা বাতিল করতে পারে না।
সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘কোনো নির্বাচনে কোনো রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরূপে মনোনীত হইয়া কোনো ব্যক্তি সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হইলে তিনি যদি (ক) উক্ত দল হইতে পদত্যাগ করেন, অথবা (খ) সংসদে উক্ত দলের বিপক্ষে ভোটদান করেন, তাহা হইলে সংসদে তাঁহার আসন শূন্য হইবে, তবে তিনি সেই কারণে পরবর্তী কোনো নির্বাচনে সংসদ সদস্য হইবার অযোগ্য হইবেন না।’
এই অনুচ্ছেদের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ। গত ১৫ জানুয়ারি হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ ওই রিটের ওপর দ্বিধাবিভক্ত আদেশ দিয়েছিলেন। আদেশে বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ৭০ অনুচ্ছেদ কেন বাতিল ও সংবিধান পরিপন্থী ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন।
আদেশে তিনি বলেন, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে জনগণই সকল ক্ষমতার মালিক। কিন্তু সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ে হাইকোর্ট বলেছে, ৭০ অনুচ্ছেদের কারণে জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে সংসদ সদস্যরা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন ও নিজ দলের বিপক্ষে ভোটদান করতে পারেন না। ভোট দিলেই তাদের সংসদ সদস্যপদ শূন্য হবে। ফলে স্বাধীনভাবে তাদের (সংসদ সদস্য) মতামত প্রদানের সুযোগ নেই। নিজ দলের কাছেই তারা পরাধীন।
কনিষ্ঠ বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল রিট আবেদনটি সরাসরি খারিজ করে দিয়ে বলেন, সংবিধান প্রণয়নের পর যেভাবে ৭০ অনুচ্ছেদ সংবিধানে সন্নিবেশন করা হয়েছে সেভাবে এটি রয়েছে। এর যৌক্তিকতা নিয়ে অতীতে কোনো সরকার বা সংসদে এমনকি জনগণও প্রশ্ন উত্থাপন করেননি। এই অনুচ্ছেদের অপব্যবহার হয়েছে এমন কোন নজিরও আদালতের সামনে নেই। আমাদের মনে রাখতে হবে, জনগণ সকল ক্ষমতার অধিকারী। আর সংসদ সদস্যরা জনগণের প্রতিনিধি। এ কারণে জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের আইন প্রণয়নে আদালত বাধ্য করতে পারে না। আদালত কখনও জাতীয় সংসদকে নির্দেশ দেওয়ার ক্ষমতা রাখে না। কার্যত সংসদ কর্তৃক প্রণীত আইন যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করবে আদালত। আইন প্রণেতারা কি উদ্দেশ্যে আইন প্রণয়ন করছেন তা নিয়ে আদালত প্রশ্ন তুলতে পারে না।
দ্বিধাবিভক্ত এই আদেশের পর বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য হাইকোর্টের একক বেঞ্চে পাঠান প্রধান বিচারপতি। গত ১৮ মার্চ হাইকোর্টের একক বেঞ্চ এ রায় দেন।