ঢাকা ১২:৩৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হোমনায় স্বামী তিন বছর বিদেশে থাকার পরও স্ত্রীর সন্তানলাভ

মো. আবু রায়হান চৌধুরী, হোমনা (কুমিল্লা):

কুমিল্লার হোমনা উপজেলা সদরের সেই “লাইফ কেয়ার হসপিটালে ফের নবজাতকের মৃত্যু ঘটেছে। এই ঘটনায় প্রসূতির শ^শুর হোমনা থানায় অভিযোগ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে লাশ উদ্ধার করে বুধবার সকালে ময়না তদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছেন হোমনা থানা পুলিশ।

২৪ মার্চ মঙ্গলবার ভোরে ১০ শয্যা বিশিষ্ট লাইফ কেয়ার হসপিটালে এ ঘটনা ঘটে। এটিই এই হাসপাতালের প্রথম কোনো ঘটনা নয়। এর আগেও এই হোমনা লাইফ কেয়ার হসপিটালে প্রসূতীর মৃত্যু ঘটেছে।

এছাড়া হাসপাতালটির নানা অনিয়মের কারণে ভ্রাম্যমাণ আদালতেও জরিমানা গুণতে হয়েছে একাধিকবার। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কার্যালয় উপজেলার সকল বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালকে তাদের প্রয়োজনীয় সকল বৈধ কাগজপত্র তলব করলে অন্যরা জমা দিলেও লাইফ কেয়ার হসপিটালের মালিক মো. কবির হোসেন অজানা কারণে তা পাত্তাই দিচ্ছেন না।

অভিযোগ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ২৩ মার্চ রাতে এই হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে অনৈতিক সম্পর্কের ফসল একটি কন্যা সন্তান ভূমিষ্ট করায়। জন্মের আধাঘণ্টার ব্যবধানে শিশুটি মারা গেলে প্রশ্ন উঠে শিশুটি কি প্রকৃতই মারা গেছে, না-কি অপবাদ দূর করতে পরিকল্পিতভাবে মেরে ফেলা হয়েছে? স্বজনরা জানায়, ওই দিন প্রসববেদনায় ছটফট করতে থাকলে শ^শুর-শাশুরী ও বড় বোন প্রসূতিকে হোমনা লাইফ কেয়ার হসপিটালে ভর্তি করায়। এ সময় সে তার পেটে বাচ্চা থাকার বিষয়টি আড়াল করার উদ্দেশে প্রসববেদনার কথা লুকানোর চেষ্টা করে। তার কথা না শুনে আল্ট্রাসনোগ্রাম করালে পেটে বাচ্চা থাকার বিষয়ে নিশ্চিত হন সবাই। পরে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে একটি কন্যা শিশুর জন্ম হয়। কিন্তু এর কিছুক্ষণের মধ্যেই শিশুটি কাপতে কাপতে মারা যায়। জানা যায়, এই হাসপাতালে আবাসিক ডাক্তার এবং কোনো শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকও নেই। বাইরে থেকে ডাক্তার এনে কেবল সিজারিয়ান অপারেশন করা হয়। ফলে শিশুটির কোনো সুচিকিৎসা করানো সম্ভব হয়নি। এঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে অনেকে বলছেন, হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা ঠিকঠাক থাকলে হয়তো শিশুটির এমন করুণ মৃত্যু হতো না।

আরও জানা যায়, প্রসূতির বাড়ি পাশর্^বর্তী বাঞ্ছারামপুর উপজেলার রাধানগর গ্রামে। আড়াই মাসের ছুটিতে আসা হোমনা উপজেলার ভঙ্গারচর গ্রামের জনৈক সৌদি প্রবাসীর সঙ্গে তিন বছর আগে তার বিয়ে হয়। গর্ভে সন্তান আসার কিছুদিন পরেই তিনি আবার সৌদি আরব তার কর্মস্থলে ফিরে যান। এরই মধ্যে কেটে যাচ্ছে তিন বছর। বর্তমানে তাদের তিন বছর বয়েসী একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। তিন বছর স্বামী বিদেশ থাকায় আবারও সন্তান জন্ম দেওয়ার বিষয়টি করোনাভাইরাসের আতঙ্কজনক পরিস্থিতিতেও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।

এ বিষয়ে ভিকটিমের পরিবার সাংবাদিকদের জানায়, ‘সিজারের পরই শিশুটি কাপতে কাপতে মারা গেলো। আমরা তো বুঝিনা কি কারণে মারা গেলো। থানায় অভিযোগ দিছি। আমরা ন্যায় বিচার চাই।’

হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. কবির হোসেন বলেন, আমাদের কোনো অবহেলা নেই। প্রসূতি ভালো রয়েছে, তবে শিশুটির জন্য বিশেষজ্ঞ ডাক্তার না থাকায় তার মৃত্যু হয়েছে। আমরা সরকারি হাসপাতালে শিশুটিকে চিকিৎসার জন্য পাঠিয়েও ছিলাম। তারা কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে ফের আমাদের হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়।

হোমনা থানার এসআই সেকান্দার হোসেন বলেন, হাসপাতালে একটি অনৈতিকভাবে শশুর জন্ম হয়েছে, আবার মারাও গেছে। এ ব্যাপারে প্রসূতির শ্ব^শুর তাহের আলী হোমনা থানায় একটি জিডি করেছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা শিশুটির মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছে। ময়না তদন্তের রিপোর্ট পেলে শিশুটির মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে এবং আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

হোমনা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পবিরার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবদুছ ছালাম সিকদার বলেন, শিশুটিকে আমাদের সরকারি হাসপাতালে আনা হয়নি। মৃত্যুর বিষয়ে কেউ অভিযোগও করেনি। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানতে পেরেছি। আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, লাইফ কেয়ার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নিকট হাসপাতাল পরিচালনার বৈধ কাজগপত্র আছে কি-না জানতে চেয়ে নোটিশ করা হলেও সে কোনো কাগজপত্র জমা দেয়নি। খুব দ্রুত তদন্ত কমিটি করে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

মুরাদনগরে বিএনপির নেতা ও বিএনপিকে জড়িয়ে মিথ্যা অপপ্রচারের প্রতিবাদে মানববন্ধন

হোমনায় স্বামী তিন বছর বিদেশে থাকার পরও স্ত্রীর সন্তানলাভ

আপডেট সময় ০২:৪১:২৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ মার্চ ২০২০

মো. আবু রায়হান চৌধুরী, হোমনা (কুমিল্লা):

কুমিল্লার হোমনা উপজেলা সদরের সেই “লাইফ কেয়ার হসপিটালে ফের নবজাতকের মৃত্যু ঘটেছে। এই ঘটনায় প্রসূতির শ^শুর হোমনা থানায় অভিযোগ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে লাশ উদ্ধার করে বুধবার সকালে ময়না তদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছেন হোমনা থানা পুলিশ।

২৪ মার্চ মঙ্গলবার ভোরে ১০ শয্যা বিশিষ্ট লাইফ কেয়ার হসপিটালে এ ঘটনা ঘটে। এটিই এই হাসপাতালের প্রথম কোনো ঘটনা নয়। এর আগেও এই হোমনা লাইফ কেয়ার হসপিটালে প্রসূতীর মৃত্যু ঘটেছে।

এছাড়া হাসপাতালটির নানা অনিয়মের কারণে ভ্রাম্যমাণ আদালতেও জরিমানা গুণতে হয়েছে একাধিকবার। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কার্যালয় উপজেলার সকল বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালকে তাদের প্রয়োজনীয় সকল বৈধ কাগজপত্র তলব করলে অন্যরা জমা দিলেও লাইফ কেয়ার হসপিটালের মালিক মো. কবির হোসেন অজানা কারণে তা পাত্তাই দিচ্ছেন না।

অভিযোগ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ২৩ মার্চ রাতে এই হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে অনৈতিক সম্পর্কের ফসল একটি কন্যা সন্তান ভূমিষ্ট করায়। জন্মের আধাঘণ্টার ব্যবধানে শিশুটি মারা গেলে প্রশ্ন উঠে শিশুটি কি প্রকৃতই মারা গেছে, না-কি অপবাদ দূর করতে পরিকল্পিতভাবে মেরে ফেলা হয়েছে? স্বজনরা জানায়, ওই দিন প্রসববেদনায় ছটফট করতে থাকলে শ^শুর-শাশুরী ও বড় বোন প্রসূতিকে হোমনা লাইফ কেয়ার হসপিটালে ভর্তি করায়। এ সময় সে তার পেটে বাচ্চা থাকার বিষয়টি আড়াল করার উদ্দেশে প্রসববেদনার কথা লুকানোর চেষ্টা করে। তার কথা না শুনে আল্ট্রাসনোগ্রাম করালে পেটে বাচ্চা থাকার বিষয়ে নিশ্চিত হন সবাই। পরে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে একটি কন্যা শিশুর জন্ম হয়। কিন্তু এর কিছুক্ষণের মধ্যেই শিশুটি কাপতে কাপতে মারা যায়। জানা যায়, এই হাসপাতালে আবাসিক ডাক্তার এবং কোনো শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকও নেই। বাইরে থেকে ডাক্তার এনে কেবল সিজারিয়ান অপারেশন করা হয়। ফলে শিশুটির কোনো সুচিকিৎসা করানো সম্ভব হয়নি। এঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে অনেকে বলছেন, হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা ঠিকঠাক থাকলে হয়তো শিশুটির এমন করুণ মৃত্যু হতো না।

আরও জানা যায়, প্রসূতির বাড়ি পাশর্^বর্তী বাঞ্ছারামপুর উপজেলার রাধানগর গ্রামে। আড়াই মাসের ছুটিতে আসা হোমনা উপজেলার ভঙ্গারচর গ্রামের জনৈক সৌদি প্রবাসীর সঙ্গে তিন বছর আগে তার বিয়ে হয়। গর্ভে সন্তান আসার কিছুদিন পরেই তিনি আবার সৌদি আরব তার কর্মস্থলে ফিরে যান। এরই মধ্যে কেটে যাচ্ছে তিন বছর। বর্তমানে তাদের তিন বছর বয়েসী একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। তিন বছর স্বামী বিদেশ থাকায় আবারও সন্তান জন্ম দেওয়ার বিষয়টি করোনাভাইরাসের আতঙ্কজনক পরিস্থিতিতেও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।

এ বিষয়ে ভিকটিমের পরিবার সাংবাদিকদের জানায়, ‘সিজারের পরই শিশুটি কাপতে কাপতে মারা গেলো। আমরা তো বুঝিনা কি কারণে মারা গেলো। থানায় অভিযোগ দিছি। আমরা ন্যায় বিচার চাই।’

হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. কবির হোসেন বলেন, আমাদের কোনো অবহেলা নেই। প্রসূতি ভালো রয়েছে, তবে শিশুটির জন্য বিশেষজ্ঞ ডাক্তার না থাকায় তার মৃত্যু হয়েছে। আমরা সরকারি হাসপাতালে শিশুটিকে চিকিৎসার জন্য পাঠিয়েও ছিলাম। তারা কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে ফের আমাদের হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়।

হোমনা থানার এসআই সেকান্দার হোসেন বলেন, হাসপাতালে একটি অনৈতিকভাবে শশুর জন্ম হয়েছে, আবার মারাও গেছে। এ ব্যাপারে প্রসূতির শ্ব^শুর তাহের আলী হোমনা থানায় একটি জিডি করেছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা শিশুটির মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছে। ময়না তদন্তের রিপোর্ট পেলে শিশুটির মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে এবং আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

হোমনা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পবিরার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবদুছ ছালাম সিকদার বলেন, শিশুটিকে আমাদের সরকারি হাসপাতালে আনা হয়নি। মৃত্যুর বিষয়ে কেউ অভিযোগও করেনি। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানতে পেরেছি। আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, লাইফ কেয়ার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নিকট হাসপাতাল পরিচালনার বৈধ কাজগপত্র আছে কি-না জানতে চেয়ে নোটিশ করা হলেও সে কোনো কাগজপত্র জমা দেয়নি। খুব দ্রুত তদন্ত কমিটি করে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।