নাজমুল করিম ফারুক, তিতাস (কুমিল্লা) প্রতিনিধিঃ
কুমিল্লার তিতাসে ১৫মাস পর এক অপহরণ মামলার রহস্য উদঙ্ঘাটন করেছে তিতাস থানা পুলিশ। অপহরণকৃত সুমি আক্তারকে তার ৩ মাসের কন্যা শিশু আছমা আক্তার ও স্বামী আমির হোসেনসহ উদ্ধার করে রবিবার বিকালে কুমিল্লার বিজ্ঞ আদালতে হাজির করা হলে সুমিকে অপহরন করা হয়নি বলে সে জবানবন্দি দেয়।
শনিবার রাতে রাজধানীর পল্লবী থানার মিরপুর-১২ এর মোল্লা রোডের মাষ্টার বাড়ির নিচতলা থেকে পুলিশ তাদের উদ্ধার করে। উক্ত ঘটনায় ১৫ মাস আগে সুমির মা নীহারা খাতুন বাদী হয়ে সুমিকে অপহরণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ এনে উপজেলার হরিপুর ও দড়িকান্দি গ্রামের ৩জনকে আসামী করে কোর্টে একটি অপহরণ মামলা করেন। উক্ত মামলা দু’জন গ্রেফতার হলেও আরেক আসামী এখনও পলাতক রয়েছে। অপহরণ মামলার আসামী কুলসুমের ৬লাখ ৭০ হাজার টাকা আত্মসাতের জন্য সুমি তার পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতায় আত্মগোপনে থেকে সংসার করে আসছে বলে এমন মন্তব্যই এখন এলাকায় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার হরিপুর মাদ্রাসায় পড়ার সুবাদে দড়িকান্দি গ্রামের রোস্তম আলীর ছেলে কাইয়ুমের বাড়িতে প্রায় আসতেন হরিপুর গ্রামের শোভা মিয়ার মেয়ে সুমি ও রুমি আক্তার। গত বছরের জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে ওয়াজ মাহফিল উপলক্ষ্যে কাইয়ুমের বাড়িতে বেড়াতে আসেন ঐ দুই বোন। কাইয়ুমের মা কুলসুম আক্তার তার কোলের সন্তানকে ডাক্তার দেখাতে নিয়ে গেলে কৌশলে সুমি ও রুমি আক্তার চাউলের ড্রেমে রাখা জমি ক্রয়ের ৬ লাখ ৭০ হাজার টাকা চুরি করে নিয়ে যায়। বিষয়টি নিয়ে দড়িকান্দিসহ আশেপাশের ৫/৬টি গ্রামের লোকজনদের সমন্বয়ে শালিস বৈঠকে সুমি টাকা চুরি করেছে বলে প্রমাণিত হলে সুমিকে হরিপুর গ্রামের মেম্বার ও স্থানীয় লোকজনদেন হেফাজতে রাখা হয়। এক পর্যায়ে সুমির মামীর সিজার হয়েছে বলে সুমিকে রক্ত দিতে হবে এমন কথায় লোকজনদের জিম্মা থেকে সুমিকে কৌশলে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সুমিকে অপহরণ করা হয়েছে বলে এমন অভিযোগ এনে গত বছরের ৪ আগষ্ট সুমির মা নীহারা খাতুন বাদী হয়ে দড়িকান্দি গ্রামের কাউয়ুমের মা কুসলুম আক্তার ও হরিপুর গ্রামের মোশারফ হোসেনে ছেলে মহিউদ্দিন, হারুন মিয়ার ছেলে কাউছারকে আসামী করে আদালতে একটি অপহরণ মামলা করেন। গত বছরের ৫ আগস্ট তিতাস থানা পুলিশ কুলসুম ও মহিউদ্দিনকে আটক করে জেল হাজতে প্রেরণ করেন। এক পর্যায়ে আসামী মহিউদ্দিনকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়। পরে কুলসুম আক্তারের কোলে ৮ মাসের সন্তান থাকায় এক মাস পর এবং মহিউদ্দিনকে ৪মাস ১৬দিন পর জামিন দেয়া হয়। অপর আসামী কাউছার এখনও পলাকত রয়েছে। অপরদিকে ৬লাখ ৭০হাজার টাকা চুরির ঘটনায় কুলসুম আক্তার বাদী হয়ে হরিপুর গ্রামের শোভা মিয়া, তার স্ত্রী নীহারা বেগম, দুই কন্যাসন্তান সুমি ও রুমি আক্তার এবং সুমির চাচা সিরাজ মিয়াকে আসামী করে থানায় একটি মামলা করেন। মামলাটি বর্তমানে ডিবিতে তদন্তনাধীন রয়েছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আল আমিন ভূঁইয়া জানান, মামলাটি আদালতে রুজু হওয়ার পর গত ১৫ মাসে চারজন তদন্ত কর্মকর্তার হাত বদল হয়েছে। অবশেষে মোবাইল টেকিং ও সুমির পিতার সহযোগিতায় কৌশলে সুমিকে ঢাকা থেকে উদ্ধার করা হয়। ইতিমধ্যে সুমি জেলার বুড়িচং উপজেলার আবিদপুর গ্রামের মৃত সায়েদ খানের ছেলে আমির হোসেনকে বিয়ে করে সংসার করছেন এবং তাদের সংসারে ৩ মাসের কন্যা সন্তান রয়েছে। এছাড়াও আমির হোসেনের বাড়ীতে আরেক স্ত্রী ২ ছেলে ও ২ মেয়ে রয়েছে।
মামলার আসামী মহিউদ্দিন জানান, সাড়ে চারমাস জেল খেটেছি, এর মধ্যে একবার রিমান্ডে আনা হয়েছে। মিথ্যা অপবাদের বোঝা নিয়ে চলছি। বিশ্বাস ছিল সত্য একদিন প্রকাশ হবে।
আরেক আসামী কুলসুম জানান, একতো টাকা চুরি হয়েছে, প্রতিবাদে মিথ্যা মামলা ও কোলের সন্তান নিয়ে জেল খেটেছি। অনেক দিন পর হলেও সত্য আজ উম্মোচিত হলো। আমি সবার কাছে ন্যায় বিচার চাই।
তিতাস থানার অফিসার ইনচার্জ নুরুল আলম টিপু জানান, যেহেতু ভিকটিম বিজ্ঞ আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে তাকে অপহরণ করা হয়নি। সেহেতু ভিকটিমের মার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করার অভিযোগে মামলা হতে পারে।