ঢাকা ০৫:৫৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অনিদ্রার সঙ্গে অকাল মৃত্যুর সম্পর্ক নেই

লাইফস্টাইল ডেস্কঃ

যদি আপনি অনিদ্রা রোগে ভুগে থাকেন তাহলে সুসংবাদটা আপনার জন্য। সামপ্রতিক এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ঘুম না হওয়া রোগের সঙ্গে মানুষের দ্রুত মৃত্যুর কোনো সম্পর্ক নেই। গবেষণা প্রতিবেদনটি জার্নাল সায়েন্সে প্রকাশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ঘুমের আশায় ভোর পর্যন্ত যারা বিছানায় এপাশ-ওপাশ করেন তাদের উদ্বেগ কিছুটা কমাতে সাহায্য করবে এই গবেষণার ফল।

ঘুমহীনতার সঙ্গে দ্রুত মৃত্যুর সম্পর্ক না থাকা বিষয়ক সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর আগে গবেষকেরা কয়েক কোটি মানুষের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করেছেন। মোট ১৭টি গবেষণায় প্রায় ৩ কোটি ৭০ লাখ মানুষের তথ্য পর্যালোচনা করা হয়েছে। তবে ব্রিটেনের জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান এনএইচএস থেকে এর আগে যা বলা হতো, নতুন এই প্রতিবেদনের বক্তব্য তার পুরোপুরি বিপরীত। এনএইচএস-এর প্রতিবেদনে আগে বলা হয়েছিল, ইনসমনিয়ার কারণে মানুষের ওবেসিটি বা স্থূলতা, হূদরোগ ও টাইপ-টু ডায়বেটিসের ঝুঁকি বাড়ার পাশাপাশি মানুষের আয়ু্ও কমে যায়। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে ইনসমনিয়ায় ভুগছেন এমন মানুষেরা মূলত তাদের আয়ু নিয়ে চিন্তিত নন, বরং ঘুম না হওয়া ক্লান্ত দেহে কী করে দিনটা শেষ করবেন সেটি নিয়েই তারা বেশি চিন্তিত।

নিজের ইনসমনিয়া নিয়ে সেকেন্ডারি স্কুলের শিক্ষক নাভিদ খান বলছেন, তিনি রাতে চার ঘণ্টার বেশি ঘুমাতে পারেন না। অবসাদগ্রস্ত দেহে দিনটা ভালোয় ভালোয় পার করতে পারবেন কিনা সেটি নিয়েই তার যত ভাবনা। আর এই ক্ষেত্রে তিনি একটি টেকনিক বা কৌশল অবলম্বন করেন। সেটি হচ্ছে, নিজের পুরো দিনটিকে তিনি কয়েকটি খণ্ডে ভাগ করে নেন। সেভাবে কাজগুলো শেষ করেন।

যুক্তরাজ্যে ইনসমনিয়া বা অনিদ্রা রোগে ভোগা মানুষের সংখ্যা প্রচুর। সামপ্রতিক তথ্য মতে, দেশটিতে শতকরা ৩০ ভাগ লোক ইনসমনিয়ায় আক্রান্ত। ইনসমনিয়াকে পরাস্ত করা সহজ নয়। কিন্তু ভালো ঘুম হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ানোর বেশ কিছু উপায় আছে। অনিদ্রা রোগের প্রভাব কাটাতে এনএইচএস কয়েকটি তরিকা অনুসরণ করতে পরামর্শ দিয়েছিল। যেমন নিজের দেহটিকে ক্লান্ত করে তোলার জন্য প্রতিদিন কিছুটা ব্যায়াম বা শরীরচর্চা করা, খাদ্য তালিকা থেকে চা-কফি জাতীয় পানীয় বা ক্যাফেইন কমিয়ে দেয়া। পাশাপাশি বলা হয়েছে, ধূমপান, অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ বা বেশি রাত পর্যন্ত অ্যালকোহল পান করলে ঘুম ব্যাহত হতে পারে।

আর ২৯ বছর বয়সী লেখক এলমারা এবগেরিয়েন বলেছেন, নির্ঘুম রাত কাটানোর পর তিনি ক্লান্তিতে হয়রান ও বিরক্ত থাকেন। এমনকি তার এই বিরক্তির বহি:প্রকাশও ঘটে তার চারপাশের লোকজনের ওপর। এলমারা হয়তো কোনো কোনো রাতে ৬ ঘন্টা পর্যন্ত ঘুমোতে পারেন কিন্তু প্রায় রাতেই তার কিছুক্ষণ পরপর ঘুম ভেঙে যায়। আর এর প্রভাব পড়ে তার জীবনযাপনের ওপর। তার অবসন্ন লাগে, বন্ধুদের সাথে সময় কাটাতে ইচ্ছে করে না। ইনসমনিয়ার কারণে এলমিরার স্বাস্থ্যের উপরে দীর্ঘস্থায়ী কোনো খারাপ প্রভাব পড়ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আশা করি এই অবস্থাটা দীর্ঘস্থায়ী হবে না। ২৩ বছর বয়সী মিউজিশিয়ান র্যায়ান এ্যাশলি বলেন, ঘুম না হওয়ার বাস্তবতার সাথে তিনি যেনো নিজেকে অনেকটাই খাপ খাইয়ে নিয়েছেন।

তবে জার্নাল সায়েন্সের নতুন এই প্রতিবেদন যদিও বলছে, ইনসমনিয়ার সঙ্গে দ্রুত মৃত্যুর কোনো সম্পর্ক নেই তবু অন্যান্য অসুখ যেমন ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রংশতা এবং ডিপ্রেশন বা বিষণ্নতার সঙ্গে ইনসমনিয়ার ঠিকই যোগসূত্র পাওয়া গেছে।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

সাবেক মন্ত্রী কায়কোবাদের সঙ্গে তুর্কী এমপির সাক্ষাৎ

অনিদ্রার সঙ্গে অকাল মৃত্যুর সম্পর্ক নেই

আপডেট সময় ০৭:২৮:২৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৯ নভেম্বর ২০১৮
লাইফস্টাইল ডেস্কঃ

যদি আপনি অনিদ্রা রোগে ভুগে থাকেন তাহলে সুসংবাদটা আপনার জন্য। সামপ্রতিক এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ঘুম না হওয়া রোগের সঙ্গে মানুষের দ্রুত মৃত্যুর কোনো সম্পর্ক নেই। গবেষণা প্রতিবেদনটি জার্নাল সায়েন্সে প্রকাশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ঘুমের আশায় ভোর পর্যন্ত যারা বিছানায় এপাশ-ওপাশ করেন তাদের উদ্বেগ কিছুটা কমাতে সাহায্য করবে এই গবেষণার ফল।

ঘুমহীনতার সঙ্গে দ্রুত মৃত্যুর সম্পর্ক না থাকা বিষয়ক সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর আগে গবেষকেরা কয়েক কোটি মানুষের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করেছেন। মোট ১৭টি গবেষণায় প্রায় ৩ কোটি ৭০ লাখ মানুষের তথ্য পর্যালোচনা করা হয়েছে। তবে ব্রিটেনের জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান এনএইচএস থেকে এর আগে যা বলা হতো, নতুন এই প্রতিবেদনের বক্তব্য তার পুরোপুরি বিপরীত। এনএইচএস-এর প্রতিবেদনে আগে বলা হয়েছিল, ইনসমনিয়ার কারণে মানুষের ওবেসিটি বা স্থূলতা, হূদরোগ ও টাইপ-টু ডায়বেটিসের ঝুঁকি বাড়ার পাশাপাশি মানুষের আয়ু্ও কমে যায়। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে ইনসমনিয়ায় ভুগছেন এমন মানুষেরা মূলত তাদের আয়ু নিয়ে চিন্তিত নন, বরং ঘুম না হওয়া ক্লান্ত দেহে কী করে দিনটা শেষ করবেন সেটি নিয়েই তারা বেশি চিন্তিত।

নিজের ইনসমনিয়া নিয়ে সেকেন্ডারি স্কুলের শিক্ষক নাভিদ খান বলছেন, তিনি রাতে চার ঘণ্টার বেশি ঘুমাতে পারেন না। অবসাদগ্রস্ত দেহে দিনটা ভালোয় ভালোয় পার করতে পারবেন কিনা সেটি নিয়েই তার যত ভাবনা। আর এই ক্ষেত্রে তিনি একটি টেকনিক বা কৌশল অবলম্বন করেন। সেটি হচ্ছে, নিজের পুরো দিনটিকে তিনি কয়েকটি খণ্ডে ভাগ করে নেন। সেভাবে কাজগুলো শেষ করেন।

যুক্তরাজ্যে ইনসমনিয়া বা অনিদ্রা রোগে ভোগা মানুষের সংখ্যা প্রচুর। সামপ্রতিক তথ্য মতে, দেশটিতে শতকরা ৩০ ভাগ লোক ইনসমনিয়ায় আক্রান্ত। ইনসমনিয়াকে পরাস্ত করা সহজ নয়। কিন্তু ভালো ঘুম হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ানোর বেশ কিছু উপায় আছে। অনিদ্রা রোগের প্রভাব কাটাতে এনএইচএস কয়েকটি তরিকা অনুসরণ করতে পরামর্শ দিয়েছিল। যেমন নিজের দেহটিকে ক্লান্ত করে তোলার জন্য প্রতিদিন কিছুটা ব্যায়াম বা শরীরচর্চা করা, খাদ্য তালিকা থেকে চা-কফি জাতীয় পানীয় বা ক্যাফেইন কমিয়ে দেয়া। পাশাপাশি বলা হয়েছে, ধূমপান, অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ বা বেশি রাত পর্যন্ত অ্যালকোহল পান করলে ঘুম ব্যাহত হতে পারে।

আর ২৯ বছর বয়সী লেখক এলমারা এবগেরিয়েন বলেছেন, নির্ঘুম রাত কাটানোর পর তিনি ক্লান্তিতে হয়রান ও বিরক্ত থাকেন। এমনকি তার এই বিরক্তির বহি:প্রকাশও ঘটে তার চারপাশের লোকজনের ওপর। এলমারা হয়তো কোনো কোনো রাতে ৬ ঘন্টা পর্যন্ত ঘুমোতে পারেন কিন্তু প্রায় রাতেই তার কিছুক্ষণ পরপর ঘুম ভেঙে যায়। আর এর প্রভাব পড়ে তার জীবনযাপনের ওপর। তার অবসন্ন লাগে, বন্ধুদের সাথে সময় কাটাতে ইচ্ছে করে না। ইনসমনিয়ার কারণে এলমিরার স্বাস্থ্যের উপরে দীর্ঘস্থায়ী কোনো খারাপ প্রভাব পড়ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আশা করি এই অবস্থাটা দীর্ঘস্থায়ী হবে না। ২৩ বছর বয়সী মিউজিশিয়ান র্যায়ান এ্যাশলি বলেন, ঘুম না হওয়ার বাস্তবতার সাথে তিনি যেনো নিজেকে অনেকটাই খাপ খাইয়ে নিয়েছেন।

তবে জার্নাল সায়েন্সের নতুন এই প্রতিবেদন যদিও বলছে, ইনসমনিয়ার সঙ্গে দ্রুত মৃত্যুর কোনো সম্পর্ক নেই তবু অন্যান্য অসুখ যেমন ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রংশতা এবং ডিপ্রেশন বা বিষণ্নতার সঙ্গে ইনসমনিয়ার ঠিকই যোগসূত্র পাওয়া গেছে।