তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্কঃ
সাম্প্রতিক সময়ে এসে অনলাইনে ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তার বিষয়টিই সবচেয়ে বেশি আলোচিত। গত দুই-তিন বছরের ধারাবাহিকতায় এই বছরের শুরু থেকেই হ্যাকারদের আক্রমণের ধার বেড়েই চলেছে।
ইতোমধ্যেই ফেসবুক, মাইক্রোসফট, অ্যাপল’র মতো প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে যে, তারা হ্যাকিংয়ের কবলে পড়েছে। তথ্য চুরি না হলেও এই খবরটি আশঙ্কাজনক বটে। এদিকে এই প্রতিষ্ঠানগুলোর হ্যাকিংয়ের খবরের রেশ পার হতে না হতেই টুইটারের বেশকিছু অ্যাকাউন্টের তথ্য চুরি যায়। এরপর অনলাইন নোট অ্যাপ্লিকেশন এভারনোটেও হামলা করে সাইবার অপরাধীরা। এতে প্রায় ৫০ মিলিয়ন অ্যাকাউন্টের আইডি ও এনক্রিপ্টেড পাসওয়ার্ড হাতিয়ে নেয় অপরাধীরা। আর তাই অনলাইনে যেকোনো ধরনের অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড শক্তিশালী করে তোলার বিষয়টিতে গুরুত্ব দিতে হবে। যার পাসওয়ার্ড যত বেশি শক্তিশালী হবে, তার অ্যাকাউন্ট হ্যাক করা ততই কঠিন হবে। আবার এনক্রিপ্টেড পাসওয়ার্ড হ্যাকারদের হাতে গেলেও তা উদ্ধার করতে পারবে না। পাসওয়ার্ডকে শক্তিশালী করে তোলার কিছু উপায় দেওয়া হলো এখানে।
পাসওয়ার্ডকে যথাসম্ভব লম্বা করতে হবে। সর্বনিম্ন ৮ অক্ষরের পাসওয়ার্ড আপনাকে নিরাপত্তা দিতে পারে। তবে ১৪ থেকে ২৫ অক্ষরের পাসওয়ার্ডকে সাধারণত সুরক্ষিত মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তাই নির্দিষ্ট কোনো ওয়েবসাইটে পাসওয়ার্ড ব্যবহারে অক্ষরের সীমাবদ্ধতা না থাকলে ১৪ বা তার বেশি অক্ষর ব্যবহার করা উচিত পাসওয়ার্ডে।
পাসওয়ার্ড শক্তিশালী করতে সাধারণ অক্ষরের পাশাপাশি ব্যবহার করুন সংখ্যা এবং বিশেষ চিহ্ন। অক্ষরগুচ্ছের আগে বা পারে বা মাঝে কয়েকটি সংখ্যা পাসওয়ার্ডকে অনেক বেশি শক্তিশালী করে তুলবে। সংখ্যার পাশাপাশি বিস্ময়কর চিহ্ন বা বিশেষ চিহ্নগুলোও পাসওয়ার্ড শক্তিশালী করার কার্যকর মাধ্যম। অনেক অ্যাকাউন্টে অবশ্য বিশেষ চিহ্ন ব্যবহার করা যায় না। সেক্ষেত্রে সংখ্যা ব্যবহার করতে পারেন।
ছোট হাতের অক্ষরের পাশাপাশি বড় হাতের অক্ষর ব্যবহার করুন। শব্দের অক্ষর গুচ্ছের কয়েকটি ছোট হাতের এবং কয়েকটি বড় হাতের অক্ষর ব্যবহার করুন।
প্রচলিত শব্দ এড়িয়ে চলুন, পাসওয়ার্ডের ক্ষেত্রে ডিকশনারিতে যেসব শব্দ থাকে, সেগুলো পরিহার করুন। একান্তই সেগুলো ব্যবহার করতে চাইলে শব্দকে একাধিকভাগে ভাগ করে মাঝে সংখ্যা বা অন্য কিছু ঢুকিয়ে দিন। একাধিকভাবে ভাগ করে সেগুলোকে উল্টেও নিতে পারেন। যেমন, সরাসরি password ব্যবহার না করে ব্যবহার করুন pass123word কিংবা wordpass কিংবা PassWord কিংবা Pass!123!Word।
পাসওয়ার্ড তৈরির ক্ষেত্রে কোনো একটি আস্ত বাক্যকেও মাথায় রাখতে পারেন। না, পুরো বাক্য পাসওয়ার্ড হিসেবে ব্যবহার করতে হবে না, বাক্যের শব্দগুলোর প্রথম অক্ষর ব্যবহার করতে পারেন। যেমন strike the iron when it is hot ব্যবহার করতে পারেন stiwiih।
বিশেষ অক্ষরকে বদলে দিন। যেমন, আপনার পাসওয়ার্ডে O (ও) অক্ষরটি থাকলে তার বদলে 0 (জিরো) এবং বিপরীতক্রমে 0 (জিরো)-এর বদলে O (ও) ব্যবহার করতে পারেন। আবার ‘S’ (ও) অক্ষরের বদলে ‘$’ (ও) চিহ্নটি বা ব্যবহার করুন। তেমনি ‘Z’ এর বদলে ‘2’, ‘C’এর বদলে ‘6’ প্রভৃতি ব্যবহার করতে পারেন।
সহজে অনুমান করা যায় এমন শব্দ এড়িয়ে চলুন, এমনকি অভিধানে না থাকলেও ব্যবহারকারীর নাম, প্রতিষ্ঠানের নাম, শহর, আত্মীয় স্বজনের নাম- এগুলো ব্যবহার না করাই ভালো। তেমনি সংখ্যার ক্ষেত্রে জন্মদিন, কোনো ধরনের অ্যাকাউন্ট নম্বর এড়িয়ে চলুন। খুব বেশি চাইলে সেগুলোর কোনোটির পুরোটা না নিয়ে অল্প দুয়েকটি অক্ষর নিন এবং তার সাথে বাড়তি অক্ষর বা সংখ্যা বা চিহ্ন ব্যবহার করুন।
একই পাসওয়ার্ড একাধিক অ্যাকাউন্টে ব্যবহার করবেন না। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, অনেকের বিভিন্ন ধরনের অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ২০টি বা ৩০টি পেরিয়ে যায়। সে ক্ষেত্রে এতগুলো পাসওয়ার্ড মনে রাখা ঝামেলা মনে হলেও একাধিক অ্যাকাউন্টে একই পাসওয়ার্ড ব্যবহার করবেন না।
পাসওয়ার্ডে অ্যাকাউন্টের নাম ব্যবহার করবেন না। অনেক ক্ষেত্রেই দেখায় অ্যাকাউন্টের আইডির সাথে মিলিয়ে সেটিই ব্যবহার করা হয় পাসওয়ার্ড হিসেবে। এতে তা মনে রাখতে সহজ হলেও ব্যবহারের জন্য সঠিক নয়। এগুলো সহজেই ভেঙে ফেলা যায়।
এক সার্ভিসের মাধ্যমে অন্য সার্ভিসে লগ-ইন করার ক্ষেত্রে সতর্ক হোন। সেক্ষেত্রে প্রথম অ্যাকাউন্টটির পাসওয়ার্ডকে বেশি শক্তিশালী করুন।
পাসওয়ার্ড সংরক্ষণে মনোযোগী ও সতর্ক হোন। অনেকেরই ২০, ৩০ বা আরও বেশি অ্যাকাউন্ট থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে এতগুলো অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড সংরক্ষণ করতে পারেন একটি ওয়ার্ড বা এক্সেল ফাইলে। ওই ফাইলটিকে অবশ্যই অত্যন্ত জটিল পাসওয়ার্ড দিয়ে সংরক্ষণ করতে হবে। কেননা, ওই একটি ফাইল খুলতে পারলে সব অ্যাকাউন্টটি হাতিয়ে নেওয়া যাবে। অনলাইনেও কোথাও পাসওয়ার্ডগুলো সংরক্ষণ করতে পারেন। এখানেও ওই সাইটের পাসওয়ার্ডটি বেশি জটিল ও শক্তিশালী হওয়া বাঞ্ছনীয়।