ধর্ম ও জীবন ডেস্কঃ
আজ গোটা জগতের মুসলমানদের আবেগ-অনুরাগ প্রাণোত্সারিত ভালোবাসা আর উচ্ছ্বাসে একাকার হওয়া প্রাণ-মন-মনন আকুল করা দিন। আজ বারোই রবিউল আউয়াল পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)। বিশ্বমানবতার মুক্তির দিশারী রহমাতুল্লিল আ’লামিন সাইয়েদুল মুরসালিন খাতামুন্নাবিয়ীন তাজদারে মদিনা জগত্কুল শিরোমণি সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলা আলিহি ওয়া সাল্লামের জন্ম ও ওফাত দিবস। আবেগে ভাসা কবির ভাষায়-‘তিনি আলোর মিনার, নূর মদিনার জান্নাতি বুলবুল’/তিনি যষ্টি মুকুল বৃষ্টি বকুল বৃষ্টি ভেজা ফুল/নিখিলের চির সুন্দর সৃষ্টি আমার মুহাম্মদ রাসুল…।
আজ থেকে প্রায় সাড়ে ১৪শ বছর পূর্বে আইয়্যামে জাহেলিয়তের যুগে ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দের এই দিনে সুবহে সাদেকের সময় আরবের মক্কা নগরীর সম্ভ্রান্ত কুরাইশ বংশে মা আমেনার কোলে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। জন্মের পূর্বেই পিতৃহারা হন এবং জন্মের অল্পকাল পরই বঞ্চিত হন মাতৃস্নেহ থেকে। অনেক দুঃখ-কষ্ট আর অসীম প্রতিকূলতার মধ্যদিয়ে চাচা আবু তালিবের আশ্রয়ে বড় হয়ে ওঠেন। চল্লিশ বছর বয়সে তিনি মহান আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীনের পক্ষ থেকে নবুওয়তের মহান দায়িত্ব লাভ করেন। অসভ্য বর্বর ও পথহারা মানব জাতিকে সত্যের সংবাদ দিতে তাদের কাছে তুলে ধরেন তাওহীদের বাণী। কিন্তু অসভ্য-বর্বর আরব জাতি দাওয়াত গ্রহণ না করে তার ওপর নিপীড়ন শুরু করে। আল্লাহর সাহায্যের ওপর ভরসা করে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য জীবন বাজি রেখে সংগ্রাম চালিয়ে যান তিনি। ধীরে ধীরে সত্যান্বেষী মানুষ তার সাথী হতে থাকে। অন্যদিকে কাফেরদের ষড়যন্ত্রও প্রবল আকার ধারণ করে। একপর্যায়ে তারা রাসুলকে (সা.) হত্যার নীলনকশা প্রণয়ন করে। রাসুল (সা.) আল্লাহর নির্দেশে জন্মভূমি ত্যাগ করে মদীনায় হিজরত করেন। মদীনায় তিনি ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠা করেন এবং মদীনা সনদ নামে একটি লিখিত সংবিধান প্রণয়ন করেন। মদীনা সনদ বিশ্বের প্রথম লিখিত সংবিধান হিসাবে খ্যাত। এ সংবিধানে ইহুদী, খ্রিষ্টান, মুসলমানসহ সকলের অধিকার স্বীকৃত হয়। ২৩ বছর অক্লান্ত শ্রম সাধনায় রাসুল (সা.) দ্বীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সফল হন। মক্কা বিজয়ের মাধ্যমে তা পূর্ণতা লাভ করে।
খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী বিখ্যাত পণ্ডিত মাইকেল এইচ হার্ট তার ‘দ্য হান্ড্রেড’ গ্রন্থে হযরত মুহাম্মদকে (সা.) ‘সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ’ হিসাবে স্থান দিয়েছেন। ব্রিটিশ মনীষী সাহিত্যিক জর্জ বার্নার্ড শ বলেছেন, এই অশান্ত পৃথিবীতে তার মতো একজন মানুষের প্রয়োজন। তিনি বেঁচে থাকলে পৃথিবী জুড়ে সুখের সুবাতাস বইতো। তাঁর আগমনে যে বিপ্লবের সূচনা হয়েছিল দুনিয়া জুড়ে তা বিস্তৃত হয়েছে।
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে বিভিন্ন ধর্মীয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। রাসুল (সা.) এর জীবন ও কর্মের ওপর আলোচনা, সিম্পোজিয়াম, সেমিনার ও মিলাদ মাহফিলসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। কয়েকটি ধর্মীয় সংগঠন র্যালি বের করবে। দিবসটির তাত্পর্য তুলে ধরে বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনসহ বিভিন্ন টিভি চ্যানেল বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করছে। জাতীয় দৈনিকগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্রও প্রকাশ করেছে। আজ সংবাদপত্রসমূহে ছুটি পালিত হবে। তাই আগামীকাল দৈনিক পত্রিকাসমূহ প্রকাশিত হবে না।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তারা শুভেচ্ছা জানান এবং রাসুলের (সা.) আদর্শ নিজেদের জীবনে প্রতিফলন ঘটাতে আল্লাহর কাছে দোয়া করেন।
জাতীয় পার্টি-জেপি’র বিবৃতি
জাতীয় পার্টি-জেপি’র চেয়ারম্যান এবং পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, এমপি এবং দলের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী শেখ শহীদুল ইসলাম দিবসটি উপলক্ষে দেশবাসী বিশেষ করে মুসলমানদের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে বিবৃতি প্রদান করেছেন। বিবৃতিতে জেপি’র নেতৃদ্বয় বলেন, আমদের প্রিয় নবী ও সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হযরত মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন এই বিশ্বে সর্বোচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন ব্যক্তি। তার আবির্ভাবে এই বিশ্ব জগত এমন এক নবীকে পেয়েছিল যাকে আল্লাহ তায়ালা বিশ্ব জগতে রহমত হিসাবে উল্লেখ করেছেন। তিনি নিজ ?কৃতিত্ব ও পূণ্যতার গুণে মর্যাদার শীর্ষে পৌঁছেছিলেন। তার চরিত্র ছিল সৌন্দর্য মণ্ডিত। তিনি এই বিশ্বে অন্ধকারকে বিতারিত করে আলো ছড়িয়েছিলেন। বিবৃতিতে তারা বলেন, আজকে এই সংঘাতময় বিশ্বে তার আদর্শ অনুসরণ ও প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শান্তি, সৌহার্দ্য ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা সম্ভব। ঈদে মিলাদুন্নবীর (সা.) এই পবিত্র লগ্নে তাই আমরা তার আদর্শ অনুসরণের দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ করব এবং তার আদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্যা অঙ্গীকার বদ্ধ হব।
জেপি’র কর্মসূচি: দিবসটি উপলক্ষে শনিবার জাতীয় পার্টি জেপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বাদ যহোর এক আলোচনা সভা ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া জাতীয় পার্টি-জেপি’র চেযারম্যান আনোয়ার হোসন মঞ্জু, এমপি তার নির্বাচনী এলাকা ভাণ্ডারিয়ায় মিলাদ মাহফিল ও আলোচনা সভায় যোগদান করবেন।