সরকারের নীতিনির্ধারকরা নির্বাচনের আগে বলছিলেনও, এটি নিয়মরক্ষার নির্বাচন। শিগগিরই আরেকটি নতুন নির্বাচন দেওয়া হবে। কিন্তু, নির্বাচনের পর বিরোধীদল যখন আন্দোলন থেকে সরে আসলো সরকারও বলতে শুরু করলো, ২০১৯ সালের আগে কোনো নির্বাচন নয়। তারপরও মনে করা হচ্ছিলো যে, এটা কথার কথা। কারণ, বিদেশিদেরকে সরকারের তরফ থেকে কথা দেওয়া হয়েছিলো, এক বছরের মধ্যে নির্বাচন হবে। সেই প্রতিশ্রুতি তাদেরকে রক্ষা করতে হবে।
এই ৫ জানুয়ারির মূল্যায়ন করতে গিয়ে অধিকাংশ নেতা-কর্মীই তাদের কর্মসূচিকে সফল হিসেবে দেখছেন। ঢাকার বাইরে এর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। এমনকি ঢাকায়ও বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ হয়েছে। বিশেষ করে বেগম খালেদা জিয়াকে অফিসের ভেতর আটকে রেখে তালা লাগানোর ঘটনাটি পুরোপুরি বিরোধীদলের পক্ষে গেছে। কর্মসূচি ছিলো, বেগম খালেদা জিয়া নয়াপল্টনে যেতে পারলে সমাবেশ হবে। এজন্য নয়াপল্টনের আশপাশে অর্থাৎ শান্তিনগর, রাজারবাগ, বিজয়নগর, ফকিরের পুল এলাকায় নেতা-কর্মীরা বিচ্ছিন্নভাবে প্রস্তুতও ছিলো। খালেদা জিয়া এলেই তারা শ্লোগান দিয়ে জড়ো হতেন। কিন্তু, বেগম জিয়াকে তালা দিয়ে গুলশানে আটকে রাখায় সেটি হয়ে উঠেনি। কৌশলগত কারণে তারা জমায়েত হননি। এক্ষেত্রে বেগম খালেদা জিয়াকে আসতে দিলে বোঝা যেতো, বাধা অতিক্রম করে সমাবেশ করতে পারেন কিনা।
অন্যদিকে, বেগম খালেদা জিয়াকে তালা দিয়ে আটকে রেখে কঠোর সমালোচনার মুখেও পড়েছে সরকার। কারণ, এর আগে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীসহ নীতিনির্ধারকরা সবাই বলছিলেন, খালেদা জিয়াকে আটকে রাখা হয়নি। তার বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে মাত্র। তারা বার বার দৃঢ়ভাবেই একথাটি বলছিলেন। তাদের ওই কথাটি নিজেরাই মিথ্যা প্রমাণ করলেন তালা দিয়ে আটকানোর মাধ্যমে।
একদিনের আন্দোলনে সরকারের পতন হয় না, এটা সবাই বোঝেন। পৃথিবীর কোথায়ও এর নজিরও নেই। আন্দোলনকে ক্রমান্বয়ে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যেতে হয়। তবে এক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, ৫ জানুয়ারির এক দিনেই আন্দোলন যতটা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গেছে তা ২০১৩ সালে তিন মাসের কর্মসূচিতেও সম্ভব হয়নি। বলা যায়, সরকার তার পদক্ষেপের চরম পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। বিরোধীদলীয় নেত্রীকে তালা দিয়ে আটকানোর পর আর কোনো অস্ত্র সরকারের হাতে নেই। এরপর এখনকার পরিস্থিতি মোকাবেলা সরকার কীভাবে করবে সেটাই বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। ঢাকা শহরে দু’চারটে গাড়ি নামিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা সম্ভব নয়, যদিও এর মাধ্যমে প্রচার করার চেষ্টা করা হয়- পরিস্থিতি স্বাভাবিক। ঢাকার সঙ্গে অন্যান্য জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল না করা গেলে, লাগাতারভাবে অবরোধ চলতে থাকলে কয়েক দিনের মধ্যেই জনজীবন বিপন্ন হয়ে পড়বে। খাদ্যদ্রব্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর সংকট দেখা দেবে। এর সব দায় গিয়ে পড়বে সরকারের ওপর। সেই পরিস্থিতিতে সরকার নিশ্চয়ই বাধ্য হবে আলোচনায় আসতে, এটা মনে করা যাচ্ছে।