বিনোদন ডেস্কঃ
আঁখি আলমগীর। বাংলাদেশের মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির নন্দিত রাজকন্যা বলে তাকে ডাকেন কেউ কেউ। প্লে-ব্যাক করেছেন অসংখ্য সিনেমায়। স্টেজ পারফরমার হিসেবেও তিনি রয়েছেন আলোচনার শীর্ষে। অজস্র শ্রোতাপ্রিয় গানের এই গায়িকা জানালেন নতুন বছর নিয়ে তার পরিকল্পনার কথা। বর্তমান মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে স্পষ্ট ক্ষোভও উঠে এলো আলমগীর-কন্যার কণ্ঠে। আলাপে ছিলেন -রুদ্র রুদ্রাক্ষ
-আমি আসলে পরিকল্পনা করে কখনই কোনো কিছু করি না। যখন যেটা ভালো লাগে তখন সেটা করে ফেলি। এটাকে পাগলামো হিসেবে যদি অভিহিত করা হয় তাহলে আমি বলব, যেকোনো শিল্পীর এটুকু শৈল্পিক পাগলামো থাকা দরকার।
নতুন কোনো গান আসার সম্ভাবনা আছে কি?
-হ্যাঁ, জানুয়ারিতে একটা গান আসছে। ওটার সব কাজ শেষ। মিউজিক ভিডিওর কাজও কমপ্লিট করে ফেলেছি। তা ছাড়া আরও দুটো গান রেডি রয়েছে। সেগুলো রিলিজ দেব খুব দ্রুত। মূলত এই বছরটা হতে যাচ্ছে আমার ধুম-ধারাক্কা বছর। গেল বছর আমি মেলোডিয়াস ঘরানার গান করেছি। এ বছর প্রায় সব গানই হবে ফাস্ট বিটের।
স্টেজে কি আগের মতই নিয়মিত থাকবেন?
-অবশ্যই। একজন শিল্পীর জন্য স্টেজ অনেক বড় একটা প্ল্যাটফর্ম। ওখানে সরাসরি দর্শকদের সঙ্গে কমিউনিকেট করা যায়। আমি স্টেজ এনজয় করি।
গত বছরের তুলনায় গান এবং স্টেজ শোর সংখ্যা কমবে না বাড়বে?
-বাড়তেও পারে কমতেও পারে। নির্ভর করছে প্রেক্ষাপটের ওপরে। আমি মূলত সংখ্যা না মানে বিশ্বাস করি। প্রতিদিন আমি নিজেকে একটু একটু করে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি।
বর্তমান মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?
-আমরা অভিভাবক-শূন্য। এই ইন্ডাস্ট্রিতে আমাদের কোনো অভিভাবক নেই। এটা সবচে বড় সমস্যা। কেউ কোনো ঝামেলায় পড়লে নিজে নিজে সমাধান করতে হবে। ব্যান্ডের ক্ষেত্রে দেখুন না ‘বাম্বা’ আছে। ওদের কোনো সমস্যা হলে বাম্বার পক্ষ থেকে সমাধানের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু আমাদের সমস্যা নিয়ে যাওয়ার জন্য কোনো সাংগঠনিক ঘর নেই। আমরা নিজেরা যে উদ্যোগ নিয়ে কিছু একটা করব, তারও উপায় নেই। যেই কিছু একটা করতে যাব তখনই বলা হবে ‘নিশ্চয়ই ওদের কোনো স্বার্থ আছে’। মানসিক পরিবর্তনটাও এই ক্ষেত্রে বেশ জরুরি। সবাইকে ভাবতে হবে আমাদের একটাই মাত্র স্বার্থ সেটা হচ্ছে শিল্পীদের স্বার্থ সংরক্ষণ করা। কোনো সংগঠন বানানোর পরিকল্পনা রয়েছে কী?
-না। যদিও একটা সংগঠন তৈরি করা ও নেতৃত্ব দেওয়ার মতো সাংগঠনিক দক্ষতা আমার রয়েছে। কিন্তু ওই যে আমি মানুষের জন্য কাজ করতে গিয়ে মানুষের কটু কথা শুনতে রাজি নই। একটা উদাহরণ দেই, এক সময় শিল্পীদের কোনো সমস্যা হলে আমি চেষ্টা করতাম অন্য শিল্পীদের কাছ থেকে অনুদান তুলে তাকে সাহায্য করার। এ রকম বেশ কয়েকজনকে করেছি। কারণটা হলো আমি চাই না, শিল্পীদের নামের সাথে দুস্থ শব্দটা যোগ হোক। এরপর সবাই বলাবলি শুরু করল, ওদের নিশ্চয়ই কোনো না কোনো স্বার্থ আছে। তা না হলে ঘরের খেয়ে কেন বোনের মোষ তাড়াতে যাবে? এরপর থেকে নিজের মতো করে কাউকে কিছু না জানিয়েই কাজটা করে যাচ্ছি। এ রকম প্রেক্ষাপটে শিল্পীদের স্বার্থে যদি কোনো সংগঠন করতে যাই সেক্ষেত্রেও অনেকে ভিন্ন উদ্দেশ্য খুঁজে পাবে।
সংগঠন কতটা জরুরি?
-অত্যন্ত জরুরি। আপনি শিল্পীদের উপার্জনের দিকে তাকান। আগে শিল্পীদের দুইভাবে উপার্জন হতো। একটা অ্যালবাম বের করে অন্যটা স্টেজ শো করে। এখন সারা পৃথিবীর সাথে সাথে বাংলাদেশেও অ্যালবাম যুগের পতন ঘটেছে। মানুষের আগ্রহ এখন শুধুমাত্র ডিজিটাল মিডিয়ায়। এবার বিদেশি একজন শিল্পী এই ডিজিটাল মিডিয়া থেকে লাখ লাখ ডলার উপার্জন করছে আর আমরা পাচ্ছি টোকেন মানি। এই ক্ষেত্রে প্রথমত দরকার শিল্পীদের নিয়ে সেমিনার করা। ডিজিটাল মিডিয়া সম্পর্কে সচেতন করা। রয়ালিটি সম্পর্কে সঠিক ধারণা দেওয়া। আর এই কাজগুলো করতে হবে সংগঠনের ব্যানারে।
ইউটিউব ভিউ নিয়ে আঁখি আলমগীরের অভিমত কী?
-ইউটিউব ভিউ জিনিসটাকে আমি একটু অন্যরকমভাবে দেখি। আমার কোনো গান বেশি ভিউ হলে আমার ভালো লাগবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কোন গান ভিউ কম হলে ভেঙে পড়তে হবে এ রকমটায় আমি বিশ্বাস করি না। আমার কাছে মনে হয়, ইউটিউব ভিউটা তরুণদের একটু বিপথে নিচ্ছে। অনেক ভালো গানের শিল্পী ভিউ কম হচ্ছে বলে ভেঙে পড়ছে মানসিকভাবে। আবার মিলয়নের ওপরে ভিউ হওয়া গানের শিল্পী আর কোনো ভালো গান নিয়ে আসতে পারছে না। এজন্য আমি সবাইকে আহ্বান জানাব মানসম্মত গানের দিকে নজর দেওয়ার জন্য। যে গানগুলো মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে সহায়ক হবে। কোনো গানের ভিউ বেশি হলে উচ্ছ্বসিত হওয়া দোষের না, কিন্তু ভিউ কম হলে ভেঙে পড়া ঘোর অন্যায়।