ঢাকা ০৭:০৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ ২০২৫, ২৯ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

একটি সেলফি ও চারটি সোনার বিস্কুট!

জাতীয় ডেস্কঃ

চারটা বিস্কুটের দাম ১৮ লাখ টাকা! এও কি সম্ভব? সব বাজে কথা। আসলেই কি বাজে কথা? বিষয়টা প্রথমে মিথ্যা বানোয়াট মনে হচ্ছিল। কিন্তু যা বললাম, তা এক রত্তিও মিথ্যা নয়। আর মিথ্যা হবে কি করে, যদি বিস্কুটগুলো সোনার হয়। আচ্ছা খোলাসা করে বলি।

খবর পেলাম, সাঁথিয়া এলাকা থেকে প্রিয়া জুয়েলার্সের মালিকের ৪০/৫০ ভরি স্বর্ণ খোয়া গেছে। যখন পুলক বাবু (প্রিয়া জুয়েলার্সের মালিক) আমার কাছে তার বক্তব্য পেশ করলেন, প্রথমে তা অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছিল। জানতে চাইলাম কি হয়েছিল? তিনি জানালেন সাথিয়া বাজারে তার ও তার ভাই তিলক কর্মকারের যথাক্রমে প্রিয়া জুয়েলার্স ও মাতৃ জুয়েলার্স নামে দুটি জুয়েলারির দোকান আছে। ২০/২৫ দিন আগে তার দোকানের কর্মচারী বিশ্বনাথ কর্মকার ও তার আপন ভাতিজা তন্ময় কর্মকার মানিকগঞ্জ যায় গহনা তৈরির কাঁচামাল কিনতে। পথে তার ভাতিজা তন্ময় কর্মকার কর্মচারী বিশ্বনাথ কর্মকারের সাথে একটা সেলফি তোলে। আসার পথে নদী পারাপারের সময় ভাতিজা তন্ময় অযুহাত দেখিয়ে আলাদা হয়ে যায়।

এরপর নদী পার হয়ে সাঁথিয়া এলাকার সাটিয়াকোলা নামক জায়াগায় এলে কর্মচারী বিশ্বনাথ কর্মকারকে ৩/৪ জন সন্ত্রাসী অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ক্রয়কৃত ৫৫ ভরি স্বর্ণ লুট করে নেয়। এরপর বিষয়টি তিনি অবগত হলে প্রথমেই ভাতিজার প্রতি তার সন্দেহ হয়। তার জন্য পারিবারিকভাবে বসে খোয়া যাওয়া স্বর্ণ উদ্ধারের চেষ্টা করেন। যেহেতু তিনি তার ভাতিজা তন্ময়কে সন্দেহ করেন তাই আর থানা পুলিশের ঝামেলায় যাননি। কিন্তু, অনেক বার দেন দরবারের পরও কাজ না হওয়ায় আশাহত হয়ে পুলিশের কাছে আসেন।

আমরা প্রথমে তন্ময়কে আটক করে তার ফোন চেক করে সেলফিটি পাই। এরপর সে যাকে ছবি পাঠিয়েছিল তাকে ধরি। তার নাম আবু হানিফ কালু। অতঃপর দুই জনের স্বীকারোক্তি মোতাবেক জানতে পারি বাদির আপন ভাই তথা তন্ময়ের বাবা এর মূল পরিকল্পনাকারী। তার নাম তিলক কর্মকার। তিনি সাঁথিয়া বাজারে মাতৃ জুয়েলার্সে মালিক। তিনি স্থানীয় প্রভাবশালী কতিপয় বখাটের সাথে পরিকল্পনা করেন যে, তার ভাই পুলককে পথে বসাবেন। সে মোতাবেক নিজ ছেলেকে স্বর্ণ কেনার সময় সাথে পাঠান।

পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তার ছেলে তন্ময় সেল ফোনে কাজিরহাটের বখাটে মামুন সিকদার ও করমজার কালুর সাথে টাইম টু টাইম তথ্য দিতে থাকে। কৌশলে বাদির কর্মচারী বিশ্বনাথের সাথে সেলফি তুলে আসামিদের কাছে পাঠিয়ে দেয়। যাতে চিনতে কোনো অসুবিধা না হয়। অতঃপর নদী পার হলে দুস্কৃতিকারীরা বিশ্বনাথের পিছু নেয়। এরপর সুযোগ বুঝে মামুন শিকদার, কালু ও তার সহযোগিরা সাটিয়াকোলা নামক জায়গায় ৫টি স্বর্ণের বিস্কুট ছিনিয়ে নেয়। যার প্রতিটির ওজন ১০ ভরি। এরপর কালুর বাড়ির বিছানার তোষকের নিচ থেকে ১টি, তন্ময় কর্মকারের ওয়ারড্রোব থেকে ১টি, মামুন শিকদারের কথা অনুযায়ী পাবনা নয়নামতির মোতালেব মালুর কাছ থেকে আরও ২টি স্বর্ণের বার (বিস্কুট আকৃতি) উদ্ধার করা হয়। অপরটির সন্ধান চলমান রয়েছে। এ ব্যাপারে সাঁথিয়া থানায় মামলা রুজু হয়েছে। পুরো কাজটি সম্পাদন করতে মাত্র ১ দিন সময় লেগেছে।

লেখক : মিয়া মোহাম্মদ আশিস বিন্ হাছান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, বেড়া সার্কেল, পাবনা

জিহাদুল কবির, এসপি, পাবনা এর ফেসবুক থেকে

সূত্র: কালের কন্ঠ অনলাইন।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

মুরাদনগরে শিশু সুরক্ষায় ক্যাপিটেশর গ্রান্টপ্রাপ্ত এতিমখানার ভূমিকা শীর্ষক সেমিনার

একটি সেলফি ও চারটি সোনার বিস্কুট!

আপডেট সময় ০৪:৪৪:০৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ জুলাই ২০১৮
জাতীয় ডেস্কঃ

চারটা বিস্কুটের দাম ১৮ লাখ টাকা! এও কি সম্ভব? সব বাজে কথা। আসলেই কি বাজে কথা? বিষয়টা প্রথমে মিথ্যা বানোয়াট মনে হচ্ছিল। কিন্তু যা বললাম, তা এক রত্তিও মিথ্যা নয়। আর মিথ্যা হবে কি করে, যদি বিস্কুটগুলো সোনার হয়। আচ্ছা খোলাসা করে বলি।

খবর পেলাম, সাঁথিয়া এলাকা থেকে প্রিয়া জুয়েলার্সের মালিকের ৪০/৫০ ভরি স্বর্ণ খোয়া গেছে। যখন পুলক বাবু (প্রিয়া জুয়েলার্সের মালিক) আমার কাছে তার বক্তব্য পেশ করলেন, প্রথমে তা অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছিল। জানতে চাইলাম কি হয়েছিল? তিনি জানালেন সাথিয়া বাজারে তার ও তার ভাই তিলক কর্মকারের যথাক্রমে প্রিয়া জুয়েলার্স ও মাতৃ জুয়েলার্স নামে দুটি জুয়েলারির দোকান আছে। ২০/২৫ দিন আগে তার দোকানের কর্মচারী বিশ্বনাথ কর্মকার ও তার আপন ভাতিজা তন্ময় কর্মকার মানিকগঞ্জ যায় গহনা তৈরির কাঁচামাল কিনতে। পথে তার ভাতিজা তন্ময় কর্মকার কর্মচারী বিশ্বনাথ কর্মকারের সাথে একটা সেলফি তোলে। আসার পথে নদী পারাপারের সময় ভাতিজা তন্ময় অযুহাত দেখিয়ে আলাদা হয়ে যায়।

এরপর নদী পার হয়ে সাঁথিয়া এলাকার সাটিয়াকোলা নামক জায়াগায় এলে কর্মচারী বিশ্বনাথ কর্মকারকে ৩/৪ জন সন্ত্রাসী অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ক্রয়কৃত ৫৫ ভরি স্বর্ণ লুট করে নেয়। এরপর বিষয়টি তিনি অবগত হলে প্রথমেই ভাতিজার প্রতি তার সন্দেহ হয়। তার জন্য পারিবারিকভাবে বসে খোয়া যাওয়া স্বর্ণ উদ্ধারের চেষ্টা করেন। যেহেতু তিনি তার ভাতিজা তন্ময়কে সন্দেহ করেন তাই আর থানা পুলিশের ঝামেলায় যাননি। কিন্তু, অনেক বার দেন দরবারের পরও কাজ না হওয়ায় আশাহত হয়ে পুলিশের কাছে আসেন।

আমরা প্রথমে তন্ময়কে আটক করে তার ফোন চেক করে সেলফিটি পাই। এরপর সে যাকে ছবি পাঠিয়েছিল তাকে ধরি। তার নাম আবু হানিফ কালু। অতঃপর দুই জনের স্বীকারোক্তি মোতাবেক জানতে পারি বাদির আপন ভাই তথা তন্ময়ের বাবা এর মূল পরিকল্পনাকারী। তার নাম তিলক কর্মকার। তিনি সাঁথিয়া বাজারে মাতৃ জুয়েলার্সে মালিক। তিনি স্থানীয় প্রভাবশালী কতিপয় বখাটের সাথে পরিকল্পনা করেন যে, তার ভাই পুলককে পথে বসাবেন। সে মোতাবেক নিজ ছেলেকে স্বর্ণ কেনার সময় সাথে পাঠান।

পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তার ছেলে তন্ময় সেল ফোনে কাজিরহাটের বখাটে মামুন সিকদার ও করমজার কালুর সাথে টাইম টু টাইম তথ্য দিতে থাকে। কৌশলে বাদির কর্মচারী বিশ্বনাথের সাথে সেলফি তুলে আসামিদের কাছে পাঠিয়ে দেয়। যাতে চিনতে কোনো অসুবিধা না হয়। অতঃপর নদী পার হলে দুস্কৃতিকারীরা বিশ্বনাথের পিছু নেয়। এরপর সুযোগ বুঝে মামুন শিকদার, কালু ও তার সহযোগিরা সাটিয়াকোলা নামক জায়গায় ৫টি স্বর্ণের বিস্কুট ছিনিয়ে নেয়। যার প্রতিটির ওজন ১০ ভরি। এরপর কালুর বাড়ির বিছানার তোষকের নিচ থেকে ১টি, তন্ময় কর্মকারের ওয়ারড্রোব থেকে ১টি, মামুন শিকদারের কথা অনুযায়ী পাবনা নয়নামতির মোতালেব মালুর কাছ থেকে আরও ২টি স্বর্ণের বার (বিস্কুট আকৃতি) উদ্ধার করা হয়। অপরটির সন্ধান চলমান রয়েছে। এ ব্যাপারে সাঁথিয়া থানায় মামলা রুজু হয়েছে। পুরো কাজটি সম্পাদন করতে মাত্র ১ দিন সময় লেগেছে।

লেখক : মিয়া মোহাম্মদ আশিস বিন্ হাছান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, বেড়া সার্কেল, পাবনা

জিহাদুল কবির, এসপি, পাবনা এর ফেসবুক থেকে

সূত্র: কালের কন্ঠ অনলাইন।