ঢাকা ০৩:২৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এমপিদের নির্বিঘ্ন প্রচারণার সুযোগ চায় আ.লীগ

জাতীয় ডেস্ক:

স্থানীয় নির্বাচনে এমপিদের প্রচারণা ও স্বাভাবিক রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ রেখে আচরণবিধির পরিবর্তন চেয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আগারগাঁওস্থ নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে বৈঠক শেষে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে সাংবাদিকদের কাছে এ কথা জানান প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম। তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা, চার নির্বাচন কমিশনার ও ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদের সঙ্গে বৈঠক করে।

এইচটি ইমাম বলেন, আরপিও নিয়ে বাস্তবে অনেক সমস্যা হচ্ছে। আমরা সেই সমস্যাগুলো আলোচনা করেছি। আচরণবিধি যেন নির্বাচনে বাধার সৃষ্টি না করে। নির্বিঘ্নে নির্বাচন করার জন্য সবার জন্য সমান সুযোগ দিতে যেটুকু দরকার, সেটুকুই যেন তারা রাখেন। তিনি আরো বলেন, অনেক সময় মন্ত্রীদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। সিটি করপোরেশনে যেসব এমপি আছেন, নির্বাচনের কারণে এলাকায় যেতে পারেন না। গাজীপুর বা খুলনায় তো অনেক এমপি আছেন। তাদের ওপর যদি ওরকম নিয়ন্ত্রণ করা হয়, তাহলে তারা অচল হয়ে যাবেন। এ জিনিসটি বাস্তবায়নমূলক যেন হয়, সেই বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সীমানা নির্ধারণে নির্বাচন কমিশনের যে গাইডলাইন আছে, সে গাইডলাইনেই তারা আটকে যাচ্ছে।

এইচটি ইমাম বলেন, আগামী আদমশুমারির আগে সংসদীয় সীমানায় পরিবর্তন আনার এখতিয়ার নির্বাচন কমিশনের নেই। এ-সংক্রান্ত পরিবর্তন আইনি জটিলতার মুখে পড়তে পারে। বিক্ষুব্ধরা উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হতে পারেন।’ তিনি জানান, ২০১১ সালের আদমশুমারির কারণে ২০১৩ সালে সংসদীয় আসনের সীমানা পরিবর্তন সহজ হয়েছে। কিন্তু এখন তো আদমশুমারি হয়নি। নির্বাচনের যতটুকু সময় আছে, সেই সময়ের মধ্যে নির্বাচনী পরিচালনা আইন ও সংসদীয় আসনে সীমানা পরির্তন ইসির জন্য চ্যালেঞ্জ হবে। তবে সিদ্ধান্ত নেবে ইসি নিজেই। কারণ ইসি স্বাধীন ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। সরকার সব সময় ইসিকে শক্তিশালী করতে কাজ করেছে। তিনি বলেন, ‘ইসি সীমানার যে খসড়া প্রকাশ করেছে তার অনেক বিষয়ে আমাদের আপত্তি রয়েছে। জনগণও এটি চায় না। কিছুদিন পর সংসদীয় আসনে শুনানি হবে। আমরা তার আগে ইসিকে এসব বিষয় অবহিত করতে এসেছি।

এমপিদের প্রচার-প্রচারণা নিয়ে তিনি ভারতের উদাহরণ দিয়ে বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে জনপ্রতিনিধারা নির্বাচনে প্রচারণা চালান। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে প্রচারণা চালিয়েছেন। আমাদের জনপ্রতিনিধিদের প্রচারণার সুযোগ চাই। আমাদের প্রধানমন্ত্রী নিয়েও কথা বলেছে একটি দল। ওনারা জানেন না নির্বাচনে জয়লাভের পরদিন থেকে দলগুলোকে পরের নির্বাচনে প্রচারণার জন্য প্রস্তুত হতে হয়। আর আমাদের দলের সভাপতি স্থানীয় আওয়ামী লীগের খরচে জনসভা করেছেন, রাষ্ট্রীয় টাকায় নয়।

এদিকে, আওয়ামী লীগের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে সিইসির বরাদ্দ দিয়ে ইসি সচিব বলেন, এগুলো কমিশন সভায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হবে। আইনসঙ্গত বিষয় বিবেচনা করে ইসি সিদ্ধান্ত নেবে। এদিকে গতকাল কমিশন সভায় আইন সংস্কারের খসড়া অনুমোদন করার কথা থাকলেও তা করতে পারেনি ইসি। কমিশন সভা শেষে ইসি সচিব সাংবাদিকদের জানান, আরপিওতে ৩৫টি ক্ষেত্রে সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতিটি সংশোধনীর ব্যাপারে ওনারা গভীরভাবে পর্যালোচনা করে দেখেছেন। এগুলো আরো কিছুটা রিভিউ করা দরকার। তিনি আরো জানান, আরপিও সংশোধনী কমিশন সভায় অনুমোদন হলেও আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের প্রয়োজন হবে। এটা জাতীয় সংসদে অনুমোদন হতে হবে। সংসদে পাঠানোর আগে রিভিউ করে বাস্তবতার ক্ষেত্রে কোনটা গ্রহণযোগ্য, কোনটা গ্রহণযোগ্য নয়, সেটা উপকমিটি প্রস্তাব পেশ করবে। প্রস্তাব পাওয়ার পর আবার কমিশন সভায় বিস্তারিত আলোচনা হবে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আচরণবিধি পরিবর্তনের বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। আরপিওতে এটা নাই। আরপিওতে যে প্রস্তাব এসেছে আচরণবিধি ও বিধিমালার সংশোধনের প্রস্তাব নাই। নির্বাচনী রোডম্যাপের বাইরে যাচ্ছে কি না এমন প্রশ্নে সচিব বলেন, নির্বাচনের সঙ্গে বর্তমান আরপিও সংশোধন সম্পর্কিত নয়। যেহেতু রোডম্যাপ দেওয়া হয়েছে, একটা মানুষের একটা প্ল্যান থাকে। অধিক সতর্কতার সঙ্গে যেহেতু ব্যাপকভাবে এটা পরিবর্তন হচ্ছে, তাই অধিক সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে।

একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে আরপিও সংশোধন হচ্ছে কি না—জানতে চাইলে হেলালুদ্দীন আহমেদ বলেন, যেটা সংশোধন হবে সংসদে অনুমোদন হয়ে পাস হয়ে আসবে। রিভিউ পাস হওয়ার পরে বোঝা যাবে। এর মধ্যে এটা যদি কমপ্লিট হয়, তাহলে বোঝা যাবে। এই সেশনে মনে হয় হবে না। তাদের প্রসেসটা অব্যাহত আছে এবং এটা ১৯৭২ সালে তৈরি করা হয়েছে। বিভিন্ন সময় সংশোধন হয়েছে। সংশোধন তো ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। প্রত্যেক কমিশন কিছু না কিছু পরিবর্তন আনে। এই ইসিও চেষ্টা করছে। যাতে এটা যুগোপযোগী ও হালনাগাদ করে আরো ভালোভাবে নির্বাচন করা যায়। বর্তমান আচরণবিধি ও সংসদ বহাল রেখে আগামী নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড করা সম্ভব হবে কি না—জানতে চাইলে সচিব বলেন, বর্তমান যে আচরণবিধি বিধিমালা অনুসারে যদি সংশোধন না হয় এটা পরবর্তী সংসদে কার্যকর হবে। এটা পরবর্তীতে কমিশন সিদ্ধান্ত দেবে।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

মুরাদনগরে মাদ্রাসায় যান না পাঁচ বছর নিয়মিত বেতন তোলেন শিক্ষক

এমপিদের নির্বিঘ্ন প্রচারণার সুযোগ চায় আ.লীগ

আপডেট সময় ০৪:৪৭:১৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ এপ্রিল ২০১৮
জাতীয় ডেস্ক:

স্থানীয় নির্বাচনে এমপিদের প্রচারণা ও স্বাভাবিক রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ রেখে আচরণবিধির পরিবর্তন চেয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আগারগাঁওস্থ নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে বৈঠক শেষে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে সাংবাদিকদের কাছে এ কথা জানান প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম। তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা, চার নির্বাচন কমিশনার ও ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদের সঙ্গে বৈঠক করে।

এইচটি ইমাম বলেন, আরপিও নিয়ে বাস্তবে অনেক সমস্যা হচ্ছে। আমরা সেই সমস্যাগুলো আলোচনা করেছি। আচরণবিধি যেন নির্বাচনে বাধার সৃষ্টি না করে। নির্বিঘ্নে নির্বাচন করার জন্য সবার জন্য সমান সুযোগ দিতে যেটুকু দরকার, সেটুকুই যেন তারা রাখেন। তিনি আরো বলেন, অনেক সময় মন্ত্রীদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। সিটি করপোরেশনে যেসব এমপি আছেন, নির্বাচনের কারণে এলাকায় যেতে পারেন না। গাজীপুর বা খুলনায় তো অনেক এমপি আছেন। তাদের ওপর যদি ওরকম নিয়ন্ত্রণ করা হয়, তাহলে তারা অচল হয়ে যাবেন। এ জিনিসটি বাস্তবায়নমূলক যেন হয়, সেই বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সীমানা নির্ধারণে নির্বাচন কমিশনের যে গাইডলাইন আছে, সে গাইডলাইনেই তারা আটকে যাচ্ছে।

এইচটি ইমাম বলেন, আগামী আদমশুমারির আগে সংসদীয় সীমানায় পরিবর্তন আনার এখতিয়ার নির্বাচন কমিশনের নেই। এ-সংক্রান্ত পরিবর্তন আইনি জটিলতার মুখে পড়তে পারে। বিক্ষুব্ধরা উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হতে পারেন।’ তিনি জানান, ২০১১ সালের আদমশুমারির কারণে ২০১৩ সালে সংসদীয় আসনের সীমানা পরিবর্তন সহজ হয়েছে। কিন্তু এখন তো আদমশুমারি হয়নি। নির্বাচনের যতটুকু সময় আছে, সেই সময়ের মধ্যে নির্বাচনী পরিচালনা আইন ও সংসদীয় আসনে সীমানা পরির্তন ইসির জন্য চ্যালেঞ্জ হবে। তবে সিদ্ধান্ত নেবে ইসি নিজেই। কারণ ইসি স্বাধীন ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। সরকার সব সময় ইসিকে শক্তিশালী করতে কাজ করেছে। তিনি বলেন, ‘ইসি সীমানার যে খসড়া প্রকাশ করেছে তার অনেক বিষয়ে আমাদের আপত্তি রয়েছে। জনগণও এটি চায় না। কিছুদিন পর সংসদীয় আসনে শুনানি হবে। আমরা তার আগে ইসিকে এসব বিষয় অবহিত করতে এসেছি।

এমপিদের প্রচার-প্রচারণা নিয়ে তিনি ভারতের উদাহরণ দিয়ে বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে জনপ্রতিনিধারা নির্বাচনে প্রচারণা চালান। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে প্রচারণা চালিয়েছেন। আমাদের জনপ্রতিনিধিদের প্রচারণার সুযোগ চাই। আমাদের প্রধানমন্ত্রী নিয়েও কথা বলেছে একটি দল। ওনারা জানেন না নির্বাচনে জয়লাভের পরদিন থেকে দলগুলোকে পরের নির্বাচনে প্রচারণার জন্য প্রস্তুত হতে হয়। আর আমাদের দলের সভাপতি স্থানীয় আওয়ামী লীগের খরচে জনসভা করেছেন, রাষ্ট্রীয় টাকায় নয়।

এদিকে, আওয়ামী লীগের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে সিইসির বরাদ্দ দিয়ে ইসি সচিব বলেন, এগুলো কমিশন সভায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হবে। আইনসঙ্গত বিষয় বিবেচনা করে ইসি সিদ্ধান্ত নেবে। এদিকে গতকাল কমিশন সভায় আইন সংস্কারের খসড়া অনুমোদন করার কথা থাকলেও তা করতে পারেনি ইসি। কমিশন সভা শেষে ইসি সচিব সাংবাদিকদের জানান, আরপিওতে ৩৫টি ক্ষেত্রে সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতিটি সংশোধনীর ব্যাপারে ওনারা গভীরভাবে পর্যালোচনা করে দেখেছেন। এগুলো আরো কিছুটা রিভিউ করা দরকার। তিনি আরো জানান, আরপিও সংশোধনী কমিশন সভায় অনুমোদন হলেও আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের প্রয়োজন হবে। এটা জাতীয় সংসদে অনুমোদন হতে হবে। সংসদে পাঠানোর আগে রিভিউ করে বাস্তবতার ক্ষেত্রে কোনটা গ্রহণযোগ্য, কোনটা গ্রহণযোগ্য নয়, সেটা উপকমিটি প্রস্তাব পেশ করবে। প্রস্তাব পাওয়ার পর আবার কমিশন সভায় বিস্তারিত আলোচনা হবে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আচরণবিধি পরিবর্তনের বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। আরপিওতে এটা নাই। আরপিওতে যে প্রস্তাব এসেছে আচরণবিধি ও বিধিমালার সংশোধনের প্রস্তাব নাই। নির্বাচনী রোডম্যাপের বাইরে যাচ্ছে কি না এমন প্রশ্নে সচিব বলেন, নির্বাচনের সঙ্গে বর্তমান আরপিও সংশোধন সম্পর্কিত নয়। যেহেতু রোডম্যাপ দেওয়া হয়েছে, একটা মানুষের একটা প্ল্যান থাকে। অধিক সতর্কতার সঙ্গে যেহেতু ব্যাপকভাবে এটা পরিবর্তন হচ্ছে, তাই অধিক সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে।

একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে আরপিও সংশোধন হচ্ছে কি না—জানতে চাইলে হেলালুদ্দীন আহমেদ বলেন, যেটা সংশোধন হবে সংসদে অনুমোদন হয়ে পাস হয়ে আসবে। রিভিউ পাস হওয়ার পরে বোঝা যাবে। এর মধ্যে এটা যদি কমপ্লিট হয়, তাহলে বোঝা যাবে। এই সেশনে মনে হয় হবে না। তাদের প্রসেসটা অব্যাহত আছে এবং এটা ১৯৭২ সালে তৈরি করা হয়েছে। বিভিন্ন সময় সংশোধন হয়েছে। সংশোধন তো ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। প্রত্যেক কমিশন কিছু না কিছু পরিবর্তন আনে। এই ইসিও চেষ্টা করছে। যাতে এটা যুগোপযোগী ও হালনাগাদ করে আরো ভালোভাবে নির্বাচন করা যায়। বর্তমান আচরণবিধি ও সংসদ বহাল রেখে আগামী নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড করা সম্ভব হবে কি না—জানতে চাইলে সচিব বলেন, বর্তমান যে আচরণবিধি বিধিমালা অনুসারে যদি সংশোধন না হয় এটা পরবর্তী সংসদে কার্যকর হবে। এটা পরবর্তীতে কমিশন সিদ্ধান্ত দেবে।